মুনাফিক কাকে বলে: যে নিফাক করে তাকে মুনাফিক বলে। অন্তরের মধ্যে কুফর এবং অবাধ্যতা গোপন রেখে মুখে ইসলামকে স্বীকার করার নাম হচ্ছে নিফাক। আর যে ব্যক্তি নিকশা করে তাকে বলা হয় মুনাফিক এবং মুনাফিকরা হল অন্তরের দিক থেকে কাফির ও অবাধ্য।
তবে বাহির ভাবে তারা ইসলাম ও ঈমানকে স্বীকার করে এবং তারা স্বাভাবিক মুসলমানদের নিয়ে ইবাদত পালন করে থাকে।
কিন্তু তাদের অন্তরে থাকে কুফর ও অবাধ্যতা তারা চায় ইসলামকে ধ্বংস করতে ইসলামের সাথে থেকে ইসলামকে সর্ব শান্ত করে দিতে।
এর ব্যবহারিক অর্থ হলো যে অন্তরের মধ্যে একরকম ভাব রেখে বাহিরে শারীরিকভাবে বা আচরণগত দিক থেকে বিপরীত অবস্থা প্রকাশ করা। অর্থাৎ অন্তরের মধ্যে বিরোধিতা গোপন রেখে বাহিরে আনুগত্য প্রকাশ করা বা বাহিরে অনেক ভালো হওয়া।

সহীহ বুখারী শরীফে উল্লেখ আছে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুনাফিকের চিহ্ন সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছে যে:
মুনাফিকের চিহ্ন হলো তিনটি। প্রথম চিহ্ন যখন তারা কথা বলে তখন তারা মিথ্যা কথা বলে। দ্বিতীয় চিহ্ন যখন তারা ওয়াদা করে থাকে তখন তা তারা ভঙ্গ করে। আর তৃতীয় চিহ্ন হলো যখন তাদের নিকট কোন কিছু আমানত রাখা হয় তখন তারা এই আমানতের খিয়ানত করে থাকে।
আর তাই আমাদের উচিত হবে যে মুনাফিকের কোন চিহ্ন যাতে আমাদের মধ্যে না থাকে এবং এসব চিহ্ন থেকে বিরত থাকা।
আমরা যদি এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে না পারি তাহলে মুনাফিকের চিহ্ন চলে আসবে এবং আমরা মুনাফিক হিসেবে গণ্য হব।
আমরা যদি এ সকল কাজ করি তাহলে আমরা মারাত্মক পাপ করবো। এই মুনাফেকি মানুষের চরিত্র ও নৈতিকতাকে ধ্বংস করে দেয় এবং এর কারণেই মানুষ মিথ্যাচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। যেটি আসলেই খুবই একটি মারাত্মক অপরাধ এবং একটি মারাত্মক পাপ।
মুনাফিকের কুফল ও প্রতিকার
স্বয়ং মহান আল্লাহ তা’আলা সূরা আল মুনাফিকুন এর আয়াত নাম্বার একে বলেছেন:
আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে মুনাফিকরা নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদী। মিথ্যার পাশাপাশি মুনাফিকরা অন্যান্য খারাপ ও অননৈতিক কার্যকলাপের জড়িয়ে পড়ে।
পার্থিব লভ লালসার কারণে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় তারা মানুষের অকল্যাণ করতেও দ্বিতীয় বার চিন্তা করেনা। তারা পরনিন্দা এবং পরচর্চা করে থাকে যার কারণে সমাজের মধ্যে সন্দেহ এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়ে থাকে সৃষ্টি হয় ভরসা হীনতা।
মুনাফিকরা ভেতরে একরকম আর বাহিরে অন্যরকম হওয়ার কারণে মানুষ তাদের বিশ্বাস করে না এবং তাদের সন্দেহ এবং ঘৃণার চোখে দেখে।
সমাজের বুকে তাদেরা তাদের জীবনকে অপমানিত এবং লাঞ্ছিত হয় কাটায়।
ইসলামের জন্য এবং আমাদের মুসলমানদের জন্য মুনাফিকরা খুব বেশি ক্ষতিকর। আর এর কারণ হলো তারা মুসলমানদের সাথে মিশে ইসলামের শত্রুদের সাহায্য করে এবং তাদের মুসলমানদের গোপন তথ্য ও দুর্বলতার কথা জানিয়ে দেয়।
আমাদের প্রিয় নবীর যুগেও মদিনাতে মুনাফিকরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল।
তারা ইসলাম এবং মুসলমানগণের সাথে থেকেও আল্লাহ তাআলার অবাধ্য ছিল আর পরকালীন জীবনে মুনাফিকদের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।
স্বয়ং মহান আল্লাহ তা’আলা মুনাফিকদের ভয়ংকর পরিণতির কথা জানিয়ে সূরা আর নিসা এর ১৪৫ নাম্বার আয়াতে বলেছেন।
নিশ্চিন্তপক্ষে মুনাফিকরা থাকবে জাহান্নামের মধ্যে সর্বনিম্নস্তরে।
উপসংহার:
আপনি তো উপরে দেখতেই পারছেন যে মহান আল্লাহতালা মুনাফিকদের সম্পর্কে কত বড় কথা বলেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে তারা জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে থাকবে যার নিম্ন স্তরে আর কেউ নেই।
আর যেহেতু স্বয়ং মহান আল্লাহ তা’আলা এ কথাটি বলেছেন তাই আমাদের কি করতে হবে এটি আপনারা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন।
আমাদেরকে অবশ্যই অবশ্যই এই মুনাফিকি কাছ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং মুনাফিকের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
আমরা নিজেরা এই মুনাফিকের কাছ থেকে বিরত থাকবো এবং আমাদের আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব পাড়া-প্রতিবেশী সকলকে বিরত রাখব।
আর তাদের সামনে এই মুনাফিকের কুফল ও পরিনতির কথা তুলে ধরব এবং তাদেরকে আমরা বিশেষভাবে সতর্ক করব।
আমাদের প্রিয় নবী মুনাফিকদের যে তিনটি চিহ্ন বা নিদর্শন এর কথা বলেছেন এগুলো থেকে আমরা অবশ্যই অবশ্যই বেঁচে থাকব।
আর আমাদের নিজ জীবনে উত্তম চরিত্র অনুশীলন করবো এবং আমাদের অধীনস্থদের সে সকল কাজ থেকে বিরত থাকতে বলব।
এই পোস্টটিতে আমি আপনাদের মুনাফিক কাকে বলে এর সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। যাতে আপনারা সহজে বুঝতে পারেন এবং আপনাদের দৈনন্দিন জীবনে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
এটি ব্যবহার করতে পারেন বলতে এর কাছ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং বিরত থাকতে হবে এর কুফল থেকে।
আর যারা আপনাদের অধীনস্থ রয়েছে তাদেরকে এর কাছ থেকে বিরত রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: মক্কা শরীফের পূর্ব নাম কি?