রিসালাত শব্দের অর্থ কি: রিসালাত একটি আরবি শব্দ, রিসালাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বার্তা, চিঠি, চিঠি পৌঁছানো, পয়গাম, সংবাদ, কোন কাজের দায়িত্ব পালন, দায়িত্ব বহন এবং বাণী পৌঁছানো ইত্যাদি।
রিসালাতের সংজ্ঞা: ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, মহান আল্লাহ তায়ালার পবিত্র বাণী মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ও কর্তব্যকে বলা হয় রিসালাত। যিনি রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেন বা পালন করেছিলেন তিনাকে বলা হয় রাসুল। রাসুল শব্দের বহুবচন হচ্ছে রুসুল এবং রুসুলগণ রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আল্লাহ তাআলার পবিত্র বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া ও সেই সাথে মানুষকে জানিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে রিসালাত বলে। রিসালাতের দায়িত্ব পালন করার জন্য যুগে যুগে আল্লাহ তাআলা অনেক নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং রিসালাতের দাওয়াত দিতে বলেছেন।
বর্তমানে আমরা যত সকল তথ্য ইসলাম সম্পর্কে পাই তার প্রত্যেকটি রিসালাতের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি।
আর রিসালাতের দায়িত্ব সহজ কোনো দায়িত্ব নয় বরং ইহার মধ্যে রয়েছে অনেক বড় কাজ ও শ্রম।
রিসালাতের পরিচয়
মানবজাতির হেদায়েতের জন্য মহান আল্লাহ্ যুগে যুগে অনেক নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন, শুধু প্রেরণ করেননি তিনি ইনাদের মাঝে ওহী পাঠাতেন।
যে ওহী দ্বারা বাণী দ্বারা রাসূলগণ মানব জাতিকে হেদায়েত প্রদান করেন।
মহান রব্বুল আলামীন হতে প্রেরণকৃত সকল ওহি বা বাণীকে মানুষের মাঝে হেদায়েতের জন্য পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কে বলা হয় রিসালাত। রিসালাতের সবচেয়ে বড় যে পরিচয় সেটি হচ্ছে এটি একটি দায়িত্ব যা রাসূলগণের উপর সর্বপ্রথম এসেছিল এবং তারপর নবীগণ এবং তারপর সাহাবীগণ এবং সর্বশেষ উম্মত গণের উপর।
আমাদের মাঝেও রিসালাতের দায়িত্ব রয়েছে, আমরা যা জানি ঠিক ততটুকুই অন্যের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার এই দায়িত্বকেও রিসালাত বলা যেতে পারে।
ইসলামকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠা করার জন্য রিসালাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং মানুষ হেদায়েত পেতে সক্ষম হয়েছে।
মানুষকে সম্পূর্ণরূপে হেদায়েত দিতে এবং ইসলামের দিকে ধাবিত করতে রিসালাত অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রিসালাতের পালন করা আমাদের সকলের পক্ষে অনেক বেশি দরকার মুসলিম হয়ে থাকার জন্য। ইসলামকে পরিপূর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে রিসালাতের গুরুত্ব অনেক বেশি এবং সেই সাথে এর প্রয়োগ রয়েছে অনেক।
রিসালাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব
জীবন আদর্শের জন্য রিসালাতের বিশ্বাস স্থাপন করা কেননা, তাওহীদের বিশ্বাসের পাশাপাশি প্রত্যেক মুমিন ও মুসলমান ভাইদেরকে রিসালাতে বিশ্বাস করতে হয়।
ইসলামের মূল বাণী অর্থাৎ কালিমা তাইয়্যবা এটি হচ্ছে একটি ওহী এবং ইহার মাধ্যমে রিসালাতের বিবৃত সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।
রিসালাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব অপরিসীম কেননা ইহার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তাআলার পরিচয় এবং সেইসাথে ইসলামের সকল জীবন আদর্শ এবং পরিচয় জানতে পারি। ইহার মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারে আর পরকালীন জীবনকে সুখময় করে গড়ে তুলতে পারি।
পরকাল যেহেতু অবধারিত, এ বিষয়ে যদি আমাদের কোন জ্ঞান না থাকে তবুও আমাদেরকে এখানে উপস্থিত হতে হবে।
সুতরাং রিসালাতের বিশ্বাস আমাদের থাকতেই হবে, ইহার মাধ্যমে আমরা সে পরকালীন জীবনে শান্তি পাব এবং দুনিয়াতে লাঞ্ছিত হবো না।
প্রকৃতপক্ষে রিসালাত গ্রহণ বা বিশ্বাস গ্রহণ না করার মাধ্যমে কেউ মুমিন হতে পারে না। মানুষের জ্ঞান হচ্ছে সীমাবদ্ধ এবং এ স্বল্প জ্ঞান দ্বারা অনন্ত, অসীম আল্লাহ তায়ালার পূর্ণ পরিচয় লাভ করা সম্ভব নয়।
আর এই সীমাবদ্ধ জ্ঞানের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা পরিচয় লাভের জন্য রিসালাতের ওপর বিশ্বাস গ্রহণ করা আমাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
রিসালাতের উদ্দেশ্য বা নবী রাসুল প্রেরণের উদ্দেশ্য
আমরা সকলেই জানি যে নবী-রাসূলগণ এসে আমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে বিশেষ ধারণা প্রদান করেছেন এবং আমাদেরকে মুসলমান করেছেন।
আর এখান থেকে এটি স্পষ্টভাবে ধারণা পাওয়া যায় যে হেদায়েত দেওয়া ও ইসলাম সম্পর্কে জানা নয় হচ্ছে রিসালাতের কাজ।
মানবজাতির হেদায়েতের জন্য এবং ইসলামের পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে অনেক নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। নবুয়াত ও রিসালাতের দায়িত্ব গ্রহণ করার মাধ্যমে তাদেরকে বেশ কিছু উদ্দেশ্য ও কাজ সাধন করতে হতো।
রিসালাতের কতিপয় কিছু উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হলো:
- রিসালাত মানুষের নিকট আল্লাহ তা’আলা পরিচয় তুলে ধরে। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা এর জাত-সিফাত, ক্ষমতা ও নিয়ামত ইত্যাদি বিষয় পরিচয়।
- সত্য ও সুন্দর জীবনের দিকে আহ্বান করাই হচ্ছে রিসালাতের উদ্দেশ্য।
- আল্লাহ তাআলার ইবাদত ও ধর্মীয় নানা বিধি-বিধান এর জ্ঞান দেওয়া রিসালাতের উদ্দেশ্য।
- পরকালীন জীবন সম্পর্কে ধারণা প্রদান করাই হচ্ছে রিসালাতের প্রধান উদ্দেশ্য।
এগুলো হলো কিছু রিসালাতের উদ্দেশ্য বা নবী-রাসূল প্রেরনের উদ্দেশ্য এবং এর উদ্দেশ্য গুলো হচ্ছে মানুষকে হেদায়েত দেওয়া।
এই রিসালাতের যতগুলো উদ্দেশ্য রয়েছে তার প্রত্যেকটির মূল কথা হলো হেদায়াত বাণী বা মানুষকে ইসলামের দিকে হেদায়েত দেওয়া।
আর রিসালাতের কাজ দ্বারা মূলত আমরা রিসালাতের উদ্দেশ্য বা নবী রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে পারি। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেদায়েত দেওয়ার জন্য এবং কল্যাণ লাভ করার জন্য যা কিছু প্রেরণ করেছেন বার্তা হিসেবে তার প্রত্যেকটি রিসালাতের অন্তর্ভুক্ত।
আর উপযুক্ত সকল বাণী জানতে পারা এবং তারপর অন্যের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সর্ব উত্তম কাজ ও আমাদের দায়িত্ব।
অবশ্য আমাদেরকে আমাদের দায়িত্ব নিয়ে একটু কঠোর থাকতে হবে এবং রিসালাতের দাওয়াত সকলের মাঝে পৌঁছে দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আরও পড়ুন: শরিয়ত কাকে বলে?