ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা বা ডায়েট চার্ট হলো ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসা পদ্ধতি গুলোর মধ্যে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আপনারা যদি আপনাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান এবং সুস্থ থাকতে চান তাহলে অবশ্যই খাদ্য তালিকা অবলম্বন করতে হবে। আপনি যখন সঠিক নিয়মে খাদ্য গ্রহণ করবেন এবং নিয়ম অনুযায়ী ব্যায়াম করবেন দেখবেন আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ চলে আসছে।
আর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা সর্বদা চিন্তিত থাকে ডাইবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং নিজের স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে।
তাই অবশ্যই আপনি যদি আপনার ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে নিচে দেওয়া তালিকাটি অবলম্বন করার খাদ্য গ্রহণ করুন।

এই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ডাক্তাররা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন তবে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে আপনার খাদ্য তালিকা। আপনি সকল খাদ্য থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখবেন এমনটি না বরং আপনি সুনির্দিষ্ট অনেক উপকারী খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা বা ডায়েট চার্টে যে সকল খাদ্য থাকতে হবে সেগুলো হলো:
- কার্বোহাইড্রেট হিসেবে ভাতের পরিবর্তে দুই বেলা রুটি খাওয়া।
- সাদা চালের ভাতের পরিবর্তে লাল চালের ভাত গ্রহণ করা বা খাওয়া।
- আঁশযুক্ত ফলমূল এবং তাজা ফলমূল বেশি করে খাওয়া।
- আঁশযুক্ত শাক সবজি এবং সবুজ শাকসবজি বেশি করে গ্রহণ করা।
- প্রাণীজ যে সকল খাদ্যে বেশি পরিমাণে চর্বি পাওয়া যায় তা পরিহার করা।
- প্রাণীর চর্বি জাতীয় খাবার হিসেবে শুধুমাত্র সামুদ্রিক মাছ গ্রহণ করা।
- উদ্ভিদজ প্রত্যেকটি স্নেহ জাতীয় খাবার বেশি করে গ্রহণ করা যেমন সয়াবিন তেল।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে বেশি বেশি করে টক ফল গ্রহণ করা।
- ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত টক দই গ্রহণ করা বেশি উত্তম।
- অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের পরপর খাবার গ্রহণ করার দিকে লক্ষ্য রাখা।
- স্বাস্থ্য বেড়ে গেলে তা কমানো এবং কমে গেলে তা বাড়ানো এবং স্বাভাবিক থাকলে তা বজায় রাখা।
আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে উপরে দেওয়া খাদ্য তালিকা অবলম্বন করে খাদ্য গ্রহণ করুন। আপনি যখন সঠিক নিয়ম অনুযায়ী সঠিক অনুপাতে সঠিক খাদ্য গ্রহণ করবেন তখন আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ডায়াবেটিস রোগীরা কেন খাদ্য তালিকা অনুসরণ করবে
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা জিজ্ঞাসা করতে পারে যে কেন আমরা এই খাদ্য তালিকা অনুসরণ করব ডায়াবেটিসের জন্য। আসলে বলতে গেলে অসংখ্য এমন কারণ বের হবে যেগুলোর জন্য আপনাকে আমার দেওয়া ডায়েট অনুসরণ করতে হবে।
তবে উল্লেখযোগ্য কিছু ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা অনুসরণ করার কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য হিসেবে ভাতের পরিবর্তে দুই বেলা রুটি খাবেন। কেননা ভাত আমাদের শরীরে প্রবেশ করা মাত্রই দ্রুত হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এবং এর ফলে দ্রুত বা একবারেই আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়।
- আর রুটির মধ্যে ডায়টারী ফাইবার বেশি থাকার কারণে এটি খুব ধীরে পরিপাক হয় এবং সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে।
- সাদা চালের ভাতের পরিবর্তে লাল চালের ভাত গ্রহণ করবেন, কেননা লাল চালের ভাতে অতিরিক্ত ডায়েটারি ফাইবার বিদ্যমান থাকে।
- আঁশযুক্ত ফলমূল বেশি করে খাবেন, কেননা ইহার মাধ্যমে গ্লুকোজের মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- সবুজ শাকসবজি খাবেন, কেননা এতে অতিরিক্ত পরিমাণে ফাইবার ও আঁশ যার ফলে এগুলো দ্রুত আমাদের শরীরের চর্বি এবং পানি শোষণ করার মাধ্যমে রক্তগুলো কাজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- প্রাণীজ যেসকল খাদ্যে স্নেহ পাওয়া যায় সেগুলো পরিহার করে উদ্ভিদ যেসকল খাদ্যে স্নেহ পদার্থ পাওয়া যায় সেগুলো গ্রহণ করতে হবে।
- উদ্ভিদ হতে যে সকল স্নেহ পদার্থ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে সেগুলো হলো সয়াবিন তেল, সরিষার তেল ইত্যাদি।
- নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিমাণমতো খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, কোন বেলার খাবার ত্রুটি পূর্ণভাবে গ্রহণ করা যাবেনা।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সামুদ্রিক মাছ এবং বাদাম ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
আশা করি এই সকল কারণগুলো সম্পর্কে জানার মাধ্যমে আপনারা স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন কেন ডায়াবেটিসের জন্য খাদ্য তালিকা মেনে চলবেন।
তবে আরো ভালোভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে আপনাকে প্রতিনিয়ত সঠিক অনুপাতে ব্যায়াম ও হাটাহাটি করতে হবে।
ডায়াবেটিসের সুষম খাদ্য গ্রহনের উপকারিতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসা বলতে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া নয় বরং ডায়াবেটিসকে দমিয়ে রাখা কে বোঝানো হয়। ডায়াবেটিস থেকে কখনো মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয় বরং ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রেখে জীবন পরিচালনা করা সম্ভব।
ডায়াবেটিসের সুষম খাদ্য গ্রহণের উপকারিতা অধিক, কেননা ইহার মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগীরা তাদের এই রোগটি খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। আর তাই আপনি যেন আপনার এই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন তাই আপনাকে সুষম খাদ্য তালিকা গ্রহণ করতে হবে।
নিচে বিশেষভাবে আপনার মাঝে এর উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:
- সুষম খাদ্যে প্রত্যেকটি খাদ্যের পরিমাণ উল্লেখ থাকার কারণে ডায়াবেটিস রোগীর শরীরে প্রত্যেকটি খাদ্য উপাদান পরিমাণ মতো প্রবেশ করে।
- পরিমাণ প্রত্যেকটি খাদ্যের উপাদান শরীরের মধ্যে প্রবেশ করার মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায়।
- রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
- ডায়াবেটিস রোগী তার সুস্বাস্থ্য গঠনে কোন বাধা প্রাপ্ত হয় না।
- ডায়াবেটিস কে খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে রেখে শরীরের প্রয়োজনে পুষ্টি ও শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম হওয়া যায়।
- প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তি উৎপাদন করার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আমাদের শরীর একটু হলেও সক্ষম হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুষম খাদ্য তালিকা বলতে উপরে উল্লেখিত যে খাদ্য তালিকা উল্লেখ করেছি সেটাকে বোঝানো হয়। আর আপনারা তো বলবেন যে কি কারনে আমরা ডায়াবেটিসে খাদ্য তালিকা অবলম্বন করব তা জেনেছি, তবে এর উপকারিতা জানতে চাই।
তাই আপনি যেন কোন প্রকার প্রশ্ন আমাদেরকে না করতে পারেন তাই ডায়াবেটিস রোগীর সুষম খাদ্য তালিকার উপকরিতা উপরে উল্লেখ করেছি। আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন এবং এ সকল উপকার পেতে চান তাহলে অবশ্যই খাদ্য তালিকা অবলম্বন করুন।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পরিহার কৃত কিছু খাবার
আমরা যখন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো তখন দেখা যাবে আমাদের যাবতীয় সমস্যা দূর হয়ে যাবে ডায়াবেটিস নিয়ে। কেননা যখন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে তখন একজন মানুষ সম্পূর্ণরূপে সুস্থ অনুভব করে ডায়াবেটিস থেকে।
ডায়াবেটিস হচ্ছে একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুব কম তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ।
অবশ্যই একজন ডায়াবেটিস রোগীকে তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু খাদ্য পরিহার করতে হবে সব সময়ের জন্য।
নিচে ডায়াবেটিস রোগীদের পরিহারকৃত কিছু খাদ্য তালিকা তৈরি করা হলো:
- ধূমপান বা তামাক সেবন করে থাকলে তা পরিহার করুন।
- ভাত, আলু, গাজর ও কলা ইত্যাদি রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায় তাই এগুলো খাবেন না।
- সকল প্রকার মিষ্টি ও চিনি জাতীয় খাবার পরিহার ও ত্যাগ করতে হবে।
- সাদা ভাত, গোল আলুর ভর্তা এবং তেল জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
- সাদা পাউরুটি চিনে যুক্ত শস্য ইত্যাদি বাদ দিতে হবে খাদ্য তালিকা হতে।
- প্রতিনিয়তই পাস্তা ও ভুট্টার ভাজা খাওয়ার পরিহার করতে হবে।
- প্রতিনিয়ত দু’কাপের চা বা কফি খাওয়া উচিত নয়। বেশি ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা ইত্যাদি।
আপনার আমার শরীরে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং শরীর সুস্থ রাখতে সকল খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। বরং এমন অনেক খাদ্য রয়েছে যেগুলো আমাদেরকে পরিহার করতে হবে এবং সেই সাথে প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করতে হবে।
উপরে কিছু খাদ্যের নাম উল্লেখ করেছি যেগুলো পরিহার করার মাধ্যমে আপনি ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এবং সুস্থ থাকতে পারবেন। আপনি যদি ডায়াবেটিস কে নিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান এবং সুস্থ থাকতে চান তাহলে অবশ্যই উপরে দেওয়া খাদ্যগুলো পরিহার করুন।
নিয়ন্ত্রণ করা যেমন সহজ তেমন কঠিন, যদি আপনি সঠিক নিয়ম অবলম্বন করে এবং সঠিক খাদ্য গ্রহণ না করে থাকেন। তাই এই পোষ্ট অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করুণ এবং উল্লেখিত খাদ্য পরিহার করুণ আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে।
আরও পড়ুন: জ্বরে শরীর দুর্বল হলে করণীয়।