আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব যে যাকাত কাদের উপর ফরজ অর্থাৎ কাদেরকে অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হবে। যাকাত হচ্ছে ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি এবং নিসাব পরিমাণ সম্পদ যার রয়েছে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরজ।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফের সুরা বাকারা এর ২৬৭ নাম্বার আয়াতের মধ্যে বলেন:
হে মুমিনগণ তোমরা তোমাদের বৈধ উপার্জন ও আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যে শস্য উৎপন্ন করি তা থেকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যায় {যাকাত} করো।
আবার সূরা বাইয়্যিনাহ এর ৫ নম্বর আয়াতের মধ্যে মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন:
তাদের এই মর্মে আদেশ করা হইয়াছে যে তারা একাগ্রচিত্তে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার এবাদত করবে, যথাসময়ে সালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে আর এটাই হচ্ছে সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন।
যাকাতের গুরুত্ব ইসলামে অপরিসীম এবং যাকাত আদায় করা হলে সম্পাদক কমে যায় না বরং যাকাত সম্পদকে পবিত্র করে।
যাকাত আদায়কারীর উপর মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, আখেরাতে সে মুক্তি পায়, তাকে জান্নাত দেওয়া হয়।
মহান আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন যে, যারা সোনা ও রুপা পুঞ্জিভূত রাখে আর মহান আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় তা খরচ করে না তাদের বেদনাদায়ক আযাবে সংবাদ দাও।
মহান আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন, যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা ( জমানো সম্পদ) গরম করা হবে অতঃপর তা( জমানো সম্পদ) দ্বারা কপালে ও পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। আর বলা হবে এটা তা ই যা তোমার নিজের জন্য জমা করে রেখেছিলে সুতরাং তোমরা যা জমা করে রেখেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো।
যাকাত কাদের উপর ফরজ
নিচে যাকাত কাদের উপর ফরজ তাদের তালিকা দেওয়া হলো:
- মুসলিম হওয়া,
- নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া,
- সম্পদের উপর পূর্ণ মালিকানা থাকা,
- আক্কেল হওয়া,
- বালেগ হওয়া,
- সম্পদের মালিকানা পূর্ণ এক বছর হওয়া,
- স্বাধীন হওয়া।
ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী উপরে উল্লেখিত ৭ টি শর্ত যদি কোন নর ও নারীর কাছে পাওয়া যায় তাহলে তার যাকাত আদায় করা ফরজ।
যাকাত প্রদান করার জন্য ওই ব্যক্তিকে অবশ্যই অবশ্যই মুসলিম হতে হবে বা মুসলমান বা ইসলাম ধর্ম পালনকারী হতে হবে।
যাকাত প্রদানের জন্য সেই ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে বা অধিকারী হতে হবে।
সেই নিশা পরিমাণ সম্পদের উপর তার আবার পূর্ণ মালিকানা থাকতে হবে পূর্ণ মালিকানা না থাকলে হবে না। তাকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে এবং আক্কেল ওয়ালা অর্থাৎ ভালো মানুষ হতে হবে।
এই সকল বিষয়ে যদি একজন মানুষের মধ্যে আর পাওয়া যায় তাহলে তাকে অবশ্যই অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হবে।
আর সে যদি যাকাত আদায় না করে তাহলে সে গুনাহগার হবে এবং আখেরাতে তাকে কঠিন আজাব ভোগ করতে হবে।
যাকাত কাদের উপর ফরজ এই বিষয়টি নিয়ে আমি এখানে উল্লেখ করছি এবং আপনাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। আর আমি আশা রাখতেছি যে আমি আপনাকে অল্প কিছুটা হলেও বুঝাতে পেরেছি বা জানাতে পেরেছি।
নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও যাদের উপর যাকাত ফরজ নয়
যাকাত আদায়কারীকে অবশ্যই অবশ্যই মুসলিম বা মুসলমান হতে হবে অমুসলিমের উপর যাকাত ফরজ নয়।
আর যাকাত আদায় করার জন্য বা যাকাত প্রদান করার জন্য সর্বপ্রথম যে শর্ত বাজে কাজ তা হচ্ছে মুসলিম হওয়া।
পরাধীন বা পরাধীন ক্রীতদাসদের উপর যাকাত ফরজ নয় যদিওবা সে নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হয়।
নিসাবের চেয়ে কম পরিমাণ সম্পদ অধিকারের উপর যাকাত আদায় করা ফরজ নয় তবে চাইলে সে আদায় করতে পারেন।
উন্মাদ অথবা পাগলের উপর যাকাত আদায় করা ফরজ বিধান নয়।
অপ্রাপ্তবয়স্ক অথবা সহজ ভাষায় নাবালেক হলে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরজ নয়।
যৌথ সম্পত্তিতে এককভাবে নিসাব পরিমাণে সম্পদের মালিক না হওয়া।
সম্পদের মালিকানা পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত না হওয়া কিন্তু এই সম্পদ যদি তার কাছে বছরে শুরুতে থাকে এবং মাঝের দিকে শেষ হয়ে যায় আবার শেষের দিকে তার কাছে এই সম্পদে চলে আসে তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন কাদের উপর যাকাত আদায় করা ফরজ না যদিও বা তার নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে থাকে।
আর কি সমস্যার কারণে তাদের উপর যাকাত আদায় করা ফরজ নয় বা কেন তাদের যাকাত দিতে হবে না।
শেষ কথা:
এই পোস্টের মধ্যে আমি যাকাত কাদের ওপর ফরজ সে সম্পর্কে আলোচনা করেছিস খুবই সংক্ষিপ্তভাবে।
আপনি যদি এটি বিশ্লেষণ সহকারে জানতে চান তাহলে আপনি একজন ভালো আলেমের কাছ থেকে ভালোভাবে জেনে নিবেন।
কেননা আলেম এর সাথে পরামর্শ করার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন যে আপনার কাছে যাকাত দেওয়ার মতো সম্পদ আছে কি।
এখানে আমি শুধু আপনাদেরকে মূল যে বিষয়টুকুন সেটুকু বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
কিন্তু আপনি যদি যাকাত আদায় করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই একজন ভালো অভিজ্ঞ আলেমের কাজকে পরামর্শ করতে হবে।
আরও পড়ুন: আল্লাহ সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেছেন?