পদার্থ কাকে বলে? পদার্থের গঠন, বৈশিষ্ট্য এবং প্রকারভেদ

পদার্থ কাকে বলে: যে বস্তুর নির্দিষ্ট ভর ও আয়তন রয়েছে এবং স্থিতিস্থাপকতা, জড়তা ও মহাকর্ষ জনিত বল প্রদর্শন করে তাকে পদার্থ বলে। পদার্থ বলতে এর মধ্যে সকল প্রকার প্রাকৃতিক বিষয়ের উপর প্রতিক্রিয়া দেওয়ার একটি বিষয় কাজ করবে যা একটি বস্তুর জড়তার ধর্ম।

কোন একটি বস্তুর নির্দিষ্ট ভর এবং আয়তন রয়েছে, আবার বল প্রয়োগ করার ফলে প্রতিক্রিয়া দেয় তাকে পদার্থ হিসেবে গণনা করা হয়। রসায়নে পদার্থ বলতে শুধুমাত্র ভর এবং আয়তন থাকার বিষয়টিকে বোঝানো হয়েছে এবং ব্যাখ্যা অনুযায়ী পদার্থের জড়তা থাকতে হবে।

পদার্থের কিছু প্রকারভেদ রয়েছে এবং সেই সাথে রয়েছে পদার্থের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য ও গঠনগত নির্দেশনা বা তথ্য। আমরা পদার্থ সম্পর্কে এই সকল বিষয় পরবর্তীতে জানবো তবে এখন পদার্থের সংজ্ঞাটি আপনাকে সুস্পষ্ট বলে মনে হয়েছে কিনা তা কমেন্ট করে বলুন তাড়াতাড়ি।

পদার্থ কাকে বলে
পদার্থ কাকে বলে?

আঞ্চলিক অর্থে বস্তু এবং বইয়ের অর্থ পদার্থ উভয় হচ্ছে রসায়নের একটি গবেষণার বিষয় যেখানে আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ পদার্থ নিয়ে যদি কোন চিন্তা ভাবনা করা হয় তাহলে অবশ্যই আন্তঃকণা আকর্ষণ বিষয়টির উপর বেশি করে গবেষণা করা হয়ে থাকে।

কেননা এই আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তির উপর ভিত্তি করে পদার্থের প্রকার লক্ষ্য করা যায় এবং ভিন্ন ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়েছে সমাজে।

পদার্থের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য, গঠন এবং পার্থক্য রয়েছে যা আমরা এখন এখানে উল্লেখ করব এবং আপনাদেরকে দেখার সুযোগ দেব। পদার্থের সম্পূর্ণ ধারণা অর্জন করার জন্য চলুন এই সকল তথ্যগুলো আমাদের এই পোষ্টের মাধ্যমে একসঙ্গে জানার জন্য কাজ করি।

পদার্থের গঠন এবং বৈশিষ্ট্য

একটি পদার্থ গঠনে কয়েকটি তথ্য আমরা রসায়ন থেকে পাই এবং সেই সাথে পদার্থের বৈশিষ্ট্য সমূহ আমাদেরকে জানতে হবে এখান থেকে। তাই চলুন এ বিষয়ের উপর পূর্ণরূপে আলোকপাত করার জন্য আমি নিচে তাড়াতাড়ি এই সকল বিষয়ের উপর তথ্যগুলো উপস্থাপন করি।

যেকোনো ধরনের পদার্থ গঠিত হয় যে কয়েকটি মূল কণিকার মাধ্যমে। পদার্থের গঠনে রয়েছে তিনটি মূল কণিকা, যথা:

  • ইলেকট্রন (Electron)
  • প্রোটন (Proton)
  • এবং নিউট্রন (Neutron)

ইলেকট্রন (Electron): পরমাণুতে উপস্থিত নিউক্লিয়াসের চারদিকে পরিভ্রমণরত ঋণাত্মক চার্জ বিশিষ্ট মূল কণিকার নাম হচ্ছে ইলেকট্রন।

প্রোটন (Proton): পরমাণুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত ধনাত্মক চার্জযুক্ত এবং নিউক্লিয়াসের সাথে যুক্ত মূল কণিকার নাম হচ্ছে প্রোটন।

নিউট্রন (Neutron): পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রোটন এর সাথে যুক্ত চার্জবিহীন মৌলিক কণার নাম হচ্ছে নিউট্রন।

পদার্থের বৈশিষ্ট্য:

  • পদার্থ কঠিন, তরল কিংবা বায়বীয় অবস্থায় পরিবেশে বিরাজমান করে।
  • পদার্থকে ভাঙলে তার মৌলিক ধর্ম কিংবা যৌগিক ধর্ম সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
  • পদার্থকে ভেঙ্গে বা পরিবর্তন করার মাধ্যমে কাজ করার উপযোগী করে গড়ে তোলা যায়।
  • পদার্থ পরিবেশের উন্নতি সাধন এবং ক্ষতিসাধন উভয় কাজ করতে পারে।
  • পদার্থ প্রাকৃতিকভাবে ও কৃত্রিমভাবে আবিষ্কার করা সম্ভব।
  • ব্যাখ্যা অনুযায়ী, পদার্থের গঠনে রয়েছে অ্যাটম নামক ক্ষুদ্র কণা।

এগুলো হল পদার্থের কিছু বৈশিষ্ট্য, যা প্রত্যেকটি পদার্থের মধ্যে থাকে এবং আমাদের হাতে থাকা পদার্থের মধ্যে এ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। হাতে থাকা পদার্থ বলতে আপনি যে ডিভাইসটি দিয়ে আমাদের এই পোস্টটি পড়ছেন সেই ডিভাইসটির মধ্যে পদার্থের এই সকল বৈশিষ্ট্য উপস্থিত রয়েছে।

পদার্থের জনক কে?

পদার্থের উপর ভিত্তি করে একটি শিক্ষাশাস্ত্র তৈরি হয়েছে যার নাম, পদার্থবিজ্ঞান। পদার্থের জনক বলতে সাধারণত পদার্থ বিজ্ঞানের জনক কে বোঝানো হয়।

তবে পদার্থকে ক্ষুদ্র এককে ভেঙ্গে এর নাম এটম প্রদান করে সর্বপ্রথম পদার্থের ধারণা প্রদান করেন গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস। পরমাণুকে ভেঙ্গে প্রথমে যেহেতু এর গঠন সম্পর্কে ধারণা এই বিজ্ঞানী প্রদান করেন, তাই ইনাকে পদার্থের জনক বলা হয়।

অন্যদিকে, পদার্থ বিজ্ঞানের জনক হলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন, তিনি মহাকর্ষ বলের ধারণা প্রদান করেছিলেন।

পদার্থের প্রকারভেদ

আমরা পূর্বেই বলেছি পদার্থের কিছু প্রকারভেদ রয়েছে এবং এই প্রকারভেদ গুলো আমাদেরকে পদার্থের জন্য জানতে হবে। পদার্থের জন্য জানতে হবে বলতে পদার্থের সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করার জন্য আমাদেরকে পদার্থের প্রকারভেদ সম্পর্কে নিজেকে অবগত করতে হবে।

যেকোনো ধরনের পদার্থকে তার অবস্থার উপর বিবেচনা করে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা:

  • কঠিন পদার্থ (solid Matter)
  • তরল পদার্থ (Liquids Matter)
  • এবং গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থ (Gases Matter)

কঠিন পদার্থ

যে সকল পদার্থের কণাগুলোর মধ্যে আন্তঃকণা আকর্ষণ বল সবচেয়ে বেশি বিদ্যমান থাকে, সেগুলো হচ্ছে কঠিন পদার্থ

কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্য:

  • এদের নির্দিষ্ট ভর বা ওজন রয়েছে।
  • এদের নির্দিষ্ট আকার রয়েছে, যা নির্দিষ্ট আয়তন দখল করে।
  • কঠিন পদার্থের আন্তঃকণা আকর্ষণ বল সবচেয়ে বেশি বিদ্যমান থাকে।
  • এদের ওপর কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করলে, এরা সহজে সংকুচিত ও প্রসারিত হয় না।

তরল পদার্থ

যে সকল পদার্থকে একটি নির্দিষ্ট পাত্রে রাখলে, হুবহু সেই পাত্রের আকার ধারণ করে এবং নির্দিষ্ট আয়তন থাকে, তাকে তরল পদার্থ বলে

তরল পদার্থের বৈশিষ্ট্য:

  • কঠিন পদার্থের ন্যায়, তরল পদার্থের নির্দিষ্ট ভর রয়েছে।
  • কোনভাবে তরল পদার্থকে চাপ প্রদান করলে এর আয়তন, দ্রুত হ্রাস পায়।
  • কঠিন পদার্থের তুলনায়, তরল পদার্থের তা প্রদান করলে দ্রুত আয়তন বৃদ্ধি পায়।

গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থ

যেকোনো পরিমাণ বায়বীয় পদার্থ, যেকোনো আয়তন বা আকারের পাত্রে রাখলে কেশবাতো সেই পাত্রের পুরো আকার ও আয়তন দখল করে থাকে। যে সকল পদার্থ এরূপ কাজ করতে পারে তাদেরকে গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থ বলে।

গ্যাসীয় বা বায়বীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য

  • এরা যেকোনো পাত্রের পুরো আয়তন দখল করতে সক্ষম।
  • এরা কঠিন এবং তরল এর তুলনায় অনেক দ্রুত নিজের অবস্থান বদলাতে সক্ষম।
  • তবে গ্যাসীয় পদার্থের ভর রয়েছে, যার পরিমাপ করা সাধারণ পরিমাপ যন্ত্রের সম্ভব নয়।

পদার্থ গঠনের বা মৌলের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে একে আবার ২ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা:

  1. মৌলিক পদার্থ বা একক পদার্থ
  2. যৌগিক পদার্থ বা যৌগ

মৌলিক পদার্থ

যে পদার্থকে বিভিন্ন উপায়ে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে অন্য কোন ধরনের পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না, সে সকল পদার্থকে মৌলিক পদার্থ বলে

মৌলিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য

  • মৌলিক পদার্থ গ্যাসীয়, তরল ও বায়বীয় বিভিন্ন অবস্থা বিদ্যমান থাকতে পারে।
  • প্রত্যেকটি মৌলিক পদার্থের নির্দিষ্ট ভর রয়েছে এবং বিন্যাস করা সম্ভব।
  • মৌলিক পদার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে বা যুক্ত করার মাধ্যমে যৌগিক পদার্থ পাওয়া সম্ভব।

যৌগিক পদার্থ

যে পদার্থকে বিভিন্ন উপায়ে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে একাধিক ধর্ম বিশিষ্ট পদার্থের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়, সে সকল পদার্থকে যৌগিক পদার্থ বলে।

যৌগিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য

  • যৌগিক পদার্থ গ্যাসীয়, তরল ও বায়বীয় বিভিন্ন অবস্থা বিদ্যমান থাকতে পারে।
  • যৌগিক পদার্থকে ভাঙলে বিভিন্ন ধরনের ভিন্ন মৌলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
  • এদের নির্দিষ্ট ভর রয়েছে তবে অনেক যৌগিক পদার্থের আয়তন ও আকার থাকে না।

ধন্যবাদ, পদার্থ কাকে বলে এবং পদার্থের সকল বিষয়ের উপর তথ্য নিয়ে আজকের এই পোস্টটি ছিল আপনাদের জন্য এতটুকুই। 

আরও পড়ুন: কঠিন পদার্থ কাকে বলে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top