ভিটামিন কাকে বলে: খাদ্যের যে উপাদান ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি সাধন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে তাকে ভিটামিন বলে। যে খাদ্য উপাদান স্বাভাবিক খাদ্যের মধ্যে স্বল্প পরিমাণে থেকে মানবদেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে তাকে ভিটামিন বলে। এককথায়, ভিটামিনের সংজ্ঞা: স্বাভাবিক খাদ্যে স্বল্প পরিমাণে থেকে দেহের প্রয়োজনে পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম এমন উপাদানকে ভিটামিন বলে।
দেহের ক্ষয়পূরণ এবং বৃদ্ধি সাধন করতে ভিটামিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, ভিটামিন হচ্ছে খাদ্যের একটি উপাদান। তবে ভিটামিন কে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা যায়, এবং এ প্রত্যেকটি ভিটামিনের উৎস হয় ভিন্ন ভিন্ন রকমের।

ভিটামিনের এ সকল প্রকারভেদ এবং উৎস সম্পর্কে আমরা পরবর্তীতে জানবো এবং আপনি জানতে আগ্রহ থাকলে পুরো পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। মানব শরীরের জন্য পুষ্টি গুনাগুন হিসেবে ভিটামিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে শারীরিক সুস্থতা লাভের জন্য।
রাতকানা রোগ এবং এরকম আরো অনেক রোগ রয়েছে যেগুলো ভিটামিনের অভাবে আমাদের শরীরের মধ্যে দেখা দেয়। তবে এই সকল রোগের চিকিৎসা শুধু একটাই রয়েছে সেটি হচ্ছে প্রয়োজন অনুযায়ী সকল ভিটামিন গ্রহণ করা এবং সুস্থ থাকা।
আমাদের প্রত্যেকের শরীরের জন্য ভিটামিন যেহেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তাই অবশ্যই আমাদেরকে ভিটামিন সম্মিলিত সকল খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। শুধুমাত্র মাছ-মাংস অথবা ভালো ভালো মুখে স্বাদ বেশি লাগে এমন খাদ্য গ্রহণ করলে চলবে না।
ভিটামিনের প্রকারভেদ | ভিটামিন কয় প্রকার ও কি কি?
ভিটামিন যেহেতু আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকে একটি উপাদান তাই আমাদেরকে ভিটামিন সম্পর্কের সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। ভিটামিনের অনেকগুলো প্রকারভেদ রয়েছে এবং এই প্রত্যেকটি প্রকারভেদ অনুযায়ী এদের উৎস ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।
আমাদের সুস্থ জীবন যাপনের জন্য ভিটামিন এর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি এবং ভিটামিনের প্রত্যেকটি প্রকারভেদ আমাদের জন্য উপকারী। ভিটামিনের প্রকারভেদ গুলোর মধ্যে যেকোনো একটির ঘাটতি যদি আমাদের শরীরে দেখা দেয় তাহলে আমাদের বিভিন্ন রোগ হতে পারে।
ভিটামিনের অবস্থান অনুযায়ী ভিটামিনকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা:
জল বা পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন: পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন দুই প্রকার, যথা:
- ভিটামিন বি (B) কমপ্লেক্স
- এবং ভিটামিন সি (C)
ফ্যাট বা চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন: ফ্যাট দ্রবনীয় ভিটামিন চার প্রকার, যথা:
- ভিটামিন এ (A)
- ভিটামিন ডি (D)
- ভিটামিন ই (E)
- এবং ভিটামিন কে (K)
এগুলো হলো ভিটামিনের কিছু প্রকারভেদ যা আমি উপরে উল্লেখ করেছি এবং এই প্রকারভেদ গুলোর বিভিন্ন উৎস রয়েছে। কিছু কিছু ভিটামিনের উৎস লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে একই রকম রয়েছে এবং কিছু কিছু ভিটামিনের উৎসের মধ্যে রয়েছে পার্থক্য।
চলুন তাহলে এবার জেনে নেই, ভিটামিনের উৎস সম্পর্কে যেগুলোর মাধ্যমে আমরা এই প্রত্যেকটি ভিটামিন শরীরে অর্জন করতে পারি। আর শরীরে ভিটামিনের সকল উপাদান গ্রহণ করার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার অভাবজনিত রোগ দূর করতে পারি।
ভিটামিনের উৎস
ভিটামিন মোট ছয় প্রকার এবং এই ছয়টি ভিটামিনের উৎস হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন। নিচে ভিটামিনসহ তাদের উৎস সমূহ উল্লেখ করা হলো:
১.) ভিটামিন – A
- এর রাসায়নিক নাম: রেটিনল।
- এর উৎস: বাঁধাকপি, পাকা আম, টমেটো, গাজর, কড ও হাঙ্গর মাছের যকৃত হতে নিঃসৃত তেল ইত্যাদি।
২.) ভিটামিন – B
- এর রাসায়নিক নাম: থিয়ামিন।
- এর উৎস: ডিমের কুসুম, ঢেকি ছাটা চাল, বাদাম, ডাল, ফুলকপি, বীট এবং লেটুস শাক ইত্যাদি।
৩.) ভিটামিন – C
- এর রাসায়নিক নাম: অ্যাসকরবিক এসিড।
- এর উৎস: আমলকি, লেবু, পেয়ারা এবং মাতৃদুগ্ধ ইত্যাদি।
৪.) ভিটামিন – D
- এর রাসায়নিক নাম: আরগোক্যালসিফেরল ও কোকোক্যালসিফেরল।
- এর উৎস: সূর্যের আলো উদ্ভিদজ তেল কড হেলিবাট প্রকৃতির মাছের তেল ইত্যাদি।
৫.) ভিটামিন – E
- এর রাসায়নিক নাম: টোকোঁফেরোল।
- এর উৎস: লেটুস শাক, মটরশুঁটি, মাছের ডিম এবং মাংস ইত্যাদি।
৬.) ভিটামিন – K
- এর রাসায়নিক নাম: ফাইলোকুইনোন।
- এর উৎস: পালং শাক, টমেটো, অঙ্কুরিত গম, বাঁধাকপি, সোয়াবিন তেল, দুধ বা মাখন, যকৃত এবং বৃক্ক ইত্যাদি।
এগুলো হলো ভিটামিন সবকিছু তাদের উৎস এর নাম যেগুলোর মাধ্যমে আমরা এই ভিটামিন গুলো অর্জন করে থাকে আমাদের শরীরের মধ্যে। আপনিও যদি ভিটামিনের এই সকল উপাদানগুলো আপনার শরীরে অর্জন করতে চান এবং ভিটামিনের অভাব জনিত রোগ দূর করতে চান তাহলে এই খাদ্যগুলো গ্রহণ করুন।
ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ আমাদের শরীরের মধ্যে প্রায় দেখা দেয় এবং এই রোগ গুলো দূর করার জন্য উপরোক্ত উৎস থেকে খাদ্য গ্রহণ করুন। বিশেষ করে শীতকালে আমাদের কম বেশি সকলের মুখে বা জিহ্বায় ঘা উঠে এবং এটি মূলত ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ।
ভিটামিনের উপকারিতা
ভিটামিন কাকে বলে এবং ভিটামিন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য নিয়ে আজকের এই পোস্টটি আপনাদের জন্য তথ্যবহুল রূপে সাজানো হয়েছে। ভিটামিন হচ্ছে আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান এবং ইহার অভাবে আমাদের নানা প্রকার সমস্যার পর্যন্ত দেখা দেয়।
ভিটামিন আমাদের দেহের বিভিন্ন প্রকার উপকার সাধন করে, নিচে ভিটামিনের উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:
- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন উপকারী উপাদান।
- দেহের ক্ষয় পূরণ ও বৃদ্ধি সাধনের ক্ষেত্রে ভিটামিন অধিক উপকারী।
- অস্থির কাঠামো রক্ষায় এবং অস্থির দৃঢ়তা কামনায় ভিটামিন প্রয়োজন।
- দুর্বল শরীরকে সবল শরীরের রূপান্তর করার ক্ষেত্রে ভিটামিন প্রয়োজন।
- ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন ধরনের অভাবজনিত রোগ দেখা দিতে পারে।
- ভিটামিন সকল প্রকার অভাবজনিত রোগ থেকে মুক্তি প্রদান করে।
- প্রত্যেক জীবের দেহের অবকাঠামো নির্মাণে ভিটামিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- দৈহিক বৃদ্ধি ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন শরীর গঠনে ভিটামিন কাজ করে।
এগুলো হলো ভিটামিন এর কিছু প্রয়োজনীয়তা এবং এ প্রয়োজনগুলো সম্পূর্ণরূপে পূরণের জন্য আমাদেরকে ভিটামিনের উৎস থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। ভিটামিনের উৎস থেকে খাদ্য গ্রহণ করার মাধ্যমে আমরা খুব সহজে আমাদের শরীরে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে পারব।
তাই সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে অবশ্যই আপনাকে ভিটামিন সম্মিলিত সকল খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। ভিটামিন আমাদের শরীরের সকল উপকার করে তার মধ্যে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা হচ্ছে অন্যতম একটি উপকারিতা।
আরও পড়ুন: পুষ্টি কি?