রেজিস্ট্যান্স কাকে বলে: ইলেকট্রন বা বিদ্যুৎ প্রবাহের পথে সৃষ্ট হওয়া বাধাকে রেজিস্ট্যান্স বলে। রেজিস্ট্যান্স এর আরও একটি প্রতিশব্দ আছে এবং সেটি হলো রোধ, এটি আমরা পদার্থবিজ্ঞানে ব্যবহার করি।
আমরা পদার্থবিজ্ঞানে চল তড়িৎ এবং স্থির তড়িৎ এই দুইটি অধ্যায়ের মধ্যে রেজিস্ট্যান্স বা রোধ এই শব্দটি সম্পর্কে পরিচিত হই। রেজিস্ট্যান্স বা রোধ হচ্ছে বিদ্যুৎ প্রবাহে বাধা দানকারী একটি একটি বিশেষ বস্তু এবং ইহার দ্বারা বিদ্যুৎ প্রবাহ সঠিক পরিমাপে করা যায়।
আমরা সকলে জানি যে প্রত্যেকটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস সমমানের ভোল্টেজ সমৃদ্ধ ইলেকট্রন বা বিদ্যুৎ গ্রহণ করে না। আর এক্ষেত্রে উপযুক্ত বিদ্যুৎ ডিভাইসের মধ্যে প্রবেশ করানোর জন্য এবং বিদ্যুতের দ্বারা করানো জানতে ত্রুটি পরিলক্ষিত না করার জন্য রেজিস্ট্যান্স ব্যবহার করা হয়।

আমরা বাসা বাড়িতে যেয়ে সকল বিদ্যুতে চালিত যন্ত্র ব্যবহার করে সেগুলোতে সঠিক মত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য রেজিস্ট্যান্স ব্যবহার হয়। আর পদার্থবিজ্ঞানের রেজিস্ট্যান্স এর মান নির্ণয় করার জন্য সূত্র রয়েছে এবং এই সূত্র ব্যবহার করে সঠিক রেজিস্ট্যান্স লাগাতে হয়।
আমরা যে কোন একটি রেজিস্টেন্স ব্যবহার করে কখনো প্রত্যেকটি ডিভাইসে বা যন্ত্রের সঠিক বিদ্যুৎ প্রবাহ করতে পারবো না।
এর জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন মানের রেজিস্ট্যান্স ব্যবহার করতে হয় এবং উপযুক্ত রেজিস্ট্যান্স ব্যবহারের জন্য এর সূত্র প্রয়োগ করতে হয়।
যেহেতু আমরা ইতিমধ্যে রেজিস্টেন্স সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছি তাহলে চলুন এবার এই রেজিস্টেন্স নির্ণয়ের সূত্র সম্পর্কে কিছু ধারণা অর্জন করি।
রেজিস্ট্যান্স নির্ণয়ের সূত্র?
রেজিস্ট্যান্স নির্ণয়ের সূত্রটি হলো: R=V/I অর্থাৎ রেজিস্ট্যান্স সমান হল ভোল্টেজ ভাগ কারেন্ট। রেজিস্ট্যান্স নির্ণয়ের সূত্রটি যে সূত্র থেকে পাওয়া যায় সে সূত্রটি হলো: V=IR, এটি হচ্ছে ওহমের সূত্র।
আমরা পদার্থবিজ্ঞানে স্থির তড়িৎ বা চল তড়িতে বিভিন্ন মান নির্ণয়ের সময় রেজিস্ট্যান্স বা রোধের মান নির্ণয় করি।
আর এই রেজিস্ট্যান্স বা রোধের মান নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজন পড়ে সূত্র এবং সূত্র ব্যবহার করে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়।
উপরে আমি সূত্রটি উল্লেখ করেছি এবং আপনারা এই সূত্র ব্যবহার করে খুব সহজে রেজিস্ট্যান্স বা রোধের মান বের করতে পারবেন।
পদার্থবিজ্ঞানের রোধের মান নির্ণয় করলে চলে না বরং তুল্যরোধ বের করতে হয় এবং এর জন্য কয়েকটি রেজিস্টেন্স যোগ করতে হয়।
তবে বাহ্যিকভাবে ব্যবহারের দিক দিয়ে রেজিস্টেন্সের একটি ব্যবহার জানলেই হবে এবং উপযুক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য সঠিক রেজিস্ট্যান্স ব্যবহার করলেই হবে। বিদ্যুৎ প্রবাহের বাধা দানকারী উপাদানে হচ্ছে রেজিস্ট্যান্স এবং এটি সম্পূর্ণরূপে বিদ্যুৎ কে বাধা দিতে পারে বা সামান্য বিদ্যুৎ প্রবাহ করতে পারে।
অর্থাৎ এই রেজিস্ট্যান্স ব্যবহার করে আপনি আমি খুব সহজে পরিমাণ মতো বিদ্যুৎকে বাধা দিয়ে সঠিক বিদ্যুতে চলাচল করাতে পারব। আর এই বিদ্যুতের চলাচল করাতে বাহ্যিক কোন শক্তির প্রয়োজন আমাদের দিতে হবে না বরং রেজিস্ট্যান্স ব্যবহার করলেই হয়ে যাবে আমাদের সকল সমস্যার সমাধান।
আমরা তো রেজিস্ট্যান্স নির্ণয়ের সূত্র সম্পর্কে জানলাম তবে এর একক সম্পর্কে জানালাম না, কেননা পদার্থবিজ্ঞানে একক অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
তাই চলুন এবার জেনে নেই রেজিস্ট্যান্স এর একক কি বা কি প্রতীক ব্যবহার করে রেজিস্ট্যান্স প্রকাশ করা হয়।
রেজিস্ট্যান্স এর প্রতীক এবং একক
প্রথমেই বলে নেই যে, এই রেজিস্ট্যান্স এর একক নির্দিষ্ট হলেও প্রকাশ করার ক্ষেত্রে এর প্রতীক ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কেননা প্রত্যেক লেখার সময় আমাদেরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে লিখতে হয় এবং এটি প্রশ্ন অনুযায়ী উল্লেখ করতে হয়।
তবে রেজিস্ট্যান্স লেখার প্রতিককে আমরা অত্যাধিক হারে ভাগ করতে পারি না বরং কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে পারি।
রেজিস্ট্যান্স এর প্রতীক দুই ভাবে লেখা যায়, যথা:
- রেজিস্ট্যান্স এর ইংরেজি প্রতীকঃ R
- রেজিস্ট্যান্স এর গ্রিক প্রতীকঃ Ω
রেজিস্ট্যান্স এর একক হলো: ohm বা ওহম। উদাহারনঃ R= 10Ω, 12Ω, 15Ω, 20Ω ইত্যাদি।
এগুলো হলো রেজিস্ট্যান্স এর প্রতীক ও একক এবং এ প্রতীক ও একক ব্যবহার করে আপনি আমি খুব সহজে রেজিস্টেন্স চিহ্নিত করতে পারি। অর্থাৎ এ প্রতীকগুলো কোন সংখ্যার সাথে যুক্ত থাকলে আমরা খুব সহজে রেজিস্ট্যান্স এর মান চিহ্নিত করে প্রকাশ করতে পারি।
যেহেতু অবশ্যই বিদ্যুৎ প্রবাহ সঠিকভাবে করার ক্ষেত্রে রেজিস্ট্যান্স দরকার হয় সুতরাং এর সূত্র, প্রতীক এবং একক জানাও আমাদের জন্য দরকার।
কেননা ইহার মাধ্যমে আমরা যেকোন জটিল হিসাব নিকাশ করতে পারবো বিদ্যুৎ, বিভব ও তড়িৎ প্রবাহের মান বের করার ক্ষেত্রে।
রেজিস্ট্যান্স এর প্রকারভেদ?
রেজিস্ট্যান্সকে আমরা বিভিন্নভাবে ভাগ করতে পারি এবং ব্যবহারের মানের উপর ভিত্তি করে এগুলোর মানে পরিবর্তন হয়ে থাকে ও নামের পরিবর্তন হয়ে থাকে।
চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক রেজিস্টেন্সের প্রকারভেদ সম্পর্কে যাবতীয় জ্ঞান ও তথ্য জানিয়েছে উল্লেখ করবো।
মানের পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে রেজিস্ট্যান্স প্রধানত দুই প্রকার, যথা:
- লিনিয়ার রেজিস্ট্যান্স (Linear resistance)
- নন লিনিয়ার রেজিস্ট্যান্স (Non linear resistance)
লিনিয়ার রেজিস্ট্যান্স (Linear resistance): যে সকল রেজিস্ট্যান্স এর মান সব সময়ের জন্য একই থাকে কিংবা অপরিবর্তিত থাকে তাকে লিনিয়ার রেজিস্ট্যান্স বলে।
লিনিয়ার রেজিস্ট্যান্স আবার দুই প্রকার, যথা:
- ফিক্সড রেজিস্ট্যান্স (Fixed resistance)
- ভেরিয়েবল রেজিস্ট্যান্স (Variable resistance)
ফিক্সড রেজিস্ট্যান্স (Fixed resistance): যে সকল রেজিস্ট্যান্স এর মান আমরা কখনোই পরিবর্তন করতে পারি না বা পারবো না সে সকল রেজিস্ট্যান্স কে ফিক্সড রেজিস্ট্যান্স (Fixed resistance) বলে।
ফিক্সড রেজিস্ট্যান্স কে আবারো নয় ভাগে ভাগ করা যায়, যথা:
১. কার্বন কম্পোজিট (Karbonn composite)।
২. কার্বন পাইল (Karbonn Pile)।
৩. কার্বন ফিল্ম (Karbonn field by carbon film)।
৪. প্রিন্টেড কার্বন (Printed carbon)।
৫. থিক এবং ফিল্ম (Thick and film or field)।
৬. মেটাল ফিল্ড (Metal field)।
৭. মেটাল অক্সাইড ফিল্ড (Metal oxide field)।
৮. ওয়্যার উন্ড (Wire wound)।
৯. ফয়েল (Foil)।
এগুলো হলো ফিক্সড রেজিস্টার এর কিছু প্রকারভেদ তবে ভেরিয়েবল রেজিস্ট্যান্স এর কোন প্রকারভেদ নেই শুধু সংজ্ঞা জানলে আমাদের হয়ে যাবে।
আর ফিক্সড রেজিস্ট্যান্স আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকে এবং সে অনুযায়ী উপযুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে আমাদের বর্তনীতে।
ভেরিয়েবল রেজিস্ট্যান্স (Variable resistance)
ভেরিয়েবল রেজিস্ট্যান্স (Variable resistance): যে সকল রেজিস্ট্যান্স এর মান আমরা আমাদের ইচ্ছেমতো কমাতে কিংবা বাড়াতে অর্থাৎ পরিবর্তন করতে পারে সেগুলোকে ভেরিয়েবল রেজিস্ট্যান্স (Variable resistance) বলে।
নন লিনিয়ার রেজিস্ট্যান্স এর সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ
নন লিনিয়ার রেজিস্ট্যান্স (Non linear resistance): যে সকল রেজিস্ট্যান্স এর মান সূর্যের আলো কিংবা তাপের কারণে পরিবর্তন হয়ে থাকে সেগুলোকে নন লিনিয়ার রেজিস্ট্যান্স বলে।
এই নন লিনিয়ার রেজিস্ট্যান্স আবার তিন প্রকার, যথা:
- থার্মিস্টর (Thermistor)।
- এলডিআর রেজিস্টেন্স (LDR resistance)।
- ভ্যাস্টার রেজিস্ট্যান্স (Varistors Resistance)।
রেজিস্টেন্স এর প্রকারভেদে সহ যাবতীয় তথ্য নিয়ে আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণরূপে তথ্য দিয়ে পরিপূর্ণ করে সাজানো হয়েছে।
সর্বশেষে আপনাকে যে বিষয়ের উপর বেশি মাথা খাটাতে হবে সেটি হচ্ছে রেজিস্ট্যান্স কি বা রেজিস্ট্যান্স কাকে বলে এই বিষয়ের উপর।
বিদ্যুৎ প্রবাহের বাধা দানকারী উপাদান কে রেজিস্টেন্স বলে এবং এই রেজিস্ট্যান্স ব্যবহার করে উপযুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়। বিদ্যুৎ প্রবাহ করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার অসুবিধা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রেজিস্ট্যান্স এর ভূমিকা ও গুরুত্ব বিদ্যুৎ বর্তনীতে অনেক বেশি।
ধন্যবাদ, শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য এবং রেজিস্টেন্সের সংজ্ঞা ও সুত্র সম্পর্কে প্রদান করা যাবতীয় তথ্য ধারণ করার জন্য, শুভ বিদায়।
আরও পড়ুন: ইঞ্জিন কাকে বলে?