তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি? তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা, অসুবিধা ও গুরুত্ব

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি: তথ্যের আদান-প্রদান, সংরক্ষণ, সংগ্রহ এবং তথ্যের বিশ্লেষণ করতে যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, তাই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। আবার, যেকোনো উপাত্তকে তথ্যে রূপান্তর করা এবং সেই তথ্যকে পৃথিবীর যেকোনো স্থানে দ্রুত আদার প্রদান করতে ব্যবহৃত প্রযুক্তির নাম হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।

সহজ ভাবে বলতে গেলে, এমন একটি প্রযুক্তি যা মানুষের মধ্যবর্তী তথ্য আদান প্রদান করার দূরত্ব কে কমিয়ে ফেলতে সক্ষম তাই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি?

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হচ্ছে: তথ্যপ্রযুক্তি এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি এই দুই প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রযুক্তির বিকাশ। তথ্যপ্রযুক্তি দ্বারা উপাত্তকে তথ্যের রূপান্তর করা হয় এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি দ্বারা সেই তথ্য আদান-প্রদান করা হয়।

আর এই দুই কাজ একসঙ্গে সংগঠিত করে, একই সময় উপাত্তকে তথ্যে রূপান্তর করে তা আদান প্রদান করার প্রক্রিয়াকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলে। বর্তমানে আধুনিক পৃথিবী সম্পূর্ণ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল এবং আমাদেরকে ছোট্ট একটি তথ্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে: মানুষের মধ্যবর্তী যোগাযোগের দূরত্ব কে কমিয়ে ফেলে দ্রুত যেকোনো তথ্য আদান প্রদান করতে সক্ষম এমন প্রযুক্তিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলে। যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্তমানে আমরা খুব দ্রুত পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে অন্য প্রান্তে দ্রুত তথ্য আদান প্রদান করে ফেলতে পারে তাকে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বলে।

বর্তমানে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে আমরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকি স্মার্টফোন এবং কম্পিউটার। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি স্মার্টফোন ও কম্পিউটার হওয়ায়, অনেকে এই দুটিকে শুধুমাত্র তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলে থাকে।

আসলে এক ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল কেননা শুধুমাত্র স্মার্টফোন এবং কম্পিউটার এই দুইটি ডিভাইস দ্বারা তথ্যপ্রযুক্তে হিসাব শেষ হয় না।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হিসেবে অন্য কথা চিন্তা না করে শুধুমাত্র স্মার্টফোন এবং কম্পিউটারকে যদি চিন্তাভাবনা করি তাহলে দেখা যাবে।

এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে কিংবা এক ফোন থেকে অন্য ফোনে তথ্য আদান প্রদান করার জন্য অনেকগুলো মাধ্যম প্রয়োজন। আর শুধুমাত্র দেখা গেল যে এই দুইটি প্রযুক্তির মধ্যেই আরো অনেকগুলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহৃত হচ্ছে যোগাযোগের জন্য।

সুতরাং আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে তথ্য প্রযুক্তির ধারণা শুধুমাত্র দুটি ডিভাইস দ্বারা কল্পনা করে শেষ হয়ে যায় না। বরং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পরিসর অনেক বেশি এবং ইহার জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তিও রয়েছে অনেকগুলো। 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপাদান

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি এ বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে বিশ্লেষণ করতে গেলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপাদান সমূহ কি কি এ বিষয়টি আমাদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়। নিচে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপাদানসমূহ আপনাদের মাঝে উল্লেখ করা হলো:

  • কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, মোবাইল ফোন ইত্যাদি
  • ইন্টারনেট, মেগাবাইট, গিগাবাইট ইত্যাদি
  • ওয়াইফাই, মডেম  এবং লাই-ফাই ইত্যাদি
  • রেডিও টেলিভিশন মোবাইল এবং ল্যাপটপ ইত্যাদি
  • ট্যাবলেট, রাউটার ইত্যাদি
  • ক্লাউড কম্পিউটার, হার্ডওয়ার, সফটওয়্যার, ডিজিটাল ডাটা স্থানান্তর এবং প্রিন্টিং ইত্যাদি

এগুলো হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কিছু উপাদান এবং এগুলো ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পূর্ণ অচল হয়ে থাকবে।

আমি পূর্বে বলেছি যে শুধু দুটি ডিভাইস দ্বারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্পনা চিন্তা করা যায় না এ উপাদানগুলো প্রমাণ।

এর মূল কারণ হলো এই উপাদানগুলো কেননা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্পূর্ণরূপে এই সকল উপাদানের উপর নির্ভর করে কাজ করে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা ও গুরুত্ব

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে চলেছি এবং সেই সাথে সকল সুযোগ সুবিধা গুলো ভোগ করে চলেছে। তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করার সাথে অধিকাংশ ব্যক্তি আমরা এর সুবিধা সমূহ বলতে পারব না সাজিয়ে।

আর আপনি যেন তত্ত্ব প্রযুক্তির এই সুবিধা সমূহ ভালোভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে পারেন এবং উপস্থাপন করতে পারেন প্রতিযোগিতায়। সেজন্য আমরা এখানে কিছু সুবিধা সময় উল্লেখ করব যেগুলো তথ্য যা যা প্রযুক্তিকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছে আমাদের জীবনে।

এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা যে সকল সুবিধা ও গুরুত্ব উপভোগ করে থাকি তার নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • কম খরচে দ্রুত ডেটা ও তথ্য স্থানান্তর করা যায়
  • খুব কম সময়ের মধ্যে অধিক পরিমাণে ডাটা স্থানান্তর করতে সুবিধা হয় এবং খরচ কমে
  • সময় অপচয় রোধ হওয়ার সাথে সাথে কাজের গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে
  • তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতি এর মাধ্যমে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ঘরে বসে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারতেছে
  • বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হচ্ছে
  • খুব কম পরিশ্রমে অধিক পরিমাণ কাজ করে ফেলতে সক্ষম হচ্ছে
  • ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের কাজ ঘরে বসে করতে পারতেছে
  • অনলাইন ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় শপিং ঘরে বসেই করা সম্ভব হচ্ছে
  • খুব দ্রুত তথ্য সংগ্রহ, তথ্য সংরক্ষণ এবং তথ্য স্থানান্তর করার মাধ্যমে সময়ের অপচয় রোধ হচ্ছে। ই লার্নিং ব্যবস্থা চালু হওয়ার মাধ্যমে বেকারত্বের হার কমতেছে।

এগুলো হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কিছু সুবিধা ও গুরুত্ব এবং এগুলোর কারণে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করি।

তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা সর্বদা সুবিধা উপভোগ করে এমনটি চিন্তা করাও আপনারা আমার পক্ষে ভুল হবে।

কেননা তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির যেমন সুবিধা রয়েছে ঠিক তেমনি এর অনেকগুলো অসুবিধা রয়েছে যা ক্ষতিকর। আপনারা যদি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অসুবিধা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অবশ্যই পুরো পোস্টে পড়ুন, নিচে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অসুবিধা

এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক দিক দিয়ে যেমন আমরা সুবিধা ভোগ করে ঠিক তেমনি এর অসুবিধা রয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আমাদের জীবনে যে সর্বদা সুবিধা পাওয়া সম্ভব হবে এমনটি নয় বরং সুবিধা এবং অসুবিধা উভয় পাওয়া যায়।

ঠিক অনুরূপভাবে এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা সুবিধা এবং অসুবিধা উভয় পেয়ে থাকে।

ইতিমধ্যে তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা উল্লেখ করেছি তাই এখন অসুবিধা গুলো জানবো তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির অসুবিধা যা উপভোগ করতে চাই না।

নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অসুবিধা উল্লেখ করা হলো:

  • শিশুরা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি হয়ে পড়তেছে
  • ভিডিও গেম ও অন্যান্য গেমস এর প্রতি আগ্রহ বাড়তেছে
  • অশিক্ষিত কর্মীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কমতেছে
  • অনেক ক্ষেত্রে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার অভাব দেখা দিচ্ছে
  • বেশিরভাগ সময় অনলাইনেই অতিবাহিত করতেছে
  • দিন দিন মানবজাতি অলস হয়ে পড়তেছে
  • সাংস্কৃতিক খেলাধুলা ছেড়ে দিয়ে স্মার্টফোনে আসক্ত হচ্ছে
  • বিভিন্ন প্রকার ভিডিও গেমস খেলে সময় অপচয় করতেছে ইত্যাদি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে সকল অসুবিধা পেয়ে থাকি বা ক্ষতি হয়ে থাকে তার মধ্যে এগুলো হচ্ছে অন্যতম।

তবে সাধারণ কিছু পদ্ধতি বা ব্যবস্থাপনা নিজেরাই গ্রহণ করলে এই সকল সমস্যা থেকে অবশ্যই রেহাই পাব এবং উপভোগ করব।

তবে আমরা অনেকেই আছি যারা আসক্ত হয়ে পড়েছি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে সর্বদা সক্রিয় থাকছি। আসলে আমাদের পক্ষে এটি বদ-অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এটি তাড়ানোর জন্য আমাদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রকারভেদ

আমরা আমাদের জীবনে শুধুমাত্র একটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করি না বরং একাধিক ব্যবহার করে থাকি।

কেননা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিভিন্ন প্রকার প্রকারভেদ রয়েছে যেগুলো দ্বারা আমরা ভিন্ন রকম সুবিধা ও অসুবিধা পাই।

তাই চলুন এখন আমরা কিছুটা ধারণা অর্জন করার চেষ্টা করে এই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রকারভেদ গুলো। আর আপনি যেন তথ্য প্রযুক্তির এই প্রকারভেদ গুলো সম্পর্কে অবগত হতে পারেন সেজন্য এখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রকারভেদ দিব।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রকারভেদ ও ধরন হচ্ছে মোট চারটি, যথা:

  1. কম্পিউটারিং ও ইনফরমেশন সিস্টেম (Computer ring and information system)
  2. ব্রডকাস্টিং (broadcast)
  3. টেলিকমিউনিকেশন বা মোবাইল যোগাযোগ (telecommunication)
  4. ইন্টারনেট (internet)

এগুলো হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কিছু প্রকারভেদ বা মূল প্রকারভেদে যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো তথ্য প্রযুক্তির অংশ।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে আজকের আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণরূপে সাজানো হয়েছে এবং তথ্য দেওয়া হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো ইহার মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান, সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করা যায়। আর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আমরা সর্বক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি তথ্য আদান-প্রদান এবং গ্রহণ করার বিষয়ের উপর।

আরও পড়ুন: ডিজিটাল কম্পিউটার কি?

1 thought on “তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি? তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা, অসুবিধা ও গুরুত্ব”

  1. ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সামগ্রিক উন্নয়নে এটি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি’ -সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা নেই অনেকেরই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top