তৎসম শব্দ কাকে বলে? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর

তৎসম শব্দ কাকে বলে: যে সকল শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কোন পরিবর্তন ছাড়াই বাংলা ভাষায় প্রবেশ করে, বাংলা ভাষায় নিজস্ব শব্দে পরিণত হয়েছে সেই সকল শব্দসমূহকে তৎসম শব্দ বলে

তৎসম শব্দের অর্থ: “তৎ” কথার অর্থ তার, “সম” কথার অর্থ সমান সুতরাং তৎসম শব্দের অর্থ তার সমান।

বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃত ভাষার মধ্যে রয়েছে গভীর সম্পর্ক যা প্রয়োজন অনুযায়ী বাংলা ভাষা ব্যবহার করে। বাংলা ভাষার খ্যাতিমান লেখকদের রচনার শতকরা ২৫ টি শব্দ তৎসম ভাষায় হয়ে থাকে। এবং ইহার দ্বারা একটি স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হয়ে যে বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃত ভাষা গভীরভাবে মিলে আছে।

তৎসম শব্দ কাকে বলে
সংস্কৃত বা তৎসম শব্দ কাকে বলে?

তৎসম শব্দে তার সমান বলতে সংস্কৃত ভাষার সমানকে বোঝানো হয়েছে। কেননা প্রাচীনকাল থেকে সংস্কৃত ভাষা আমাদের ধর্ম, দর্শন এবং সাহিত্যের বাহন হওয়ায় বাংলা ভাষা তৎসম শব্দ ভান্ডার হতে প্রয়োজন মত প্রচুর শব্দ গ্রহণ করেছে।

এগুলো হলো কয়েকটি কারণ যেগুলোর জন্য বলা হয় যে সংস্কৃতির সাথে বাংলা ভাষার গভীর মিল রয়েছে।

আসলেই সত্য কেননা সংস্কৃত ভাষা আমরা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বাংলা ভাষা হিসেবে জানি।

তৎসম শব্দ উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর?

যেমন আমি পূর্বে বলেছিলাম যে তৎসম শব্দটি আমরা উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করব যেন বুঝতে সুবিধা হয় আমাদের। তাই এখন আমি কিছু উদাহরণ দিব যে উদাহরণগুলো দ্বারা আমরা খুবই সহজে তৎসম শব্দের ব্যাখ্যা জানার মাধ্যমে তৎসম সম্পর্কে জানতে পারব।

যদিও বা আমি পূর্বে সহজ ভাবে উল্লেখ করেছে তৎসম শব্দ নিয়ে কিছু সংজ্ঞা ও তথ্য তবুও উদাহরণ যেন বেশি ভালো।

কেননা উদাহরণ জানার মাধ্যমে যে কোন বিষয়ের ব্যাখ্যা সুস্পষ্ট হয় এবং তথ্যগুলো আরো বেশি সহজ হয় মেধা ধারণের জন্য।

তৎসম শব্দের উদাহরণ সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • প্রীতি, প্রণাম, পর্বত, গ্রহ, নক্ষত্র, বৃক্ষ।
  • মৃত্যু, নদী, নারী, ভ্রাতা, ভাগ্নি, জল।
  • জয়, চন্দ্র, সূর্য, শুভ্র, সুন্দর।
  • বৃষ্টি, গৃহিণী, সত্য, ক্ষুধা।
  • নিমন্ত্রণ, পুষ্প, মূর্খ, বন্ডের, কাব্য।
  • বাক্য, মুক্তি,-মন্ত্র, পত্র।
  • হস্ত, মস্তক এবং মহাশয় ইত্যাদি।

এই তৎসম শব্দের উদাহরণ অনুযায়ী আমরা চন্দ্র সূর্য এবং নক্ষত্র যা উচ্চারণ করি না কেন সব হচ্ছে সংস্কৃত অন্তর্গত। কিন্তু এই তৎসম শব্দ যেহেতু বাংলা ভাষার সঙ্গে এমনভাবে মিলে গেছে যে এটি বাংলা ভাষার অনুরূপ হয় বিবেচনার ক্ষেত্রে।

তাই এই ভাষাকে তৎসম শব্দ বলা হয় যেখানে তার সমান বলা হয়, তার সমান বলতে কিন্তু সংস্কৃতের সমান ইঙ্গিত করে।

তার সমান হচ্ছে সংস্কৃতের সমান এবং এটি বাংলা ভাষা অর্থাৎ বাংলা ভাষা যখন সংস্কৃতের সমান হয় তখন তৎসম শব্দ বলে।

আমরা লক্ষ্য করতে পারলাম যে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সূর্য একটি সংস্কৃত শব্দ। কিন্তু এটি বাংলা ভাষার সঙ্গে এমন ভাবে মিলে গেছে যে এটি সংস্কৃত সমান বলে অবহিত করা হয়েছে। আর সংস্কৃতের সমান বলে এই সকল সত্যকে অবহিত করার জন্য এগুলোকে তৎসম শব্দ বলে।

উপসংহার:

তৎসম শব্দ কাকে বলে এবং তৎসম শব্দটি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে আজকের এই পোষ্টের মধ্যে বিশেষভাবে সাজিয়ে।

আশা করি আমাদের এই তৎসম শব্দ নিয়ে সাজানো পোস্টটি আপনাকে অনেক বেশি ভাষা সম্পর্কে এবং শব্দ সম্পর্কে অবগত করেছে।

আমরা তাই বলতে পারি যে, তৎসম শব্দগুলো হচ্ছে সংস্কৃত শব্দ কেননা এগুলো সম্পূর্ণরূপে সংস্কৃত শব্দের সমান। সংস্কৃত শব্দের সমান বলতে সংস্কৃত শব্দ যেমন উচ্চারণ হয় ঠিক অনুরূপভাবে তৎসম শব্দ উচ্চারিত হয় কথা বলার সময়।

তাই এই সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে অবশ্যই আমরা বলতে পারি যে তৎসম শব্দ হচ্ছে সংস্কৃত শব্দ গুলোর উদাহরণ।

তাই বলা যাবে আমরা উপরে যতগুলো ব্যাখ্যা প্রদান করেছি সেগুলো সংস্কৃত শব্দের ব্যাখ্যা কেননা উদাহরণ গুলো সংস্কৃত শব্দ থেকে এসেছে।

সংস্কৃত শব্দ বলতে এই শব্দগুলো অনেক প্রাচীন এমন নয় বরং এগুলো আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে। অর্থাৎ সংস্কৃতিতে যে সকল কথাবাত্রা বলা হয় তার উপর ভিত্তি করে যে কথাগুলো বের হয়ে এসেছে সে কথাগুলো হচ্ছে সংস্কৃত বা তৎসম শব্দ।

আর সংস্কৃত হওয়ার কারণে এই শব্দগুলোকে আমরা প্রাচীন শব্দ বলে আখ্যায়িত করতে পারে এতে কোন ভুল হবে না।

আরও পড়ুন: উপভাষা কাকে বলে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top