পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবেনা যার জীবনে একবারও জ্বর হয়নি তাই জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে আমরা জানব। কেননা জ্বর হলে আমাদের শরীর দুর্বল করে এবং খাওয়ার প্রতি রুচি কমে যায় যার কারণে আমরা কম পরিমাণ খাবার খেয়ে থাকি।
আবার কিছু কিছু এমন খাবার রয়েছে যেগুলো জ্বর থাকাকালীন খেলে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতি করবে। আর কিছু এমন খাবার রয়েছে যেগুলো জ্বর হলে আমাদের অবশ্যই খাওয়া উচিত নিচে আমি এগুলো উল্লেখ করলাম।
জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত:
- জ্বর হলে মৌসুমী ফলমূল খেতে হবে মৌসুমী ফলমূলে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেগুলো দ্রুত জ্বর সারিয়ে তোলে।
- জ্বরের জন্য আঁদা একটি উপকারী খাবার এবং আঁদা ব্যাকটেরিয়া জনিত ইনফেকশনের সাথে লড়াই করে।
- এই আঁদা চা অথবা গরম পানির সাথে কুঁচি করে খেতে হয় তাছাড়া আঁদা আপনি এমনিও খেতে পারেন।
- জ্বরের মাঝে চিকেন সুপ হচ্ছে একটি আদর্শ খাবার এবং এটি শুধু জ্বর ছাড়াতেই নয় বরং শরীরে পুষ্টি জোগাতে ও সহায়ক।

- বেশি করে আদা এবং গোল মরিচ দিয়ে সুন্দরভাবে চিকেন সুপ রান্না করে খেতে পারেন।
- জ্বর হলে তুলসী গাছের তুলসী পাতা খাওয়া অনেক বেশি উপকারী এবং ছোট বড় উভয়দেরকে তুলসী পাতা খেতে হয়।
- এক চা চামচ পরিমাণ জিরা এবং চার থেকে ছয়টি তুলসী পাতা এক গ্লাস পানিতে নিয়ে সিদ্ধ করে সেখান থেকে প্রতিদিন দুইবার এক চা চামচ পরিমাণ করে খেলে জ্বর দ্রুত কমে।
- জ্বরের সময় আরেকটি উপকারী খাবার হলো চালের সুজি, এই চালের সুজি আপনি সামান্য সিদ্ধ করা সবজি এবং আদা দিয়ে খেতে পারেন।
- জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য কিসমিস অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার কেননা এর মধ্যে থাকে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দ্রুত জ্বর সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
- জ্বর আক্রান্ত সময় দ্রুত সুস্থ হতে এবং শক্তি ফিরিয়ে পেতে শিং এবং মাগুর মাছের ঝোল করে খেতে পারেন।
- আর জ্বর হলে গোয়ালমরিচ এবং লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে তাছাড়া আপনি টমেটো ও গাজরের সুপ খেতে পারেন।
জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত নয়?
এতক্ষণ পর্যন্ত উপরে আমরা জানলাম যে একজন ব্যক্তির সাধারণ জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
আর এখন আমরা জানবো যে একজন ব্যক্তির সাধারণ জ্বর হলে কি খাবার খাওয়া উচিত নয়।
কিছু কিছু খাবার এমন রয়েছে যেগুলো জ্বর থাকাকালীন অবস্থায় খেলে জ্বর সর্দিও কাশির উপর স্বর্গ বাড়িয়ে দেয়।
তাই আমাদের উচিত সে সকল খাবার সম্পর্কে জানা এবং সেগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
তাই আমি নিচে আপনাদের সুবিধার জন্য উল্লেখ করে দিতেছি যে কি কি খাবার জ্বর হলে খাওয়া উচিত নয়:
সাধারণত যে সকল ফলের মধ্যে সাইট্রিক এসিড থাকে অর্থাৎ টক জাতীয় ফল, এ সকল ফল খাওয়া উচিত নয়।
কেননা এ সকল খাবার খেলে গলার সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে অর্থাৎ গলা ধরা বা কাশির মতো সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
টক জাতীয় ফলের পরিবর্তে আপনি আনারস, নাশপাতি, তরমুজ ইত্যাদি মিষ্টি ফল খেতে পারেন।
জ্বর সর্দি হলে দই এর মত খাবার সমূহ এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এই খাবার গুলি খেলে শ্বাসনালীতে শ্লেষা এবং গলা জ্বালার মত সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আমরা জানি যে পেঁপে খুবই একটি উপকারী ফল কিন্তু সর্দি কাশি হলে পেঁপে না খাওয়া উচিত কেননা পেঁপের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে হিস্টামিন থাকে।
এই উপাদান জ্বরের সময় অনুনাসিক অংশের মধ্যে সমস্যা বাড়িয়ে তোলে ফলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে তাই সর্দি থাকাকালীন পেঁপে খাওয়া উচিত নয়।
কলা শরীরের মধ্যে দ্রুত শক্তি তৈরি করতে পারে তবে জ্বরের থাকাকালীন কলা খেলে জ্বর আরো বেড়ে যেতে পারে।
সর্দি কাশির মধ্যে আখরোট খেলে গলা ব্যথা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং আখরোটের মধ্যে হিস্টামাইনের মাত্রা বেশি থাকে।
জ্বর সর্দি হলে চর্বিযুক্ত খাবার খেতে নিষেধ করেন চিকিৎসকেরা তাই এই সময় অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
আর জ্বর হলে চা বা কফি কম পরিমাণে খান কেননা কফির মধ্যে থাকা কেফির নামক উপাদান শরীরকে ডিহাইড্রেট করে। শরীরে কেফিন প্রবেশ করলে মানুষের বারবার প্রস্রাব পেতে থাকে যার কারনে শরীরের জলের অভাব দেখা দেয়।
জ্বর সম্পর্কে কিছু কথা
আমরা অনেকেই মনে করে থাকি যে জ্বর একটি সাধারণ সমস্যা প্রত্যেকেরই জ্বর হয় জ্বর হওয়া ও স্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু যদি শরীরের অন্য কোন অংশের ক্ষতির কারণে জ্বর হয়ে থাকে তাহলে এই জ্বর আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে।
এই জ্বর আবার বিভিন্ন প্রকারের হয় যেমন: ডেঙ্গু জ্বর, টাইফয়েড জ্বর, ম্যালেরিয়া জ্বর ইত্যাদি জ্বর।
আপনার যদি এই সকল জ্বর হয়ে থাকে তাহলে আপনার শরীর ভীষণ খারাপ হয়ে যাবে এবং আপনার মৃত্যুও হতে পারে।
তাই যদি আপনি এমন জ্বরে আক্রান্ত হন তাহলে দ্রুত এর চিকিৎসা নিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করুন।
কিন্তু আপনি যদি দেখেন যে আপনার সাধারণ জ্বর হয়েছে তাহলে আপনি সর্বোচ্চ তিন দিন পর্যন্ত বাসায় অপেক্ষা করতে পারেন।
এরপরও যদি জ্বর সুস্থ না হয় অর্থাৎ তিন দিন থাকার পরও সুস্থ না হয় তাহলে আপনাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
আর উপরে আমি যে সকল খাবারের কথা উল্লেখ করেছি সেগুলো সাধারণ জ্বরের ক্ষেত্রে প্রয়োজন।
কিন্তু আপনার যদি উপরে উল্লেখিত টাইফয়েড কিংবা অন্যান্য জ্বর হয়ে তাহলে এই সকল খাবার বিষয়ের উপদেশ গ্রহণ করবেন না।
আপনার যে জ্বর হয়েছে বা যে সমস্যা হয়েছে আপনাকে সে অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
আরো পড়ুন: জ্বরে শরীর দুর্বল হলে করণীয়?