সুন্নাত কাকে বলে: প্রিয় নবী (স.) এর মৌন সম্মিলিত বাণী, আদেশ, নিষেধ এবং অনুমোদনপ্রাপ্ত কাজকে সুন্নাত বলে।
অর্থাৎ সুন্নত বলতে আমাদের প্রিয় নবীর যাবতীয় কাজ ও বাণীর সমষ্টিকে বোঝানো হয়ে থাকে। আমাদের পক্ষে সুন্নত অবলম্বন করে জীবন পরিচালনা করা অবশ্যই অনেক বেশি কল্যাণকর হবে কেননা ইহাতে কোন ভুলের সৃষ্টি হবে না।
প্রকৃতপক্ষে, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) যে সকল কাজ নিজে করেছেন অথবা করার জন্য আদেশ করেছেন কিংবা করার জন্য অনুমোদন দিয়েছেন সে সকল কাজকে সুন্নাত বলে।
আর সুন্নত তরিকায় জীবন পরিচালনা করার মাধ্যমে যেহেতু কোন ভুলের সৃষ্টি হয় না সুতরাং ইহার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব। কেননা সুন্নত অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা আল্লাহ তা’আলা নিজে পছন্দ করে থাকেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সুন্নত তরিকায় জীবন পরিচালনা করার তাগিদে দেওয়া হয়েছে।
সুন্নাতের প্রকারভেদ
আমলের পার্থক্য অনুযায়ী সুন্নাতকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা:
- সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ (সর্বদা পালনীয়)
- সুন্নতে যায়িদাহ (অতিরিক্ত সুন্নত আমল)
সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ: যে সকল সুন্নত আমল আমাদের প্রিয় নবী (স.) নিজের সর্বদা পালন করতেন এবং সকলকে তা পালন করার জন্য তাগিদ প্রদান করেন, এই সুন্নতকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বলে।
উদাহরণ:
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আযান দেওয়া ও ইকামত করা।
- ফজরের ফরজ নামাজের পূর্বে দুই রাকাত সুন্নত এবং অন্যান্য সুন্নত নামাজ পড়া।
সুন্নতে যায়িদাহ: শরীয়তের পরিভাষায় যে সকল সুন্নতি আমল আমাদের প্রিয় নবী (স.) সর্বদা পালন করতেন না সেই সকল সুন্নতি আমলকে সুন্নতে যায়িদাহ বলে।
উদাহরণ: আসর ও এসারের ফরজ নামাজের পূর্বে চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করা ইত্যাদি।
সুন্নতের বিধি-বিধান
এই সুন্নতের কিছু বিধি বিধান রয়েছে যেগুলো অবলম্বন করার মাধ্যমে আমরা খুব সহজে জীবন পরিচালনা করতে পারি। আর এই জীবন পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই আপনাকে আমাকে সুন্নতের সাথে সুন্নতের কিছু বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে।
নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু সুন্নতের বিধি-বিধানসমূহ বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হলো:
- কঠিন কিয়ামতের দিন প্রিয় নবী (স.) এর শাফায়াত লাভের জন্য সুন্নত মানার প্রয়োজন।
- সুন্নত অনুযায়ী জীবন পরিচালনা না করলে সর্বশেষ নবীর উম্মত বলিয়া দাবি হইবে না।
- সুন্নত হচ্ছে জীবন পরিচালনা করার এবং সঠিক রীতিনীতি মেনে চলার ভালো পন্থা।
- কিছু কিছু বিশেষ সুন্নত রয়েছে যেগুলো আদায় না করলে আমলনামা কমতে থাকে।
- কঠিন কিয়ামতের দিন ফরজ নামাজের বাকি অংশগুলো পূরণের জন্য সুন্নত ব্যবহার করা হবে।
- একটি সুন্নত জীবিত করার মাধ্যমে, বান্দা শহীদের মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়।
- সুন্নত অনুযায়ী অজু ও অন্যান্য কাজ না করলে ইবাদতে ঘাটতি থাকে।
এগুলো হলো সুন্নতের কিছু বিধি-বিধান এবং সুন্নত অনুযায়ী জীবন প্রচারণা করার ক্ষেত্রে এই বিধি-বিধান গুলো মেনে চলতে হবে।
আপনি যদি সুন্নত তরীকা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে এবং জীবনে কল্যাণ পেতে চান তাহলে অবশ্যই এই বিধি বিধানগুলো লক্ষ্য করুন।
কেননা বিধি বিধান না মেনে অযথা সুন্নত কখনো সঠিকভাবে আদায় হবে না এবং আদায় না হলে কোন লাভ নেই।
তাই অবশ্যই আপনাকে আমাকে উপরোক্ত বিধিবিধান গুলো মেনে সুন্নত আদায় করতে হবে আমাদের জীবনে।
শেষ কথা:
সুন্নাত কাকে বলে এবং সুন্নাতের যাবতীয় বিষয় নিয়ে এই পোষ্টের মধ্যে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং জ্ঞান দিতে চেষ্টা করেছি। আপনি যদি সুন্নাত অবলম্বন করে জীবন পরিচালনা করেন তাহলে অবশ্যই জীবনে অনেক বেশি লাভবান হতে পারবেন এবং কল্যাণ পাবেন।
আর এই কল্যাণ লাভ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে আমাকে সুন্নতের সাথে সাথে সুন্নতের বিধি-বিধান গুলো মানতে হবে।
কেননা শুধুমাত্র সুন্নত মানলে তা গ্রহণযোগ্যতা কম হয় কিন্তু বিধি বিধান সহ মানলে তার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
তাই গ্রহণ যোগ্যতা বৃদ্ধি করার জন্য অবশ্যই আপনাকে আমাকে সুন্নতের বিধি-বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে কল্যাণ লাভ করতে হবে।
আপনি আমাদের উপরে দেওয়া বিধি-বিধান গুলো এবং সুন্নতের নিয়ম গুলো মেনে চললে খুব সহজে জীবন পরিচালনা করতে পারবেন।
সুন্নত হচ্ছে আমাদের প্রিয় নবীর বাণী সমষ্টি এবং কাজের সমষ্টি এবং জীবন পরিচালনার ধারার সম্মানিত আলোচনা। সুন্নতের মাধ্যমে আমরা অনুপ্রেরিত হয়ে থাকি জীবন পরিচালনা করে সঠিক পথ নির্ধারণ করে কল্যাণ লাভ করার।
আরও পড়ুন: ওয়াজিব কাকে বলে?