শারীরিক শিক্ষা কাকে বলে: বিভিন্ন ধরনের শরীরচর্চা ও ব্যায়াম করার মাধ্যমে দৈহিক ও মানসিক উন্নতি সাধনের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে যে শিক্ষা প্রদান করা হয় তাকে শারীরিক শিক্ষা বলে।
বর্তমানে সময় এর পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক শিক্ষা এর ধ্যান ধারণার অনেক জটিল পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছে। বর্তমানে শারীরিক শিক্ষা আর শুধুমাত্র শারীরিক জ্ঞান, শারীরিক ব্যায়ামও এবং শারীরিক উন্নয়নের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়: অতীতের শারীরিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল শারীরিকভাবে উন্নতি সাধন, কিন্তু আধুনিক শারীর শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো পরিপূর্ণভাবে ব্যক্তিসত্তার সুষম দৈহিক বিকাশ সাধন।
স্মিথ ও ক্লিপ্টন এর মতে: বিজ্ঞানসম্মত এবং কৌশলগত অঙ্গ সঞ্চালন করার পদ্ধতিকে শারীরিক শিক্ষা বলে।
ডি. কে ম্যাসিউস শারীরিক শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন: স্যারেরে কার্যকলাপ এর মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানকে বলা হয় শারীরিক শিক্ষা।
সি. এ বুছের শারীরিক শিক্ষার সংজ্ঞাটি এভাবে বর্ণনা করেছেন যে: শারীরিক শিক্ষা হলো শিক্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং শারীরিক শিক্ষা সুনির্বাচন ও শারীরিক কাজ কর্মের মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক দিক দিয়ে উপযুক্ত নাগরিক গড়ে তোলার জন্য লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি অবিচ্ছেদ প্রচেষ্টা।
পরিশেষে বলা যায় যে, শারীরিক শিক্ষা কাকে বলে: যে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ব্যক্তি দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও নান্দনিক বিকাশ সাধনের মাধ্যমে সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হতে পারে তাকে শারীরিক শিক্ষা বলে।
শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
শারীরিক শিক্ষার মধ্যে শিক্ষার্থীর সর্বতোমুখী উন্নতির দিকে বিশেষভাবে বিদ্যমান রয়েছে। মহান শিক্ষাবিদ ম্যাসলার মতে,শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজন তিনটি স্তরে ভিন্ন ভিন্ন রকম ভাবে সাজানো রয়েছে, এগুলো হলো:
১.) শারীরিক প্রয়োজন:
শারীরিক কিছু প্রয়োজনের জন্য শারীরিক শিক্ষা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যেগুলো হলো:
- দৈহিক গঠন সুন্দর ও মজবুত করে।
- শারীরিক সক্ষমতার উন্নতি ঘটায়।
- সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- খেলাধুলার সকল কৌশল শেখায়।
- দৈনন্দিন জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সাবলীল ভাবে করার সামর্থ্য বাড়ায়।
- সুস্থ মন এবং এর সঙ্গে সুস্থ শরীর গঠনে কাজ করে।
এগুলো হলো শারীরিক শিক্ষার কিছু শারীরিক প্রয়োজন যেগুলো তারা আমরা শারীরিকভাবে উপকৃত হতে পারি।
আর শারীরিক শিক্ষা অবশ্যই আমাদের শরীরের ও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২.) মানসিক প্রয়োজন:
শারীরিক শিক্ষা আমাদের মানসিক সুস্থতার জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন হয়, কারণ:
- শ্রেণী কক্ষে পড়াশোনা করার সময়, একেঘেমিতা দূর করে।
- চারিত্রিক গুণাবলির এর বিকাশ ঘটায়।
- আত্ম সচেতন, আত্মনির্ভরশীলতা এবং আত্ম উপলব্ধি ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- আশেপাশের পরিবেশের সঙ্গে নিচে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে।
- সৃজনশীলতার অনুভূতি মনের মধ্যে জাগ্রত করে।
- খেলাধুলায় অংশগ্রহণ এবং সকল ক্ষতিকারক নেশাদ্রব্য থেকে দূরে রাখে।
এগুলো হলো শারীরিক শিক্ষার মানসিক কিছু প্রয়োজনীয়তা যেগুলো পূরণ করার জন্য আমরা শারীরিক শিক্ষা গ্রহণ করবো।
৩.) সামাজিক প্রয়োজন:
সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে শারীরিক শিক্ষা অনেক বেশি প্রয়োজন হয়ে থাকে, এর কারণগুলো হলো:
- অন্তর্ভুক্তিবোধ জায়গায় এবং দলের সদস্য হিসেবে পরিপূর্ণভাবে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত হয়।
- বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুসারে নেতৃত্ব প্রদানে বিকাশ ঘটায়।
- দেশের ও সমাজের প্রচলিত সাংস্কৃতিক পরিবেশের সঙ্গে পরিচয় ঘটে।
- ধনী গরিব, উঁচু-নিচু ইত্যাদির ভেদাভেদ হতে মানসিকভাবে দূরে রাখে এবং উদার মানসিকতার বিকাশ ঘটায়।
- গণতান্ত্রিক মনোভাব গঠন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে গড়ে তোলে।
মূলত এই কয়েকটি কারণের জন্য শারীরিক শিক্ষা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমাদের সামাজিক ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে। আমাদের শরীর এবং মন উভয় সুস্থ রাখার মাধ্যম হচ্ছে শারীরিক শিক্ষা এবং সেই সাথে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টি হচ্ছে শারীরিক শিক্ষার কাজ।
শেষ কথা:
আমরা ইতিমধ্যে শারীরিক শিক্ষা সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এই পোস্টে উল্লেখ করেছি যেগুলো অবশ্যই আপনাকে উপকৃত করবে। শারীরিক শিক্ষা হচ্ছে ওই শিক্ষা যে শিক্ষার মাধ্যমে আমরা শারীরিক বিভিন্ন গঠন সম্পর্কে জানতে পারি এবং কোলাকৌশল জানতে পারে।
শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন কলা কৌশল জানার মাধ্যমে নিজের শরীরকে সুস্থ করে রাখতে পারে এবং রোগমুক্ত করতে পারি। আবার সেই সাথে নিজের প্রতিরক্ষা করার ক্ষেত্রে এবং যেকোনো আক্রমণ রোধ করার ক্ষেত্রে সহায়তা পায়।
এই শিক্ষা আমাদের শরীর এবং মন উভয় ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে এবং মনের দিন দিন উন্নতি ঘটিয়ে শরীর সুস্থ রাখে।
আপনিও যদি আপনার শরীর এবং মন সুস্থ রাখতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে শারীরিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং নিজেকে সে অনুযায়ী পরিচালনা করতে হবে।
শরীর এবং মন সুস্থ থাকার মাধ্যমে আমরা যাবতীয় শান্তি উপভোগ করতে পারে এবং যেকোনো কাজ নিজের কর্মদক্ষতার মাধ্যমে করতে পারি। আমরা যে সকল তথ্য উল্লেখ করেছি সেগুলো তথ্য গ্রহণ করার মাধ্যমে আশা করা যায় আপনারা শারীর শিক্ষা গ্রহণে অনেক বেশি উদ্যোগী হয়ে উঠবেন।
আরও পড়ুন: ব্যবসায় শিক্ষা কি বা কাকে বলে?