হাক্কুল ইবাদ অর্থ কি: হাকুল ইবাদ শব্দের অর্থ হলো বান্দার হক বা অধিকার। মানুষ হচ্ছে সামাজিক জীব এবং সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে থাকে।
একটি সমাজে বসবাস করতে গিয়ে বান্দাকে অন্য বান্দার হোক আদায় করতে হয়। আর হোক আদায়ের এই পদ্ধতিকে হাক্কুল ইবাদ বলে।
অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহ তা’আলা সন্তুষ্টি অর্জন করা মানেই যে ইবাদত হবে এমনটি না বরং এক মুসলমান অন্য মুসলমানের উপর দায়িত্ব পালন করাও হচ্ছে ইবাদত। একজন মুসলমানের ওপর আরেকজন মুসলমানের যে দায়িত্ব থাকে সে দায়িত্ব হচ্ছে হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক।
আপনার আশেপাশে থাকা প্রতিবেশীর জন্য আপনার উপর একটি হক রয়েছে যা আপনাকে পূরণ করতে হবে। প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজ-খবর নিতে হবে এবং সমস্যা থাকলে সমাধান করার ব্যবস্থা করে দিতে হবে, আর এরকম সাহায্য পুরনো কাজ করাই হচ্ছে হাক্কুল ইবাদ।
এই হাক্কুল ইবাদ হচ্ছে ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত এবং অবশ্যই আপনাকে আমাকে বান্দার হক আদায় করতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
একটি কোথায় রয়েছে যে সৃষ্টির মুখে লাথি মেরে কখনো স্রষ্টার ইবাদত করা যায় না বা করা সম্ভব নয়।
আর হাক্কুল ইবাদ হচ্ছে উক্ত বাণী বা উক্তিটির উৎকৃষ্ট প্রমাণ যেখানে বান্দার হক নিয়ে কঠোর কথা বলা হয়েছে। আর ইসলামের ব্যাখ্যা অনুযায়ী অবশ্যই আপনাকে আমাকে বান্দার হক আদায় করতে হবে কেননা, ইসলাম কখনো এই বিষয়ের উপর আপনাকে আমাকে ছাড় দিবে না।
ইসলামে যেহেতু এর ছাড় নেই তাই অবশ্যই আপনাকে বান্দার হক আদায় করতে হবে এবং অন্যকে এ বিষয়ে জানিয়ে দিতে হবে।
এই হাক্কুল ইবাদ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি কঠোর নিয়ম করা হয়েছে কেননা কখনো আল্লাহ তায়ালা বান্দার হক মাফ করবেন না।
হাক্কুল ইবাদ এর কাজ সমূহ
ইতিমধ্যে হাক্কুল ইবাদ কাকে বলে এ বিষয়ে সম্পর্কে জানলাম কিন্তু কোনগুলো কাজ হাক্কুল ইবাদত এর অন্তর্ভুক্ত এটি জানলাম না।
আর অবশ্যই কোন কাজগুলো হাক্কুল ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত তা আমাদেরকে জানতে হবে কেননা ইহার মাধ্যমে আমরা বান্দার হক আদায় করতে পারব।
যদি কাজ সম্পর্কে অবগত না থাকে তাহলে কিভাবে উপযুক্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারব এবং এজন্য অবশ্যই আমাদেরকে হাক্কুল ইবাদের কাজ জানতে হবে। আর এই হাক্কুল ইবাদের কাজগুলো জানার মাধ্যমে আমরা খুব সহজে বান্দার হক আদায় করে নিজের উপর থাকা দায়িত্ব পালন করতে পারব।
নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু বিশেষ হাক্কুল ইবাদের কাজ সমূহ উল্লেখ করা হলো:
- নিকটবর্তী আত্মীয় প্রতিবেশীর হক আদায় করা।
- দূরবর্তী আত্মীয় ও প্রতিবেশীর হক আদায় করা।
- নিজ এলাকায় উপস্থিত প্রতিবেশীর হক আদায় করা।
- পুরো দেশবাসীর হক আদায় করা।
- শাসক এবং শাসিত উভয় শ্রেণীর মানুষের হক আদায় করা।
- সাধারণ মুসলমানের হক আদায় করা।
- দুঃখী ও অভাবগ্রস্ত ব্যক্তির হক আদায় করা।
- অবশেষে অমুসলিমদের হক আদায় করা।
এগুলো হলো হাক্কুল ইবাদের কিছু কাজ এবং এই কাজগুলো করার মাধ্যমে আমরা হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক আদায় করতে পারব। আল্লাহ তাআলা কখনোই তিন কাজের গুনাহ ক্ষমা করবেন না এবং এই তিন কাজের মধ্যে হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক অন্যতম।
আর অবশ্যই আপনাকে আমাকে হাক্কুল ইবাদের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আমাদের দ্বারা কোন বান্দার হক মিস না হয়।
কেননা হাক্কুল ইবাদের কারণে আমরা আল্লাহর নৈকট্য সহজে লাভ করতে পারব না এবং সেই সাথে ক্ষমা পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
শেষ কথা:
হাক্কুল ইবাদ অর্থ কি এবং কোন কাজগুলো করার মাধ্যমে হাক্কুল ইবাদ আদায় হয় তা উপরে উল্লেখ করেছি। আর অবশ্যই যেহেতু ইসলামে হাক্কুল ইবাদত নিয়ে কঠোর দিকনির্দেশনা রয়েছে তাই আমাদেরকে এটি কে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
আর যেহেতু সৃষ্টির মুখে লাথি মেরে স্রষ্টার ইবাদত হয় না তাই আমাদেরকে বান্দার হক নষ্ট করা যাবে না।
আল্লাহ তাআলা যেহেতু কখনোই বান্দার হক আদায়ের গুনাহ মাফ করেন না সেহেতু অবশ্যই আপনাকে আমাকে এই সকল বিষয় একটু বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
এই বান্দার হকের জন্য যদি আমরা আল্লাহর নিকট হতে ক্ষমা না পাই তাহলে অবশ্যই আমাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হতে পারে।
তাই অবশ্যই আপনাকে আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হোক সঠিক মত আদায় করতে হবে।
আপনি তো জানলেন এবং অবশ্যই এখন আপনার উচিত আপনার বন্ধুদেরকে হাক্কুল ইবাদত সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া যেন তারা এ বিষয়ে অবহেলিত না হয়। বর্তমান সময় আমরা অনেকেই আছে যারা বান্দার হক আদায় করি না এমনকি সাক্ষাৎ হলে সালাম দিয়ে কথাটুকু বলি না।
আর এতে অবশ্যই গুনাহ হবে কেননা ইহাতে বান্দার হক নষ্ট হয়েছে, যা ক্ষমাহীন পাপ যা আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন না।
অবশ্যই আপনাকে আমাকে হাক্কুল ইবাদ আদায় করার জন্য নূন্যতম প্রতিবেশীর সাথে দেখা হলে সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করতে হবে।
আরও পড়ুন: ইবাদত কাকে বলে?