শিক্ষা কি? শিক্ষার সংজ্ঞা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা

শিক্ষা কি: শিক্ষা হলো একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া, যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়ে থাকে এবং তাই শিক্ষা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা শিশুকে সমাজ উপযোগী করে গড়ে তোলে।

নম্বর সংজ্ঞা: তুমি যাহা জান বা জানতে পেরেছ তাহা জানিয়ে দেওয়া এবং যাহা তুমি জানো না তাহা জেনে নেওয়াটা শিক্ষা নয়, শিক্ষা তো সেটাই যেটা মানুষের আচরণে প্রকাশ পায়।

নম্বর সংজ্ঞা: চরম শিক্ষা তো সেটা যেটা মনুষ্যত্বের শিক্ষা, আর সমস্ত শিক্ষাই তো এই শিক্ষার অধীন।

নং সংজ্ঞা: জানা সত্ত্বেও মেনে না চলা থেকে না জানাই ভালো, শিক্ষা অর্জনের পর চরিত্রে পরিবর্তন না হলে অশিক্ষিতই ভালো।

শিক্ষা কি
শিক্ষা কি?

নম্বর সংজ্ঞা: আইভরি ব্রাউন এর মতে, শিক্ষা তো সেটাই যার প্রথম কাজ হল কৌতূহলকে মনের ভিতর থেকে ঘটিয়ে ফেলা।

৫ নম্বর সংজ্ঞা: হেনরি অ্যাডামস এর মতে, একজন শিক্ষক সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলে শিক্ষা ক্ষেত্রে, তবে এর প্রভাব কোথায় গিয়ে শেষ হয় তাকেও বলতে পারেনা।

৬ নম্বর সংজ্ঞা: উইলিয়াম আর্থার ওয়ার্ড এর মতে, মাঝারি মানের শিক্ষক সমূহ বলেন, ভালো শিক্ষক বুঝিয়ে দেন, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক করে দেখান এবং মহান শিক্ষকগণ অনুপ্রেরিত করেন।

নম্বর সংজ্ঞা: স্বামী বিবেকানন্দ এর মতে, শিক্ষা তেমন কিছু না এটি হলো মানুষের মহত্বের প্রকাশ।

এগুলো হলো শিক্ষা কি এ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কয়েকটি সংজ্ঞা এবং এর সংখ্যাগুলো বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তি হতে পাওয়া। তাই অবশ্যই আমাদেরকে এই সকল সংজ্ঞার ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন এবং সে অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন, যা বিখ্যাত ব্যক্তিরা বলেছেন।

শিক্ষা কাকে বলে?

শিক্ষা কাকে বলে: যে প্রক্রিয়ায় জ্ঞান লাভ করা যায় এবং লাভকৃত জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ ও ব্যবহার সম্পর্কে পদ্ধতিগত অনুশীলন করার মাধ্যমে ব্যক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটানো যায় তাকে শিক্ষা বলে।

এই শিক্ষা আর কিছুই না, মানুষের অন্তর্নিহিত যে পুরনতা রয়েছে সেটার বিকাশ ঘটে কে বলা হয় শিক্ষা। শিক্ষা কি এবং শিক্ষা কাকে বলে এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই দুইটারই সংজ্ঞা একই।

আপনি উপরে উল্লেখিত সংজ্ঞাগুলো পড়লে শিক্ষা বলা হয় কাকে এ বিষয়ে সকল ধরনের সংজ্ঞা পেয়ে যাবেন।

শিক্ষার যে মূল উদ্দেশ্য সেটি হলো আচরণকে বিকাশ করা অর্থাৎ নিজের যে পূর্ণতা বা পূর্ণ চরিত্র রয়েছে তার বিকাশ ঘটানো।

নিজের চরিত্রের পূর্ণতা বিকাশ ঘটানের মাধ্যমে মনুষ্যত্ব জাগ্রত হবে এবং শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ফুটে উঠবে। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষত্ব বোধ সৃষ্টি এবং সমাজের মধ্যে পূর্ণতা প্রতিষ্ঠা করা।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে শিক্ষা হচ্ছে জ্ঞান লাভের একটি পরিপূর্ণ মাধ্যম যেখানে ব্যক্তির আদর্শ প্রতিফলন গড়ে ওঠে।

আবার সেই সাথে এই শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব পদে জাগ্রত হওয়ায় সামাজিক ঐক্য সৃষ্টি হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ দূর হয়ে যায়।

আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ পেশ করে থাকি এবং এ জানার আগ্রহটি হচ্ছে শিক্ষার অনুশীলনমূলক প্রক্রিয়া। এই শিক্ষা বলতে শুধুমাত্র জ্ঞান লাভ করতে হবে এমনটা নয় বরং যে জ্ঞান অর্জন করেছি তা বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত।

জ্ঞান লাভের যে সকল পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া রয়েছে এবং ব্যক্তির বিকাশগত যে প্রক্রিয়া রয়েছে সেই প্রক্রিয়ার নামই হচ্ছে শিক্ষা।

এই শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব জাগ্রত হয় এবং সেই সাথে বিকাশ ঘটে মানসিকতার ও লাভ করে সামাজিক মূল্যবোধ।

মানব জীবনে শিক্ষার কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে, যে সকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত শিক্ষা অর্জন করি।

শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধন বড় কথা নয় বরং শিক্ষা অর্জন করে জীবন পরিচালনা করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।

আমরা শিক্ষা অর্জন করে প্রথমত নিজের জীবন পরিচালনা করার জন্য এবং সুষ্ঠুভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করার জন্য।

আমরা শুধুমাত্র অযথা শিক্ষা অর্জন করিনা বা জ্ঞান অর্জন করিনা বরং এর পিছনে কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধিত হয়।

উল্লেখযোগ্য শিক্ষার কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিচে বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হলো:

  • শিক্ষার মূল লক্ষ্য জ্ঞান অর্জন করা, এবং অর্জনকৃত জ্ঞান প্রয়োগ করে উন্নতি সাধন করা।
  • মানুষের ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি করা এবং মেধার বিকাশ ঘটিয়ে জীবন পরিচালনা সহজ করা।
  • ভালো-মন্দ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করার মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ভালো করে ফুটিয়ে তোলা।
  • যোগ্যতা সৃষ্টি করা নিজের ব্যক্তিত্ব সাধনের জন্য এবং আত্ম উপলব্ধি করে গড়ে তোলার জন্য।
  • ব্যক্তির মনোবল বৃদ্ধি করা এবং বিপদে থেকে উদ্ধার হওয়া সম্পর্কে যাবতীয় জ্ঞান প্রদান করা।
  • কিভাবে যেকোন বিপদে ধৈর্য ধরতে হয় এবং সঠিক পন্থা অবলম্বন করে বিপদে খাটিয়া তুলতে হয় সে সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করা।
  • দেশের উন্নত ভবিষ্যৎ, অগ্রগামী দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যক্তিত্ব প্রত্যেকটি মানুষের অন্তরে তৈরি করা।

এগুলো হলো শিক্ষার কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং এই লক্ষ্য উদ্দেশ্য গুলো পূরণের জন্যই মূলত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে শিক্ষার কিছু প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং এ প্রয়োজনগুলো নিবারণের জন্যই মূলত আমরা সর্বদা জ্ঞান অর্জন করে চলেছে এবং নিজেকে উন্নত করছি।

শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

মানব জীবনের শিক্ষার রয়েছে অনেকগুলো প্রয়োজনীয়তা এবং এ প্রয়োজনগুলো নিবারনের জন্যই মূলত আমরা শিক্ষা অর্জন করে চলেছি। শিক্ষা অর্জন করায ব্যতীত আমরা কোন কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারে না এবং বিশ্লেষণ করতে পারিনা।

উল্লেখযোগ্য কিছু শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিচে উপস্থাপন করা হলো:

  • যেকোনো প্রকার সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ও কাজ নিয়ন্ত্রণ করতে শিক্ষা প্রয়োজন।
  • বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে সঠিক তদন্ত উন্মোচন করতে প্রয়োজন হয় শিক্ষা।
  • কোন প্রকার কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য এবং নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজন হয় শিক্ষা।
  • যোগ্যতা ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শিক্ষা।
  • মানুষের মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব, ধৈর্য, মেধা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে শিক্ষা।
  • সৃজনশীল মনোভাব তৈরি করার মাধ্যমে মানুষের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করার ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রয়োজন।

এগুলো হলো শিক্ষার কিছু প্রয়োজনীয়তা এবং এ প্রয়োজনগুলো আমরা শিক্ষা গ্রহণ করার মাধ্যমে সর্বদা মিটিয়ে থাকি।

তবে শুধুমাত্র শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এতটুকু বলে সমাপ্ত করে দিলে চলবে না বরং এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে অসংখ্য এবং অগণিত।

তাই শিক্ষা সকল প্রয়োজনীয়তার উপর বিবেচনা করে অবশ্যই আপনাকে আমাকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং সাধারণ জ্ঞান লাভ করতে হবে। শিক্ষা কি, বলতে বোঝানো হয় জ্ঞান অর্জন করার পর তা পার্থিব জীবনে প্রতিফলন ঘটিয়ে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটানো।

প্রকৃত শিক্ষক কে?

শিক্ষা কি এবং শিক্ষা কাকে বলে এই সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে এই পোস্টটি তথ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে আপনার জন্য। শিক্ষা বলতে জ্ঞান অর্জন করাকে শুধু বোঝানো হয় এমনটি না বরং জ্ঞান অর্জনের পর তা জীবনে সঠিক প্রয়োগে বোঝানো হয়।

আমরা সকলের শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি এবং বিভিন্ন শিক্ষকের কাছ থেকে এই শিক্ষা গ্রহণ করতে অনেক বেশি অনুপ্রেরিত হয়।

তবে শিক্ষকের মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য যেগুলোর দ্বারা প্রকৃত শিক্ষক চিহ্নিত করা যায়।

নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু প্রকৃত শিক্ষক চেনার উপায় উল্লেখ করা হলো:

  • সন্তানের প্রকৃত বা প্রথম শিক্ষক হলেন তার বাবা-মা।
  • প্রকৃত শিক্ষকদের সেই যে তার ছাত্রকে নিজের সন্তান বলে মনে করে।
  • প্রকৃত শিক্ষক সে যে তার ছাত্রকে অনুপ্রাণিত করে।
  • প্রকৃত শিক্ষক সে যে তার ছাত্রকে পূর্ণতা প্রদান করে।
  • প্রকৃত শিক্ষক তাকেই বলা হয় যে সৎ কাজের আদেশ করে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে।
  • যে তোমাকে অনুপ্রেরিত করবে জীবনে কীর্তিময় কোন সৎ কাজ করার সেই হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষক।
  • যে তোমাকে জীবনের বাঁধায় ধৈর্য ধরার জন্য জ্ঞান প্রদান করবে সেই হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষক।
  • জীবনে কিভাবে সফলকাম হতে হয় যে শিক্ষক তোমাকে তা বুঝিয়ে বলবে সেই হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষক।
  • যে শিক্ষক তোমাকে তোমার জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান দিবে সেই হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষক।

এগুলো হলো প্রকৃত শিক্ষকের কিছু বৈশিষ্ট্য এবং এ বৈশিষ্ট্যগুলো দ্বারাই আমরা প্রকৃত শিক্ষককে চিহ্নিত করতে পারব।

আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এবং আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে প্রকৃত শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে জীবনে।

যারা শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষা অর্জন করে তাদের শিক্ষা শিক্ষাই নয় বরং এটি শুধুমাত্র একটি চাহিদা হিসেবে গণ্য হবে। তবে কোন ব্যক্তি যদি শিক্ষা অর্জন করার পর তা প্রয়োগিক দিক দিয়ে জীবনে প্রতিফলন ঘটায়, সেক্ষেত্রে এটি হবে প্রকৃত শিক্ষা।

আরও পড়ুন: শিক্ষক যোগ্যতা কি?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top