ধাতব ধর্ম কাকে বলে: কোন মৌল ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হওয়ার প্রবণতাকে ওই মৌলের ধাতব ধর্ম বলে।
সাধারণ অর্থে, যে সকল মৌল দেখতে চকচকে, আঘাত করলে ধাতব শব্দ হয় এবং তাপ ও বিদ্যুৎ সহজে পরিবহন করতে পারে, সেই মৌলগুলোকে ধাতু বলে।
সহজ ভাষায়, মৌলের যে ইলেকট্রন ত্যাগের ধর্ম রয়েছে সেই ধর্মকে ধাতর ধর্ম বলা হয়। একমাত্র ধাতুর মধ্যে ধাতর ধর্ম পরিলক্ষিত হয় এবং এরা বিদ্যুৎ ও তাপ সহজে পরিবহন করতে পারে। যে মৌলের ইলেকট্রন ত্যাগের প্রবণতা যত বেশি সে মৌলে উপস্থিত ধর্ম তত বেশি হয়।
অর্থাৎ একটি মৌলের ধাতর ধর্ম যত বেশি হয় সে মৌলটি তত তাড়াতাড়ি ইলেকট্রন ত্যাগ করতে পারে।
ধাতব ধর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এরা সহজে ভেঙ্গে যায় না, নিম্ন মানে তাপমাত্রায় গলে না এবং নিম্নমানের আঘাতে বিকৃত হয় না।

যে সকল মৌলের মধ্যে ধাতর ধর্ম বিদ্যমান সেই সকল মৌলসমূহকে ধাতু বলা হয় এবং এই ধাতু দিয়ে আমরা নানা ধরনের আসবাবপত্র ও অস্ত্র তৈরি করে থাকে। ধাতু আমাদের অনেক বেশি উপকারে আসে এবং এই ধাতু দিয়ে আমরা যানবাহন তৈরি করে থাকি।
বর্তমানে আমরা ধাতু বলতে সাধারণত লোহাকে বুঝে থাকে, আসলে এ কথাটি পুরোপুরি ভুল যে লোহা হচ্ছে একমাত্র ধাতু।
তাই ধাতু হচ্ছে সেটাই যার মধ্যে ধাতব ধর্ম বিদ্যমান থাকে এবং পৃথিবীতে অনেক ধরনের ধাতব পদার্থ বা ধাতু রয়েছে।
ধাতুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে মরিচা পড়ে এবং এই মরিচা দ্বারা ধাতুকে খুব সহজে চিহ্নিত করা যায়। আমরা নলকূপ চালিয়ে পানি উত্তোলন করে এবং এই পানিতে আমরা আর্সেনিক বলে একটি পদার্থ পাই, এখানে এই আর্সেনিক হচ্ছে ধাতব পদার্থ। ধাতব ধর্ম কাকে বলে আশা করি প্রশ্নটির উত্তর আপনারা সঠিক মতো পেয়ে গেছেন।
অর্থাৎ বুঝতেই তো পারলেন ধাতু বলতে শুধুমাত্র লোহাকে বোঝানো হয় না বরং এটি এক ধরনের খনিজ লবণ হতে পারে।
আবার এটি মানব শরীরে উপস্থিত মৌল হতে পারে এবং জীব দেহ থেকে নিঃসৃত তরল ও মল মূত্রের মধ্যে থাকতে পারে।
ধাতব ধর্মের ক্রম
পর্যায় সারণির লক্ষ্য করে কিভাবে আমরা ধাতব ধর্ম কে চিনতে পারি সেজন্য ধাতব ধর্মের ক্রম আমাদের জানা প্রয়োজন।
ধাতব ধর্মের ক্রম এমন ব্যবস্থা যার মাধ্যমে বুঝতে পারি কোন ধাতুর ধাতব ধর্ম বেশি এবং কোন ধাতুর ধাতব ধর্ম কম।
পর্যায় সারণির যেকোনো পর্যায় বাম থেকে ডান দিকে গেলে ধাতব ধর্ম হ্রাস পায় এবং ডান দিক থেকে বাম দিকে গেলে ধাতব ধর্ম বৃদ্ধি পায়। বাম দিক থেকে ডান দিকে যাওয়ার সময় ধাতব ধর্ম হ্রাস পেতে পেতে অধাতু তে পরিণত হয় পরবর্তী মৌলগুলো।
উদাহরণ: পর্যায় ৩ – (Na >Mg > Al)
অর্থাৎ ইহা দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে পর্যায় সারণির তিন নম্বর পর্যায়ে প্রথম মৌল হলো সোডিয়াম।
এবং এই তিন নাম্বার পর্যায়ের সবচেয়ে বেশি ধর্মবিশিষ্ট পরমাণুবাম মৌলের নাম হলো সোডিয়াম।
এবং তারপর ক্রমান্বয়ে ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যালুমিনিয়াম এসেছে যাদের মধ্যে ম্যাগনেসিয়ামের ধাতব ধর্ম সোডিয়ামের চেয়ে কম এবং অ্যালুমিনিয়ামের ধাতব ধর্ম ম্যাগনেসিয়াম এর চেয়ে কম।
কিছু কিছু ব্যতিক্রমা লক্ষ্য করা যায় ধাতর ধর্মের ক্রমের মধ্যে এবং এর কারণ হয়ে থাকে ব্যাসার্ধ এবং ইলেকট্রন ত্যাগের উপর।
কিছু কিছু পরমাণু রয়েছে যারা অধিক সক্রিয় হয়ে থাকে ইলেকট্রন ত্যাগ করার ক্ষেত্রে।
আশা করি আপনারা ধাতর ধর্ম কি এ বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং চলুন এখন আমরা জেনে নেই ধাতুর ধর্মের বৈশিষ্ট্য সমূহ কি কি এবং কোন কোন বৈশিষ্ট্য দ্বারা ধাতু চেনা যায়।
ধাতুর বৈশিষ্ট্য
ধাতু এবং ধাতব ধর্মের বৈশিষ্ট্য সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো
- এর সবসময় ইলেকট্রন ত্যাগ করবে এবং কখনো ইলেকট্রন গ্রহণ করবে না।
- ধাতু সব সময় ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয় এবং স্থিতি লাভ করে।
- এর দেখতে চকচকে হয় এবং যেকোনো বস্তু দ্বারা আঘাত করার ফলে ধাতব শব্দ হয়।
- ধাতু সহজে ভেঙ্গে যায় না এবং সহজে গোলে যায় না তবে বাঁকানো যায়।
- ধাতুকে তাপ প্রদান করে এর রূপ পরিবর্তন করা যায় এবং ব্যবহার উপযোগী করা যায়।
- বেশিরভাগ ধাতু মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং ব্যবহার উপযোগী।
এগুলো হলো ধাতুর রাসায়নিক এবং গাঠনিক বৈশিষ্ট্য যেগুলো দ্বারা আপনারা সহজে ধাতুকে চিহ্নিত করতে পারবেন এবং ধাতব গরম অনুযায়ী বুঝতে পারবেন কার ধাতব ধর্ম বেশি।

ধাতু সাধারণ লোকের চোখের বলতে শুধুমাত্র লোহা বা আয়রন কে বুঝে থাকে তবে, আসলে যার মধ্যে ধাতব ধর্ম বিদ্যমান তারাই ধাতু এবং কৃত্রিম ও মৌলিক সবকিছু মিলিয়ে ধাতুর সংখ্যা প্রায় অনেক রয়েছে।
ধাতুর মধ্যে সংকর ধাতু হচ্ছে কৃত্রিম ধাতু কেননা এই ধাতুটি কয়েকটি ধাতু একত্রিত করে তৈরি করা হয়।
আর এই ধাতু দ্বারা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র তৈরি করা হয় যার কোয়ালিটি অনেক বেশি উন্নত ও টেকসই হয়।
ধাতু সবসময় ইলেকট্রন বন্ধনে অনেক বেশি উদ্যোগী হয়ে থাকে এবং সহজে যেকোনো ধরনের উপযোগী বিক্রিয়া অংশগ্রহণ করে ফেলে।
অনেক ক্ষেত্রে আয়রন প্রভাবক রূপে ক্রিয়া করে অর্থাৎ ধাতব ধর্ম বিশিষ্ট মৌলসমূহ প্রভাবক রূপে ক্রিয়া করতে পারে।
ধাতুর অন্যান্য যে সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলো হলো এদের মূল হচ্ছে প্রকৃতি অর্থাৎ এদেরকে প্রকৃতি থেকে সংরক্ষণ করা হয়। দ্বিতীয়তঃ এরা ক্ষার উৎপাদন করতে সক্ষম হতে পারে এবং দীর্ঘদিন মাটিতে অবস্থান করার কারণে মৃৎক্ষার ধাতু হিসেবে পাওয়া যায়।
তাহলে এগুলো হচ্ছে ধাতুর বৈশিষ্ট্য এবং আশা করে আপনারা এই বৈশিষ্ট্য গুলো ভালোভাবে মনে রাখবেন।
সবচেয়ে বেশি মনে রাখার ক্ষেত্রে দরকারী হচ্ছে এগুলো বা এই মৌলগুলো ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয়।
শেষ কথা:
ধাতু আমরা অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করে এবং ধাতুর ব্যবহার আমাদের সমাজে এত বেশি প্রচলিত হয়েছে যে ইহার দ্বারা আমরা কৃষি কাজ করে থাকি। কৃষি কাজ এবং অন্যান্য যে কোন ধরনের কাজ ও যানবাহন সুনির্দিষ্ট ভাবে কর্মকাঠামো প্রদানের জন্য ধাতু ব্যবহার করা হয়।
ধাতুর মধ্যে কিছু ধাতু রয়েছে অনেক বেশি মূল্যবান এবং কিছু ধাতু রয়েছে অনেক বেশি সহজলভ্য যা আমরা সহজে পেতে পারি।
তবে কিছু কিছু ধাতু রয়েছে যেগুলো অনেক বেশি মূল্যবান যেমন কপার এবং সিলভার ইত্যাদি, এখানে সিলভার বলতে রুপাকে বোঝানো হয়।
আমরা অনেক ক্ষেত্রেই ধাতুর ব্যবহার দেখেছি, তবে সবচেয়ে বেশি মজাদার বিষয় হলো ধাতু আমরা অলংকার হিসেবে রূপচর্চার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি। পাঠ্য বইয়ের পড়তে গেলে ধাতুর আমরা নানা ধরনের উদাহরণ দেখতে পাই কিন্তু অলংকারের কথা অত সহজে বলা হয়নি।
পাঠ্য বইয়ের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের বিক্রিয়ায় ধাতু হিসেবে আয়রন, অ্যালুমিনিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম এই সকল ধাতুকে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার এমন কিছু কিছু পদার্থ রয়েছে যেগুলো খুব সহজে ধাতুকে বিকৃত করতে পারে এবং গলাতে পারে।
এই সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করা আবার বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া পাঠ্য বই উল্লেখ রয়েছে।
কিছু কিছু ধাতুর রয়েছে যেগুলো আবার বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম হয় এবং বিভিন্ন ধরনের দেশ রক্ষায় বোমা তৈরি করা হয়।
আবার অনেক ধরনের ধাতু রয়েছে যেগুলো ঔষধ শিল্পে ব্যবহার করা হয় ঔষধ তৈরির জন্য এবং সংরক্ষণ করার জন্য।
ধাতু ব্যবহার করে আবার বিভিন্ন প্রকার স্ট্রাকচার বা গঠন তৈরি করা হয় যা দিয়ে সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
আরও পড়ুন: তড়িৎ ঋণাত্মকতা কাকে বলে?