ভূমিক্ষয় কি: অত্যধিক বৃষ্টিপাত, বন্যা, বরফ গলে যাওয়া, প্রবল বাতাস এবং প্রবল স্রোতের কারণে মাটির উপরিভাগ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভেঙ্গে বা ক্ষয় হয়ে চলে গেলে যে সমস্যা সৃষ্টি হয় তাই হচ্ছে ভূমিক্ষয়।
ভূমিক্ষয় কাকে বলে: প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগ ও শক্তির কারণে এক স্থানের মাঠে অন্য স্থানে অপসারিত হওয়াকে ভূমিক্ষয় বলা হয়।
এই সংজ্ঞাগুলো দ্বারা এটি স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় যে অবশ্যই ভূমিক্ষয় শুধুমাত্র একটি কারণ দ্বারা কখনোই হতে পারে না। বরং ভূমিকায় হওয়ার জন্য বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে এবং বিশেষ করে ভূমিকা হয় প্রাকৃতিক কিছু দুর্যোগের শিকার হওয়ার কারণে।

আমাদের জন্য ভূমিক্ষয় অবশ্যই একটি জটিল সমস্যা কেননা এর মাধ্যমে আমাদের বসবাসযোগ্য স্থান ও চাষাবাদযোগ্য স্থান নষ্ট হয়। আর চাষাবাদযোগ্য স্থান নষ্ট হওয়ার কারণে আমাদের খাদ্য সংকট দেখা যায় এবং বাসস্থানযোগ্য স্তর নষ্ট হওয়ার কারণে ঘরছাড়া হতে হয়।
আর অবশ্যই বর্তমানে আমাদের জন্য জমি চাষ করা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই যে খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারি।
যদিও বা আমরা জীব হত্যা করে নিজের আহা নিবারণ করতে পারি তবে যে জীব আমরা হত্যা করে ভক্ষণ করব সে জীব্ত উদ্ভিদ ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবে না।
ভূমিক্ষয়ের শ্রেণীবিভাগ
আমরা তো ভূমিক্ষয় কি এবং ভূমিক্ষয় কাকে বলে এ বিষয়ে নিয়ে জানলাম তবে এই ভূমিকায় কিছু শ্রেণীবিভাগ রয়েছে। অর্থাৎ ভূমিক্ষয় যে হয় তার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কারণের জন্য এই ভূমিক্ষয়কে বিভিন্ন স্তরে বা ভাগে ভাগ করেছে।
তাহলে চলুন এবার আমরা দেখে নেওয়ার চেষ্টা করি যে আমরা ভূমিক্ষয় কে কি কি ভাগে ভাগ করতে পেরেছি বা শ্রেণীবিভাগ পেয়েছি। আর অবশ্যই ভূমিক্ষয় যেহেতু একটি কারণে সংঘটিত হয় না তাই এই সকল কারণের উপর ভিত্তি করে আমাদের ভূমিক্ষয় ভাগ হয়েছে।
ভূমিক্ষয়কে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা:
- ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয় বা প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয়।
- ত্বরান্বিত ভূমিক্ষয় বা কৃত্রিম ভূমিক্ষয়।
ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয় আবার দুই প্রকার, যথা:
- পানিজনিত ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয়।
- বায়ুজনিত ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয়।
পানিজনিত ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয় আবার চার প্রকার, যথা:
- ছিটানো (বৃষ্টিপাত জনিত) পানিজনিত ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয়।
- আস্তরণ বা পাত পানিজনিত ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয়।
- নালা পানিজনিত ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয়।
- জলপ্রপাত পানিজনিত ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয়।
নালা পানিজনিত ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয় আবার তিন প্রকার, যথা:
- পানির স্থায়ী স্রোত জতিত নালা পানিজনিত ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয়।
- স্থুল নালা পানিজনিত ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয়।
- সূক্ষ্ম নালা পানিজনিত ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয়।
বায়ুজনিত ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয় আবার তিন প্রকার, যথা:
- মৃত্তিকা কণার লাফিয়ে চলা বায়ুজনিত ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয়।
- গড়িয়া চলা বায়ুজনিত ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয়।
- বায়ুর সাথে সূক্ষ্ম কণার বায়ুজনিত ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয়।
এগুলো হলো ভূমিক্ষয় এর কিছু প্রকারভেদ এবং এই প্রকারভেদ গুলো বিভিন্ন কারণে ভাগ হয়েছে ভূমিক্ষয় এর উপর ভিত্তি করে। আর অবশ্যই আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে কেননা, আমরা সচেতন থাকার মধ্যে যেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারে ঠিক ভূমিক্ষয় রোধ করতে পারি।
ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয় বা প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয়
প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয়: প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে অথবা প্রাকৃতিক বিভিন্ন শক্তির কারণে ভূমিক্ষয় হলে তাকে ভূতাত্ত্বিক ভূমিক্ষয় বা প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয় বলে।
আমরা তো বুঝলাম যে ভূমিক্ষয় বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং সবচেয়ে বেশি ভূমিক্ষয় বর্তমানে হয়ে থাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যে সকল ভূমিকায় আমরা লক্ষ্য করতে পারে সেই সকল ভূমিকা গুলোকে মূলত প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয় বলে।
আবার এই প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয় শুধুমাত্র একটি কারণে হয়ে থাকে না বরং প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে হয়ে থাকে।
অর্থাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি থাকে না বরং প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেকগুলো রয়েছে যেগুলোর জন্য আমাদের ভূমিক্ষয় দেখা দেয়।
ত্বরান্বিত ভূমিক্ষয় বা কৃত্রিম ভূমিক্ষয়।
ত্বরান্বিত ভূমিক্ষয় বা কৃত্রিম ভূমিক্ষয়: মানুষের কিছু অস্বাভাবিক কর্মকান্ডের কারণে যদি ভূমি ক্ষয় হয় বা ভূমি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করা হয় তাকে ত্বরান্বিত ভূমিক্ষয় বা কৃত্রিম ভূমিক্ষয় বলে।
মানুষ দ্বারা বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে এবং এই সকল সমস্যাগুলোর জন্য মূলত ভূমিক্ষয় জনিত সমস্যা হয়ে যায় আমাদের ভূপৃষ্ঠে।
আর অবশ্যই মানুষ অনেক ক্ষেত্রে বিপ্লব করেছে পৃথিবীতে কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিপ্লব করতে গিয়ে প্রাকৃতিক জিনিসের বিপর্যয় এনেছে।
মানুষের দ্বারা সৃষ্ট প্রাকৃতিক এ বিপর্যয় গুলোর মধ্যে ভূমিক্ষয় হচ্ছে অন্যতম একটি উদাহরণ যা মানুষের দ্বারা হতে পারে। তবে মানুষের দ্বারা হতে পারে কিন্তু মানুষ কখনো এটি কামনা করে না বিধায় ভূমিক্ষয় মানুষ দ্বারা খুব কম সময় আমরা দেখতে পাই।
আরও পড়ুন: বিশ্বগ্রাম কি?