বোর পরমাণু মডেল ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের পদার্থবিজ্ঞানী নীলস বোর রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের কিছু ত্রুটি সংশোধন করার জন্য এ মডেল প্রস্তাব করেন।
পদার্থ-বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ও আইনস্টাইন এর সমন্বয়ে আলো সম্পর্কীয় বিকিরণ কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুসরণ করার মাধ্যমে বিজ্ঞানী নীলস বোর তার প্রমাণ মডেল উপস্থাপন করে জটিল সমস্যার সমাধান করেছেন।
আমরা এই বোর পরমাণু মডেলের ধারণা থেকে রাদারফোর্ড পরমাণু মডেলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান বা সংশোধন পেয়েছি। আর বর্তমান সময়ে পরমাণু মডেলের উপর ভিত্তি করার সবচেয়ে বেশি যে মডেলটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে সেই মডেলটি হচ্ছে বোরের প্রস্তাবনা অনুযায়ী পরমাণু মডেল।

আমরা বিভিন্ন প্রকার সমস্যার সমাধানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনটি সমাধান বা সমস্যা দূর করতে পেরেছে বোর পরমাণু মডেলের মাধ্যমে।
চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক যে সকল ত্রুটি বোর পরমাণু মডেল দূর করেছে বা সংশোধন করেছে তার নমুনা সমূহ।
নিলস বোর পরমাণু মডেল মোট তিনটি ত্রুটি দূর করেছেন, যেমন:
- ম্যাক্সওয়েল এর তথ্যভিত্তিক ত্রুটি (শক্তি বিকিরণের মাধ্যমে নিউক্লিয়াসের পতন)
- ইলেকট্রনের কক্ষপথের আকার ভিত্তিক ত্রুটি (ইলেকট্রন পরিভ্রমণ অঞ্চলের আকৃতি)
- হাইড্রোজেন সহ এক ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণুর পারমাণবিক বর্ণালী সৃষ্টির যথার্থ ব্যাখ্যা।
এগুলো হলো কিছু ত্রুটি যে ত্রুটি গুলো আমরা সমাধান করতে পেরেছে বোর পরমাণু মডেলের উপর ভিত্তি করে বা আলোকে।
বোর পরমাণু মডেলের প্রস্তাবনা
আমরা যখন বোর পরমাণু মডেল সম্পর্কে জানতে চাই তখন টিনার দেওয়া কিছু প্রস্তাবনা সময় সম্পর্কে জানতে পারি এই মডেল। অর্থাৎ নীলস বোর যখন তার পরমাণু মডেলটি উল্লেখ করেছিলেন তখন কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন বা প্রস্তাব দিয়েছিলেন যেগুলো আমাদের জানতে হবে।
নিলস বোর পরমাণু মডেলের প্রস্তাবনাসমূহ নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করা হলো:
- স্থির কক্ষপথ ও শক্তিস্তরের মতবাদ: K, L, M, N.
- কৌণিক ভরবেগের মতবাদ: mvr= nh/2π
- শক্তি শ্বসন ও বিকিরণ এর মতবাদ: ΔE=E2-E1=hν
এগুলো হচ্ছে নীলস বোর পরমাণু মডেলের কিছু প্রস্তাবনা যা আমরা নীলস বোরের মডেল সম্পর্কে জানার মাধ্যমে জানতে পারি। আবার এই মডেলটি অর্থাৎ বোর পরমাণু মডেলটি আবার কয়েকটি বিষয়ের উপর বা নির্দিষ্ট একটি বিশ্বের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চলুন তা জেনে নেই।
বোর পরমাণু মডেলের ভিত্তি
নিলস বোর পরমাণু মডেলের ভিত্তি হচ্ছে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ও আইনস্টাইনের সমন্বয়ের আলো সম্পর্কীয় বিকিরণ কোয়ান্টাম তত্ত্ব।
বোর পরমাণু মডেলের সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ও আইনস্টাইনের সমন্বয়ে আলো সম্পর্কিত বিকিরণ কোয়ান্টাম তথ্য অনুসরণ করে বের করা হয়েছে। আর এ অনুযায়ী বলা যায় বোর মডেলের ভিত্তি হচ্ছে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ও আইনস্টাইনের সমন্বয়ে আলো সম্পর্কীয় বিকিরণ কোয়ান্টাম তত্ত্ব।
এটি হচ্ছে বোর পরমাণু মডেলের ভিত্তি যা এখানে উল্লেখ করেছি এবং এই ভিত্তির উপর বিজ্ঞানী বোরের পরমাণু মডেল প্রস্তাবিত হয়েছে।
বিজ্ঞানী বোর হচ্ছে রাদারফোর্ডের ছাত্র এবং ইনি বিকিরণ কোয়ান্টাম সংখ্যা ব্যবহারে রাদারফোর্ডের মডেলের যে সকল ত্রুটি ছিল তা দূর করেছিলেন।
অর্থাৎ রাদারফোর্ডের ছাত্র অথবা শীর্ষ যাই হোক না কেন সে, রাদারফোর্ডের মডেলের যে সকল তত্ত্ব ভিত্তিক ত্রুটি ছিল তা দূর করতে সক্ষম হয়েছে। আর এই তত্ত্ব ভিত্তিক ত্রুটি দূর করেছেন বিজ্ঞানী বোর তার নিজস্ব বোর পরমাণু মডেল প্রস্তাবনা করার মাধ্যমে।
বোর পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা
যদিওবা বিজ্ঞানী বোরের পরমাণু মডেলের মাধ্যমে বিভিন্ন ত্রুটি দূর কর হয়েছে যা রাদারফোর্ড পরমাণু মডেলের ছিল। কিন্তু বোর পরমাণু মডেলের মাঝেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে আর এই সীমাবদ্ধতা গুলোর কারণে আমরা সঠিক মত অনেক তথ্য জানতে পারি না।
নিলস বোর-পরমাণু মডেলের কতিপয় সীমাবদ্ধতা রয়েছে, নিচে এই সীমাবদ্ধতা সমূহ উল্লেখ করা হলো:
- এ মডেল শুধুমাত্র এক ইলেকট্রন বিশিষ্ট মৌল এবং আয়নের বর্ণালী ব্যাখ্যা করতে সক্ষম উদা: H।
- একাধিক ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণুর ব্যাখ্যা পাওয়া এ মডেল থেকে অসম্ভব।
- শক্তিস্তর পরিবর্তন হওয়ার সময় কতিপয় বর্ণালী রেখা সূক্ষ্ম রেখা দিয়ে গঠিত হয়। এই সুক্ষ রেখাগুলো গঠনের কারণ এ মডেল দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।
- এ মডেল হতে প্রমাণের প্রকৃত ত্রিমাত্রিক কাঠামো নিয়ে ধারণা পাওয়া যায় না।
- এ মডেল দ্বারা নির্দিষ্ট সময় কোন ইলেকট্রনের অবস্থান ও ভরবেগ নির্ণয় করা সম্ভব, তবে হাইড্রোজেন বার্গের অনিশ্চয়তা নীতি অনুযায়ী এ কাজটি করা যায় না।
- এ মডেল হতে অনেক ভরবেগ নির্ণয় করা যায় তবে, কৌণিক ভরবেগের কারণ ব্যাখ্যা করা যায় না।
- এ মডেল হতে জিম্যান প্রভাব ও স্টার্ট প্রভাব নামক দুটি চৌম্বক ও তড়িৎ ক্ষেত্র সম্পর্কে ব্যাখ্যা লাভ করা যায়।
এগুলো হচ্ছে বোর মডেলের সীমাবদ্ধতা এবং সীমাবদ্ধতা গুলো দ্বারা স্পষ্ট যে, বোর মডেল ব্যবহার করে সকল তথ্য পেতে পারি না।
সীমাবদ্ধতা যেহেতু রয়েছে ঠিক এর বিপরীত দিকে বোর পরমাণু মডেলের কিছু সাফল্য রয়েছে যা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বোর পরমাণু মডেলের সাফল্য
বোর পরমাণু মডেল এর দ্বারা বিভিন্ন ধরনের সাফল্য অর্জিত হয়েছে এবং এর সাফল্য তারা রাদারফোর্ডের তত্ত্ব ত্রুটি দূর হয়েছে। নীলস বোরের পরমাণু মডেলের মাধ্যমে যে সকল সাফল্য লাভ করা হয়েছে তার প্রত্যেকটি ছিল মূলত ত্রুটি সংশোধন করার উপর ভিত্তি করে।
নিলস বোর-পরমাণু মডেলের সাফল্য নিচে উল্লেখ করা হলো:
- পরমাণু মডেলের স্থায়িত্ব কেন হয় এ সম্পর্কে ত্রুটি দূর করতে সফল হয়েছে।
- যে কোন পরমাণুর পারমাণবিক বর্ণালী ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
- হাইড্রোজেন পরমাণুর একটি মাত্র কক্ষপথ অর্থাৎ প্রথম কক্ষপথের ব্যাসার্ধের মান নির্ণয় করা যায়।
- আবর্তনশীল ইলেকট্রন সমূহের শক্তির পরিমাণ নির্ণয় করা যায় এবং শক্তিস্তর পরিবর্তনের সময় শোষিত বিকৃত শক্তির পরিমাণ নির্ণয় করা যায়।
এগুলো হচ্ছে বোর পরমাণু মডেলের কিছু সাফল্য এবং এই সাফল্যগুলো বোর তার পরমাণু মডেল প্রস্তাবনা করার মাধ্যমে পেয়েছেন।
বোর পরমাণু মডেল নিয়ে আজকের আলোচনা ছিল এ পর্যন্ত এবং আশা করি আপনারা মডেলটির সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছেন এই পোস্টে।
আরও পড়ুন: জিম্যান প্রভাব কি?