প্রয়োজনীয় যে সকল পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমে আমরা ছাগল পালন করে থাকি এবং সেই সকল ছাগল হতে লাভজনকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারি তাকে ছাগল পালন পদ্ধতি বলে। তাহলে চলুন এবার দেখে নেওয়া যাক যে আমরা কিভাবে ছাগল পালন পদ্ধতি অবলম্বন করে ছাগল পালন করতে পারি।
নিচে লাভজনকভাবে ছাগল পালন পদ্ধতি সমুহ উল্লেখ করা হলো
- বদ্ধচারণ পদ্ধতি,
- মুক্তচারণ পদ্ধতি,
- খামার পদ্ধতি,
- সম্পূরক খাদ্য পরিবহন পদ্ধতি,
- বদ্ধ এবং মুক্ত মিশ্রচারণ পদ্ধতি।
১.) বদ্ধাচারণ পদ্ধতি: ছাগলকে বাসা-বাড়িতে ও অন্যান্য বাসস্থানে বেঁধে রেখে পালন করা হয় এ পদ্ধতিতে ছাগলের বদ্ধচারণ পালন পদ্ধতি বলে।
অনেক ক্ষেত্রেই গ্রামঅঞ্চল ও বেশি করে খামারের মধ্যে এই পদ্ধতিটি বেশি লক্ষ্য করা যায়।
২.) মুক্তচারণ পদ্ধতি: যে পদ্ধতিতে ছাগলকে মুক্তভাবে ছেড়ে দিয়ে ইচ্ছামত সবুজ ঘাস ও অন্যান্য খাদ্য গ্রহণ করার জন্য সুযোগ দেওয়া হয় একে মুক্তচারণ পদ্ধতিতে ছাগল পালন বলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিটি গ্রাম অঞ্চলে বেশি দেখা যায়, যেখানে উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মানুষ ছাগলকে মাঠে নিয়ে মুক্তভাবে ছেড়ে দিয়ে পালন করে।
৩.) খামার পদ্ধতি: ছাগল পালনের দিক দিয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক স্থানে খামার তৈরি করা হয়েছে। ছাগল পালনের জন্য এবং ছাগল থেকে লাভজনকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য খামার ব্যবসায়ীরা খামার তৈরি করার মাধ্যমে ছাগল পালনের যে পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে তাকে খামার পদ্ধতি বলে।
৪.) সম্পূরক খাদ্য পরিবহন পদ্ধতি: ছাগল পালনে লাভজনকভাবে বেশি উৎপাদন লাভের উদ্দেশ্যে আমরা মূল খাদ্যের বাইরে যে সকল অন্যান্য কৃত্রিম বা সম্পূরক খাদ্য পরিবহন করে থাকি তাকে সম্পূরক খাদ্য পরিবহন পদ্ধতি বলে।
সম্পূরক খাদ্যের উদাহরণ: ফিট, ব্রান, চালের গুড়া, খুদে ভাত, চক্কর এবং ভুট্টা ডাটা ইত্যাদি।
৫.) বদ্ধ এবং মুক্ত মিশ্রচারণ পদ্ধতি: ছাগল পালন করতে গিয়ে আমরা যদি লাভজনকভাবে বেশি উৎপাদন লাভের উদ্দেশ্যে সময় নির্ধারণ করার মাধ্যমে কিছু সময় বেঁধে রেখে খাদ্য পরিবহন করে এবং কিছু সময় মুক্ত অবস্থায় ছেড়ে দিয়ে ইচ্ছেমতো খাদ্য গ্রহণ করার জন্য সুযোগ করে দেওয়ার এই অহনব পদ্ধতিকে বদ্ধ এবং মুক্ত মিশ্রচারণ পদ্ধতি বলে।
ছাগল পালন করতে কি কি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়?
ছাগল পালন করতে গিয়ে আমাদেরকে কিছু কিছু বিষয়ে এমন রয়েছে যেগুলোর উপর কঠোরভাবে নজর রাখতে হয়।
কেননা এই সকল বিষয়ের উপর পরিপূর্ণভাবে লক্ষ্য রাখার মাধ্যমে আমরা লাভজনকভাবে ছাগল থেকে উৎপাদন পেতে পারবো।
আর লাভজনকভাবে ছাগল থেকে উৎপাদন পাওয়ার মাধ্যমে আমরা খুবই সহজে ছাগল পালনে উদ্যোক্তা হতে পারব। আর উদ্যোক্তার অভাব বর্তমানে কত বেশি রয়েছে তা পূরণ করতে অবশ্যই এ বিষয়গুলো আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে ছাগল পালনের জন্য।
যেন আমাদের ছাগলগুলো নিজেদের প্রয়োজনীয় চাহিদা থেকে বঞ্চিত না হয়, যেমন:
- পরিষ্কার এবং সামাজিক বাসস্থান।
- সময়মতো সঠিক খাদ্য পরিবহন।
- প্রয়োজন অনুযায়ী মিনারেল বা পানি পরিবহন।
- সঠিক নিয়ম অবলম্বন করার মাধ্যমে গোসল পদ্ধতি।
- রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা প্রদান ইত্যাদি।
১.) পরিষ্কার এবং সামাজিক বাসস্থান: আপনি যদি ছাগল পালন করতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে আমাদের ছাগলের সামাজিক বাসস্থান ও পরিষ্কার বাসস্থান ঠিক করে রাখতে হবে।
২.) সময়মতো সঠিক খাদ্য পরিবহন: আপনি যদি ছাগল পালন করতে গিয়ে লাভজনকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে সময় মতো সঠিক খাদ্য পরিবহন করতে হবে।
৩.) প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পরিবহন: আমাদেরকে ছাগল পালন করতে গিয়ে পানির বিষয়টির দিকে গভীরভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
কেননা দেখা যায় যে অধিক পানি পরিবহন করার ফলে ছাগলের স্বাস্থ্য খারাপ হয়।
আর কম পরিমাণ পানি পরিবহন করার ফলে আমাদের ছাগলের স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়ে।
তাই এ বিষয়টির উপর লক্ষ্য রেখে সময় মত পরিমাণ মতো আমাদের ছাগলকে পানি পরিবহন করতে হবে।
৪.) সঠিক নিয়ম অবলম্বন করার মাধ্যমে গোসল পদ্ধতি: অবশ্যই গোসল করার সময় আমাদেরকে সঠিক নিয়ম অবলম্বন করতে হবে। কেননা ছাগল হচ্ছে এমন একটি প্রাণী যার মাথায় পানি লাগলে সে মারা যায়।
তাই এ বিষয়টির উপর লক্ষ্য রেখে শুধুমাত্র মাথা বাদ দিয়ে পুরো অংশ পানি দিয়ে ধৌত করে দিতে হবে।
আর এর মাধ্যমে সঠিক নিয়ম অবলম্বন করে গোসল পদ্ধতি বা আমাদের সকলকে গোসল দেওয়া সম্ভব হবে।
৫.) রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা প্রদান: আবহাওয়া জনিত বা অন্যান্য বিশেষ কারণের জন্য আমাদের ছাগলগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে।
স্বল্প খরচে লাভজনকভাবে ছাগল পালন পদ্ধতি
আপনি যদি খুব অল্প টাকা খরচ করে লাভজনকভাবে আপনার ছাগল থেকে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে চান তাহলে অবশ্যই পারবেন। তবে এর জন্য আপনাকে কয়েকটি করণীয় বাধা অবলম্বন করতে হবে এবং আমরা এই সকল কারণে এখানে উল্লেখ করব ছাগল পালনের।
যেন আপনি খুব সহজে স্বল্প খরচের মাধ্যমে লাভজনকভাবে ছাগল পালন করতে পারেন পদ্ধতির মাধ্যমে। আর অবশ্যই আমি আশা রাখি আপনি লাভজনকভাবে ছাগল পালন করতে আমাদের এই তথ্যগুলো গ্রহণ করবেন এবং সে অনুযায়ী লাভ করবেন ছাগলে।
স্বল্প খরচে লাভজনকভাবে ছাগল পালন করতে গেলে আমাদেরকে কিছু কিছু বিশেষ দিক প্রয়োগ করতে হবে। এগুলো হলো:
- খাবার হিসেবে ছাগলকে খড়কুটা খেলানো।
- পানির পরিমাণ কম দিয়ে সম্পূরক খাদ্য বেশি পরিবহন করা।
- মুক্তচারণ পদ্ধতি অবলম্বন করে বাহ্যিক খাদ্য বেশি গ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া।
- রোগ আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পরিষ্কার বাসস্থান প্রস্তুত করা। কাচা বা সবুজ খাদ্য পরিবহন বেশি করা।
আপনি যদি স্বল্প খরচে ছাগল পালন করতে চান এবং উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে লাভবান হতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনি আমাদের দেওয়া পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমে ছাগল পালতে শুরু করুন এবং যত্ন নিন। উপরে আমি এ পোষ্টের প্রথম দিকে কয়েকটি পদ্ধতিতে ছাগল পালন করার বিষয়ে নিয়ে উল্লেখ করেছি।
প্রথমে আপনি চিন্তা করুন যে আপনি কোন পদ্ধতিতে ছাগল পালতে চান এবং তারপর আপনাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অর্থাৎ আপনি যদি মুক্ত ভাবে ছাগল পাল্টে চান তাহলে অবশ্যই প্রথমে আপনাকে একটি খোলা জায়গা নির্বাচন করতে হবে।
জায়গাটি এমন ভাবে নির্বাচন করতে হবে যেন ছাগল তার পরিপূর্ণ খাদ্য সেখানে পেয়ে যায় এবং সুরক্ষিত থাকে।
অর্থাৎ এইভাবে আপনাকে নির্বাচন করতে হবে এবং তারপর সে অনুযায়ী পালন করতে হবে আপনার ছাগলকে অতি যত্নে।
আরও পড়ুন: ছাগল মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি।