যাকাত কাকে বলে? যাকাত দেওয়ার নিয়ম ও পরিমাণ

যাকাত কাকে বলে: কোন মুসলিম ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে, বছরান্তে তার সম্পদের শতকরা ২.৫০ হারে নির্দিষ্ট খাতে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করাকে যাকাত বলা হয়।

যাকাত অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া এবং পবিত্রতা, আর যেহেতু যাকাত প্রদানের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন হয় এবং সম্পদ বৃদ্ধি পায় তাই একে যাকাত বলা হয়।

মালের অনির্দিষ্ট অংশকে যাকাত বলে যা আল্লাহ তাআলার হুকুম অনুযায়ী গরিব, মুখাপেক্ষী এবং অন্যান্যদেরকে দিয়ে তাদেরকে সে মালের মালিক বানিয়ে দেয়।

যাকাত কাকে বলে
যাকাত কাকে বলে?

আমাদের সমাজে অনেকে আছে যারা অনেক গরিব আবার অনেকে আছে মধ্যবিত্ত এবং আবার অনেকেই আছে অনেক ধনী।

আর সকল ধনী ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ করেছেন আল্লাহ তা’আলা এবং এটি অবশ্যই একটি ফরজ ইবাদত প্রত্যেকটি ধনী ব্যক্তির জন্য।

মধ্যবিত্ত হয়ে যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অধিক পরিমাণ সম্পদে থাকে তাহলে আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তাকে যাকাত দিতে হবে।

আর নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি আপনি বছরের শুরুতে না হয় শেষে গিয়ে হন তবে আপনাকে ওই সম্পদের যাকাত প্রদান করতে হবে।

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি ও কি কি?

যাকাত সকলের জন্য নয় বরং কিছু কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যাদের উপর যাকাত ফরজ হবে এবং যাকাত দিতে হবে।

এই রকম ব্যক্তি খুঁজার জন্য বা যাকাত ফরজ হয়েছে কিনা তার জন্য শর্ত রয়েছে যার ভিত্তি করে যাকাত দিতে হয়।

এই শর্ত গুলো যদি আপনার সাথে মিলে যায় তাহলে অবশ্যই আপনাকে যাকাত দিতে হবে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ বিলিয়ে দিতে হবে।

জাকাত বা যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত ৭টি, যথা:

  • প্রথমে মুমিন এবং মুসলমান হওয়া।
  • মুক্ত থাকা বা স্বাধীন হওয়া বা অন্যের গোলামী না করা।
  • বিবেক সম্পন্ন হওয়া কিংবা পরিপূর্ণ জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া।
  • বালেগ হওয়া বা পরিপূর্ণ বয়স সীমায় পৌঁছানো।
  • যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নিসাব পরিমাণ মাল ও সম্পদের অধিকারী হওয়া।
  • নিসাব পরিমাণ সম্পদ নিজের মৌলিক প্রয়োজনীয় বিষয় হতে অতিরিক্ত এবং ঋণমুক্ত হওয়া।
  • নিসাব পরিমাণ সম্পদ ও মালের অধিকারী হওয়ার পর সেই মালের বয়স এক বছর হওয়া।

এগুলো হলো যাকাত ফরজ হওয়ার কিছু শর্ত এবং এর শর্ত অনুযায়ী আপনাকে যাকাত দিতে হবে নেকি পাওয়ার জন্য। অবশ্যই আমরা যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন নিজের সম্পদ পবিত্র করতে পারে ঠিক অপরদিকে আমরা নিজেকে পাপ মুক্ত করতে পারি এবং নেকি অর্জন করতে পারি।

যাকাত যদি আপনার উপর ফরজ হয় তাহলে অবশ্যই আপনাকে এটি পালন করতে হবে না হলে যাকাতের গুনাহ আমলনামায় দেওয়া হবে।

যে ব্যক্তি যাকাত এ দিবে না তার সম্পদ অপবিত্র হবে এবং যাকাতের হক আদায় না করার মাধ্যমে জাহান্নাম হতে পারে।

যাকাত দেওয়ার নিয়ম ও পরিমাণ

আপনি যদি লক্ষ্য করেন যে আপনার উপর যাকাত ফরজ হয়েছে তাহলে অবশ্যই আপনাকে যাকাতের নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ গরিব দুঃখীকে দিতে হবে। কিন্তু আপনি কতটুকু দিবেন বা কি পরিমাণে যাকাত দিবেন এতে জানতে হবে কেননা আপনি যদি কম দেন তাহলে এক্ষেত্রে যাকাত আদায় হবে না।

তাই অবশ্যই আপনাকে যাকাত দেওয়ার পরিমাণ এবং কিভাবে যাকাত দিবেন এর নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে ভালোভাবে। কেননা আপনি যাকাত এ দিলেন কিন্তু তা নিয়মের মধ্যে পড়লো না তাহলে আপনার যাকাত আদায় হবে না এবং সেই সাথে আপনার বিলিয়ে দেওয়া সম্পদ বৃথা যেতে পারে।

আমরা যেভাবে যাকাত দিব বা যাকাত দেওয়ার নিয়ম:

  • মুসলিম হয়ে, মনের মাঝে যাকাত দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকার মাধ্যমে যাকাত প্রদান করা। 
  • যাকাত প্রদান করার পূর্বে যাকাত দেওয়ার সহী নিয়ত করা।
  • যাকাত দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মালের বয়স এক বছর পূর্ণ হওয়া।
  • নিজেকে বিবেক সম্পন্ন হওয়া এবং কি উদ্দেশ্যে যাকাত প্রদান করতেছেন তার ধারণা রাখা।
  • মানুষ বা লোক দেখানো যাকাত প্রদান করা হতে বিরত থাকা বা থাকার চেষ্টা করা।

যাকাত দেওয়ার পরিমাণ:

যাকাত হচ্ছে মালের ৪০ ভাগের এক ভাগে দেওয়া ফরজ এবং এই হিসেবে ১০০ ভাগের মধ্যে ২.৫ ভাগ যাকাত দেওয়া ফরয।

টাকার হিসাব করতে গেলে প্রতি 100 টাকায় আড়াই টাকা এবং ১ হাজার টাকায় ২৫ টাকা হিসেবে যাকাত প্রদান করতে হবে।

রুপার হিসাব করতে গেলে প্রথমে এর নিসাব পরিমাণ রুপা আপনার কাছে থাকতে হবে। রুপার নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলো ৫৪ তলা দুই মাশা পরিমাণ ওজনের রুপা।

৫৪ তলা দুই মাশা পরিমাণ ওজনের রুপার যাকাত হবে একতলা চার মাশা দুই রত্তি রুপা।

স্বর্ণের যাকাত এর জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলো: সাততলা সাড়ে আট মাশা স্বর্ণ এবং এর যাকাত হল দুই মাশা আড়াই রক্তি স্বর্ণ।

আরও পড়ুন: যাকাত শব্দের অর্থ কি?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top