ব্যাপন কাকে বলে: কোনা পদার্থ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উচ্চ ঘনত্বের স্থান থেকে নিম্ন ঘনত্বের দিকে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে। আবার, কোন মাধ্যমে কঠিন, তরল কিংবা বায়বীয় পদার্থের স্বতঃস্ফূর্ত বা সমানভাবে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে।
আমাদের আশেপাশের সর্বদা বিভিন্নভাবে ব্যাপন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে থাকে এবং এক্ষেত্রে পাঠ্য বইয়ে আমাদের আতরের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। একটি আতরের সুগন্ধি যখন আমরা গায়ে মাখি তখন দেখা যায় কিছুক্ষণের মধ্যে তা আমাদের আশেপাশের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং একটি ব্যাপনের মাধ্যমে হয়।
ব্যাপনের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে আর আমি আশা করি যে আপনাদেরকে ব্যাপনের এই বৈশিষ্ট্যগুলো জানা প্রয়োজন হবে বা উপকার হবে।
ব্যাপন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যেখানে, পদার্থ উচ্চ ঘনমাত্রা স্থান থেকে নিম্ন ঘনমাত্রার স্থানে সমানভাবে তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে ছড়াতে থাকে।
ব্যাপনের বৈশিষ্ট্য:
- কোন চাপ ও তাপ প্রদান না করে ব্যাপন এর প্রক্রিয়া স্বাভাবিক ভাবে ঘটানো সম্ভব।
- ব্যাপন সর্বদা উচ্চ ঘনমাত্রার স্থান থেকে নিম্ন ঘনমাত্রার স্থান বা দিকে প্রবাহিত হয়।
- পদার্থ নিম্ন ঘনমাত্রা স্থানে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ার সময়ের উপর ভিত্তি করে ব্যাপন হার নির্ভর করে।
- যে পদার্থের ওজন ব্যবহার যত বেশি হয়, সে পদার্থের ব্যাপন হার তত বেশি কমতে থাকে।
- তাপমাত্রা বৃদ্ধি করানোর ফলে ব্যাপন হার বৃদ্ধি করানো সম্ভব হয় এবং ব্যাপন প্রক্রিয়া দ্রুত সংঘটিত হয়।
এগুলো হচ্ছে ব্যাপনের কিছু বৈশিষ্ট্য এবং ব্যাপন সম্পন্ন হওয়ার সময় বা ঘটার সময়ে সকল বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে ক্রিয়া করে। অর্থাৎ এই সকল বৈশিষ্ট্যের ওপর ক্রিয়া করে ব্যাপন তার কাজ আশেপাশের পরিবেশের মধ্যে খুবই সহজে ছড়িয়ে দিতে পারে।
ব্যাপন বলতে কি বুঝায়?
ব্যাপন বলতে কী বোঝায় এর সহজ উত্তর হচ্ছে, ব্যাপন বলতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভাবে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়েছে।
আর ব্যাপন সর্বদা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছড়িয়ে থাকে অর্থাৎ ব্যাপন সমানভাবে আশেপাশের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে যা ঘনত্ব সমান করে দেয়।
অর্থাৎ একটি পদার্থ যখন ব্যাপন প্রক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে তখন এর পরিমাণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিটি স্থানে সমান পরিমাপে হয়ে থাকে যা বেপনের বৈশিষ্ট্য। ব্যাপনের বৈশিষ্ট্য হিসেবে এই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি তাই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় কেননা এটি ব্যাপনের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টির উপর ভিত্তি করে অনেকে মনে করে থাকে যে বেপন মনে হয় শুধুমাত্র গ্যাসীয় পদার্থ দ্বারা সংগঠিত হয়।
এ কথাটি ভুল কেননা ব্যাপন শুধু গ্যাসীয় পদার্থে হয় এমন না বরং প্রত্যেকটি পদার্থ দ্বারা বিভিন্ন মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে।
তবে ব্যাপন হওয়ার জন্য একটি মাধ্যমের প্রয়োজন হয় কেননা মাধ্যমের মাধ্যমে ব্যাপনের উপর প্রভাব পড়ে যা বেপনের গতি হ্রাস বা বেশি করে। যেমন যদি তাপমাত্রা বেশি হয় তাহলে অবশ্যই বেতন তাড়াতাড়ি হবে এবং এটি একটি মাধ্যম যা ব্যাপনকে প্রভাবিত করেছে।
গ্রাহামের ব্যাপন সূত্র
গ্রাহামের ব্যাপন সূত্র: যেকোনো দুটি গ্যাসের ব্যাপন হার, এদের আণবিক ভরের বর্গমূলের ব্যাস্তানুপাতিক এর সমান হয়ে থাকে।
অর্থাৎ গ্রাহামের ব্যাপন সূত্র অনুযায়ী দুটি গ্যাসের ব্যাপন হার এর মান হবে, উক্ত গ্যাসদ্বয়ের আণবিক ভরের বর্গমূলের ব্যাস্তানুপাতিক।
এই গ্রাহামের ব্যাপন সূত্র অনুযায়ী আমরা যেকোনো দুটি গ্যাসের ব্যাপন হারের মান খুব সহজে নির্ণয় করতে পারি। ব্যাপনের এই সূত্রটি দ্বারা আমরা সর্বক্ষেত্রে শুধুমাত্র গবেষণা করার জন্য ব্যবহার করতে পারে এবং সেই সাথে সমস্যার সমাধান করতে পারি।
তবে গ্রাহামের ব্যাপন সূত্রটি বোঝার জন্য আমাদেরকে ব্যাপন সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে হতো যা আমি প্রথমে আপনাদেরকে দিয়েছি।
আমরা যে অক্সিজেন গ্রহণ করি তা আমাদের নিকট ছড়িয়ে আসতো না ব্যাপন ছাড়া এবং এজন্য ব্যাপন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
চিন্তা করুন আমরা যে শ্বাস গ্রহণ করতেছে প্রতিনিয়ত, সেটা তো একটি উদ্ভিদ থেকে সৃষ্টি হয় এবং ব্যাপার না থাকলে সেখানে সীমাবদ্ধ থাকতো। আর ফলস্বরূপ দেখা যেত যে আমাদেরকে শ্বাস নেওয়ার জন্য গাছের উপরে বসে থাকতে হতো এবং সেখান থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করতে হতো যা অবশ্যই কঠিন।
কিন্তু এই ব্যাপন প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে এমনটি আর করতে হয় না বরং অক্সিজেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: পদার্থ কাকে বলে?