স্যাটেলাইট কি: স্যাটেলাইট হলো একটি বস্তু যা নিজের চেয়ে বড় আরেকটি বস্তুকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে। তবে বর্তমানে স্যাটেলাইট বলতে মানুষের দ্বারা কৃত্রিমভাবে তৈরিকৃত বস্তুকে বোঝা যা পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে।
বস্তুত স্যাটেলাইটের বাংলা প্রতিশব্দ হলো উপগ্রহ অর্থাৎ গ্রহকে কেন্দ্র করে যে বস্তুটি ঘোরে। তাহলে এখন প্রশ্ন পৃথিবী কি তাহলে একটি স্যাটেলাইট, আসলে এর উত্তর হলো জিহা অবশ্যই। আমরা সকলেই জানি পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে এবং এক্ষেত্রে সূর্য হচ্ছে পৃথিবীর চেয়ে বড়।
আর যেহেতু বলা হয়েছে স্যাটেলাইট বলতে ঐ বস্তুকে বোঝায় যা নিজের চেয়ে বড় বস্তুকে কেন্দ্র করে ঘোরে।
আর অনুযায়ী স্পষ্ট ধারণা পেতে হলে আমরা রাতের আকাশে চাঁদ দেখতে পাই, এই চাঁদটি হলো একটি উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট।

কেননা চাঁদ তার নিজের চেয়ে বড় বস্তু অর্থাৎ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে প্রতি নিয়তে ঘুরতে থাকে এবং গতি পথের কোন পরিবর্তন ঘটায় না। তবে স্যাটেলাইট বলতে বর্তমান সমাজের মানুষ আমরা মানুষ দ্বারা তৈরিকৃত যন্ত্রকে বুঝিয়ে থাকে যা পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে।
মানুষের দ্বারা তৈরিকৃত সরকারি এবং বেসরকারি মিলে ১০০টির উপরে কার্যরত স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে।
স্যাটেলাইট উদ্বোধন এবং মহাকাশে এর প্রেরণ নিয়ে ছোট বড় প্রায় প্রত্যেকটি দেশেই রয়েছে অনেক বেশি আগ্রহ ও প্রতিযোগিতা।
এমনকি বর্তমানে বাংলাদেশ ও এ বিষয়ে পিছিয়ে নেই, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নামে একটি নিজস্ব স্যাটেলাইট সরকারিভাবে মহাকাশে প্রেরণ করেছেন। স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে সাধারণত যাবতীয় তথ্য নিয়ন্ত্রণ এবং প্রেরণ করা যায়।
দেশের প্রতিটি তথ্য আদান প্রদান করার সময় প্রথমে সে তথ্য স্যাটেলাইটে গিয়ে পৌঁছায় এবং পরবর্তীতে তথ্য পুনরায় উপযুক্ত স্থানে পৌঁছায়।
র্তমানে স্যাটেলাইট বলতে কৃত্রিম যন্ত্রকে বোঝা যা মানব দ্বারা সৃষ্টি কৃত এবং মহাকাশে পরিভ্রমণরত।
তবে চাঁদও একটি স্যাটেলাইট কিন্তু সেটা প্রাকৃতিক, অর্থাৎ এই স্যাটেলাইট তৈরি করতে কোন মানুষের প্রয়োজন হয়নি এবং যন্ত্র প্রয়োজন হয়নি।
স্যাটেলাইট কি: স্যাটেলাইট হলো একটি কৃত্রিম বস্তু যা তথ্য সংগ্রহের জন্য, যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে এবং বিভিন্ন গবেষণার কাজে নিয়ন্ত্রণে পৃথিবী বা অন্যান্য গ্রহের চারদিকে পরিভ্রমণ করার জন্য স্থাপন করা হয়।
স্যাটেলাইট এর গঠন
মহাকাশে মানুষ দ্বারা তৈরিকৃত প্রেরণ করা স্যাটেলাইট বিভিন্ন আকার ও আকৃতির হয়ে থাকে, ফলে এদের গঠন ভিন্ন হয়।
তবে প্রত্যেকটি স্যাটেলাইটের দুইটি প্রধান অংশ থাকে একটি হলো এন্টেনা এবং অন্যটি হলো পাওয়ার সোর্স।
স্যাটেলাইটে উপস্থিত এন্টেনা তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদানের কাজ করে থাকে এবং সেই সাথে গবেষণার কাজে নিয়ন্ত্রণ করে।
একটি স্যাটেলাইটে বিভিন্ন ধরনের এন্টেনা ব্যবহার করা হয়, যেমন:
- মনোপোল
- ডিপোল হর্ন
- প্রতিফলক এন্টেনা
- পারাবলিক এন্টেনা
- মাইক্রস্ত্রিপ এন্টেনা
স্যাটেলাইটে উপস্থিত এন্টেনা মূলত নির্ধারিত হয় বিভিন্ন প্রকার অ্যাপ্লিকেশনের উপর।
স্যাটেলাইট এ উপযুক্ত বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি স্যাটেলাইটে সোলার সিস্টেম এবং ব্যাটারি থাকে।
এই স্যাটেলাইটকে নির্দিষ্ট অঞ্চলে পরিভ্রমণ করার জন্য সোলার প্যানেল এবং ব্যাটারি শক্তি অনেক বেশি প্রয়োজন।
স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে
টিভি এবং বেতার সংকেত প্রেরণ এবং আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণকারী কৃত্রিম উপগ্রহগুলো সাধারণত পৃথিবী থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে পরিভ্রমণ করে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে। পৃথিবী থেকে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে স্যাটেলাইট এর মধ্যে তথ্য প্রেরণ করা হয়।
কৃত্রিম উপগ্রহ অর্থাৎ স্যাটেলাইট বেতার তরঙ্গ হতে আসা তথ্য সংগ্রহ করে এবং গ্রহণকৃত তথ্যকে অনেক বেশি এম্পিলিফিকেশন করে যার ফলে একই তথ্য প্রত্যেকটি জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে।
কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট ভিন্ন দুইটি কম্পাঙ্ক বা তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ব্যবহার করে নিজের কাজ পরিচালনা করে। সিগন্যাল এবং তথ্য।
সিগন্যাল ব্যবহার করা হয় যেকোনো ধরনের তথ্য নিশ্চিতভাবে গ্রহণ এবং প্রেরণ করার জন্য।
স্যাটেলাইট থেকে আসা সিগনাল অনেক বেশি দুর্বল হওয়া যায় যার ফলে পৃথিবীতে আসতে এটার অনেক ধীরগতি হয়।
তাই প্রথমে ডিস এন্টেনা ব্যবহার করে সিগনালকে কেন্দ্রীভূত করা হয় যার ফলে স্যাটেলাইট হতে আশা সিগন্যাল পৃথিবীতে দ্রুত কেন্দ্রীভূত হয় আসতে পারে। পরবর্তীতে রিসিভার ব্যবহার করে স্যাটেলাইট থেকে আসা তথ্য বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয় এবং পৃথিবীর যেকোনো স্থানে দ্রুত প্রেরণ করা সম্ভব হয়।
স্যাটেলাইট এর প্রকারভেদ
স্যাটেলাইট প্রধানত দুই প্রকার হয়ে থাকে, যেমন:
- প্রাকৃতিক স্যাটেলাইট বা ন্যাচারাল স্যাটেলাইট
- কৃত্রিম স্যাটেলাইট বা তৈরিকৃত স্যাটেলাইট
প্রাকৃতিক স্যাটেলাইট: যে সকল স্যাটেলাইট প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়েছে এবং প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন গ্রহের চারদিকে পরিভ্রমণ করছে সেগুলোকে প্রাকৃতিক স্যাটেলাইট বা প্রাকৃতিক উপগ্রহ বলা হয়।
উদাহরণ: চাঁদ, এবং সূর্যকে কেন্দ্র করে বলতে গেলে সকল গ্রহ।
কৃত্রিম স্যাটেলাইট: যে সকল স্যাটেলাইট মানুষের দ্বারা তৈরি করা হয়েছে এবং মানুষ তা বিভিন্ন মাধ্যমে মহাকাশে পৌঁছে দিয়ে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ডিম্বাকার আকারে পরিভ্রমণ করাচ্ছে, এই সকল স্যাটেলাইট কেটিএম স্যাটেলাইট বলে।
উদাহরণ: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, ইউনেস্কো থেকে প্রেরণ করা স্যাটেলাইট ইত্যাদি।
স্যাটেলাইট কেন ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় না
আসলে স্যাটেলাইট ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় না এ কথাটি ভুল, কেননা নির্দিষ্ট সময় পর প্রায় প্রত্যেকটি স্যাটেলাইট ভূপৃষ্ঠে এসে পতিত হবে।
তবে এতদিন হয়ে গেল কোন স্যাটেলাইট কেন ভূপৃষ্ঠে এসে পতিত হলো না এর কিছু মূল কারণ রয়েছে।
আসলে যখন রকেটের মাধ্যমে স্যাটেলাইট কে পৃথিবীর বাইরে উত্তোলন করা হয় তখন একের নির্দিষ্ট একটি উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হয়।
যেন সেখান থেকে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি স্যাটেলাইট থেকে নির্দিষ্ট শক্তিতে নিজের কেন্দ্রর দিকে আকর্ষণ করতে পারে।
ঠিক ওই স্থানে পৌঁছানোর পর স্যাটেলাইট থেকে পৃথিবীর বিপরীত দিকে নির্দিষ্ট গতিতে প্রেরণ করা হয়। এর ফলে পৃথিবীর দিকে আকর্ষণ শক্তি এবং স্যাটেলাইট বিপরীত দিকে পরিভ্রমণ করার শক্তি সমান হওয়ার কারণে নির্দিষ্ট স্থানে পরিবহন করতে পারে।
এর ফলে ডিম্বাকার আকারে স্যাটেলাইটটি পৃথিবীর চারদিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পরিভ্রমণ করতেই থাকে সারাদিন সারারাত।
আর এক্ষেত্রে কোনো ধরনের মহাকর্ষ বা বায়ুজনিত বাধা না থাকার কারণে স্যাটেলাইটের গতিপথের কোন পরিবর্তন ঘটতে পারে না ফলে এটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থির অবস্থায় পরিভ্রমণ করতে থাকে। এই ছিল স্যাটেলাইট কি এই বিষয়টি নিয়ে একটি অনেক ভালো এবং তথ্যপূর্ণ পোষ্ট আপনাদের জন্য।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প মাপার যন্ত্রের নাম কি?