সমন্বিত চাষ কাকে বলে: একই সময়ের মধ্যে একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন করার প্রক্রিয়াকে সমন্বিত চাষ বলে।
সমন্বিত চাষ করার মাধ্যমে বর্তমানে কৃষকেরা খুব বেশি লাভবান হচ্ছেন। এই সমন্বিত চাষ হলো একই জমিনের মধ্যে একসাথে একাধিক ফসল চাষ করার প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় চাষাবাদ করার মাধ্যমে একসাথে বেশি পরিমাণ ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। আর একাধিক ফসল উৎপাদিত হচ্ছে।
মনে করেন আপনি একটি জমিতে আলুর চাষ করেছেন। এখন আপনি যদি সেখানে ভুট্টার বীজ ফেলে একসাথে আলু ও ভুট্টা উভয় চাষ করেন তাহলে সেটি হবে সমন্বিত চাষ। আবার আপনি যদি আলুর সাথে লাল শাক চাষ করেন সেটিও হবে সমন্বিত চাষের উদাহরণ।
এই পদ্ধতি যে শুধু কৃষি জমিতে কৃষিকাজ করাতে ব্যবহৃত হয় তা নয়, বরং প্রাণী সম্পদ উৎপাদনেও সমন্বিত চাষ ব্যবহার হয়।
এর উদাহরণ হলো মনে করেন আপনি একটি পুকুরে মাছ চাষ করেছেন। যেটি একটি একমুখী চাষ।
আর সেই পুকুরেই আপনি মাছ চাষ করার পাশাপাশি পুকুরের পানির উপরে মাচা দিয়ে ঘর তৈরি করে হাঁস চাষ করেন তাহলে সেটি হবে সমন্বিত চাষ। এতে করে আপনি একই সাথে মাছ চাষ করার পাশাপাশি হাঁস চাষও করতে পারতাছেন। যার কারণে আপনি দুই দিক থেকে উৎপাদন গ্রহণ করতে পারবেন।
এইভাবে আপনি একাধিক দিক থেকে উৎপাদন লাভ করার মাধ্যমে বেশি উপকৃত হতে পারবেন এবং আপনার লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
আর এই পদ্ধতিতে চাষ করার মাধ্যমে আপনার জমির ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। জমির মধ্যে আগাছার পরিমাণ কম হবে।
যেহেতু এই পদ্ধতি ব্যবহার করার মাধ্যমে একাধিক ফসলের উৎপাদন লাভ করা সম্ভব হচ্ছে তাই দিন দিন এই সমন্বিত চাষ পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের দেশের মধ্যে এটি একটি জনপ্রিয় চাষ পদ্ধতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ফেলেছে। আমাদের সকলের উচিত এভাবে চাষ করার মাধ্যমে জমি এবং সময় উভয়কে কাজে লাগানো।
সমন্বিত চাষে ভূমির ব্যবহার দ্বিগুণ হয় কিভাবে
সম্বন্বিত চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করার মাধ্যমে একই সময়ের মধ্যে একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন করা করা যায়।
এর অর্থ হলো আমরা তো একথা জানি যে, প্রতিটি ফসল চাষ করার জন্য আলাদা সময় এবং আলাদা জমির প্রয়োজন হয়।
কিন্তু এই পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে তার প্রয়োজন হয় না।
উদাহরণস্বরূপ পুকুরের মধ্যে মাছ ও হাঁস একসাথে চাষ করার কারণে হাঁসের আবাসনের জন্য আলাদা যে জায়গার প্রয়োজন হতো। সেটির আর প্রয়োজন হবে না এখন হাঁসের আবাসন আপনি পুকুরের পানির উপরে মাচা তৈরি করে করতে পারবেন।আর এভাবে সমন্বিত চাষ পদ্ধতিতে ভূমির ব্যবহার দ্বিগুণ হয়
এ পদ্ধতি ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি খুব সহজে একই সাথে একাধিক ফসলে উৎপাদন করতে পারেন।
এই পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করা বেশি সুবিধাজনক এবং বেশি লাভজনক।
এ পদ্ধতি ব্যবহার করার মাধ্যমে কৃষকেরা খুব বেশি পরিমাণ লাভবান হতে পারতেছে।
অনেকের ধারণা অনুযায়ী চীন সর্বপ্রথম এই চাষ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছিল। ১৯৫০ সালে যখন বিশ্বব্যাপী চাষ ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তখন এই পদ্ধতিটি আরো উন্নতি সাধন করে। তখন থেকে বিভিন্ন দেশ এই প্রক্রিয়ায় চাষাবাদ করতে শুরু করেছিল।
বিশেষ করে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়া এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেছিল।
আর আমাদের দেশের মধ্যেও এই সমন্বিত চাষ পদ্ধতি অনেক আগে থেকেই চালু হয়ে আসছে।
আর বর্তমানে এর ব্যবহার অনেক ব্যাপক পরিমাণ এবং অনেক বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই সমন্বিত পদ্ধতিতে চাষ করার কারণে একটি ফসল অন্য ফসলের উপকারী হিসেবে কাজ করে থাকে। সার ব্যবহারের খরচ কমে যায়। আর এর মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা রক্ষা হয়। যথাযথভাবে নিজের শ্রমের ব্যবহার নিশ্চিত হয়। এ পদ্ধতিতে সম্পদের সুষ্ঠ এবং সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়ে থাকে।
শেষ কথা:
বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশসমূহ এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে এবং লাভবান হচ্ছে।
একই সাথে একাধিক ফসল চাষ করার কারণে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে এবং শ্রমের সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে।
উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং উৎপাদনের খরচ কমতেছে। একই সাথে একাধিক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।
বর্তমানে আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে সমন্বিত চাষ পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়েছে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলেও সত্য যে আমাদের সমগ্র দেশ জুড়ে এই চাষ পদ্ধতির প্রচলন খুবই কম। এই চাষ পদ্ধতি আমাদের দেশের শুধু কিছু অঞ্চলে ও কিছু এলাকায় ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে কিন্তু সমগ্র দেশে নয়।
কিন্তু এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অন্যান্য দেশসমূহ চাষাবাদকে আরো উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
তারা তাদের চাষের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করছে। যার কারণে তাদের দেশের অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হচ্ছে।
আর এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার কারণে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে এবং অতিরিক্ত ফসল বিদেশে রপ্তানি করা যাচ্ছে।
আমাদের দেশের কৃষকদের উচিত এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার কারণ মাধ্যমে বেশি ফসল উৎপাদন করা এবং সেই ফসলকে দেশের কাজে লাগানো। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার মাধ্যমে আমাদের দেশের কৃষকেরা আরও বেশি পরিমাণ উন্নতি লাভ করতে পারবে কৃষি ক্ষেত্রে।
যেহেতু আমাদের দেশ অনেক ছোট এবং এ দেশের মধ্যে উপস্থিত কৃষকের জমির পরিমাণ কম।
তাই কৃষকের উচিত এই অল্প পরিমাণ জমিকে সুষ্ঠু ব্যবহার করার জন্য এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা।
এই অল্প পরিমাণ জমি থেকে অধিক পরিমাণ উৎপাদন লাভ করার চেষ্টা করা।
আরও পড়ুন: অর্থকরী ফসল কাকে বলে?