বুনিয়াদি শিক্ষা কি? বুনিয়াদি শিক্ষার স্তর কয়টি? বুনিয়াদি শিক্ষার বৈশিষ্ট্য

বুনিয়াদি শিক্ষা কি: শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নের জন্য গান্ধীজী বৈপ্লবিক শিক্ষা পরিকল্পনার নাম হচ্ছে বুনিয়াদি শিক্ষা। এই বুনিয়াদি শিক্ষার প্রথম প্রচলন শুরু হয়েছিল ভারতবর্ষে এবং এই শিক্ষা সম্ভব হয়েছিল শুধুমাত্র গান্ধীজীর বিপ্লবী চিন্তা ভাবনার কারণে।

বুনিয়াদি শিক্ষার মাধ্যমে বিপ্লবী চিন্তাভাবনার কথাটি যে রকম ভাবে মাথায় আসে ঠিক অনুরূপভাবে এর শিক্ষাও কাজ করে থাকে শিক্ষার্থীর মাঝে।

এই বুনিয়াদের শিক্ষা গ্রহণ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিপ্লবের চিন্তা ভাবনা জাগ্রত হয় এবং সেই সাথে জ্ঞানের বিকাশ ঘটে।

গান্ধীজীর বুনিয়াদি শিক্ষার মাধ্যমে প্রত্যেকটি শিক্ষা থেকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা হয়েছিল এবং যোগ্যতা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শিক্ষার প্রদান করা হয়েছিল। আর এইভাবে বয়স সীমা নির্ধারণ করার মাধ্যমে বুনিয়াদি শিক্ষার কয়েকটি স্তর রয়েছে যা বিপ্লবী চিন্তা ভাবনার অন্তর্ভুক্ত।

বুনিয়াদি শিক্ষা কি
বুনিয়াদি শিক্ষা কি?

ভারতবর্ষে বুনিয়াদি শিক্ষাকে আরো অনেক নামে ডাকা হয়, যেমন: বেসিক এডুকেশন ও নঈ-তালিম ইত্যাদি। ভারতবর্ষের বুনিয়াদি শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকল্পনার প্রবর্তক হলেন মহাত্মা গান্ধী (১৯৩৭)।

মূলত একটি শিশুর মাঝে যদি সাধারণ জ্ঞান না থাকে তাহলে সে কখনোই উচ্চ জ্ঞান অর্জন করতে পারবে না এবং জ্ঞানী হতে পারবে না। আর এই সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বুনিয়াদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেখানে শিশুকে সাধারণ জ্ঞানের মত তথ্য প্রদান করা হতো।

আর সাধারণ জ্ঞান অর্জন করা শেষ হলে পরবর্তীতে শিশুকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা হতো যা জ্ঞানের বিকাশ সহজে ঘটায়।

আর এই ধারাবাহিক পরক্রিয়াটি অম্বলম্বন করে বিপ্লবী চিন্তাভাবনা প্রতিষ্ঠা করেছে বুনিয়াদি শিক্ষা ব্যবস্থা।

বুনিয়াদি শিক্ষার স্তর

এই বুনিয়াদি শিক্ষা স্তরে বয়স সীমা অনুযায়ী বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা হয়েছে যেখানে নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে শিশুকে।

কেননা ধাপে ধাপে শিক্ষা প্রদান না করায় শিশুর বিপ্লবী চিন্তা ভাবনা জাগ্রত হবেনা এবং বুনিয়াদি শিক্ষা সার্থক হবে না।

আর এই সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বুনিয়াদের শিক্ষাকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা হয়েছে এবং অনুযায়ী জ্ঞান সীমাবদ্ধ রয়েছে। অর্থাৎ শিশু যখন স্তর অতিক্রম করতে থাকে তখন তার মেধার বিকাশও ঘটতে থাকে এবং সেই সাথে শিশু তার উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন স্তরে সহজে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।

বয়সসীমার ভেদাভেদ অনুযায়ী বুনিয়াদি শিক্ষা চার স্তর বিশিষ্ট, যথা:

  • প্রাক বুনিয়াদি শিক্ষা স্তর (বয়সসীমা: ৭ বছরের চেয়ে কম)।
  • জুনিয়র বুনিয়াদি শিক্ষা স্তর (বয়সসীমা: ৭ থেকে ১০ বছরের মধ্যে)।
  • সিনিয়র বুনিয়াদি শিক্ষা স্তর (বয়সসীমা: ১১ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে)।
  • উত্তর বুনিয়াদি শিক্ষা স্তর বা পোস্ট বেসিক স্তর (বয়সসীমা: ১৪ বছরের অধিক)।

এগুলো হলো বুনিয়াদি শিক্ষার স্তর এবং স্থল অনুযায়ী প্রত্যেকটি শিশুকে বিভিন্ন ভাবে জ্ঞান প্রদান করা হয়ে থাকে এ শিক্ষা। আর বুনিয়াদি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারণ থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিশুকে পৌঁছে দেওয়া এবং মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা।

বুনিয়াদি শিক্ষায় সর্বক্ষেত্রে শিশুর নাম উল্লেখ হয়েছে কেননা এখানে সাধারণ থেকে শিক্ষা শুরু হয় ও উচ্চ পর্যন্ত শিক্ষা শেষ হয়।

এই বুনিয়াদি শিক্ষার আবার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যে বৈশিষ্ট্য গুলোর উপর ভিত্তি করে বুনিয়াদি শিক্ষা শিশুদের জ্ঞানের বিকাশ ঘটায়।

বুনিয়াদি শিক্ষার বৈশিষ্ট্য

বুনিয়াদি শিক্ষার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এই বৈশিষ্ট্য গুলো দ্বারা আমরা বুনিয়াদি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য সহজভাবে বুঝতে পারব।

আর এ বুনিয়াদি শিক্ষার গ্রহণযোগ্যতা কেন এত বেশি হয়েছে সে সম্পর্কেও জানতে পারবো উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে অবগত হওয়ার মাধ্যমে।

এই বুনিয়াদি শিক্ষায় এমন কোন বিষয় নেই যে বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বুনিয়াদি শিক্ষায় কোন কথা উল্লেখ হয়নি। তাই অবশ্যই এর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আমরা বুঝতে পারবো যে বুনিয়াদি শিক্ষার মধ্যে কোন কোন বিষয় উল্লেখ রয়েছে এবং কিভাবে শিশুকে অনুপ্রেরিত করতে পারে।

নিচে বুনিয়াদি শিক্ষার বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশেষভাবে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:

  • ৭ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ওপর এই শিক্ষা সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক এবং অবৈতনিক।
  • এই শিক্ষার মাধ্যম হবে নিজ দেশের মাতৃভাষার মাধ্যমে।
  • শিক্ষার্থীর স্থানীয় সামর্থ্য এবং চাহিদা অনুযায়ী কোন একটি নির্দিষ্ট শিল্পকে কেন্দ্র করে শিক্ষা পরিচালনা করা হবে।
  • শিল্পা থেকে উপার্জনকৃত অর্থ দ্বারা শিক্ষার্থী তার পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে পারবে।
  • এই শিক্ষা বড় ছোট, ধনী গরিব এবং পুরুষ মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত।

এগুলো হলো কিছু বুনিয়াদি শিক্ষার বৈশিষ্ট্য এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলো দ্বারা আমরা বুনিয়াদী শিক্ষার সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আর অবশ্য বর্তমানে যে সকল শিক্ষা রয়েছে তার প্রত্যেকটিতে কম বেশি বুনিয়াদি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে পাঠ দান করার জন্য।

বিপ্লবী চিন্তা ভাবনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা এই বুনিয়াদি শিক্ষার মাধ্যমে অবশ্যই দেশ ও জাতির বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।

আরও পড়ুন: শিক্ষার আসল কাজ কি?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top