জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ কি কি এবং কিভাবে আমরা খুব সহজে জলাতঙ্ক রোগ চিহ্নিত করতে পারব চলুন তা জেনে নেই। জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ জানতে হলে আমাদেরকে একটি প্রাণী শনাক্ত করতে হবে এবং প্রাণী অনুযায়ী কি কি লক্ষণ প্রদর্শিত হবে তা জানতে হবে।
তাই প্রাণী হিসেবে আমরা বিড়ালকে চিহ্নিত করলাম এবং চলুন বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে কি কি লক্ষণ পরিলক্ষিত হবে তা জানার চেষ্টা করি।
বিড়ালের জলাতঙ্ক: বন্ধুরা কুকুরের মতো বিড়ালেরও জলাতঙ্ক রোগ হয় এবং জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। জলাতঙ্ক হচ্ছে বিড়ালের একটি অনেক বেশি পরিচিত এবং ভয়ংকর একটি রোগের নাম।
জলাতঙ্ক রোগটি যে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়, সেই ভাইরাস শিয়াল, বাদুড় এবং ইঁদুর বহন করে থাকে। এই রোগটি এ সকল প্রাণীর কামড় কিংবা আচরণের ফলে বিড়ালের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
আবার সেই সাথে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত বিড়াল কামড়ালে অথবা আঁচড়ালে মানুষ কিংবা অন্যান্য প্রাণী এ রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়।
এই ভাইরাসটি আক্রমণ হওয়ার পর পর ওই মস্তিষ্কে পর্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে যায়। জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে একটি বিড়ালের কমপক্ষে দুই থেকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ সমূহ প্রতিফলিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে এই বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। এমনকি এক্ষেত্রে আপনি ও আপনার বিড়াল উভয় চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।
জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত বিড়াল গুলো বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারে না, যদি ঠিকমতো চিকিৎসা না দেওয়া হয়।
এই বিড়াল আক্রান্ত হলে এর কোন সুস্থ হওয়ার উপায় নেই, কিন্তু এর আগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে। বিড়ালকে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিরোধক দেওয়ার মাধ্যমে এ রোগ থেকে মুক্তি প্রদান করা সম্ভব।
বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ সমূহ
আমাদের বিড়াল যখন জলাতঙ্কে রোগে আক্রান্ত হয়ে তখন সাধারণ কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়ে যেগুলো তারা আমার জলাতঙ্ক চিহ্নিত করতে পারে।
নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করা হলো:
- জলাতঙ্কের ফলে বিড়াল প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে।
- বিড়ালের আচরণ হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে যাওয়া অথবা পাগলের মত দৃষ্টিভঙ্গি দেখা।
- হঠাৎ হিংস্র হয়ে ওঠে কামড় বা আঁচড় দেওয়ার বড় প্রবণতা লক্ষ্য করা।
- গলার সুর পরিবর্তন হয় অন্য সুরে বা অন্য আওয়াজে ডাকা।
- সব সময় বিড়ালের মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকা বা পড়তে থাকা।
- শ্বাস নেওয়ার গতি বৃদ্ধি পাওয়া বা ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া।
- পানি দেখে ভয় পাওয়া এবং পানি পান করা বন্ধ করে দেওয়া।
এগুলো হলো বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ এবং এই লক্ষণ গুলো পরিলক্ষিত হলে আপনি বুঝে নিবেন যে আপনার বিড়ালের জলাতঙ্ক হয়েছে। আর জলাতঙ্ক রোগ চিহ্নিত হওয়ার পর অবশ্যই আপনাকে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে আপনার বিড়ালের সুস্থতার জন্য।
জলাতঙ্ক যেহেতু একটি মরণঘাতী রক এবং এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে ওঠে যে কোন প্রাণীর ক্ষেত্রে।
তবে যদি সঠিক সময় চিকিৎসা গ্রহণ করা যায় তখন সে ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রাণীদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি হয়ে থাকে তাই জলাতঙ্ক লক্ষণ সনাক্ত করে দূরত্ব চিকিৎসা করুন।
বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে কি করবেন
বন্ধুরা আমি আগেই বলেছি যে জলাতঙ্ক রোগের কোন চিকিৎসা নেই, তবে সঠিক সময় ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিরোধক দেওয়ার মাধ্যমে বিড়ালকে সুস্থ করা সম্ভব।
তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে আপনার বিড়ালে জলাতঙ্ক রোগ বা রোগের লক্ষণ প্রতিফলন হওয়ার আগেই ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে।
Rabies Vaccine হচ্ছে জলাতঙ্ক রোগের একমাত্র প্রতিরোধক বৈজ্ঞানিক ফর্মুলা।
এ ভ্যাকসিন এর মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং যেকোনো পশু চিকিৎসকের কাজ থেকে এ ভ্যাকসিন প্রদান করা যায়।
এই ভ্যাকসিনের বাজারজাত মূল্য হচ্ছে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত এবং আপনার সুপরিচিত চিকিৎসক হলে আপনি ১০০০ টাকায় পেতে পারেন।
তবে বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে কি করনীয় বা কি করবেন তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- প্রথমে একজন ভালো চিকিৎসকের নিকটে গিয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
- বর্তমানে জলাতঙ্ক রোগের বেশ কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি বের হয়েছে সুস্থ হওয়ার জন্য।
- আপনার বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্র চিকিৎসা দিন।
- রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্র চিকিৎসা দেওয়ার ফলে অনেক বিড়াল সুস্থ হয়।
- আপনার বিড়ালকে পানি বা জলাশয় স্থান থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
- এ সময় আপনার বিড়ালের মানসিক অবস্থা বিঘ্নিত হয়ে তাই বেশি উত্তেজনার সৃষ্টি করবেন না।
- বিড়ালের ঘুমানোর স্থান পরিবর্তন করুন এবং পরিষ্কার স্থান নির্বাচন করুন। প্রতিনিয়ত এন্টিসেপটিক দ্বারা আপনার বিড়াল ও বাসাবাড়ি স্প্রে করুন।
আপনার বিড়াল যদি জলাতঙ্ক রোগের আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে এই কয়েকটি পন্থা অবলম্বন করে আপনি আপনার বিড়ালকে সুস্থ করতে পারেন।
তবে অবশ্যই আপনাকে সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ অবলম্বন করে আপনার বিড়ালকে জলাতঙ্কের চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
আরও পড়ুন: কুকুরের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ।