মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ খেতাব কি: মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানসূচক সর্বোচ্চ খেতাব হলো বীরশ্রেষ্ঠ। মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ খেতাবের মধ্যে দুই নম্বরে রয়েছে বীর উত্তম, বীরউত্তম তারাই যারা বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছেন এবং নিজের শ্রেষ্ঠত্ব যুদ্ধে দিয়েছেন।
অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ যে খেতাব রয়েছে সেটি হচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ এবং বীরশ্রেষ্ঠের পরবর্তীতে যে খেতাব রয়েছে সেটা হচ্ছে বীরউত্তম।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যারা সাহসিকতার সহিত নিজের জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছেন তারা সকলেই হচ্ছেন বীরশ্রেষ্ঠ। এবং যারা সাহসের সাথে যুদ্ধ করেছেন কিন্তু শহীদ হয়নি বরং দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে শত্রুদের প্রতিরোধ করেছে তারা হচ্ছে বীর উত্তম।

আমাদের দেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন করতে বীরশ্রেষ্ঠ এবং বীর উত্তম উভয় খেতাব বিশিষ্ট মানুষের ভূমিকা রয়েছে। তবে বর্তমানে আমরা অনেকেই ধারণা করে যে বীরশ্রেষ্ঠ যেহেতু সর্বোচ্চ খেতাব তাই হয়তোবা দেশের জন্য তারা সর্বোচ্চ দিয়েছে যুদ্ধ করে।
আপনি যদি এমন ধারণা করে থাকেন, তাহলে তার সম্পূর্ণ ভুল কেননা এটি শুধুমাত্র একটি খেতাব দেশের জন্য জীবন দেওয়ার জন্য।
কেননা, যে বীর উত্তম সে নিজের জীবনের বাজি রেখে এবং নিজের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাখার মাধ্যমে যুদ্ধ করেছে।
আর বীর উত্তমের অন্তরে মৃত্যুর ভয় থাকা সত্ত্বেও দেশের জন্য যুদ্ধ চালিয়েছে পুরো নয় মাস এবং পরিণতি হিসেবে স্বাধীনতা পেয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ খেতাব প্রাপ্ত কতজন?
বাংলাদেশ স্বাধীন করতে যতগুলো মানুষ শহীদ হয়েছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন রয়েছে যারা বীরশ্রেষ্ঠের খেতাব অর্জন করেছে।
আর বীরশ্রেষ্ঠের খেতাব অর্জন করা মানে হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ খেতাব অর্জন করেছেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।
যারা বাংলাদেশের জন্য নিজের জীবন বিলীন করে দিয়ে বীরশ্রেষ্ঠের খেতাব অর্জন করেছেন তারা কে ছিলেন। এ বিষয়টি হয়তোবা অনেকের কাছে সুস্পষ্ট থাকলেও কিছু কিছু মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাবে যারা বীরশ্রেষ্ঠদের পরিচয় জানে না।
মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ খেতাব প্রাপ্ত কতজন: মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ খেতাবপ্রাপ্তের সংখ্যা হচ্ছে সাতটি বা ৭ জন। নিচে এদের নাম উল্লেখ করা হলো:
- বীর শ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান।
- বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল।
- বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী নূর মোহাম্মদ শেখ।
- বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর।
- বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ।
- বীরশ্রেষ্ঠ স্কোয়াড্রন ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন।
- বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান।
এরা ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ খেতাব অর্জনকারী সাতজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সেই সাথে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ। দেশের জন্য শ্রেষ্ঠ কিছু উপহার দেওয়ার জন্য এবং স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য এরা এদের নিজের জীবনকে বেছে নিয়েছিল এবং জীবন শহীদ করেছিল।
আর দেশের জন্য মায়া মমতা ও প্রেম না থাকলে হয়তোবা এরা কখনোই নিজেদেরকে বীরশ্রেষ্ঠ বলে আখ্যায়িত করতে পারতো না।
এটি স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে এদের ত্যাগ অবশ্যই অনেক বেশি ছিল, যা আমাদের দেশের জন্য গর্বের বিষয় হয়েছে স্বাধীনতার ক্ষেত্রে।
উপসংহার:
মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ খেতাব কি এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ খেতাবপ্রাপ্ত কতজন রয়েছেন তাদের নাম উল্লেখ করেছি। আর অবশ্যই আমরা ছোটকাল থেকেই এই সকল বীরশ্রেষ্ঠদের নাম আমাদের পাঠ্য বই থেকে পরে আসতেছে এবং বীরশ্রেষ্ঠদের নাম জানি।
তবুও আমি মনে করলাম, হয়তো অনেকে থাকতে পারে যারা বীরশ্রেষ্ঠদের নাম জানেনা এবং তাদের জানা উচিত।
আর তাদের জানা উচিত বলে পোস্টটিতে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠদের নাম উল্লেখ করেছে যারা দেশের জন্য শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছে এবং নিজেকে ত্যাগ করেছে।
বীরশ্রেষ্ঠ এবং বীর উত্তম এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে পার্থক্য সেটি হচ্ছে শহীদ হওয়ার বিষয়টি স্বাধীনতার জন্য। যারা দেশের জন্য বীরত্বের শহীদ নিজের জীবন উৎকৃষ্ট করেছে এবং ত্যাগ করেছে নিজে তাদেরকে বীরশ্রেষ্ঠ বলে উপাধি দেওয়া হয়েছে।
আর যারা বীরত্বের সঙ্গে পুরনো নয় মাস যুদ্ধ করেছে এবং নিজের শেষটুকু দেশের জন্য প্রদান করেছে তারা হচ্ছে বীর উত্তম।
এখন প্রশ্ন হতে পারে অনেকেই তো দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন কিন্তু তাদেরকে কেন বীরশ্রেষ্ঠের উপাধি দেওয়া হয়নি।
আসলে এই যে এই সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ আছে এরা পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর হাতে নিজেকে শহীদ করায় নি। বরং এরা পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য নিজেই নিজেকে শহীদে করিয়ে দিয়েছে এবং সাথে আশে পাশে থাকা হানাদার বাহিনীকে নিয়ে শহীদ হয়েছে।
আর নিজেকে এইভাবে আত্মসমর্পণ না করে দেশের জন্য ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য তিনাদেরকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কোথায় অবস্থিত?