নৈতিক শিক্ষা কি: যে শিক্ষার মাধ্যমে শিশুর মধ্যে নৈতিকতার বিকাশ ঘটে এবং জীবন চলার পথে সকল ক্ষেত্রে নৈতিকতার প্রকাশ দেয় তাই নৈতিক শিক্ষা। সহজ ভাষায়, ধর্ম, সদাচরণ, নৈতিক কর্তব্য ও মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন শিক্ষাকে নৈতিক শিক্ষা বলে।
নৈতিক শিক্ষা বলতে শুধুমাত্র যে নৈতিক বিকাশ লাভ করবে তাই নয় বরঞ্চ নৈতিক শিক্ষা বলতে বোঝানো হয়, সর্বজনীনভাবে মানবিক গুণাবলী মানুষের মধ্যে বিকাশ ঘটানো।
মানুষ চরিত্রে চিহ্নিত হয় এবং মানুষ হলে তার মধ্যে নৈতিকতার দিকটি থাকতে হবে, মানবিক গুণাবলী গ্রহণ করা নামে হলো নৈতিকতা।
মানবিক গুণাবলী বলতে মূলত নৈতিক গুণাবলী কে বুঝানো হয়, আর মানবিক গুণাবলীর মাধ্যমে মানুষের মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয়।
আবার, নৈতিক শিক্ষা বলতে বোঝানো হয়: ওই শিক্ষাকে যে শিক্ষায় শিশু শিক্ষিত হওয়ার মাধ্যমে তার নৈতিক গুণাবল এর প্রকাশ ঘটায়।
নৈতিকতা কোন সহজে বিষয় নয় বরং এটি তো অর্জন করার বিষয়। সঠিকভাবে বলতে গেলে নিজ পরিবার ও সমাজ থেকে অর্জিত যে নৈতিক আচরণ ও আচার রয়েছে তার নামই হলো নৈতিক শিক্ষা। একটি শিশু তার শিশুকাল থেকেই যে শিক্ষা লাভ করে তাই তার জন্য চূড়ান্ত শিক্ষা হয়ে দাঁড়ায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তার জীবনের।
আর এক্ষেত্রে প্রথমে শিশু যা অনুকরণ এবং অনুশীলন করে তাই তা তার পার্থিক জীবনে বাস্তবায়ন করে। সুতরাং নৈতিক শিক্ষা লাভের প্রাথমিক যে মাধ্যম রয়েছে তা হচ্ছে নিজ পরিবার। কেননা একটি শিশু তার শিশু কাল অতিবাহিত করেন সঙ্গে এবং তার জীবনের যত সকল বাস্তবায়ন করার দরকার তার শিখে সেই পরিবারের কাছ থেকেই।
তাই অবশ্যই শিশু তার নিজের চিন্তা ভাবনা এবং আদর্শ অনুসারে যদি জীবন যাপন করতে চায় তাহলে তার নিজ পরিবারকে এ বিষয়ে প্রথমে সচেতন থাকতে হবে। পরিবার, সমাজ, স্কুল-পাঠশালা, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবেশ মূলত এ সকল সামাজিক মাধ্যম থেকে শিশু তার প্রতিটি কাজের জন্য অনুপ্রেরণা লাভ করে।
আর এই সকল স্থান থেকেই বাধ হাত থেকে মূলত একজন শিশু তার প্রার্থী জীবনকে নৈতিকতার অশেষ ফলাফল প্রকাশ করে।
মানব জীবনে নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য
নৈতিক শিক্ষা কি এর সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে গেলে মানব জীবনে নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব এ বিষয়টি নিয়ে প্রথমে আমাদের মাঝে একটি প্রশ্ন পরিলক্ষিত হয়। নিচে মানব জীবনে নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা ও উল্লেখ করা হলো:
১. চারিত্রিক বিকাশ ঘটানো:
নৈতিক শিক্ষার প্রথমে যে গুরুত্ব পরিলক্ষিত হয় তা হচ্ছে চারিত্রিক বিকাশ ঘটানো। নৈতিক শিক্ষা বলতে মূলত চরিত্র কে বোঝানো হয়েছে কেননা, ইহার মাধ্যমে শিশু তার চারিত্রিক বিকাশের উন্নতি করে এবং নৈতিকতা প্রকাশ করে।
আর নৈতিকতাই হচ্ছে মূলত একটি শিশুর এবং মানুষের প্রধান দিক জীবনে কিছু ভালো অর্জন করার জন্য।
২. মানব জীবনে নৈতিকতার বিকাশ ঘটানো:
নৈতিক শিক্ষায় যে শিক্ষা প্রদান করা হয় তা হচ্ছে নৈতিকতা, আর ইহার দাঁড়ায় মানব জীবনের নৈতিকতার বিকাশ ঘটে। আর মানব জীবনে নৈতিক শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য রয়েছে তা হচ্ছে শিশু এবং মানুষের মধ্যে নৈতিকতার বিকাশ ঘটানো।
কেননা ইহার মাধ্যমে পরিবার ও সমাজে এবং দেশের মধ্যে শান্তি এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যায়।
৩. সমাজের সত্যের প্রতিষ্ঠা করা:
নৈতিক শিক্ষার প্রথম যে দিকটি রয়েছে তা হচ্ছে শিশু এবং মানুষকে সত্যের বিষয় অবগত করা এবং সত্যের বিষয়ে অব্যাহত করা।
আর সমাজের সত্যের প্রতিষ্ঠা করার জন্য অবশ্যই নৈতিক শিক্ষার ভূমিকা অপরশেম কেননা নৈতিক শিক্ষার প্রথমে সত্যের শিক্ষা প্রদান করা হয়।
সমাজ ও রাষ্ট্রে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা:
নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যায়, নৈতিক শিক্ষা বলতে মূলত আরো একটি বিষয় বুঝানো হয় সেটি হচ্ছে মিলেমিশে থাকা। আর যখন এ শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে মানুষ মিলেমিশে থাকতে পারবে তখন অবশ্যই সমাজ ও রাষ্ট্রে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যাবে।
৫. নৈতিক শিক্ষা কি এ বিষয়ে সকলকে অবগত করা:
অবশ্যই নৈতিক শিক্ষার প্রথম যে দিকটি রয়েছে তা হচ্ছে শিশুকে বুঝিয়ে দেওয়া যে নৈতিক শিক্ষা কি?
কেননা, ইহার মাধ্যমে অবগত হলে শিশু নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে একটু বেশি আগ্রহী হবে এবং এটি অর্জন করার চেষ্টা করবে।
আর অবশ্যই নৈতিক শিক্ষা কোন সহজ বিষয় নয় এটি তো হচ্ছে অর্জন করার বিষয়।
৬. শিশুকে তার জীবন আদর্শপূর্ণ করে গড়ে তুলতে সাহায্য:
নৈতিক শিক্ষা লাভের মাধ্যমে শিশু তার জীবনকে আদর্শপূর্ণ করে গড়ে তুলতে আগ্রহী হয় আর এর মাধ্যমে সমাজে জীবন আদর্শ পরিচালিত হয়। আর এজন্যই বলা হয়েছে যে শিশুকে তার জীবন আদর্শ করে গড়ে তুলতে নৈতিক শিক্ষা অত্যাধিক সাহায্য করে।
৭. সমাজ হতে মন্দ কাজের পরিমাণ কমিয়ে ফেলা:
অবশ্যই নৈতিক শিক্ষা লাভের মাধ্যমেসমাজ হত্যা মন্দ কাজের পরিমাণ কমিয়ে ফেলা যায়।
কেননা নৈতিক শিক্ষায় প্রথমে যে দিকটি অবগত করা হয় তা হচ্ছে ভালো-মন্দের বিষয় এবং কোনটি করা আমাদের জন্য ভালো হবে।
আর অবশ্যই যেহেতু ভাল কাজ করাই আমাদের জন্য ভালো হবে তাই সমাজ হতে মন্দ কাজের পরিমাণ কমে যাবে।
৮. শিশুর যুক্তিশক্তি বিকাশ করা: শিশু নৈতিক শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে প্রথমে মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটা এবং তারপর তার যুক্তিশক্তি বিকাশ করে।
আর এজন্যই বলা হয়েছে যে শিশুর যুক্তিশক্তি বিকাশ করার ক্ষেত্রে নৈতিক শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম।
কেননা নৈতিক শিক্ষার মধ্যে চুক্তি চুক্তি বিকাশ কিভাবে করা হয় এ বিষয়ে অবগত করা হয় শিশুকে।
মানব জীবনে নৈতিক শিক্ষার লক্ষ্য কি কি?
নৈতিক শিক্ষার লক্ষ্য পূরণের মাধ্যমে জীবন আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সেই সাথে সমাজের অশান্তি দূর হয়ে যায় এই শিক্ষার দ্বারা।
এই নৈতিক শিক্ষা হচ্ছে এমন শিক্ষা যে শিক্ষার মাধ্যমে শিশুর চারিত্রিক, বৈশিষ্ট্যগত এবং মেধাগত দিক দিয়ে বিকাশ ঘটে থাকে।
নৈতিক শিক্ষা কি এ বিষয়ে দৃষ্টিপাত করতে গেলে প্রথমে মানব জীবনে নৈতিক শিক্ষার লক্ষ্য কি কি রয়েছে এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়। নিচে নৈতিক শিক্ষা এর লক্ষ্যসমূহ বিশেষভাবে উল্লেখ করা হলো:
- শিশুর জীবনকে জীবন আদর্শে পরিপূর্ণ করা
- শিশুর চরিত্রে মানবিক গুণাবল এর বিকাশ ঘটানো
- শিশুর নৈতিকতা বিকাশে অত্যাধিক ভূমিকা পালন করা
- শিশুর আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করা
- নেক চরিত্র নির্মাণে শিশুকে উৎসাহিত করা
- শেখার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কিছু শিক্ষা দেওয়া
- সমাজের মধ্যে নৈতিকতার ঘাটে বসানো
- সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা
মানব জীবনের জন্য নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব এবং লক্ষ্য অনেক বেশি ভূমিকা পালন করেছে আদর্শ জীবন গঠনে। উপরে উপরে আমি মানব জীবনের জন্য নৈতিক শিক্ষার কিছু লক্ষ্য উল্লেখ করেছে এবং এই লক্ষ্য গুলো পূরণ করাই হচ্ছে নৈতিক শিক্ষার কাজ।
এখানে নৈতিক শিক্ষা কি এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে যতগুলো তথ্য প্রদান করা দরকার ছিল তা এই পোস্টে উল্লেখ করেছি।
অবশ্যই ইহার ধারণার মাধ্যমে আপনি আপনার সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা প্রদান করতে অনেক বেশি অনুপ্রেরিত হয়েছেন বলে আমি মনে করি।
নৈতিক শিক্ষা শুধুমাত্র আপনার জীবনের সন্তানের জন্য প্রয়োজন এমনটা না বরং এটা আপনার জীবনের জন্য প্রয়োজন হতে পারে। তাই নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে পরিপূর্ণ লাভের পর এই শিক্ষা গ্রহণের জন্য আপনাকে অনেক বেশি উদ্যোগী হতে হবে।
আরও পড়ুন: কৃষি শিক্ষা কি?