মাক্কী ও মাদানী সূরা কয়টি: পবিত্র কুরআনে মাক্কী সূরার সংখ্যা হচ্ছে মোট ৮৬টি এবং মাদানী সূরা সংখ্যা হচ্ছে মোট ২৮টি।
মানবজাতির দিকনির্দেশক গ্রন্থ আল কুরআনে রয়েছে সর্বমোট ৩০ টি অংশ বা পারা। কোরআন মাজিদে রয়েছে সর্বমোট ১১৪টি সূরা এবং ৬২৩৬ টি কিংবা ৬৬৬৬ টি হেদায়েত পূর্ণ বাণী বা আয়াত।
আমরা কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করে এবং সেখানেও উল্লেখ থাকা সূরাগুলো পাঠ করে শান্তি অনুভব করে থাকে।
তবে মনে রাখবেন এই সূরাগুলোকে বিশেষভাবে ভাগ করা হয়েছে এবং এ ভাগ দুটি হলো মাক্কী এবং আরেকটি হলো মাদানী।
আমরা ইতিপূর্বে উপরে মাক্কী ও মাদানী সূরার সংখ্যা উল্লেখ করেছি তবে এই সূরাগুলোর সংজ্ঞা উল্লেখ করিনি।
অবশ্যই আপনাকে আমাকে এই সূরাগুলোর সংজ্ঞা জানতে হবে এবং সেই সাথে জানতে হবে এই সূরাগুলার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
আবার এই সকল সূরায় কি কি বিষয় নিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে সে বিষয়ে সম্পর্কেও আমাদেরকে জানতে হবে এবং বুঝতে হবে।
আর এই সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আমরা এই পোস্টটি পুরো সাজাবো যেন আপনি সম্পূর্ণ তথ্য পেতে পারেন এবং মাক্কি ও মাদানী সূরা নিয়ে জ্ঞান লাভ করতে পারেন।
মাক্কী ও মাদানী সূরা কাকে বলে? মাক্কী ও মাদানী সূরার সংজ্ঞা
সংজ্ঞা মাক্কী সূরা কাকে বলে: প্রসিদ্ধ কিছু মতবাদ অনুযায়ী, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পূর্বে অর্থাৎ মক্কায় থাকা অবস্থায় নাযিল হওয়া সূরা সমূহকে মাক্কী সূরা বলা হয়।
ইয়াহইয়া ইবনে সালাম বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর হিজরত কালে মদিনায় গমনের পথে বা মদিনায় পৌঁছার পূর্ব সময় পর্যন্ত যে সকল সূরা নাযিল করা হয়েছিল সেগুলো হলো মাক্কী সূরা।
মাদানী সূরা কাকে বলে: প্রসিদ্ধ কিছু মতবাদ অনুযায়ী, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মদিনায় হিজরতের পর যে সকল সূরা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছিল সেগুলোকে মাদানী সূরা বলে।
ইয়াহইয়া ইবনে সালাম বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মদিনায় হিজরতের পর মদিনার বাইরে সফরে থাকা অবস্থায় যে সকল হেদায়েত মূলক সূরা নাযিল হয়েছিল সেগুলোকে মাদানী সূরা বলে।
এই সংজ্ঞাগুলো দ্বারা আমরা স্পষ্ট ভাবে যে ধারণা পেলাম সেটি হচ্ছে আমাদের প্রিয় নবীর হিজরত করার উপর ভিত্তি করে সূরা গুলোর নামকরণ করা হয়েছে।
তবে শুধুমাত্র অবস্থানের উপর ভিত্তি করে মাক্কি ও মাদানী সূরার মধ্যে পার্থক্য বিবেচনা করা যাবে না।
কেননা মাক্কি ও মাদানী সূরার মধ্যে আবার বৈশিষ্ট্য পার্থক্য রয়েছে এবং এই পার্থক্যগুলো দ্বারা সকল কিছু স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
আমরা আশা করি মাক্কি ও মাদানী সূরা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সংজ্ঞা সহ জ্ঞান লাভ করতে পেরেছি যথাযথভাবে এবং সহজ ভাষায়।
মাক্কী ও মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্য ও উল্লেখিত বিষয়
আমরা মাক্কি এবং মাদানী সূরা সম্পর্কে ইতিমধ্যে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করেছি তবে এই সূরাগুলার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করিনি।
তাই চলুন এবার প্রথমে এই সুরাগুলোর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি এবং উল্লেখিত বিষয়গুলো জানে যা সূরা গুলোর মধ্যে রয়েছে।
নিচে মাক্কি সুরার বৈশিষ্ট্য ও উল্লেখিত বিষয় সমূহ যথাযথভাবে সহজ ভাষায় নিচে উপস্থাপন করা হলো:
- তাওহীদ ও রিসালাতের পথে আহবান জানানো হয়েছে যে সকল সূরায় সেগুলো হলো মাক্কী সূরা।
- যে সকল সূরা মৃত্যুর পরবর্তী জীবন অর্থাৎ কিয়ামত, জান্নাত, জাহান্নাম এ সকল বিষয়ে প্রাধান্য অর্জন করেছে সেগুলো হলো মাক্কী সূরা।
- যে সকল সূরায় শিরক এবং কুফরের পরিচয় বর্ণনা করে এগুলোর অসারতা প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে সেগুলো হলো মাক্কী সূরা।
- যে সকল সূরায় মুশরিক ও কাফেরদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো মাক্কী সূরা।
- মাক্কী সূরায় আবার মুশরিক ও কাফিদের হত্যাকাণ্ডের কাহিনী, এতিমদের সম্পদ হরণ করা এবং সেই সাথে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়ার মতো কুপ্রথা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
- মাক্কী সূরায় শরীয়তের সকল সাধারণ নীতিমালা সমূহ উল্লেখ করা হয়েছে।
- মাক্কী সূরার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই সকল সূরার আয়াতের আকার হচ্ছে অতি ছোট এবং সূরার সাইজ বা আকার হচ্ছে ছোট।
এগুলো হলো মাক্কী সূরার বৈশিষ্ট্য এবং চলুন জেনে নেই মাদানি সুরার বৈশিষ্ট্য এবং মাদানী সূরা উল্লেখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে যাবতীয় জ্ঞান।
যেহেতু আমরা মাক্কী সূরা সম্পর্কে ইতিপূর্বে জ্ঞান অর্জন করেছে তাই আমাদেরকে মাদানী সূরা সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্য
মাদানী সূরার কতিপয় উল্লেখযোগ্য ও উল্লেখিত বিষয় বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলো:
- মাদানী সূরা সমূহে আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদি ও খ্রিস্টানদের পথে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ও ইসলামের দিকে আহবান করা হয়েছে।
- মাদানী সূরায় আবার আহলে কিতাবের পথভ্রষ্টতা ও তাদের কিতাবের যে সকল বিকৃতি রয়েছে তার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে।
- মাদানী সূরায় বিশেষভাবে নিফাকের পরিচয় ও মুনাফিকদের ষড়যন্ত্রের উল্লেখযোগ্য কথা ও ঘটনা উল্লেখ রয়েছে।
- মাদানী সূরা আবার বিভিন্ন ধরনের বিধান বর্ণিত হয়েছে, যেমন: পারিবারিক লেনদেন, উত্তরাধিকার আইন, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রয় বিক্রয় সহ যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বিধান।
- মাদানী সুরার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে এ সূরায় বিচার ব্যবস্থা, দন্ডবিধি, জিহাদের কার্যকারিতা এবং পররাষ্ট্রনীতির সব বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
- ইসলামের কতিপয় বা ইবাদত এর কতিপয় বিষয় যেমন: রীতিনীতি, সালাত, যাকাত, হজ, এবং সাওম ইত্যাদি বিষয়ের উপর বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে।
- শরীয়তের যে সকল বিধি-বিধান রয়েছে যেমন: ফরজ, ওয়াজিব, হালাল-হারাম, ইত্যাদি বিষয়ের ওপর সুস্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে মাদানী সুরায়।
- মাদানী সূরা চেনার উপায় হচ্ছে যে এ সূরার আয়াত সংখ্যা অনেক দীর্ঘ এবং সূরাটি নিজেও হবে অনেক দীর্ঘ।
এগুলো হলো মাদানী সুরার কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য এবং এ বৈশিষ্ট্য গুলো আমরা মাদানীর সূরার মধ্যে খুব সহজে খুঁজে পেতে পারি।
মাদানী সুরার বৈশিষ্ট্য বলতে এই সূরার উল্লেখিত বিষয় সমূহ সম্পর্কে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং সেই সাথে উল্লেখিত ঘটনা রয়েছে।
আশা করি মাক্কি ও মাদানী সূরা সম্পর্কে এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনাদেরকে সম্পূর্ণ জ্ঞান প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে এবং উপকৃত করেছে।
ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য এবং মাক্কী ও মাদানী সূরা সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করার জন্য, শুভ বিদায়।
আরও পড়ুন: কুরআন শব্দের অর্থ কি?