প্রযুক্তি কি: কোন পণ্যের উৎপাদন, সেবার কার্যকারিতা পরিচালনা বা বিশেষ কোন উদ্দেশ্য ( যেমন: বৈজ্ঞানিক গবেষণা) সম্পাদনে ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি, স্কীল এবং টেকনিক এর সমষ্টি হচ্ছে প্রযুক্তি। এখানে প্রযুক্তি বলতে সাধারণত কতিপয় কৌশল ও প্রক্রিয়ার সমন্বয় গঠিত জ্ঞানকে বেশী করে বুঝিয়া থাকে।
প্রযুক্তি কাকে বলে: যে কোন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত জ্ঞান এবং সে জ্ঞান দক্ষতাররূপে ব্যবহার করে কতিপয় কাজ সহজে করার মাধ্যমকে প্রযুক্তি বলে। প্রযুক্তি বলতে এটি কোন কম্পিউটারিং, মেশিন বা সংশ্লিষ্ট ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকা কোন বিষয়কে বোঝায়, যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি এর সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করতে না পারলেও ব্যবহার করতে সক্ষম হয়।

প্রযুক্তি হচ্ছে বাংলা শব্দ এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে টেকনোলজি/Technology, গ্রিক শব্দ Techne এবং logia এ দুইটি শব্দের সমন্বয় গঠিত হয়েছে Technology শব্দটি। পরবর্তীতে এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে প্রযুক্তি শব্দটি এসেছে।
Technology এ ব্যবহৃত গ্রিক শব্দ Techne এর অর্থ হলো: হাতের দক্ষতা, কারুশিল্প বা আর্ট এবংlogia শব্দের অর্থ হলো: শব্দ/sound. প্রয়োগিক অর্থে প্রযুক্তি হলো: কিছু প্রয়োগীক কৌশল যা মানুষ তার আশেপাশের পরিবেশের উন্নতি সাধনের জন্য ব্যবহার করে থাকে।
প্রযুক্তির প্রকারভেদ
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজের সুবিধার জন্য আমরা বিভিন্ন রকমের প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছি এবং এই সকল প্রযুক্তির বিভিন্ন ধরনের প্রকারভেদ রয়েছে। আর প্রযুক্তির এই সকল প্রকারভেদ নিয়ে আমাদের ধারণা রাখা প্রয়োজন হবে যা এখান থেকে ধারণা অর্জন করব।
অর্থাৎ এখানে আমরা প্রযুক্তির এই সকল প্রকারভেদের ধারণা দিব যেগুলো দ্বারা প্রযুক্তিকে ভাগ করা হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে।
তবে এই সকল প্রযুক্তি ভাগ করার পেছনে কিছু কারণ, বৈশিষ্ট্য, কাজ দিক রয়েছে যেগুলো এদেরকে ভেদাভেদ করে তুলেছে।
প্রযুক্তির প্রকারভেদ হিসেবে আমরা প্রযুক্তিকে প্রধানত আটটি ভাগে ভাগ করতে পারে যথা:
- তথ্য প্রযুক্তি বা (Information technology)
- জৈব প্রযুক্তি বা (biotechnology)
- পারমানবিক প্রযুক্তি বা (nuclear Technology)
- যোগাযোগ প্রযুক্তি বা (১Communication)
- ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তি বা (electronics technology)
- চিকিৎসা প্রযুক্তি বা (Medical Technology)
- যান্ত্রিক প্রযুক্তি বা (mechanical technology)
- উপকরণ প্রযুক্তি বা (materials Technology)
এগুলো হলো প্রযুক্তির কিছু প্রকারভেদ এবং এই প্রকারভেদ গুলো হয়েছে প্রযুক্তির কাজের উপর ভিত্তি করে।
একটি প্রযুক্তি দ্বারা একাধিক কাজ করা যায় তবে সকল প্রকার কাজ একটি প্রযুক্তি দিয়ে কখনো করা সম্ভব নয়।
অর্থাৎ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি তথ্য আদান প্রদান করতে পারবেন এবং সেই সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন।
আবার তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারবেন, এভাবে তথ্যপ্রযুক্তি দ্বারা একাধিক কাজ করতে পারবেন। তবে সকল কাজ করতে পারবে না বলতে বোঝানো হয়েছে তথ্য প্রযুক্তির দ্বারা আপনি ভ্রমন করতে পারবেন না। অর্থাৎ একাধিক কাজ করা সম্ভব হলেও একটি প্রযুক্তি দ্বারা সকল কাজ করা সম্ভব নয়।
আর এই সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে প্রযুক্তিকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়েছে যা উপরে উল্লেখ করেছি।
প্রযুক্তির উপাদান সমূহ
প্রত্যেক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে কিছু না কিছু উপাদানের প্রয়োজন হয় এবং এগুলো এদের প্রকারভেদ অনুযায়ী বিশ্লেষণ করা যায়। এখন আমাদের উচিত হবে প্রযুক্তির উপাদান গুলো সম্পর্কে জানা যেগুলো দ্বারা প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব হয় আমাদের।
আর আপনি যেন প্রযুক্তির উপাদান গুলো সম্পর্কে জানতে পারেন সে জন্য আমরা এখানে প্রযুক্তির কিছু উপাদান দিব।
আর এই উপাদানগুলো প্রযুক্তি দ্বারা গঠিত হয়েছে এমন না বরং এরা নিজেই প্রযুক্তি যা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে মানুষ।
তাই প্রকারভেদ অনুযায়ী প্রযুক্তির উপাদান সমূহ নিচে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হলো:
- তথ্য প্রযুক্তি: কম্পিউটার, কম্পিউটারিং, রেডিও, টেলিভিশন, অডিও, ভিডিও, স্যাটেলাইট, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, আধুনিক টেকনোলজি এবং মডেম ইত্যাদি।
- জৈব প্রযুক্তি: জেনেটিক্যাল মডিফাইড অর্গানাইজম, ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ, টিস্যু কালচার, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিভিন্ন রকমের সার্জারিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি ইত্যাদি।
- পারমানবিক প্রযুক্তি: তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণ সনাক্তকরণ, নিউক্লিয়াস রেডিয়েশন সনাক্তকরণ, তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ইত্যাদি।
- যোগাযোগ প্রযুক্তি: মোবাইল ফোন, স্মার্টফোন, রেডিও, কম্পিউটার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট ইত্যাদি।
- ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তি: ইলেকট্রিক যানবাহন, রেলগাড়ি, বাস, উড়োজাহাজ, জাহাজ এবং রকেট ইত্যাদি।
- চিকিৎসা প্রযুক্তি: রোগ শনাক্তকারী প্রযুক্তি, এক্সরে প্রযুক্তি, আলট্রাসনোগ্রাম করা প্রযুক্তি এবং রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রযুক্তি ইত্যাদি।
- যান্ত্রিক প্রযুক্তি: মোটরসাইকেল, বাস, ট্রেন, রেলগাড়ি, রকেট, উড়োজাহাজ, এরোপ্লেন, হেলিকপ্টার এবং জাহাজ ইত্যাদি।
- উপকরণ প্রযুক্তি: উপকরণ প্রযুক্তি বলতে সকল প্রকার প্রযুক্তিকেই বোঝানো হয়, আর সকল প্রযুক্তি হচ্ছে উপকরণ প্রযুক্তির উদাহরণ।
প্রযুক্তি কি এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আজকের এই পোস্টটিতে সম্পূর্ণ ধারণা প্রদান করা হয়েছে প্রযুক্তি সম্পর্কে। কাঠামো এবং কাজের উপর ভিত্তি করা প্রযুক্তিকে ভাগ করা যায় এবং এর প্রত্যেকটি বিশেষ বিশেষ কাজে ব্যবহার করা হয়।
প্রযুক্তির সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে পোস্টটি তৈরি করা এবং আশা করে পোস্টটি আপনাকে উপকৃত বলে মনে হয়েছে। প্রযুক্তি বলতে যন্ত্রকে বোঝানো হয় যার মাধ্যমে যে কোন কাজ সহজে এবং দ্রুত করা যায় আবার, সময় অপচয় হয় না।
আরও পড়ুন: ন্যানো টেকনোলজি কি?
প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের অনেক কঠিন কাজকে সহজ করে দিচ্ছে।