পেটে ব্যথা কমানোর উপায় বা পেটের গ্যাসের ব্যথা দূর করার উপায় হচ্ছে অতি সাধারণ এবং ঘরে বসে এটি করা যায়। প্রাকৃতিকভাবে কোন শারীরিক সমস্যা দূর করা অনেক বেশি সুবিধাজনক এবং উপকারে।
তাই আজকে আমরা পেটের ব্যথা কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করার সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘোড়া উপায়ে অবলম্বন করার পরামর্শ দিব। আর কিভাবে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করবেন এবং কোনগুলো উপায় অনেক বেশি কার্য করে সেগুলো সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব।
পেটে ব্যথা হওয়া বা পেটে গ্যাস জনিত সমস্যা দেখা দেওয়ার প্রধান কারণ হলো পেটের ভিতর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এবং এটি অত্যাধিক তেল এবং আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে হয়ে থাকে। আমি জাতীয় খাবার বলতে মাছ মাংস দুধ ডিম ইত্যাদিকে বোঝানো হয় এবং তাছাড়াও আরো অনেক ধরনের খাদ্য আছে যেগুলো মানুষের অন্তর্ভুক্ত।
শর্করা জাতীয় খাবার খেলে কোন প্রকার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় না এবং পেটে ব্যথা দেয় না এটি আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।
অন্যদিকে স্নেহ এবং আমিষ জাতীয় খাবার খেলে বেশি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখায় এবং এই গ্যাস্ট্রিকের কারণে মূলত পেটে ব্যথা দেখা দেয়।
প্রথমে আমাদেরকে পেটে ব্যথা হয় কেন এ বিষয়ে জানতে হবে, কেননা উচিত কারণ ছাড়া আমরা কোন ধরনের সমস্যার সমাধান করতে পারি না বরং ব্যর্থ হয়ে পড়ি। তাই আমাদেরকে প্রথমে জানতে হবে আমাদের পেটের ব্যথা হওয়ার কারণ কি এবং তারপর জানব এর উপায় কি।
পেটে ব্যথা হয় কেন?
মানব শরীরে নানা কারণে পেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে এবং এই কারণগুলো হলো:
- পেটে কিছু না থাকার কারণে অর্থাৎ খাবার না খাবার ফলে পেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে।
- অধিক পরিমাণে তেলযুক্ত খাবার গ্রহণ করার ফলে পেটে ব্যথা দিতে পারে।
- লাগাতার এক সপ্তাহ কিংবা তার বেশি দিন ধরে আমিষ জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করলে।
- পাকস্থলীতে প্রবেশ করা খাদ্য হজম হতে বাধাপ্রাপ্ত হলে বা হজম শক্তি কমে গেলে।
- শরীরের মধ্যে অধিক ঝাঁকুনি প্রাপ্ত হলে, বিশেষ করে যানবাহনে বেশি ভ্রমণ করলে।
এই সকল হচ্ছে কিছু কারণ, মূলত এই সকল কারণেই মানব পেটে ব্যথা দেখায় এবং মানুষ পেটের ব্যথায় কাতর হয়ে পড়ে।
আপনারা যদি এই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চায় তাহলে অবশ্যই কিছু করণীয় করতে হবে।
আমি আশা করি আপনি যদি পেটে ব্যথা হওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার পেটে ব্যথা হওয়ার কারণ সম্পর্কে ধারণা পাবেন। আপনার পেটে কি কারণে ব্যথা অনুভব হচ্ছে বা কেন ব্যথা হচ্ছে তা জানতে পারবেন খুব সহজে।
যদি আপনি দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকেন তাহলে বুঝবেন আপনার পেটের ব্যথা হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে কিছু না গ্রহণ করা বা খাওয়া। অপরদিকে যদি আপনি আর পেট ব্যথা করে এবং আপনি যদি লক্ষ্য করেন বিগত কয়েকদিন ধরে আপনি খুব বেশি করে তেল খাচ্ছেন। তাহলে অবশ্যই আপনাকে তেল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
আবার আপনার পেটের ব্যথার কারণ যদি অধিক ঝাঁকুনি অর্থাৎ যানবাহন পরিবহন করার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
তাহলে অবশ্যই আপনাকে যানবাহনে উঠা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং দরকারি প্রয়োজন ছাড়া যানবাহনে ওঠা যাবে না।
এগুলো হচ্ছে কিছু কারণ যেগুলোর কারণে আমাদের পেটের মধ্যে ব্যথা অনুভব হয় এবং আমরা অনেকে ব্যাখতার কারণে কাতর হয়ে পড়ি। পেটের ব্যথা নিয়ে আমরা অনেকে চিন্তাভাবনা করে থাকি নানা ধরনের, তবে সবচেয়ে বেশি পেটের ব্যথা দেখা দেয় গ্যাস্টিকের কারণে।
পেটে ব্যথা দেখার ব্যতিক্রম কারণ
আবার অনেক ক্ষেত্রে গলব্লাডার হওয়ার কারণে কিংবা পাথর জমার কারণে পেটে ব্যথা দিতে পারে। যদি কয়েকদিন ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে আপনার পেটের ব্যথা না পালায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার পেটের ব্যথার মূল কারণ হচ্ছে গলব্লাডার বা পাথর।
এমতাবস্থায় অপারেশন করা ছাড়া আমাদের কোন উপায় থাকে না, তবে প্রথমে চেষ্টা করবেন ওর সাথে তারা নির্মূল করার কারণে না অপারেশন করা সঠিক উপায় নয়।
পেট ব্যথা দেওয়া স্বাভাবিক কিন্তু পেটের মধ্যে যদি গলব্লাডার বা পাথর জমে থাকে তাহলে ব্যথা এত বেশি তীব্র হবে যে তা সহ্য করা অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে পড়বে। যখন দেখবেন ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে এবং গ্যাসের জন্য কিছু ওষুধ সেবন করে পেটের ব্যথা কিছুতেই দূর হচ্ছে না।
তাহলে বুঝতে হবে আপনার পেটে ব্যথার মূল কারণ অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং এক্ষেত্রে গলব্লাডার বা পাথর জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তবে আমি সর্বদাই বলবো অপারেশন করার চিন্তাভাবনা বেশি করবেন না কেননা এতে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় ইনফেকশন হওয়ার।
পেটে ব্যথা কমানোর উপায়
- পেটে ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- এক গ্লাস পানি পান করা সকালে উঠে খালি পেতে, এর ফলে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে না।
- দিনে ন্যূনতম দুইবার আদা ছোট ছোট করে কেটে চিবিয়ে ভক্ষণ করতে হবে।
- জিরা মসলা ব্লেন্ডার মেশিন দিয়ে ভর্তা করতে হবে এবং এক চামচ করে দিনে খেতে হবে।
- অধিক পরিমাণে পানি পান করতে হবে, যার ফলে হজম শক্তি কিছুটা বৃদ্ধি পাবে।
- আঁশযুক্ত খাবার বেশি গ্রহণ করতে হবে কেননা, ইহার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
- তৈলাক্ত যুক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং অধিক ভাজা খাবার খাওয়া যাবে না।
- প্রতিদিন ভাজাপোড়া খাওয়া উচিত নয় এবং বাহিরে যে কোন খাবার ভক্ষণ করা থেকে বিরত থাকুন।
- বেশি লাফালাফি করবেন না অথবা দৌড়াদৌড়ি করবেন না কেননা ঝাঁকুনির কারণে পেটে ব্যথা দেখা দেয়।
- আমিষ যত খাবার বেশি গ্রহণ করবেন না এবং যদি গ্রহণ করেন তাহলে আর শর্করা জাতীয় খাবার মিশিয়ে গ্রহণ করবেন।
এগুলো হলো ঘরোয়া উপায় এবং এগুলো করা অতি বেশি সহজ যা আপনারা চাইলে ঘরে বসে খুব সহজে করতে পারবেন।
তবে পেটের ব্যথা দূর করার সবচেয়ে বেশি উপযোগী উপায় হলো আদা খাওয়া এবং জিরা মশলা গ্রহণ করা।
আপনি চাইলে আপনার পেটের ব্যথা দূর করতে পারেন তবে আপনাকে অবশ্যই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
আপনি যদি কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তাহলে কিভাবে আপনি চিন্তা করতে পারেন যে পেটের ব্যথা ঠিক হয়ে যাবে।
তাই অবশ্যই আপনার পেটের ব্যথা দূর করার জন্য ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করতে হবে এবং এই ঘরোয়া উপায় গুলো তেমন বেশি টাকার প্রয়োজন হবে না। আদা এবং জিরা মসলা সকলের বাসায় থাকে এবং অন্যদিকে পানি তো সাধারণ বিষয়।
পেটের গ্যাসের ব্যথা দুর করার উপায়
পেটে গ্যাসের ব্যথা দূর করাতে কিছু ঔষধ রয়েছে, যা আমরা খাবার পূর্বে গ্রহণ করলে অবশ্যই খুব সহজে দূর হয়ে যাবে।
নিচে কতিপয় পেটে গ্যাসের ব্যথা দূর করার কার্যকরী ঔষধ উল্লেখ করা হলো:
- অ্যান্টাসিড প্লাস ট্যাবলেট (Antacid Plus Tablet)
- ওমেপ্রাজল ট্যাবলেট (Omeprazole Tablet)
- রেনিটিডিন ট্যাবলেট (Ranitidine Tablet)
আমাদের দেশে পেটের গ্যাস দূর করার জন্য বহুল পরিচিত এবং বিখ্যাত ঔষধের নাম হলো রেনিটিডিন যার বাজারজাত মূল্য বর্তমানে সর্বোচ্চ দুই টাকা। পেটের গ্যাস দূর করার জন্য এই ওষুধটি অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
আশা করে পেটের ব্যথা নিয়ে আপনারা পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন এবং কিছু ধারণা পেয়েছেন পেটের ব্যথা দূর করা নিয়ে।
আরও পড়ুন: বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ।