পরিবেশ কাকে বলে: আমাদের চারপাশের পরিবেষ্টনকারী পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে পরিবেশ বলে। যেমন: মাটি, পানি, বায়ু, আকাশ, গাছপালা, পশুপাখি, জীবজন্তু, সূর্যের কিরণ এবং বন্ধুবান্ধব ইত্যাদি নিয়ে আমাদের পরিবেশ।
পরিবেশ বলতে সবকিছু বোঝানো হয় অর্থাৎ আমরা আমাদের এই খালি চোখে আশেপাশে যা কিছু দেখতে পায় তা নিয়েই হচ্ছে আমাদের পরিবেশ। আমরা খালি চোখে আমাদের চারপাশে অনেক কিছু দেখতে পায় যেমন মাটি, পানি, বায়ু, আকাশ, গাছপালা, পশুপাখি, জীবজন্তু, সূর্যের কিরণ এবং বন্ধুবান্ধব।
এই সবকিছু একত্র করে বাসস্থান উপযোগী যে একটি অবস্থার সৃষ্টি হয় সে অবস্থাটি হচ্ছে পরিবেশ।
অনেকেরই মতে পরিবেশ বলতে বাসযোগ্য স্থানকে বোঝানো হয় এবং যেখানে সকল প্রকার প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানের সমাহর থাকে।
তবে পাঠ্য বই অনুযায়ী বাসস্থান উপযোগী না হলেও হবে বরং, চারপাশে যত কিছু উপাদান থাকবে তার উপর ভিত্তি করে একটি পরিবেশ গঠিত হবে। আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে পরিবেশ পরিবর্তন হয় এবং পর্যায়ক্রমে তা আবর্তিত হয়।
উদাহরণস্বরূপ যখন বর্ষা হয় তখন চারপাশের পরিবেশ অনেক বেশি ভেজাল হয়, অন্যদিকে যখন গ্রীষ্ম পড়ে তখন চারপাশে অনেক বেশি আলোকিত হয় এবং ফলমূল পার্টিতে শুরু করে। আবার শীতকালে পুরো মাঠ ফাঁকা হয়ে যায় ফসলের কোন অস্তিত্ব থাকে না এবং এভাবে আমাদের পরিবেশ আবহাওয়ার সাথে পরিবর্তিত হয়।
আবহাওয়া এমন একটি বিষয় যা অঞ্চল অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং এর ফলে প্রত্যেক অঞ্চলে নানা রকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। যেমন কিছু অঞ্চল আছে যেগুলোতে ভুট্টা চাষ হয় না, আলু চাষ হয় না এবং কোন ধরনের ফসল চাষ না হয় শুধুমাত্র খেজুর গাছ চাষ হয়।
আর এ কারণে সে অঞ্চলের পরিবেশ ভিন্ন বাংলাদেশের অঞ্চলের চেয়ে এবং বাংলাদেশের অঞ্চল অনেক বেশি উর্বর থাকে এই পরিবেশটা অনেক বেশি সবুজ দেখায়। কিছু কিছু পরিবেশ রয়েছে যেগুলো পুরোটাই মরুভূমি এবং পুরোটাই জঙ্গল হতে পারে।
আবার কিছু কিছু অঞ্চল রয়েছে যেগুলো বেশিরভাগ সময় শীতে ঢাকা থাকে এবং এর ফলে সেখানকার পরিবেশ আরো বেশি ভিন্ন হয়ে যায়।
তাহলে বুঝতে পারলেন অঞ্চল এবং পরিবেশ উভয়ের উপর ভিত্তি করে পরিবেশ পরিবর্তন করতে পারে।
পরিবেশ কত প্রকার ও কি কি?
পরিবেশ প্রধানত দুই প্রকার, এগুলো হলো:
- প্রাকৃতিক পরিবেশ বা ভৌত পরিবেশ
- সামাজিক পরিবেশ বা কৃত্রিম পরিবেশ
আবহাওয়া এবং অঞ্চল ভেদে পরিবেশ আবার চার প্রকার:
- জলজ পরিবেশ
- স্থলজ পরিবেশ
- মরু পরিবেশ
- বরফ ও পরিবেশ
প্রাকৃতিক পরিবেশ বা ভৌত পরিবেশ
প্রাকৃতিক পরিবেশ: প্রাকৃতিক নানা উপাদান দিয়ে যে পরিবেশ গঠিত হয় তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলা হয়।
পরিবেশ কাকে বলে এর আরও একটি সংজ্ঞার এক অংশ ইহা দ্বারাও বোঝানো হয়।
ভৌত বা প্রাকৃতিক নানা ধরনের উপকরণ রয়েছে যেমন, মানুষ, পাখি, পশু, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা এবং গাছপালা ইত্যাদি উপকরণ নিয়ে যে পরিবেশ গঠিত হয় তাই হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
মোট কোথায় বলতে গেলে প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠনের মূলে রয়েছে প্রাকৃতিক সকল উপাদান এবং প্রাকৃতিক সকল আবহাওয়া। প্রায় প্রত্যেকটি পরিবেশে কিছু না কিছু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে গঠিত হয় এবং এ কারণে প্রত্যেকটি পরিবেশে প্রাকৃতিক পরিবেশ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
যেমন পৃথিবীতে যেকোনো অঞ্চলে যাওয়া হোক না কেন সেখানে মাটি অথবা পানি পাওয়া যাবে এবং কিছু না পাওয়া গেল বায়ু পাওয়া যাবে এবং এ সকল এর উপর ভিত্তি করে প্রায় সকল অঞ্চলেই প্রাকৃতিক উপাদান পাওয়া যায়। আর যেহেতু পড়তে অঞ্চলে প্রাকৃতিক উপাদান পাওয়া যায় তাই প্রত্যেক অঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিদ্যমান থাকে।
সামাজিক পরিবেশ বা কৃত্রিম পরিবেশ
কৃত্রিম বা সামাজিক পরিবেশ: প্রাকৃতিক উপাদান ছাড়াই, মানুষ দ্বারা সৃষ্টিকৃত আসবাবপত্র এবং অন্যান্য উপকরণ নিয়ে যে পরিবেশ গঠিত হয় তাকে সামাজিক পরিবেশ বলে। সামাজিক পরিবেশ বলতেই যে শুধুমাত্র মানুষ দ্বারা তৈরি কৃত পরিবেশকে বোঝানো হয় এমনটা না।
কেননা একটি পাখি তার নিজের ভাষা বানানোর জন্য গাছের উপরে অনেক কিছু উপকরণ ব্যবহার করে।
অনেক উপকরণ ব্যবহার করার পর একটি বাসা তৈরি করতে পারে এবং এক্ষেত্রে এটিও একটি সামাজিক পরিবেশের উদাহরণ অনুযায় যা পাখি দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে।
সুতরাং বুঝতেই তো পারলেন, পরিবেশে যা প্রাকৃতিক রয়েছে অর্থাৎ মানুষ দ্বারা সৃষ্টি করা সম্ভব না সেগুলো বাদ দিয়ে যেগুলো মানুষ এবং অন্যান্য পশু পাখি দ্বারা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে সেগুলো হচ্ছে সামাজিক পরিবেশের উদাহারণ।
সামাজিক পরিবেশে আমরা নানা ধরনের কৃত্রিম বিষয়বস্তু দেখতে পায় যেমন ঘরবাড়ি, পুকুর, নলকূপ, থালা-বাসন, এবং কিছু আসবাবপত্র ইত্যাদি।
জলজ পরিবেশ
জলজ পরিবেশ: যে সকল পরিবেশে শুধুমাত্র জলজ উপাদান বিদ্যমান থাকে সেই অঞ্চলের পরিবেশকে জলজ পরিবেশ বলা হয়।
এই জলজ পরিবেশের উদাহরণ: নদী, সাগর এবং পুকুর ইত্যাদি।
স্থলজ পরিবেশ
স্থলজ পরিবেশ: যে সকল পরিবেশে শুধুমাত্র উপাদান বিদ্যমান থাকে সেই অঞ্চলের পরিবেশকে স্থলজ পরিবেশ বলা হয়।
এই স্থলজ পরিবেশের উদাহরণ: মরুভূমি, সমতল ভূমি, জঙ্গল এবং বালুভূমি ইত্যাদি।
মরু পরিবেশ
মরু পরিবেশ: যে সকল পরিবেশে শুধুমাত্র বালু অথবা শুষ্ক বালুর মতো উপাদান বিদ্যমান থাকে সেই অঞ্চলের পরিবেশকে মরু পরিবেশ বলে।
এই মরু পরিবেশের উদাহরণ: সাহারা মরুভূমি, এবং বিভিন্ন ধরনের মরুভূমি ইত্যাদি।
বরফ পরিবেশ
বরফ পরিবেশ: যে সকল পরিবেশে শুধুমাত্র বরফ দ্বারা গঠিত হয় সেই পরিবেশকে বরফ পরিবেশ বলা হয়।
এই বরফ পরিবেশের উদাহরণ: আন্টার্টিকা ইত্যাদি।
পরিবেশের উপাদান সমূহ
প্রাকৃতিক পরিবেশ:
- মাটি, পানি, বায়ু, নদী নালা, পাহাড়-পর্বত এবং পর্বত শৃঙ্গ।
- মানুষ, গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি, অন্যান্য পশুপাখি।
- বাঘ, সিংহ, হরিণ, মহিষ, কুমির এবং যেকোনো ধরনের প্রাণী।
- ঝরনা, সমুদ্র, টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস, ইত্যাদি।
সামাজিক পরিবেশ:
- ঘরবাড়ি, পুকুর, নলকূপ, মাটির তৈরি আসবাবপত্র।
- ইট, সাইকেল, মোটরসাইকেল, ট্রাক্টর, ভ্যান, গাড়ি।
- রাস্তা বা সড়ক, রেলপথ, বিমানবন্দর এবং স্টেশন।
- সেতু বা ব্রিজ, রেলগাড়ি, বিমান, জাহাজ, রকেট।
- সুইচ গেট, ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস এবং স্পিড বোর্ড ইত্যাদি।
এগুলো হলো প্রধান দুটি পরিবেশের উপাদানসমূহ এবং এই দুটি পরিবেশের উপাদান সমূহের মধ্যে যতগুলো উপাদান থাকে তা মিলে আমাদের পুরো পরিবেশ গঠিত হয়। এই সকল পরিবেশ থেকে আবহাওয়া পরিবেশের উদ্ভাবন ঘটেছে এবং অঞ্চল ভেদে এর পরিবর্তন ঘটেছে।
উপসংহার:
পরিবেশ কাকে বলে এ বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করতে গেলে প্রথমে আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা নিয়ে ভাবা উচিত।
কেননা আমরা যখন আমাদের চারপাশে পরিবেশ নিয়ে ভাবতে শুরু করব তখন আমরা পরিবেশের উচিত মানে খুঁজে বের করতে পারব।
যেহেতু পরিবেশ মানে আমাদের আশেপাশে উপস্থিত উপকরণ গুলোকে বোঝানো হয় এবং ইহার দ্বারা পরিবেশের বিভিন্ন উপকরণের নাম উল্লেখ আছে। তাই আমরা খুব সহজে চিহ্নিত করতে পারব কোনটি পরিবেশের উপাদান এবং কোনটি পরিবেশের উদাহরণ নয়।
তবে পরিবেশ বলতে সবকিছুকেই বোঝানো হয় এবং কোনটি বাদ দেওয়ার জন্য উপযোগী নয়, এমনকি এক্ষেত্রে পরিবেশের উপাদান হিসেবে নিজেকে চিন্তা করতে হবে।
কেননা তুমি নিজেও একটি পরিবেশের উদাহরণ এবং আমিও একটি পরিবেশের উদাহরণ আমার পরিবেশের জন্য।
আশা করে পরিবেশ কাকে বলে এ বিষয়টি নিয়ে আপনারা পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন এবং পরিবেশ কত প্রকার ও কি কি এ নিয়ে জ্ঞান লাভ করতে পেরেছেন। পরিবেশ তো অনেক প্রকার রয়েছে এবং এই সব কিছুর মূলে রয়েছে ভৌত পরিবেশ এবং কৃত্রিম পরিবেশ।
ভৌত পরিবেশ বলতে প্রাকৃতিক পরিবেশকে বোঝানো হয় এবং কৃত্রিম পরিবেশ বলতে সামাজিক পরিবেশ কে বোঝানো হয়।
প্রাকৃতিক এবং সামাজিক এই দুইটি পরিবেশের উপাদানে নিয়ে আমাদের মূল পরিবেশ গঠিত হয়।
অবশ্যই আমাদেরকে আমাদের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যা আমাদের উপর প্রযোজ্য ও দায়িত্ব।
আরও পড়ুন: যমুনা সেতু কত কিলোমিটার?