পুষ্টিহীনতা কাকে বলে: দেহের চাহিদা বা প্রয়োজন সাপেক্ষে এক বা একাধিক পুষ্টি উপাদানের সামগ্রিক বা আংশিক অভাবজনিত শারীরিক লক্ষণকে অপুষ্টি বা পুষ্টিহীনতা বলে।
আবার, পুষ্টিহীনতা কাকে বলে: শরীরের মধ্যে পুষ্টি উপাদানের অভাবজনিত লক্ষণকে পুষ্টিহীনতা বলে।
অনেকে বলবেন যে সঠিক মত খাদ্য গ্রহণ না করার ফলে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয় এবং কর্মদক্ষতার সাথে শক্তি কমে যায়। আপনিও যদি এমনটি চিন্তাভাবনা করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আমি বলব যে আপনি ভুল ভাবছেন বা ভুল চিন্তা করেছেন।
কেননা শুধুমাত্র খাদ্য কম গ্রহণ করার ফলে যে পুষ্টিহীনতা দেখা দিবে এমনটি না বরং কম খাদ্য গ্রহণ করো সঠিক পুষ্টি পাওয়া যায়।
তবে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে খাদ্য গ্রহণ করছে ঠিকই তবে পরিমাণ অনুযায়ী সুষম খাদ্য গ্রহণ না করার ফলে পুষ্টিহীনতা দেখা দিয়েছে।
অর্থাৎ পুষ্টিহীনতার মূল কারণ হচ্ছে সুষম খাদ্য গ্রহণ না করা এবং কেউ যদি কম পরিমাণে সুষম খাদ্য গ্রহণ করে তবুও তার পুষ্টিহীনতা দেখা দিবে না। কেননা সে যখন সুষম খাদ্য গ্রহণ করবে তখন খাদ্যের প্রত্যেকটি উপাদান ও পুষ্টি সে পরিমাণ মতো স্বাস্থ্য উপযোগী হয়ে পেয়ে যাবে।
তাই আমি বলব ভুল চিন্তাভাবনা বাদ দিন এবং সঠিক নিয়ম অবলম্বন করে চিন্তা করুন যে আপনার পুষ্টিহীনতা কেন দেখা দিয়েছে।
আপনি পরিমাণ মতো খাদ্য খান এবং সৃষ্টিকর্তা নিয়ম অনুযায়ী আপনার প্রয়োজনীয় খাদ্য আপনি ততক্ষণ গ্রহণ করবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনার ক্ষুধা নিবারণ হয়।
পুষ্টিহীনতার কারণ
প্রায় লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে আমাদের আশেপাশে বিভিন্ন লোকের অথবা নিজের পুষ্টিহীনতা জনিত সমস্যা দেখা দেয়। তবে কি কারনে পুষ্টিহীনতা দেখা দিল এর সম্পর্কে হয়তোবা আমরা খুব কম সংখ্যক লোক আছে যারা জানি এবং বুঝতে পারে সঠিক কারণ।
আর আমাদেরকে অবশ্যই পুষ্টিহীনতার এই সকল কারণ সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে যেন পুষ্টিহীনতা প্রতিরোধ পারে।
কারণ জানার মাধ্যমে চাইলে খুব সহজে প্রতিরোধ করতে পারেন যে শরীর থেকে পুষ্টিহীনতা জনিত সমস্যা দূর করতে এবং পুষ্টি পেতে।
তাই আপনি যেন জানতে পারেন যে কেন আপনার পুষ্টিহীনতা দেখা দিয়েছে এজন্য আমরা নিচে কিছু পুষ্টিহীনতার কারণ উল্লেখ করলাম:
- খাদ্য উপাদানের ঘাটতি বা সুষম খাদ্যের ঘাটতি দ্বারা পুষ্টিহীনতার হয়।
- বিভিন্ন ধরনের হরমোন জনিত ত্রুটিে কারণে পুষ্টিহীনতার হয়।
- দৈনিক খাদ্যের পুষ্টির অসমতার কারণে পুষ্টিহীনতা হয়।
- বিশেষ খাদ্য উপাদানের ঘাটতি থাকার কারণে পুষ্টিহীনতা হয়।
- কৃত কাজ হিসেবে খাদ্যগ্রহণ কম থাকার কারণে পুষ্টিহীনতা হয়।
- শুধুমাত্র একটি উপাদান বিশিষ্ট বা দুটি উপাদান বিশিষ্ট খাদ্য বারবার খাওয়ার কারণে পুষ্টিহীনতা হয়।
- আবার বিভিন্ন সময় অসুখ-বিসুখ এবং রক্তক্ষরণের কারণেও পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়।
মূলত এক একটি সাধারণ কারণের জন্যই আমাদের শরীরে পুষ্টিকতা দেখাতে এবং আমরা অসুস্থ ও দুর্বল অনুভব করতে পারি।
পুষ্টিহীনতা সাধারণ সমস্যা নয় বরং এটি জটিল সমস্যা কেননা ইহার মাধ্যমে শরীরের মধ্যে ক্লান্তির সৃষ্টি হয় এবং কর্মদক্ষতা কমে যায়।
আবার সেই সাথে পুষ্টিহীনতার কারণে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। আর বিভিন্ন সময় দেখা যায় পুষ্টিহীনতার কারণে আমাদের শরীরে জটিল রোগ আক্রান্ত হওয়ার কারণে বেশ অসুবিধায় পরি।
পুষ্টিহীনতার লক্ষণ
যখন আমাদের শরীরের মধ্যে পুষ্টিহীনতার সমস্যা দেখা দেয় বা পুষ্টিহীনতা হয় তখন কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় পুষ্টিহীনতার কারণে। আর আমাদেরকে এই সকল লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানতে হবে যেগুলোর দ্বারা পুষ্টিহীনতা বুঝা যায়।
কেননা আমরা যদি না বুঝতে পারি যে আমাদের পুষ্টিহীনতা হয়েছে তাহলে কিভাবে সঠিক প্রতিকার বা চিকিৎসা নিতে পারব। তাই সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের জন্য অবশ্যই আমাদেরকে পুষ্টিহীনতার এই সকল লক্ষণ যেগুলো নিচে উল্লেখ্য করব তা জেনে নিতে হবে।
নিচে পুষ্টিহীনতার কিছু লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:
- কর্মদক্ষতা এবং কাজ করার ইচ্ছা কমে যায়।
- অলস অলস বা ঘুম ঘুম ভাব লাগে।
- শরীরে সতেজতা এবং আত্মশক্তি কমতে থাকে।
- সব সময় বিছানায় স্থির থাকার প্রবণতা দেখা দেয়।
- দ্রুত যেকোনো রোগের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া।
- উচিত এর চিকিৎসা লাভের পরও অসুখ নির্মুল না হওয়া।
- মাথাব্যথা এবং বারবার মাথা ঘুরে উঠার মত সমস্যা দেখা দেওয়া।
- স্বাস্থ্যের দিন দিন অবগতি বা দুর্দশা পরিলক্ষিত হওয়া।
- শরীরের মধ্যে জ্বর জ্বর ভাব সবসময় উপলব্ধি করা।
আপনার পুষ্টিহীনতা হয়েছে কিনা বা পুষ্টি জনিত কোন সমস্যা আছে কিনা তা জানার জন্য অবশ্যই এ লক্ষণগুলো দেখুন। যদি আপনি বুঝতে পারেন যে আপনার শরীরের মধ্যে এই লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেয়েছে এবং আপনি দুর্বল অনুভব করছেন তাহলে বুঝবেন আপনার পুষ্টিহীনতা দেখা দিয়েছে।
আর পুষ্টিহীনতা দেখা দিলে অবশ্যই আপনাকে সঠিক খাদ্য গ্রহণ করতে হবে এবং সুষম খাদ্য মেনে জীবন প্রচারণা করতে হবে।
আপনি যদি পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে এর প্রতিকার সম্পর্কে জানতে হবে, যা আমরা নিচে উল্লেখ করব।
পুষ্টিহীনতার প্রতিকার
আমরা যখন পুষ্টিহীনতা জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি তখন এর প্রতিকার নিয়ে একটু বেশি চিন্তা ভাবনা করি সঠিক উপায়ের জন্য।
আর আপনি যেন সঠিক উপায়ে পেতে পারেন এবং সেই সাথে পুষ্টিহীনতা জনিত সমস্যা দূর করতে পারেন সেজন্য পুষ্টিহীনতার প্রতিকার রয়েছে।
যে প্রতিকারগুলো আমরা এখানে উল্লেখ করব এবং আপনি তা অবলম্বন করে নিজের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে উক্ত সমস্যা দূর করবেন। তাই চলুন দেখে নেওয়া যাক এই পোস্টটি শুনে তার কিছু প্রতিকার যেগুলো আপনি অবলম্বন করে পুষ্টিহীনতা মুক্ত করবেন।
তাই পুষ্টিহীনতার প্রতিকার গুলো কি কি তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- দৈনিক সুষম খাদ্য তালিকা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করা।
- হরমানজনিত কোন সমস্যা অনুভব করলে তার উচিত চিকিৎসা গ্রহণ করা।
- ভিটামিন জাতীয় এবং খনিজ পদার্থ জাতীয় খাদ্য সমূহ বেশি বেশি করে গ্রহণ করা।
- খাবার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার গ্রহণ করা, তবে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ না করা।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও পদ্ধতি অবলম্বন করা।
- দৈনিক সামর্থ্য থাকলে একটি করে ডিম খাওয়া, কেননা এটি হচ্ছে প্রাকৃতিক মাল্টিভিটামিন।
- দুধ এবং অন্যান্য যে সকল বেশি পুষ্টি উপাদান খাদ্যসমূহ রয়েছে সেগুলো গ্রহণ করা, তবে এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিমাণ গ্রহণ করতে হবে।
- কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করা, তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকলে এটি করার দরকার নেই।
আপনি যদি পুষ্টিহীনতা থেকে রক্ষা পেতে চান এবং সুস্থ ও স্বাবলম্বী হয়ে থাকতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদের দেওয়া প্রতিকারগুলো অবলম্বন করুন। আপনি যদি আমাদের দেওয়া প্রতিকারগুলো অবলম্বন করেন তাহলে দেখা যাবে আপনি খুব সহজে সুস্থ হতে পারবেন।
পুষ্টিহীনতা জনিত সমস্যা নিয়ে আজকের এই পোস্টটি সাজানো হয়েছে এবং আশা করি আপনাকে পোস্টটি উপকৃত বলে মনে হয়েছে। পুষ্টিহীনতা হচ্ছে জটিল সমস্যা যার উপর আমাদেরকে নজর রাখতে হবে এবং স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখার জন্য নিয়ম অবলম্বন করতে হবে।।
আরও পড়ুন: অতি পুষ্টি কাকে বলে?