হালাল শব্দের অর্থ কি: হালাল শব্দের অর্থ হলো বৈধ, অনুমোদন প্রাপ্ত, সিদ্ধ, ভালো, পবিত্র, বর্জনীয় নয়, শুদ্ধ, পুণ্য, বিশুদ্ধ, গ্রহণযোগ্য এবং পরিষ্কার ইত্যাদি।
অর্থাৎ ইসলামের যে সকল কাজের উপর কোন বাধা প্রদান করা হয়নি বরং আদেশ প্রদান করা হয়েছে সেগুলোকে হালাল বলে অভিহিত করা হয়। হালাল কাজ করার ফলে জীবন সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
আবার একবার যখন আমাদের প্রিয় নবীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, এমন কোন আমল করলে আমাদের দোয়া আল্লাহর নিকট সরাসরি কবুল হবে। তখন আমাদের প্রিয় নবী প্রশ্নটির উত্তরে বলেছিলেন যে হালাল পথে চললে এবং হালাল খাদ্য ভক্ষণ করলে সরাসরি দোয়া কবুল হবে।

আমরা ইহার মাধ্যমে এটি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম যে, হালালের ফজিলত অনেক বেশি কেননা ইহার মাধ্যমে আল্লাহ সরাসরি দোয়া কবুল করেন। আর আল্লাহ সরাসরি দোয়া কবুল করার মানে হচ্ছে আল্লাহ আপনার আমার উপর অনেক বেশি সন্তুষ্ট হওয়া।
যদি আল্লাহ তাআলা আপনার আমার উপর সন্তুষ্ট না থেকে তাহলে সহজে আমাদের দোয়া কবুল করবেন না। কিন্তু যখন আমরা আল্লাহর নিকট পাত্র হতে পারব এবং সন্তুষ্টি আদায় করতে পারব তখন আল্লাহ তায়ালা সহজে আমাদের দোয়া কবুল করবেন।
হালাল হচ্ছে একটি ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত যেটির মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য হাসিল করতে পারে এবং নেকি লাভ করতে পারে।
আমরা আসছি আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য এবং মৃত্যুর পর কর্মের প্রতিফল পাওয়ার জন্য আর অবশ্যই হালালের প্রতিফল ভালো হবে।
হালালের সংজ্ঞা ও উদাহরণ
হালালের সংজ্ঞা: কুরআন ও হাদিস দ্বারা পরিষ্কার ভাবে প্রমাণিত যে সকল কাজ করা ও খাদ্য ভক্ষণ করা বৈধ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে তাকে হালাল বলে।
হালাল বলতে হালাল একটি কাজ, হালাল একটি বস্তু, হালাল একটি কথা এবং হালাল একটি পরামর্শ হতে পারে।
হালালের উদাহরণ:
- হালাল উপায় উপার্জনকৃত অর্থ দ্বারা ব্যয় করা বা খরচ করা।
- হালাল ফলমূল, চাল ডাল ও অন্যান্য সবজি ভক্ষণ করা।
- গরুর মাংস, ছাগলের মাংস ও অন্যান্য বৈধ পশুর মাংস ভক্ষণ করা।
- কঠোর পরিশ্রম দ্বারা অর্জনকৃত উপার্জন ব্যয় করা।
- কথাবার্তা বলার সময় এবং পরামর্শ করার সময় রুচি যোগ্য কথাবার্তা বলা।
- নিজের জবানের হেফাজত করা এবং আমানতকে ভালোভাবে রক্ষা করা।
- এমন ভাবে কথা বলা যেন আপনার কথা দ্বারা কারো মনে আঘাত না লাগে।
- অন্যকে মন্দ কাজের দিকে আহবান না করে ভালো কাজের দিকে আহবান করা।
- মদ্যপান, সুদ, ঘুষ এবং জুয়া ইত্যাদি কাজ হতে নিজেকে ফিরিয়ে রাখা।
- একজনের কথা অন্যজনের কানে পৌঁছে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করা এবং বাধা প্রদান করা।
- নৈতিক আচার-আচরণ এবং নৈতিক কর্মকাণ্ড করা ও পরিচালনা করা।
এগুলো হলো হালাল কাজের কিছু উদাহরণ এবং এগুলো অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলে আমাদের প্রতিফল ভালো হবে। আবার সেই সাথে আমরা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য হাসিল করে সন্তুষ্টি অর্জন করার মাধ্যমে প্রিয় পাত্র হয়ে থাকতে পারবো।
আমরা যদি হালালের অন্তর্ভুক্ত এই সকল কাজ করি তাহলে অবশ্যই আমাদের আমলনামায় সওয়াব দেওয়া হবে। এবং এর সওয়াবগুলোর মাধ্যমে আমরা খুব সহজে একধাপ এগিয়ে যাব জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য এবং সেখানকার শান্তি ভোগ করার জন্য।
হালাল পথে চলার সুফল
আমরা সর্বদাই শুনে থাকি যে হালাল পথে চলার আদেশটিকে কিন্তু এই পথে চলার ফলে আমাদের কি লাভ হবে এটি জানিনা।
হালালের সুফল সম্পর্কে না জানার কারণে আমরা অধিকাংশই আছি যারা হালাল পথে চলতে চাই না বা হারাম পথ বেছে নেই।
আপাতত দৃষ্টিতে যদিও বা দেখতে মনে হয় যে হালাল পথে জীবন পরিচালনা করা অনেক কঠিন কিন্তু ইহার সুফল অনেক বেশি রয়েছে। আর সুফলের দিকে চিন্তা করে এই সকল কষ্ট কিছুই বলে মনে হবে না তাই আপনাকে এর সুফল সম্পর্কে জানতে হবে।
নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু হালাল কাজের সুফলসমূহ বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হলো:
- হালাল পথে চলার মাধ্যমে সমাজের বুকে সম্মান ও শ্রদ্ধা অর্জন করা সম্ভব হয়।
- আল্লাহ তাআলার প্রিয় পাত্র ও সন্তুষ্টির কারণ হিসেবে অব্যহিত হয়।
- নিয়ামত এর বরকত বৃদ্ধি পায় এবং রিজিকের অভাব দূর হয়।
- সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে পরকালীন জীবনে জান্নাত লাভ করার সুযোগ হয়।
- যেকোনো ধরনের সমস্যার সমাধান ও দ্রুত দোয়া কবুলের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
- সমাজের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সৃষ্টি হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ দূর হয়।
- পার্থিব জীবনের লোভ-লালসা দূর হয় এবং মানুষের মনুষ্যত্ব বৃদ্ধি পায়।
এগুলো হলো হালাল কাজের কিছু সুফল এবং আমরা যদি হালাল কাজ করে তাহলে এই সকল সুফল অর্জন করতে পারব।
আর এই সুফল সম্পর্কে অবগত হয় আপনি বুঝতেই পারছেন যে আপনাকে কত বেশি অনুপ্রেরিত হতে হবে হালাল পথে চলার জন্য।
হালাল পথে চলার মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের অধিকাংশ পদ সহজ করতে পারে এবং আখিরাতের পথ সহজ করতে পারি। আর হালাল পথে চলার মাধ্যমে দুনিয়ার বুকে বা এই পৃথিবীতে কখনো লজ্জিত হতে হবে না এবং সেই সাথে সম্মান লাভ করা যায়।
আরও পড়ুন: হারাম শব্দের অর্থ কি?