নিফাক শব্দের অর্থ কি? নিফাকের সংজ্ঞা, কুফল এবং পরিণতি

নিফাক শব্দের অর্থ কি: নিফাক একটি আরবি শব্দ, যার বাংলা প্রতিশব্দ বা আবিধানিক অর্থ হচ্ছে ভন্ডামি, কপটতা, ধোঁকাবাজি এবং প্রতারণা ইত্যাদি। ব্যবহারিক অর্থে নিফাক শব্দের অর্থ হচ্ছে: অন্তরে একরকম ভাব রেখে বাইরে এর বিপরীত অবস্থা প্রকাশ করা।

নিফাকের সংজ্ঞা: ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় অন্তরে কুফর, অবাধ্যতা, অকৃতজ্ঞতা গোপন রেখে মুখে ইসলামকে স্বীকার করার নামই হচ্ছে নিফাক। যে এরূপ কাজ করে বা নিফাকের সঙ্গে লিপ্ত তাকে বলা হয় মুনাফিক, মুনাফেকগণ অন্তরের দিক থেকে কাফের এবং অবাধ্য হয়ে থাকে।

নিফাক শব্দের অর্থ কি
নিফাক শব্দের অর্থ কি?

এককথায় নিফাকের সংজ্ঞা হচ্ছে: অন্তরে বিরোধিতা গোপন করে রেখে, বাইরে আনুগত্য প্রদর্শন করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় নিফাক।

নিফাক হচ্ছে একটা জঘন্যতম পাপ এবং ইহার মাধ্যমে অনেকেই ভন্ডামির শিকার হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। মহান রাব্বুল আলামীন কখনো ভণ্ডামি পছন্দ করেন না এবং প্রতারণাকারীকে ছাড় দেন না। কোন ব্যক্তি যদি নিফাকে লিপ্ত হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি কখনোই অর্জন করতে পারবে না এবং পরিণতি হিসেবে জাহান্নাম থাকবে।

নিফাকের কুফল ও প্রতিকার

নিফাক বা কপটতা হচ্ছে একটি মারাত্মক পাপ, এটি এমন একটি পাপ যা মানুষের চরিত্র ও নৈতিকতা ধ্বংস করে ফেলে। এর মাধ্যমে মানুষ মিথ্যাচার, পাপাচার করতে, ধোঁকাবাজি করতে, প্রতারণা করতে এবং দ্বিমুখী ভাব প্রকাশ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। নিফাকের কিছু কতিপয় কুফল ও প্রতিকার নিচে উল্লেখ করা হলো:

নিফাকের কুফলসমূহ:

নিফাক এ লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে আমরা নানা প্রকার কুফলের শিকার হয়ে থাকি, যা অবশ্যই আমাদের জন্য ক্ষতিকর।

নিচে  উল্লেখযোগ্য কিছু নিফাকের কুফল আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করা হলো:

  • আল্লাহ তাআলা স্বয়ং নিজে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, মুনাফিকরা হচ্ছে নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদী। আর মিথ্যা বলার মতো কুফল আর কি হতে পারে জাহান্নামে যাওয়ার জন্য।
  • খারাপ ও অনৈতিক কার্যকলাপের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
  • মানুষের অন্তরে পার্থিক লোভ লালসা ও স্বার্থ সৃষ্টি হয়।
  • মানুষ পরনিন্দা এবং পরচর্চা করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
  • সমাজের সন্দেহ ও  বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।
  • সমাজের মধ্যে কারো বিশ্বাস অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
  • ব্যক্তিকে সকলে সন্দেহ ও ঘৃণার চোখে দেখে।
  • নিফাকারি ব্যক্তিগণ সমাজের মানুষের নিকট অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়। মুসলমানদের গোপন তথ্য ও দুর্বলতা শত্রু জেনে যায় ইত্যাদি।

এগুলো হলো নিফাকের কিছু কুফল এবং আপনি যদি এগুলো থেকে বাঁচতে চান তাহলে নিফাক থেকে বিরত থাকুন।

আপনি নিফাকের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন কিনা এ বিষয়টি সম্পূর্ণ আপনার নিজের কাছেই স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা আছে। 

নিফাক এর প্রতিকারসমূহ:

নিফার থেকে রেহাই পাওয়ার কিছু প্রতিকার রয়েছে যেগুলো অবলম্বন করে আপনি নিফাক থেকে বিরত থাকতে পারবেন সহজে।

নিফাকের প্রতিকার হিসেবে কতিপয় উল্লেখযোগ্য প্রতিকার নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • নিফাকের  প্রতিকার হিসেবে প্রথমেই নিজেকে হেফাজত করে রাখতে হবে।
  • তারপর যে বেশি বেশি মিথ্যা কথা বলে তাকে নিফাকের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করতে হবে।
  • তার কাজ হতে অর্থাৎ মিথ্যাবাদীর কাছে নিজেকে ধীরে ধীরে দূরে সরিয়ে নিতে হবে।
  • এতে করে মিথ্যাবাদী একটু সচেতন হতে পারবে এবং সেও নিফাকের হতে বের হয়ে আসতে পারবে।
  • সর্বদা আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভয় এবং অনুগত্য প্রকাশ করতে হবে।
  • কেউ মিথ্যা কথা বললে, প্রতিরোধ করার মত ক্ষমতা থাকলে তার প্রতিরোধ করতে হবে।

শুধু মাত্র এই কয়েকটি পন্থা অবলম্বন করলে নিফাক থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং সেই সাথে সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন আল্লাহর।

মহান রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জন করতে চান এমন ব্যক্তি অহরহ এবং এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে নিফাক থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

আল্লাহ সন্তুষ্টি রক্ষা করার ক্ষেত্রে অন্যতম একটি উপায় হলো নিফাক থেকে বেঁচে থাকা এবং এটি অনেক সহজ। নিফাক থেকে বেঁচে থাকার জন্য বাণী ফাকে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচার জন্য উপরে থাকা নিয়মগুলো অবলম্বন করুন।

নিফাকের পরিণতি কেমন?

নিফাকের পরিণতি হচ্ছে অত্যন্ত ভয়াবহ, কেননা ইহার মাধ্যমে নিফাক কারী ব্যক্তির পরকাল ও ইহকাল উভয় স্থানে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে।

সেই সাথে নিফাক কারী ব্যক্তি সব সময়  হতাশাগ্রস্থ এবং দুর্দশায় ভুগবে। আর সূরা আন-নিসা আয়াত ১৪৫ এসেছে যে, আল্লাহ তা’আলা বলেন নিশ্চয়ই মুনাফিক কারী বা মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে বা স্থান পাবে।

জাহান্নাম যে কত ভরে ভয়াবহ হবে এ বিষয়ে ধারণা আশা করি দিতে হবে না, আর নিফাকের সর্বোচ্চ পরিণতি হচ্ছে এটাই যে নিফাকার ব্যক্তি জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্থানে ঠাই পাবে।

নিফাক-কারী যেহেতু জাহান্নামে যাবে সুতরাং নিফাক এর পরিণতি হিসেবে যে পরিণতির কথা উল্লেখ হয়েছে তা অনেক বেশি ভয়াবহ ও কষ্টকর। নিফাক একটি জঘন্যতম পাপ এবং এর শাস্তি বা পরিণতি অবশ্যই ভয়াবহ হবে এটাই স্বাভাবিক, তাই নিফাকে জড়াবেন না।

অন্তরের মধ্যে বিরোধিতা এবং এই বিরোধিতা থাকা অবস্থায় ইসলামকে মুখে স্বীকার করার নামই হচ্ছে নিফাক, (পরিণতি ভয়াবহ)।

আরও পড়ুন: তাওহীদ অর্থ কি?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top