তাওহীদ অর্থ কি? তাওহীদের সংজ্ঞা, গুরুত্ব, প্রভাব ও প্রকারভেদ

তাওহীদ অর্থ কি: তাওহীদ আরবি শব্দ, তাওহীদ শব্দের অর্থ হলো একত্ববাদ, এক করা এবং অদ্বিতীয় সাবস্ত করা। একত্ববাদ বলতে আল্লাহ তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে স্বীকার করাকে বোঝানো হয়েছে। মূল কথা: তাওহীদ এর মূল কথা হলো আল্লাহ তা’আলা এক ও অদ্বিতীয় এবং তিনার কোনো শরিক নেই।

তিনি তার সত্তা ও গুণাবলীতে অদ্বিতীয় এবং তিনি সকল প্রশংসা ও ইবাদতের একমাত্র যোগ্য যা আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে।

তাওহীদ অর্থ কি
তাওহীদ অর্থ কি?

তাওহীদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা স্বয়ং বলেছেন, কোন কিছুই তার সদৃশ নয় অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার সমতুল্য ও সমশক্তিমান কেউ নেই।

—(সূরা আস শুরা আয়াত নম্বর|: ১১)—-।

আল্লাহ তায়ালাকে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা, ইবাদতের যোগ্য, এক ও অদ্বিতীয় সত্তা হিসেবে একত্ববাদের স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থই হচ্ছে তাওহীদ। একত্ববাদ বলতে আল্লাহ তায়ালার এক ও অদ্বিতীয় সত্তাকে বোঝানো হয়েছে যা অবশ্যই সত্য বলে জানি।

তাওহীদ কাকে বলে?

তাওহীদ কাকে বলে: ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ  তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া এবং তিনার গুণাবলির উপর তিনাকে অদ্বিতীয় হিসেবে সাব্যস্ত করাকে তাওহীদ বলে। এক কথায়, আল্লাহ তায়ালাকে তিনার গুণাবলী ও  সৃষ্টিকর্তা হিসেবে এক ও অদ্বিতীয় সত্তা গণ্য করাকে তাওহীদ বলে।

জীবন ভালোভাবে অতিবাহিত করতে ইসলামের দেওয়া বিধান অর্জন করার দরকার এবং অর্জন করতে বিশ্বাস দরকার যা হচ্ছে তাওহীদ।

তাওহীদের সম্পর্কে যেহেতু আল্লাহ তাআলা নিজে ঘোষণা করেছেন তাই এর উপর বিশ্বাস রাখা ও কায়েম করা আমাদের প্রয়োজন। আল্লাহ তায়ালাকে অবশ্যই আপনাকে আমাকে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে বিশ্বাস করে নিতে হবে এবং ইবাদত করতে হবে।

ইবাদত করার পূর্বে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি অনেক বেশি প্রাধান্য পায় সেটি হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার উপর বিশ্বাস এবং সেই সাথে ভরসা।

আর ইবাদত করার জন্য আল্লাহ তাআলার উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস অর্জন করার এই প্রক্রিয়ার নাম হচ্ছে তাওহীদ এটি হচ্ছে ঈমানের মূল।

তাওহীদ হচ্ছে ইসলামের একটি ভিত্তি যার মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের মধ্যে দীক্ষিত হওয়া সম্ভব এবং আমল করা সম্ভব। আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে জ্ঞান রাখার মাধ্যমে বিশ্বাস করা এবং তার প্রত্যেকটি গুণাবলী কে সত্য বলে স্বীকার করাই হচ্ছে তাওহীদ।

তাওহীদ এর প্রকারভেদ

তাওহীদের কিছু প্রকারভেদ রয়েছে এবং তাওহীদের সম্পর্কে আমাদের এই পোস্টে আমরা এই প্রকারভেদ গুলো দেখবো।

আর অবশ্যই আমি বলব আপনাকে তাওহীদের এই সকল প্রকারভেদ গুলো দেখে নেওয়ার জন্য তাওহীদের সম্পর্কে সম্পূর্ণ প্রসেস জানতে।

তাওহীদকে আমরা মোট তিন ভাগে ভাগ করতে পারে এবং এদের সংজ্ঞা অনুযায়ী বিশ্লেষণ করতে পারি। আর আপনি যেন তাওহীদের এই সকল প্রকারভেদ গুলোকে সংখ্যা অনুযায়ী বিশ্লেষণ করতে পারেন তাই এখানে সংজ্ঞা উল্লেখ করবো তাওহীদের প্রকারভেদ গুলো।

তাওহীদের মোট প্রকারভেদ তিনটি,  সেগুলো হলো:

  • তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ (আল্লাহকে লা শারিক হিসেবে যাবতীয় কর্ম  দ্বারা সাব্যস্ত করা) 
  • তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ (ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে একমাত্র যোগ্য পাত্র মনে করা)
  • তাওহীদুল আছমা ওয়াস্‌সিফাত (আল্লাহ তাআলাকে তার গুণাবলীর উপর  অদ্বিতীয় মনে করে রাখা)

১.) তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ: নিজের দৈনন্দিন কাজকর্মের দ্বারা আল্লাহ তালাকে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে সাব্যস্ত করার মাধ্যমকে তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ বলা হয়।

২.) তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ: সন্তুষ্টি আদায়ের ক্ষেত্রে সকল ইবাদতের একমাত্র যোগ্য পাত্র হিসেবে আল্লাহ তায়ালাকে মনে করাকেই তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ  বলা হয়।

৩.) তাওহীদুল আছমা ওয়াস্‌সিফাত: মনে প্রানে আল্লাহ তায়ালা যত সকল গুনাবলী ও নাম রয়েছে তার উপর তিনাকে অদ্বিতীয় বলে মনে করাকেই তাওহীদুল আছমা ওয়াস্‌সিফাত বলে। 

তাওহীদের গুরুত্ব

ঈমানের সর্বপ্রথম ও সর্ব প্রধান বিষয় হলো তাওহীদ বা একত্ববাদ। অর্থাৎ মুমিনবা মুসলমান হতে হলে একজন মানুষকে সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের বিশ্বাস আনতে হবে এবং তা বজায় রাখতে হবে। তাওহীদের ওপার পরিপূর্ণ বিশ্বাস অর্জন না করা ব্যথিত একজন ব্যক্তি কখনো ঈমান বা ইসলামে প্রবেশ করতে সক্ষম হতে পারবেনা।

ইসলামের যত প্রকার শিক্ষা ও আদর্শ উল্লেখ্য হয়েছে তার প্রত্যেকটি তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং বিধি-বিধান দ্বারা পূর্ণ।

দুনিয়াতে যত নবী রাসূল এসেছেন সকলেই ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে প্রথমে তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন। আর সকল দাওয়াতের মূল কথা ছিল একটি আর সেই মূল কথা হচ্ছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, যার অর্থ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ বা ইলাহ নেই।

এই বাক্যটির অর্থ তাওহীদের ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে, এমনকি তাওহীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠায় আমাদের প্রিয় নবী তিনার জীবনে সংগ্রাম করে গিয়েছেন। 

তাহলে বুঝতে পারছেন ইসলামের খুঁটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাওহীদের গুরুত্ব কতটুকু, কেননা ইহার উপরে ইসলামের সকল বিষয়বস্তু প্রতিষ্ঠিত।

এমনকি প্রত্যেকটি নবী রাসুল ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে প্রথমে তাওহীদ প্রচার করেছেন এবং মানবজাতির হেদায়েতের জন্য তাওহীদের ধারণা দিয়েছেন। 

তাওহীদ অর্থ কি ও তাওহীদের প্রভাব?

তাওহীদের ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস অর্জন করার পর আমাদের উপর এর কিছু প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। আর এই সকল প্রভাব ধরে আমরা চিহ্নিত করতে পারি যে একজন মানুষ পরিপূর্ণভাবে তাকওয়া ও ঈমান অর্জন করতে পেরেছে। তাওহীদের প্রভাবসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের ওপর বিশ্বাস অর্জন করার মাধ্যমে ঈমান অর্জন হয়।
  • সকল প্রকার পাপ কাজ ও অনিষ্ঠাজনিত কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায়।
  • তাওহীদের উপর বিশ্বাস মানুষকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সুযোগ দেয়।
  • আল্লাহ তায়ালা ও তার সকল গুনাবলী সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা অর্জন করার সুযোগ দেয়ে।
  • তাওহীদের ওপর বিশ্বাস করার মাধ্যমে মানুষ সত্যকে স্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করে না।
  • সত্য কথার প্রতিষ্ঠা করতে তাওহীদের প্রভাব অপরিসীম।
  • তাওহীদের ওপর বিশ্বাস একজন মানুষকে আত্মসচেতন ও আত্মমর্যাদাবান করে তুলতে সক্ষম।
  • তাওহীদের উপর বিশ্বাসের ফলে মুমিনের মাথা আল্লাহ ব্যতীত নত হয় না এবং জগতের সকল সৃষ্টির উপর মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়।

এগুলো হলো তাওহীদের কিছু প্রভাব এবং অবশ্যই এ প্রভাব গুলো মানবজাতির জন্য অনেক বেশি উপকারী।

তাওহীদের সম্পূর্ণ জ্ঞান লাভের পর আল্লাহর একত্ববাদ এর স্বীকার করে এবাদত বন্ধ হয়ে করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।

মুসলমান হয় আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায় না এমন ব্যক্তি মোটেও খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। তবে অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য আমাদেরকে যে সকল বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হবে তার মধ্যে তাওহীদ হচ্ছে অন্যতম একটি বিষয়।

আরও পড়ুন: আখিরাত কাকে বলে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top