প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কি: প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা হলো ৬ বছরের কম বয়সী শিশুর অর্জিত আনুষ্ঠানিক শিক্ষা। যে শিক্ষা স্তরে শিশুর মেধার বিকাশ ঘটিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করার উপযোগী করে তৈরি করা হয় সেই শিক্ষাই হচ্ছে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা।
সহজ ভাষায়, শিশু তার জন্মের পর ছয় বছর পর্যন্ত যে শিক্ষা অর্জন করে তাকে প্রাথমিক শিক্ষা বলে।
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে এমন একটি ধাপ যেখানে শিশুকে প্রস্তুত করা হয় প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত জ্ঞান ধারণের জন্য। কোন শিশু একবারেই প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেনা কেননা প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করার জন্য তাকে প্রথমে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
এটি থেকে বোঝা যায় শুধুমাত্র ৬ বছর পর্যন্ত যে শিক্ষা গ্রহণ করে শিশু, তাকে প্রাথমিক শিক্ষা বলা হয় এমন না।
আসলে, প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করার জন্য একটি শিশুকে যে যে বিষয়ে আগে থেকে জ্ঞান বা শিক্ষা অর্জন করতে হয় সেই শিক্ষা বা জ্ঞানকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বলে।
আবার, একটি শিশু জন্মের পর তার পরিবার এবং আশেপাশের সমাজ, পরিবেশ ও বন্ধু-বান্ধব থেকে যে শিক্ষা অর্জন করে থাকে তাকে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা বলে।
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
শিশুর নৈতিকতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক মূল্যবোধ ও জাগরণের ক্ষেত্রে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই প্রাক প্রাথমিক শিক্ষায় আমরা শিশুর বিভিন্ন প্রকার কার্যাবলী দেখতে পারি, যেগুলোর দিন দিন বিকাশ ঘটে।
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা আমরা আমাদের সন্তানদের কেন দিয়ে থাকি এর পিছনে কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।
নিচে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ কি কি তা উল্লেখ করা হলো বিশেষভাবে:
- শিশুকে নিজে ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করা।
- মন ভালো রাখা এবং শরীর সুস্থ রাখার জন্য খেলাধুলার অপর আগ্রহী করা।
- শিশুর মানসিক বিকাশ বৃদ্ধি করা।
- শিশুকে বিভিন্ন বিষয়ে মনোযোগী করে তোলা।
- শিশুকে নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা।
- চারিত্রিকভাবে শিশু মানসিক বিকাশ ঘটা।
- দৈহিক বিকাশে উপযুক্ত কার্যবলি সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান।
- পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করা।
- সৃজনশীলতার ক্ষমতা বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদান করা প্রকৃতি এবং প্রকৃতির পর্যবেক্ষণ নিয়ে জ্ঞান অর্জন করা।
এগুলো হলো প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যেগুলো পূরণের জন্য আমরা শিশুকে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে থাকি।
এই প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ইহার মাধ্যমে শিশু প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে।
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার কার্যাবলী কি কি?
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কি এ বিষয়ে জানার পর, প্রাথমিক শিক্ষার কার্যাবলী কি কি এ বিষয়ে জানার জন্য আগ্রহ জাগে। নিচে তার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যাবলী কি কি এ বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সহ উল্লেখ করা হলো আপনাদের মাঝে:
১. শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির কার্যাবলী:
প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম যে কার্যাবলী রয়েছে সেটি হচ্ছে শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির কার্যাবলী। একটি শিশু জন্ম হয় অনেক ছোট আকারে এবং ধীরে ধীরে শিশু বড় হয় এবং তারপর নিজ ভাষা এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে অব্যাহত হয়।
২. শিশুর ভাষা বিষয়ক কার্যাবলী:
একটি শিশু তার দৈহিক বৃদ্ধির পর ভাষা বিষয়ক জ্ঞান অর্জন করে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে। শিশু ভাষা বিষয়ক কার্যাবলী যেখান থেকে অর্জন করে তা হলো: নিজ পরিবার, আশেপাশের সমাজ এবং পরিবেশ থেকে।
৩. শিশুর ক্রিয়াভিত্তিক কার্যাবলী:
একটি শিশু তার প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে তৃতীয় নম্বরে যে কার্যাবলের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয় সেটি হচ্ছে শিশুর ক্রিয়া ভিত্তিক কার্যাবলী।
এই কার্যাবলীতে শিশু খেলাধুলা করতে এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী হয়।
আর ক্রিয়া ভিত্তিক কার্যাবলী হল শিশুর মনমগজ সুস্থ এবং ভালো রাখার সর্বোচ্চ ভালো একটি ব্যবস্থা।
৪. শিশুর পরিশ্রমমূলক কার্যাবলী:
একটি শিশু তার প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে চতুর্থ নম্বর যে কার্যাবলীর মধ্যে দিয়ে শিক্ষা অর্জন করে সেটি হচ্ছে তার পরিশ্রম মূলক কার্যাবলী। এই কার্যাবলীতে শিশু বিভিন্ন ধরনের পরিশ্রমূলক কাজ করতে অনেক বেশি আগ্রহী হয় এবং প্রত্যেকটি শিশু সবচেয়ে বেশি যে কাজটি করতে বেশি আগ্রহী হয় সেটি হচ্ছেঃ বাগান তৈরি করা।
৫. শিশুর সৃজনশীলমুলক কার্যাবলী:
একটি শিশু প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার মধ্যে আরো কিছু জ্ঞান অর্জন করে আর এই সকল জ্ঞানগুলোর মধ্যে সৃজনশীল মুলক কার্যাবলী অন্যতম।
এই কার্যাবলীতে শিশু তার মানসিক বৃদ্ধি ঘটাতে সক্ষম হয় এবং সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়ে থাকে।
শিশু তার শিশুকালের সবচেয়ে ভালো যে পরিচয় দিয়ে থাকে সেটি হচ্ছে: বিভিন্ন ধরনের ছবি অঙ্কন, গান গাওয়া এবং অভিনয় করা।
আরও পড়ুন: নৈতিক শিক্ষা কি?