প্লাস্টিড কাকে বলে: উদ্ভিদ কোষের সাইটোপ্লাজমের মধ্যে বিক্ষিপ্ত ডিম্বাকৃতি, তারকাকৃতি কিংবা ফিতাকৃতি বর্ণধার সজীব বস্তুগুলোকে প্লাস্টিড বলে। এসব প্লাস্টিককে আলোজ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে স্পষ্ট দেখা যায়। প্রাণী কোষ, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, নীলাভ-সবুজ শৈবালে প্লাস্টিক থাকে না।
নীলার সবুজ শৈবালে উপস্থিত প্লাজমামেমব্রন প্রবেশ প্রবেশ করে থাইলাকয়েড সৃষ্টি করে এবং এই থাইলাকয়েড ক্লোরোফিল ধারণ করে। যেহেতু উদ্ভিদ কোষের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্লাস্টিক অর্থাৎ এই প্লাস্টিড উদ্ভিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উদ্ভিদ কোষের প্লাস্টিডকে আমরা বিভিন্ন আকৃতিতে দেখতে পাই এবং উপরোক্তার সঙ্গে আমরা প্লাস্টিডের আকৃতি দিয়েছে। আর আকৃতির উপর ভিত্তি করে প্লাস্টিক বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে উদ্ভিদ দেহের মধ্যে এবং সালোকসংশ্লেষণসহ অন্যান্য কাজ করে।
এগুলো তো ছিল প্লাস্টিডের কিছু তথ্য এবং সেই সাথে সংজ্ঞা তবে প্লাস্টিডের প্রকারভেদ আছে রং এবং কাজের উপর।
চলুন তাহলে দেখে নেই উদ্ভিদ কোষে উপস্থিত এই প্লাস্টিড গুলো কয় প্রকার হয়ে থাকে এবং এদের কাজ ও রঙ কিরূপ।
প্লাস্টিড কত প্রকার ও কি কি?
প্লাস্টিড প্রধানত তিন প্রকার যথা: ১) ক্লোরোপ্লাস্ট, ২) ক্রোমোপ্লাস্ট, ও ৩)লিউকোপ্লাস্ট।
১) ক্লোরোপ্লাস্ট: সবুজ বর্ণ ধারণকারী প্লাস্টিককে মূলত ক্লোরোপ্লাস্ট বলা হয়। ক্লোরোফিল-a, ক্লোরোফিল-b, জ্যান্থোফিল ক্যারোটিন এগুলো নিয়ে ক্লোরোপ্লাস্ট গঠিত হয়। সবুজ উদ্ভিদের জন্য ক্লোরোপ্লাস্ট একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গানু।
কলেরোপ্লাস্ট এর মধ্যে ক্লোরোফিল নামক সবুজ বর্ণকণিকা অধিক মাত্রায় থাকে বলে এদেরকে সবুজ বর্ণের দেখায়।
আর এর মধ্যে অন্যান্য বর্ণ কণিকাগুলো সামান্য পরিমাণ বা কিছু কিছু পরিমাণ থাকে।
ক্লোরোপ্লাস্ট খাদ্য সংশ্লেষণে সাহায্য করে তাই একে কোষের রান্নাঘর বা শর্করা জাতীয় খাদ্যের কারখানা বলা হয়ে থাকে।
ক্লোরোপ্লাস্ট একটি শক্তে রূপান্তরের অঙ্গানু।
২) ক্রোমোপ্লাস্ট: বিভিন্ন রঙিন প্লাস্টিড সমূহকে ক্রমপ্লাস্ট বলে। উদ্ভিদ শরীরের যেসব অঙ্গ বর্ণময় দেখায় সেসব অঙ্গে এই ক্রোমোপ্লাস্ট থাকে। যেমন: রঙিন ফল, গাজরের মূল, রঙিন বীজ, ফুলের পাপড়ি ইত্যাদিতে ক্রমপ্লাস্ট থাকে।
ক্রোমোপ্লাস্ট এর মধ্যে জ্যান্থোফিল, ক্যারোটিন, ফাইকোসায়ানিন, ফাইকোএরিথ্রিন ইত্যাদি রঞ্জক পদার্থ থাকে তাই এদেরকে রঙিন দেখায়।
ক্রমপ্লাস্ট ফুলকে আকর্ষণীয় করে পরাগায়নে সাহায্য করে।
৩) লিউকোপ্লাস্ট: যেসব প্লাস্টিডের মধ্যে কোন প্রকার রঞ্জক পদার্থ নেই তাদেরকে লিকোপ্লাস্ট বলে।
প্লাস্টিড সমূহের মধ্যে লিউকোপ্লাস্টের গুরুত্ব অপরিসীম। এই লিউকোপ্লাস্ট অর্ধবৃত্তাকৃতি, নলাআকৃতি অথবা মূলাআকৃতি পর্যন্ত হতে পারে।
এদের অবস্থান হলো মূলে বা ভূ-নিম্নস্থ কান্ডে অর্থাৎ যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না।
এদের প্রধান কাজ হল খাদ্য সঞ্চয় করে রাখা এবং শর্করা থেকে শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য তৈরি করা।
প্লাস্টিডের গুরুত্ব
উদ্ভিদের জন্য প্লাস্টারের গুরুত্ব অপরিসীম। ক্লোরোপ্লাস্ট প্লাস্টিডের গ্রানা অংশ সূর্যালোকে আবদ্ধ করে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে থাকে। এই আবদ্ধ সৌরশক্তি স্ট্রোমাতে অবস্থিত উৎসেচকের সমষ্টি এবং বায়ু থেকে গৃহীত কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও কোষের ভেতরকার পানি ব্যবহার করে শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে থাকে।
ক্রোমোপ্লাস্ট ফুলকে আকর্ষণীয় করে পরাগায়নের সাহায্য করে।ক্রোমোপ্লাস্ট সমূহ বিভিন্ন ধরনের রঞ্জক পদার্থ সংশ্লেষণ করে জমা করে রাখে।
লিউকোপ্লাস্ট এর কাজ হলো খাদ্য সঞ্চয় করা। লিউকোপ্লাস্ট শর্করা থেকে শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য তৈরি করে।
অর্থাৎ এখান থেকে দেখা গেল যে প্লাস্টিকের কাজ উদ্ভিদ কোষে অনেক বেশি হয়ে থাকে এবং উদ্ভিদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় হচ্ছে প্লাস্টিক। কেননা এই প্লাস্টিড দাঁড়ায় উদ্ভিদের নিজের খাদ্য উৎপাদন করতে পারে এবং সেই সাথে অন্যের খাদ্য নিবারণের জন্য ফল তৈরি করে।
আর উদ্ভিদ কোষে যেমন বিভিন্ন প্রকার প্লাস্টিড খুঁজে পাওয়া যায় ঠিক তেমনি প্রত্যেকটি প্লাস্টিড এর কাজ ভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
প্রত্যেকটি প্লাস্টিড এর কাজ বিভিন্ন হওয়ার কারণে এদের প্রত্যেকটির গুরুত্ব ভিন্ন ভাবে অনেক বেশি হয়ে থাকে উদ্ভিদে।
আরও পড়ুন: মাইটোকন্ড্রিয়া কাকে বলে?