মাইটোকন্ড্রিয়া কাকে বলে: দ্বিস্তর বিশিষ্ট আবরণী দ্বারা আবৃত সাইটোপ্লাজমস্থ যে অঙ্গানুতে ক্রেবস চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট ইত্যাদি ঘটে এবং শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে মাইটোকনড্রিয়া বলে। প্রকৃত জীব কোষের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গানু হলো এই মাইটোকনড্রিয়া।
এই মাইটোকন্ড্রিয়া কোষের যাবতীয় জৈবিক কাজের জন্য শক্তি সরবরাহ করে থাকে বলে একে কোষের পাওয়ার হাউজ বা শক্তিঘর বলা হয়ে থাকে। আর শক্তিঘর বলার মূল কারণ হলো এটি যথাসময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী শক্তি সরবরাহ ও গ্রহণ করতে পারে।
যেহেতু মাইটোকন্ড্রিয়া হচ্ছে পাওয়ার হাউজ বা কোন কোষের শক্তিঘর তাই এটি অবশ্যই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গানু। কেননা এই শক্তিঘর এর মাধ্যমে শরীরে উপস্থিত প্রত্যেকটি কোষ শক্তি গ্রহণ করে এবং তারপর কর্ম দক্ষতা অর্জন করে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ দেখায়।
আর যদি এই শক্তিঘর না থাকতো তাহলে শরীরে উপস্থিত কোষগুলো সঠিক মত শক্তি গ্রহণ ও ত্যাগ করতে পারত না। আর শক্তি গ্রহণ বা ত্যাগ না করার কারণে কোষগুলো ধীরে ধীরে মারা পড়তো এবং এভাবে শারীরিক কোন পরিবর্তন আসতো না।
মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন
মাইটোকনড্রিয়ায় সাধারণত দুই ধরনের গঠন দেখা যায়। একটি হলো ভৌত গঠন অন্যটি হলো রাসায়নিক গঠন।
মাইটোকন্ড্রিয়ার ভৌত গঠন
১) আবরণী: লিপোপ্রোটিন বাইলেয়ারের দুটি মেমব্রন দিয়ে প্রতিটি মাইটোকনড্রিয়ন এর আবরণী গঠিত। এর বাহিরের মেমব্রনটি হলো
খাঁজবিহীন এবং এর কাজ হলো ভিতরের অংশসমূহ কে রক্ষা করা।
এই মেমব্রনকে ভেদ করে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আয়ন এবং অনু সমূহ ভিতরে প্রবেশ করে এবং বের হয়ে আসে।
আর এর মধ্যে কিছু ট্রান্সপোর্ট প্রোটিন থাকে যেগুলো প্রয়োজনে সক্রিয় ট্রান্সপোর্টে সহায়তা করে।
এর মধ্যে কোন প্রকার ETC, ATP, ATP Synthases তৈরির এনজাইম থাকে না।
মূলত রক্ষণাত্মক হলো এর কাজ। এই দুইটি আবরণের মধ্যবর্তী ব্যবধান হলো ৬→৮ ন্যানো মিটার।
২) প্রকোষ্ঠ: মাইটোকনড্রিয়ার দুইটি মেমব্রনের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানকে বলা হয় বহিস্থ কক্ষ (প্রকোষ্ঠ) আর আন্তঃ মেমব্রেন ফাঁক ও ভেতরের মেমব্রন দিয়ে আবদ্ধ কেন্দ্রীয় অঞ্চলকে বলে অভ্যন্তরীণ কক্ষ।
এই অভ্যন্তরীণ কক্ষটি জেলি ন্যায় ঘন সমসত্ব পদার্থ বা ধাত্র দ্বারা পূর্ণ থাকে।আর এই ধাত্র পদার্থটিকে ম্যাট্রিক্স বলা হয়ে থাকে।
৩) ক্রিস্টি বা প্রাবর্ধক: মাইটোকনড্রিয়ার বাইরের মেমবরনটি সোজা। তবে এর ভেতরের মেম্বারনটি সোজা নয় এটি নির্দিষ্ট ব্যবধানে ভেতরের দিকে ভাজ হয় আঙ্গুলের মত প্রাবর্ধক সৃষ্টি করে থাকে।
আর ঐ প্রবর্তিত অংশকেই বলা হয় ক্রিস্টি (cristae)। আর এই ক্রিস্টির মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানকে বলা হয় আন্তঃক্রিস্টি (intracristal space) যেটি আবার বহিঃপ্রকোষ্ঠের সাথে সংযুক্ত।
৪) অক্সিসোম: অন্তঃআবরণীর অন্তগার্ত্রে অতি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অসংখ্য দানা লেগে থাকে যাদেরকে অক্সিসোম বলে।
এই অক্সিসম আবার অবৃন্তক এবং বৃন্তক হয়ে থাকে। মস্তক, বোঁটা এবং ভূমি নিয়ে বৃন্তক অক্সিসোম গঠিত।
৫) ATP-Synthases এবং ETC: কৃস্টির মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় জায়গায় ATP-Synthases নামক গোলাকার বস্তু থাকে।
আর এই জায়গার মধ্যেই ATP সংশ্লেষিত হয়। আর এই সম্পূর্ণ ক্রিস্টি ব্যাপি অনেকগুলো ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইন (ETC) রয়েছে।
৬) বৃত্তাকার DNA: এ কথাটি হয়তোবা আমরা সকলে জানি যে মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব DNA ও রাইবোজোম (70S) রয়েছে।
মাইটোকন্ড্রিয়ার মধ্যে যদি DNA না থাকতো তাহলে কোষীয় শ্বসন সম্পন্ন করা কখনো সম্ভব হতো না।
মাইটোকনড্রিয়ার রাসায়নিক গঠন
এই অঙ্গানুর শুষ্ক ওজনের প্রায় ৬৫% প্রোটিন, ২৯% গ্লিসারাইড, ৪%লেসিথিন ও সেফালিন, সর্বশেষ ২% কোলেস্ট্রল থাকে।
আর মাইট্রোকনড্রিয়ায় উপস্থিত লিপিডের মধ্যে রয়েছে ৯০% ফসফোলিপিড, বাকি ১০% ফ্যাটি এসিডে ক্যারোটিনয়েড ভিটামিন ই ও কিছু অজৈব পদার্থ।
আর আমরা সকলেই জানি যে মাইটোকনড্রিয়ার ঝিল্লি লিপো-প্রোটিন সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। আর এই মাইটোকনড্রিয়ায় ১০০প্রকার এনজাইম ও কো-এনজাইম থাকে।
তাছাড়াও মাইটোকন্ড্রিয়াতে ০.৫% RNA এবং সামান্য পরিমাণ DNA থাকে। কার্ডিওলিপিন নামক এক ধরনের বিশেষ ফসফোলিপিড থাকে এই মাইটোকনটিয়ার অন্তঃঝিল্লিতে।
মাইটোকনড্রিয়ার কাজ
কোষের যাবতীয় জৈবিক কাজের জন্য শক্তি উৎপাদন করা এবং শক্তির নিয়ন্ত্রণ করা হলো মাইটোকনড্রিয়ার প্রধান কাজ। যেহেতু মাইটোকনড্রিয়ার কাজ আমাদের শরীরের মধ্যে অনেক বেশি রয়েছে তাই আমাদেরকে এই অঙ্গাণুদের কাজ দেখে নিতে হবে।
নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু মাইটোকনড্রিয়ার কাজ আপনাদের মাঝে উল্লেখ করা হলো:
- কোষের শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম এবং কো-এনজাইম সমূহ কে ধারণ করা হলো মাইটোকনডিয়ার কাজ।
- DNA এবং RNA তৈরি করার মাধ্যমে বংশগতিতে অবদান রাখা।
- এই মাইটোকনড্রিয়া শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর গঠনে অংশগ্রহণ করে থাকে।
- মাইটোকনড্রিয়া হরমোন এবং রক্তকণিকা সমূহ উৎপাদনের সহায়তা করে থাকে।
- মাইটোকন্ড্রিয়া Na, K প্রভৃতি পদার্থেকে সক্রিয়ভাবে পরিবহন করতে পারে।
- মাইটোকনড্রিয়া স্নেহ পদার্থের বিপাক এবং প্রোটিন সংশ্লেষণে সহায়তা করে।
এগুলো ছিল মাইটোকনড্রিয়া কিছু কাজ এবং এই কাজগুলো মাইটোকনড্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে নিজের শক্তি আদান-প্রদান দ্বারা। মাইটোকনড্রিয়া কাকে বলে এই বিষয়টির উপর সকল তথ্য নিয়ে আজকের আলোচনা এখান থেকে শেষ হয়েছে, ধন্যবাদ জ্ঞানের জন্য আসতে।
আরও পড়ুন: সাইটোপ্লাজম কাকে বলে?