ভূগোল কাকে বলে? ভূগোলের উৎপত্তি এবং কাজ 

ভূগোল কাকে বলে: পৃথিবী নিয়ে গবেষণা ও বর্ণনা করাকে ভূগোল বলে। মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর আলোচনা অথবা বর্ণনাকে ভূগোল বলে। আমরা যে গ্রহে বাস করি তার নাম পৃথিবী আর এই পৃথিবী হচ্ছে আমাদের আভাস ভূমি আর আমাদের এই আবাসভূমি সম্পর্কিত বর্ণনা গবেষণা এবং আলোচনায় হচ্ছে ভূগোল।

ভূগোল কাকে বলে এই বিষয়টির উপর অনেক বিজ্ঞানী অনেক প্রকার সজ্ঞা প্রদান করেছেন এখন আমরা সেগুলো জানব। তাদের দেওয়া গ্রহণযোগ্য এবং সবচেয়ে ভালো ভালো উত্তর গুলি নিচে তুলে ধরা হলো যাতে আপনি বুঝতে পারেন।

প্রথমে অধ্যাপক ম্যাকনি (Professor E.A. Macni) এর মতে মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর আলোচনা বা বর্ণনায় হচ্ছে ভূগোল।

তিনার মতে ভৌত এবং সামাজিক পরিবেশে মানুষের জীবনধারা নিয়ে যে বিষয় আলোচনা করে তাকেই আমরা ভূগোল বলবো।

আবার অধ্যাপক ডাডলি স্ট্যাম্পের (Professor L Dudley Stamp) এর মতে পৃথিবী ও এর অধিবাসীদের বর্ণনা করাই হচ্ছে ভূগোল।

কোন কোন ভূগোলবিদ ভূগোল কে বলেছেন পৃথিবীর বিবরণ আবার কেউ কেউ বলেছেন পৃথিবী সম্পর্কিত বিজ্ঞান হচ্ছে ভূগোল। 

আবার অধ্যাপক কার্ল রিটায়ার (Professor Carl ritter) এর মতে ভূগোল হচ্ছে পৃথিবীর বিজ্ঞান।

এই ভূগোল আবার একদিকে প্রকৃতির বিজ্ঞান অন্যদিকে পরিবেশের বিজ্ঞান এবং সমাজের বিজ্ঞান।

ভূগোল কাকে বলে ভূগোলের উৎপত্তি এবং কাজ
ভূগোল কাকে বলে

রিচার্ড হার্টশোর্ন (Richard Hartshorne) তিনি বলেছেন যে, পৃথিবীপৃষ্ঠের পরিবর্তন বৈশিষ্ট্যের যথাযথ যুক্তিসঙ্গত এবং সুবিন্যস্ত বিবরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের নাম হচ্ছে ভূগোল।

এখন আমরা সর্বশেষ বিজ্ঞানীর দেওয়া সংজ্ঞা জানবো এই সংখ্যাটি দেওয়ার পর আর কোন সংজ্ঞা আমি এখন পর্যন্ত খুঁজে পাইনি।

বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফন হামবোল্টের (Alexander vhon humblet) এর মতে ভূগোল হলো প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

অর্থাৎ প্রকৃতিতে যা কিছু রয়েছে তার বর্ণনা করা এবং সে সম্পর্কে আলোচনা করা এই ভূগোল বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত।

এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা জানলাম যে ভূগোল কাকে বলে এই সম্পর্কে কোন বিজ্ঞানী কি সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।

ভূগোলের উৎপত্তি

ভূগোলের উৎপত্তি হয়েছে মূলত ইতিহাস থেকেই ইতিহাসে উল্লেখিত নয়জন মনীষীদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজসভা। আর সেই রাজসভার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বরাকো মেহের বা আর্যভট্ট ছিলেন একজন বিখ্যাত গণবিদ, দার্শনিক এবং তার সাথে একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

এই বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন যার নাম ছিল পঞ্চসিদ্ধান্তিকা গ্রন্থ। আর তিনার লেখা এই পঞ্চসিদ্ধান্তিকা গ্রন্থের মধ্যে একটি খণ্ড ছিল যার নাম সূর্যসিদ্ধান্ত।

আর এই সূর্যসিদ্ধান্ত খন্ডের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম ভূগোল শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন বা সেখানে বসিয়েছিলেন।

তাহলে আমরা এই কথাটি সহজ ভাবে বলতে পারি যে আমাদের ইতিহাসের হাত ধরেই এই ভূগোল শব্দটির উৎপত্তি হয়েছিল।

আর বাংলায় এই ভূগোল শব্দটি মূলত দুটি আলাদা শব্দ এয়ার একটি হচ্ছে ভূ এবং অন্যটি হচ্ছে গোল। আর এই ভূ শব্দের অর্থ হচ্ছে পৃথিবী আর অন্যদিকে গোল এই শব্দটির অর্থ হলো গোলক।

বাংলায় এই শব্দটি সৃষ্টি হয়েছে এই ভু এবং গোল এই দুইটি শব্দের মিলনের কারণে এবং একত্রিত করনের কারণে।

আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন বাংলা ভাষায় এই ভূগোল শব্দটির কিভাবে উৎপত্তি হয়েছে।

ভূগোল হচ্ছে পৃথিবীর সম্পর্কিত জ্ঞান অর্থাৎ পৃথিবীর কোন জায়গায় কীরকম মানুষ বসবাস করে তাদের পরিবেশ এবং সমাজ  সমাজ কি রকম তা এই ভূগোল আলোচনা করে থাকে এবং সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ আবহাওয়া সবকিছু সম্পর্কে ভূগোল আলোচনা করে।

শুধুমাত্র যে মানুষের ক্ষেত্রে এটি তা নয় সমস্ত প্রকারের জীবজন্তুর ক্ষেত্রে ভূগোল এই সকল বিষয়ে আলোচনা করে থাকে।

ভূগোল এটি আলোচনা করে যে কোন জায়গায় কোন কোন জীবজন্তু রয়েছে এবং কেন তারা রয়েছে।

ওই জায়গা ঐ সকল জীবজন্তুর জন্য কতটা উপযোগী এবং কেন তারা সেখানে বাস করতেছে সেই সাথে তাদের বংশবৃদ্ধি কিভাবে হচ্ছে।

তারা কিভাবে সংগ্রাম করে সেখানে টিকে থাকবে এবং তাদের জীবন তারা সেখানে কতদিন অতিবাহিত করতে পারবে।

এই সকল কিছু বিষয় সম্পর্কে বিশেষভাবে এবং বিশদভাবে আলোচনা করে ভূগোল অর্থাৎ পৃথিবীর সকল কিছু বিষয় নিয়ে। আমাদের পৃথিবীতে যা ঘটে এবং যাহা ঘটবে তার সকল বিষয়ের আলোচনা ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত।

ভূগোলের প্রধান কাজ কি? 

ভূগোলের প্রথম এবং প্রধান কাজ হচ্ছে মানুষ এবং পরিবেশের মধ্যে যে মিথস্ক্রিয়া তার কার্যক্রম উদঘাটন করা।

আবার ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্য সমূহের সুবিন্যস্ত এবং যুক্তিসঙ্গত বর্ণনা প্রদান করা হয় এই ভূগোলের কাজ। 

এক কথায় বলতে গেলে ভূগোলের কাজ হচ্ছে পৃথিবীতে যা কিছু হচ্ছে তার সম্পর্কে সঠিক এবং যুক্তিসংগত বর্ণনা প্রদান করা। আর মানুষের সাথে পরিবেশে যে মিথস্ক্রিয়া অর্থাৎ মানুষের সাথে পরিবেশের যে সম্পর্ক তা উদঘাটন করা।

কোন পরিবেশের মানুষ কি রকম কোন পরিবেশের মানুষের আচার-আচরণ কি রকম কোন পরিবেশের মানুষ কিভাবে বাঁচে।

আবার কোন পরিবেশে কোন জীবজন্তু কিরকম প্রাকৃতিক পরিবেশের তার সাথে তাদের সম্পর্ক কি এসব বিষয় ভূগোল আলোচনা করে।

ভূগোলের আরো কাজ হচ্ছে পৃথিবীর কোন জায়গায় কি সংঘটিত হচ্ছে কেন সংঘটিত হচ্ছে তা উদঘাটন করা।

আবার পৃথিবীর কোন জায়গায় কি হবে বাকি হতে পারে বাকি হতে চলেছে তা বলে দেওয়া।

আর এই সকল বিষয় সমূহ হওয়া বা ঘটার সঠিক সুবিন্যস্ত এবং যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে বের করা।

ভূগোল যে শুধু পৃথিবী নিয়ে কাজ করে তা নয় ভূগোল পৃথিবীর বাইরের বিষয়বস্তু নিয়েও কাজ করে থাকে।

তবে ভূগোল সবচেয়ে বেশি পরিমাণ কাজ করে থাকে পৃথিবী বিষয়টি নিয়ে পৃথিবীতে কোন সময় কি পরিবর্তন হচ্ছে তা কেনো হচ্ছে তা নিয়ে। পৃথিবীর জলবায়ু ভূপ্রকৃতি প্রাণী নদনদী উদ্ভিদের সাগর খনিজ সম্পদ এগুলো মানুষের জীবনযাত্রা কে কিভাবে প্রভাবিত করে তা নিয়ে।

আবার বনভূমি কেটে তৈরি হয় লোকালয় এগুলোর কারণে কি ক্ষতি হতে পারে কি উন্নতি হতে পারে এগুলো নিয়ে কাজ করে।

আর পৃথিবীর পরিবেশের সীমার মধ্যে থেকে মানুষের বেঁচে থাকার সবচেয়ে সংগ্রাম চলছে সে সম্পর্কে যুক্তিযুক্ত আলোচনা উপস্থাপন করা ভূগোলের কাজ।

আরও পড়ুন: উপগ্রহ কি?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top