পানিবাহিত রোগ কাকে বলে: ক্ষতিকারক জীবাণু দ্বারা দূষিত হওয়া পানি শরীরে প্রবেশ করার ফলে যে সকল রোগ হয়, তাকে পানিবাহিত রোগ বলে।
অথবা, যে সকল রোগের জীবাণু পানি পরিবহন করে সংক্রমণ ঘটায়, তাকে পানিবাহিত রোগ বলে।
পানি হচ্ছে আমাদের জীবনের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান এবং দূষিত পানি প্রায় সময় আমরা গ্রহণ করে থাকি। আর এই দূষিত পানি গ্রহণ করার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন প্রকার জীবাণু আক্রমণ করে আমাদেরকে অসুস্থ করে ফেলে এবং এই জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত রোগ গুলোকেই পানিবাহিত রোগ বলে।
বর্তমান সময় শিশু এবং বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকির মতো সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। তবে এই পানিবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার কিছু উপায় রয়েছে এবং সেই সাথে পানি বাহিত রোগের কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দ্বারা পানিবাহিত রোগ চিহ্নিত করা যায়।
আমাদের শরীরে বা পরিবেশে পানিবাহিত রোগ বিভিন্ন মাধ্যমে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে এবং পানিবাহিত রোগ বিভিন্ন কারণে ছড়াতে পারে। আর অবশ্যই পানিবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই সকল কারণ এবং বিস্তৃতি কিভাবে হয় সে সকল বিষয় জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
পানিবাহিত রোগের বিস্তার কিভাবে হয়?
পানিবাহিত রোগ আমাদের সমাজে একবারে বিস্তৃতি লাভ করে এমনটা না বরং কয়েকটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর বিস্তৃতি লাভ হয়। আর অবশ্যই আমাদেরকে পানিবাহিত রোগের বিস্তৃতি সম্পর্কে জানতে হবে কেননা ইহার মাধ্যমে আমরা পানিবাহিত রোগের বিস্তৃতি হ্রাস করতে পারি।
আর যখন আমরা পানিবাহিত রোগের বিস্তৃতি কমাতে পারবো তখন আমাদের মাঝে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।
পানিবাহিত রোগের বিস্তার আমাদের পরিবেশে নানা ভাবে ঘটতে পারে, যেমন:
- পানিতে ময়লা আবর্জনা ফেলার ফলে জীবাণুর বিস্তার ঘটে, জীবাণুর বিশ্বাস ঘটার ফলে পানির ভেতরে রোগের বিস্তার ঘটে।
- পানিতে গরু, মহিষ কিংবা অন্যান্য পশু গোসল করানোর ফলে এর বিস্তার ঘটে।
- পানিতে মলমূত্র ত্যাগ করা ও ফেলে দেওয়ার ফলে পানিবাহিত রোগের বিস্তার ঘটে।
- যেকোনো একটি জীবাণু উপস্থিত থাকার ফলে সে তার বিস্তার পানিতে ঘটায়।
- পানির স্রোতের দ্বারা প্রবাহিত হয় জীবাণু তার বিস্তার ঘটায়, পানির মধ্যে।
এগুলো হলো কিছু কারণ যেগুলোর জন্য পানি বাহিত রোগ আমাদের পরিবেশে বিস্তৃতি লাভ করে এবং ধীরে ধীরে সকলকে অসুস্থ করে ফেলে। আর অবশ্যই আমাদেরকে এই সকল কারণ গুলো জানার পর সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে যেন পানিবাহিত রোগ তার বিস্তৃতি সঠিক মতো করতে না পারে।
আবার পানিবাহিত রোগের কিছু কারণ রয়েছে যে কারণগুলোর জন্য মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দেয়।
পানিবাহিত রোগের কারণ কারণ গুলো কি কি?
এমন অনেক কারণ রয়েছে যে সকল কারণে জন্য আমাদের শরীরের মধ্যে পানিবাহিত রোগের জীবাণু প্রবেশ করে এবং আমাদেরকে আক্রান্ত করে থাকে। আপনি যদি পানিবাহিত রোগ থেকে নিজেকে সুরক্ষা প্রদান করতে চান তাহলে অবশ্যই এই কারণগুলো জানতে হবে এবং বিরত থাকতে হবে।
পানিবাহিত রোগ কাকে বলে এ বিষয়ে বিস্তৃত জ্ঞান অর্জন করার জন্য এবং সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করার জন্য অবশ্যই আপনাকে পানিবাহিত রোগের কারণ সম্পর্কে জানতে হবে।
পানিবাহিত রোগের কারণ গুলো কি কি বা কি কি কারণে আমাদের শরীরে পানিবাহিত রোগ সৃষ্টি হয় তার নিচে উল্লেখ করা হলো:
- মলমূত্র, কফ বা থুথু, ময়লা আবর্জনা পানিতে ফেলা।
- বাসি বা পচা খাবার এবং ফলমূল পানিতে ফেলা।
- থালা বাসন কোন ব্যবহারযোগ্য জলাশয় ধৌত করা।
- ব্যবহারযোগ্য কোন জলাশয় নিজের গবাদি পশুর ধৌত করা।
- কাঠ কিংবা কাঠের গুড়ি পানিতে অনেক দিন ধরে ফেলে রাখা।
- বাসা বাড়ির যেকোনো ময়লা আবর্জনা ও দূষিত পানি, ব্যবহারযোগ্য জলাশয় ফেলা।
- ছেঁড়ে যাওয়া কাপড় জামা ব্যবহারযোগ্য জলাশয় ফেলে দেওয়া।
- পানিতে উপস্থিত যেকোনো উদ্ভিদ এর বিস্তার ঘটাতে দেওয়া।
- মাছ চাষ না করার ফলে ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঘটে।
- দীর্ঘদিন ধরে কোন জলাশয় বা পুকুর ব্যবহারযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ফেলে রাখা।
- মানসম্মত টয়লেট ব্যবহার না করা, দূষিত পানি দ্বারা টয়লেট মুছা।
এগুলো হলো পানি বাহিত রোগের কিছু কারণ এবং এই কারণগুলোর জন্যই মূলত আমাদের সমাজে ও শরীরে পানিবাহিত রোগ বিস্তৃতি লাভ করে। আর এই সকল কারণের জন্যই মূলত আমরা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং পানিবাহিত রোগের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়।
পানিবাহিত রোগের লক্ষণ
আপনি যদি আপনার পানিবাহিত রোগের সনাক্তকরণ প্রাথমিক অবস্থা করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে কিছু লক্ষণ দেখতে হবে। যদি পানিবাহিত রোগের লক্ষণসমূহ আপনার শরীরে প্রকাশ পায় তাহলে অবশ্যই বুঝে নেবেন যে আপনার পানিবাহিত রোগ হয়েছে।
সনাক্তকরণের জন্য নিচে পানিবাহিত রোগের লক্ষণসমূহ বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হলো:
- শরীরে ডায়রিয়া, কলেরা এবং আমাশয় দেখা দেয়।
- জন্ডিস এবং টাইফয়েড এর মতো দীর্ঘ মেয়াদে রোগ দেখা দেয়।
- পাতলা পায়খানা, বমি বমি ভাব ও জ্বর দেখা দেয়।
- পেটে ব্যথা, বুকে ব্যথা এবং শরীরে অন্যান্য স্থানে ব্যথা দেখা দেয়।
- কাজ করার কর্মদক্ষতা কমে যায়, অলস অলস ভাব লাগে এবং অসুস্থ বোধ হয়।
এগুলো হলো পানিবাহিত রোগের কিছু লক্ষণ এবং এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়া মানে আপনার শরীরে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। আর অবশ্যই যদি আপনি সনাক্ত করতে পারেন আপনার পানিবাহিত রোগ হয়েছে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেবা গ্রহণ করুন।
পানিবাহিত রোগের প্রতিকার
কারণবশত যদি আপনি পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন বা পানিবাহিত রোগ থেকে প্রতিকার পেতে চান তাহলে অবশ্যই কিছু করণীয় করতে হবে। কিছু পদ্ধতি বা উপায় অবলম্বন করার মাধ্যমে আপনি আমি খুবই সহজে পানিবাহিত রোগের প্রতিকার সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারব।
নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু পানিবাহিত রোগের প্রতিকার বিশেষভাবে আপনার জন্য উপস্থাপন করা হলো:
- যেকোনো ধরনের পানি পান করার পূর্বে তা ফুটিয়ে নেওয়া।
- পানি ফুটিয়ে নেওয়া সম্ভব না হলে ফিল্টার করা।
- পানি দূষণমুক্ত করতে ট্যাবলেট ব্যবহার করে দূষিত মুক্ত করা।
- সব সময় ভূগর্ভস্থ পানি বেশি বেশি করে ব্যবহার করার চেষ্টা করা।
- গোসল করার পূর্বে সম্ভব হলে পানি ফুটিয়ে নেওয়া।
- হাত ধৌত করার সময় সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া।
- হাত ধোয়ার পর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ফেলা।
- হাত ধৌত করার সময় অবশ্যই ২০ সেকেন্ড ব্যবহার করা।
তবে বলে নেই প্রায় সর্বাধিক ক্ষেত্রে পানিবাহিত রোগের মূল কারণ হিসেবে মানুষ নিজে দায়ী কেননা আমরাই পানি দূষণ করতেছি।
আর অবশ্যই আমাদেরকে এই সকল কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে যদি পানিবাহিত রোগ থেকে বেঁচে সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করতে চাই।
আরও পড়ুন: রোগ কাকে বলে?