তড়িৎ ঋণাত্মকতা কাকে বলে? তড়িৎ ঋণাত্মকতার উপর নিয়ামকের প্রভাব

তড়িৎ ঋণাত্মকতা কাকে বলে: দুটি পরমাণু যখন সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ হয় অণুতে পরিণত হয় তখন অণুর পরমাণুগুলো বন্ধনের ইলেকট্রন দুটিকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। বন্ধনে উৎপন্ন এ আকর্ষণ কে তড়িৎ ঋণাত্মকতা বলা হয়। তড়িৎ ঋণাত্মকতা একটি পর্যায়বৃত্ত ধর্ম, যা পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।

একই পর্যায়ে বাম থেকে ডান দিকে গেলে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান বৃদ্ধি পায় এবং ডান দিক থেকে বাম দিকে আসলে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান হ্রাস পায়। অর্থাৎ পরমাণুর আকার বৃদ্ধি পেলে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান হ্রাস পায় এবং বিপরীত অর্থে পরমাণুর আকার যত বেশি হ্রাস পায় তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান তত বৃদ্ধি পায়।

উদাহরণ: তৃতীয় পর্যায়ে মৌল গুলোর মাঝে সোডিয়াম পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান সবচেয়ে কম এবং সর্বশেষ ক্লোরিন এর তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান সবচেয়ে বেশি এবং এর মূল কারণ পারমাণবিক ব্যাসার্ধ।

তড়িৎ ঋণাত্মকতা কাকে বলে
তড়িৎ ঋণাত্মকতা কাকে বলে?

আমরা সকলে জানি যে সোডিয়াম পরমাণুর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ তৃতীয় পর্যায়ের মৌল গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়। এবং অপরদিকে ক্লোরিন  পরমাণুর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ তৃতীয় পর্যায়ের মৌল গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম বা ছোট। তড়িৎ ঋণাত্মকতা কাকে বলে এর উত্তর আশা করি আপনি পেয়ে গিয়েছেন।

মৌলের পর্যাবৃত্ত ধর্ম অনুযায়ী বলা যায় সোডিয়াম ক্রোমানোর তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান সবচেয়ে কম এবং ক্লোরিন পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান সবচেয়ে বেশি।

তড়িৎ ঋণাত্মকতা বলতে কোন মৌল ওপর আরেকটি মৌলের সাথে সমযোজী বন্ধনে যুক্ত হওয়ার মধ্যে আকর্ষণ জনিত বলকে বোঝানো হয়।

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যে মৌলের পারমাণবিক আকার যত বেশি, সে মৌলটি তত তাড়াতাড়ি ইলেকট্রন ত্যাগ বা ভাগাভাগি করতে পারবে।

অপরদিকে যে পরমাণুর পারমাণবিক আকার সবচেয়ে কম, সে পরমাণু হতে ইলেকট্রন অপসারণ করতে বা প্রবেশ করাতে বেশি শক্তির প্রয়োজন হবে।

আর বেশি শক্তি প্রয়োজন হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে মৌল গুলোর মধ্যকার আকর্ষণ জনিত বল।

মৌল গুলোর মধ্যকার আকর্ষণ জনিত বল বৃদ্ধি হওয়ার কারণে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান বৃদ্ধি পায় এবং ফলস্বরূপ কম পারমাণবিক ব্যাসার্ধ যুক্ত মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান বেশি।

তড়িৎ ঋণাত্মকতার উপর নিয়ামকের প্রভাব

নিয়ামতের প্রভাবের কারণে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান পরিবর্তন হয় এবং একে তড়িৎ ঋণাত্মকতার উপর নিয়ামকের প্রভাব বলা হয়। অর্থাৎ যে সকল কারণে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান পরিবর্তন হয়, সেই কারণ গুলো নিয়ামক বলে।

তড়িৎ ঋণাত্মকতার ক্ষেত্রে আমরা দুই ধরনের নিয়ামকের প্রভাব লক্ষ্য করতে পারি, যেমন:

  • পারমাণবিক আকার বা পারমাণবিক ব্যাসার্ধ
  • পরমাণুর ইলেকট্রনের চার্জ

পারমাণবিক আকার বা পারমাণবিক ব্যাসার্ধ

তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান পরিবর্তন হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হচ্ছে পারমাণবিক আকার বা ব্যাসার্ধ। আমরা পূর্বে জেনেছি যে পারমাণবিক আকার বৃদ্ধি পেলে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান হ্রাস পায় এবং পারমাণবিক আকার হ্রাস পেলে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান বৃদ্ধি পায়।

আর এক্ষেত্রে এটি প্রমাণিত হয় যে পারমাণবিক আকার বা ব্যাসার্ধ হচ্ছে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান পরিবর্তনের জন্য একটি বড় নিয়ামক।

পারমাণবিক আকার বৃদ্ধির ফলে এদের মধ্যকার আকর্ষণ জনিত বল হ্রাস পায় এবং এর ফলে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান হ্রাস পায়।

এর বিপরীতে দিকে পারমানবিক আকার হ্রাস পাওয়ার ফলে এদের মধ্যকার আকর্ষণ জনিত বল বৃদ্ধি পায় এবং আকর্ষণ জড়িত বল বৃদ্ধির ফলে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান বৃদ্ধি পায়। পারমাণবিক আকার বা পারমাণবিক ব্যাসার্ধ হচ্ছে তড়িৎ ঋণাত্মকতার একটি নিয়ামক, যার মাধ্যমে কোন মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান হ্রাস বা বৃদ্ধি পায়।

পরমাণুর ইলেকট্রনের চার্জ

তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান পরিবর্তন হওয়ার ক্ষেত্রে পরমাণুর ইলেকট্রনের চার্জ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

কোন মৌলের পরমাণুতে উপস্থিত ইলেকট্রন সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নিউক্লিয়াসে উপস্থিত প্রোটন সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

পরমাণুতে উপস্থিত ইলেকট্রন এবং প্রোটন সংখ্যার বৃদ্ধির ফলে এদের মধ্যকার আকর্ষণ জনিত বল বৃদ্ধি পায়। আমরা সকলে জানি যে পরমাণুতে উপস্থিত ইলেকট্রন এবং প্রোটন পরস্পরকে তড়িৎ চুম্বকীয় বল দ্বারা আকর্ষণ করে থাকে।

ঠিক এই কারণে পরমাণুর আকার হ্রাস পায় এবং আমরা জানি আকার হ্রাস পাওয়ার ফলে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান বৃদ্ধি পায়।

সুতরাং বলা যায় যে পরমাণুর ইলেকট্রনের চার্জ হচ্ছে তড়িৎ ঋণাত্মকতার আরো একটি বড় নিয়ামক।

যেহেতু ইলেকট্রন চার্জ এর উপর ভিত্তি করে পরমাণুর আকার বা ব্যাসার্ধ পরিবর্তন হয় তাই ইলেকট্রনের চার্জ বা পরমাণুতে উপস্থিতি ইলেকট্রনের চার্জ হচ্ছে মূল তড়িৎ ঋণাত্মকতার নিয়ামক।

তড়িৎ ঋণাত্মকতার গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য

তোরে দি রিনাতো কথা আর গুরুত্ব এবং বৈশিষ্ট্য অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ রসায়ন গবেষণা করার ক্ষেত্রে।

তো চলন প্রথমে আমরা জেনে নেই তড়িৎ ঋণাত্মকতার গুরুত্ব কতটুকু এবং তারপর তড়িৎ ঋণাত্মকতার বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?

তড়িৎ ঋণাত্মকতার গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য
তড়িৎ ঋণাত্মকতার গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য

১.) তড়িৎ ঋণাত্মকতার গুরুত্ব

  • যেকোনো মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কার চেয়ে কতটুকু কম বা বেশি তা জানা যায়।
  • মৌলের পারমাণবিক সংখ্যার উপর ভিত্তি করে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান নির্ণয় করা যায়।
  • মৌলে উপস্থিত পরমাণুগুলোর আকর্ষণ শক্তি কত বেশি দৃঢ় বা শক্তিশালী তা জানা যায়।
  • দুইটি পরমাণু বিক্রিয়া করতে কত বেশি শক্তি প্রয়োজন হবে তার ধারণা পাওয়া যায়।
  • কোন মৌলের কতটুকু শক্তি প্রদান করলে বন্ধনে আকর্ষিত করা যাবে তা জানা যায়।

২.) তড়িৎ ঋণাত্মকতার বৈশিষ্ট্য

  • তড়িৎ ঋণাত্মকতার শুধুমাত্র সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ পরমাণুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
  • তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান মূলের আকার ও ব্যাসার্ধের উপর নির্ভর করে।
  • তড়িৎ ঋণাত্মকতার জন্য অবশ্যই দুটি পরমাণুর প্রয়োজন হয় মান বের করার জন্য।

এগুলো হলো কতিপয় তড়িৎ ঋণাত্মকতার গুরুত্ব এবং বৈশিষ্ট্য, যা আপনাদেরকে জানা অবশ্যই প্রয়োজন ছিল। আশা করে আপনারা তড়িৎ ঋণাত্মকতা সম্পর্কে অনেক বেশি ধারণা অর্জন করেছেন এবং জ্ঞান বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন।

তড়িৎ ঋণাত্মকতা বলতে মৌলের পরমাণুর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ এবং আকর্ষণ বল বোঝানো হয়, তাই ইহার মাধ্যমে বিক্রিয়ার মান নির্ণয় করা সম্ভব।

আপাতত দৃষ্টিতে তড়িৎ ঋণাত্মকতার কোনরূপ গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমাদের চোখে কাজ করে না।

তবে রসায়ন গবেষণার ক্ষেত্রে এই তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা বলে বোঝানো অসম্ভব।

শেষ কথা:

তড়িৎ ঋণাত্মকতা নিয়ে আজকের পোস্টে ঠিক এত দূর পর্যন্ত ছিল এবং আশা করি আমি আপনাদেরকে পর্যাপ্ত তথ্য দিতে সক্ষম হয়েছি।

আপনারা সুস্থ থাকুন এবং ঘরে অবস্থান করবেন না দীর্ঘ সময় কেননা ইহার মাধ্যমে শরীরের অঙ্গ পতঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়ে।

দীর্ঘ সময় পড়ালেখা বা জ্ঞান চর্চা করা শারীরিক ঝুকের কারণ হতে পারে তাই বিকেলের সময় একটু ঘোরাফেরা করুন। তড়িৎ ঋণাত্মকতা নিয়ে আপনাদের মাঝে যদি আর অন্য কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

আমরা আপনাদের কমেন্টের অপেক্ষায় থাকবো এবং যতদূর সম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।

আপনি যদি আমাদের এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

তড়িৎ ঋণাত্মকতা কাকে বলে এবং এর উপর নিয়ামতের প্রভাব কিরূপ তা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করেছি আজকের এই পোস্টটিতে।

আমি আশাবাদী আপনারা যদি পুরো পোস্টটি পড়ে থাকেন তাহলে তড়িৎ ঋণাত্মকতা নিয়ে বেশ ধারণা অর্জন করতে পেরেছেন।

সর্বোপরি আপনাদের নিকট শুভ কামনা নিয়ে বিদায় নিচ্ছি এবং পরবর্তীতে কোন পোস্ট নিয়ে আপনাদের নিকট হাজির হওয়ার চেষ্টা করছি। আপনাদের জন্য আমাদের রইল শুভকামনা ও ভাগ্য বদলের আশ্বাস।

ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে পুরো পোষ্টটি জুড়ে বিস্তারিত থাকার জন্য এবং কিছু জ্ঞান অর্জন ও বিনিময় করার জন্য।

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, শুভকামনা পাঠক পাঠিকা বন্ধুগণ।

আরও পড়ুন: পর্যায় সারণি কাকে বলে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top