মানসিক রোগ কাকে বলে: মানুষের অস্বাভাবিক আচরণ, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং পশুর মতো আচরণ করার বৈশিষ্ট্য সমূহকে মানসিক রোগ বলে। আবার, মানুষের শরীর, মন এবং ব্যক্তিগত জটিল পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে স্বাভাবিক আচরণের পরিবর্তন, মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ রোধ এবং সেই সাথে কর্ম দক্ষতার বিপর্যয় দেখতে পাওয়াকে মানসিক রোগ বলে।
অর্থাৎ মোট কথা বলতে গেলে, শারীরিকভাবে সুস্থ কিন্তু মানসিকভাবে দুর্বল হওয়াকে মানসিক রোগ বলে এবং মানসিক রোগে আক্রান্ত রোগীকে মানসিক রোগী বলে। বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানে মানসিক রোগী দেখা যায় এবং আমরা এদেরকে পাগল বলে অভিহিত করে থাকে, তবে পাগলকে পাগল বলা উচিত নয়।

কেননা আপনি যদি পাগলকে পাগল বলেন তাহলে অবশ্যই আপনার ও মানসিক রোগের একটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হবে, যেটা মোটেও ভালো নয়। কেননা অবশ্যই আপনাকে বিবেক-বুদ্ধির সম্পন্ন হতে হবে মানসিক রোগে থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এবং নিজেকে মানসিক রোগী চিহ্নিত না করার জন্য।
আপনি যদি পাগলকে পাগল বলেন তাহলে দেখা যাবে যে আপনার সামাজিক মূল্যবোধ বা ব্যক্তিত্ব অনেক বেশি অভাব রয়েছে।
এই অভাবের কারণে আপনাকে মানসিক রোগী বলে অবহিত করা যাবে তাই সাবধানে থাকুন এবং বিরত থেকে সঠিক কথা বলতে শিখুন।
মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণ
আচরণগত অনেক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় যখন একজন ব্যক্তি মানসিক রোগ দ্বারা অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মেধা বিকাশ হ্রাস পায়। আর যে সকল লক্ষণ দ্বারা আপনি বুঝতে পারবেন যে মানসিক রোগ হয়েছে কিনা সে সকল লক্ষণ আমরা জানবো মানসিক রোগের।
মানসিক রোগীর আচরণগত লক্ষণ সহ কতিপয় শারীরিক লক্ষণ দেখা দেয়, এগুলো হলো:
- খিচুনি হওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, এবং শরীরের একপাশ অবশ হয়ে যাওয়া।
- হাঁটতে না পারা, শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়া এবং ঘন ঘন দম নেওয়া।
- কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন এবং অতি তুচ্ছ বিষয় রাগান্বিত হওয়া।
- পরিস্থিতি অনুযায়ী কথা বলতে না পারা এবং অস্বাভাবিক কাণ্ডকলাপ করা।
- আবার কেউ আপনাকে মেরে ফেলবে অযথা এমনটা মনে করা মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণ।
- অকারণে আবোল তাবোল কথা নিজে নিজে বলতে থাকা।
- যে কারো সাথে মিশতে না পারা বা মিশতে না চাওয়া।
এগুলো হলো মানসিক রোগীর লক্ষণ এবং এ লক্ষণ গুলো দেখার মাধ্যমে আমরা মানসিক রোগীকে চিহ্নিত করতে পারি। আর অবশ্যই এই রোগের কিছু কারণ রয়েছে যে কারণগুলোর জন্য মানুষ মানসিকভাবে আক্রান্ত হয় এবং মানসিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে।
মানসিক রোগের কারণ
আমরা তো মানসিক রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানলাম কিন্তু কারণ স্পষ্ট না যে কি কারণে এই মানসিক রোগ হয়। আর এখন আমাদের উচিত হবে মানসিক রোগে কি কারনে হয় সে কারণগুলো সম্পর্কে কিছু জ্ঞান অর্জন করার যেন, কারণ থেকে নিজেকে প্রতিকার করে মানসিক রোগ ঠিক করতে পারি।
মানুষ নানা কারণে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়, নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ উপস্থাপন করা হলো:
- জটিল বিষয়ে অধিক চিন্তাভাবনা করার কারণে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়।
- কটু কথা বা মনে আঘাত লাগার মত কথা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার কারণে।
- দীর্ঘ সময় ধরে অতীত থেকে ঘটে আসা খারাপ বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করার কারণে।
- অযথা নিজের মেধাকে খরচ করে সর্বদা একটি বিষয়ের উপর নিজেকে ধরে রাখার কারণে।
- বিভিন্ন ঔষধের পার্শ্ববর্তীক্রিয়ার কারণে মানসিক রোগ হতে পারে।
- আঘাত ওজনের তা বিভিন্ন কারণে ও স্ট্রোক হওয়ার কারণে।
- বিভিন্ন প্রকার রোগের কারণে মানসিক রোগ দেখা দেয় বা স্মৃতিশক্তি লোভ পায়।
এগুলো হলো মানসিক রোগের কিছু কারণ এবং এই কারণগুলোর জন্যই মূলত অধিকাংশ ব্যক্তি মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। আর মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে মানসিক রোগ দেখা দেয় আমাদের মাঝে সর্বদা।
মানসিক রোগের চিকিৎসা
আপনার আশেপাশে কেউ যদি মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে যায় বা আপনি যদি নিজে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। তবে আপনি ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করে আপনার মানসিক চিকিৎসা বা আপনার নিকট আত্মীয় আর মানসিক চিকিৎসা নিজেই করতে পারেন। যেমন:
- সব সময় নিজেকে সুখী বলে অবহিত করা এবং রোগীকে সুখের আবাস দেখানো।
- মানসিক রোগে আক্রান্ত রোগীকে যথাযথভাবে যত্ন নেওয়া এবং ভালোবাসার মাধ্যমে।
- কোন প্রকার মারামারি কাটাকাটি না দেখে বরং শান্তির সকল বিষয় পরিদর্শন করানো।
- বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করানো এবং মন ভালো করার জন্য রোগীর সকল চাহিদা পূরণ করা।
- বাতাস যুক্ত স্থান এবং মুক্ত পরিবেশ যেখানে সকল কিছু দেখা যাবে এরকম স্থান নির্বাচন করা বসার জন্য।
- সর্বদা রোগীর আশেপাশে থাকা এবং রোগীকে সর্বদা বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করা।
শুধুমাত্র এই কয়েকটি ধাপ অবলম্বন করে আপনি আমি খুব সহজে মানসিক রোগের চিকিৎসা দিতে পারব ঘরোয়া উপায়। আর ডাক্তাররাও মানসিক রোগীকে এরকম কিছু পরামর্শ দেন কেননা এগুলো অনেক বেশি কার্যকর হয়ে থাকে মানসিক রোগের ক্ষেত্রে।
আরও পড়ুন: রোগ কাকে বলে?