ঘন ঘন প্রসাব থেকে মুক্তি পেতে এবং প্রসাবের জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পেতে আমরা নানা ধরনের চিকিৎসার শরণাপন্ন হই। তবে ঘন ঘন প্রস্রাব এবং জ্বালাপোড়ার ক্ষেত্রে সবসময় চিকিৎসা গ্রহণ করা মোটেও সঠিক সমাধান নয়।
আমাদের জীবনের কতিপয় খারাপ অভ্যাস এর কারণে ঘন ঘন প্রসাব জনিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমরা যদি শুধুমাত্র ৩টি অভ্যাস যথাযথভাবে পরিহার করে চলতে পারি, তাহলে, আমরা প্রসাব জনিত যেকোনো ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারব।

ঘন ঘন প্রস্রাব ও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা এটি বর্তমানে অতি সাধারণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, আমাদের দৈনন্দিন কিছু খারাপ অভ্যাসের কারণে। কোন ধরনের চিকিৎসার শরণাপন্ন না হয় শুধুমাত্র এই কয়েকটি অভ্যাস পরিহার করার মাধ্যমে আমরা প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।
এই তিনটি অভ্যাস আপনার তেমন কোন উপকারে আসে না, বরং আপনার স্বাস্থ্য অনেক ঘটায়। তাই আপনি এই তিনটি অভ্যাস পরিহার করার মাধ্যমে প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে আনার সাথে সাথে যে কোন ধরনের শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।
১.) চা, কফি, কোল্ড ড্রিংকস এবং ধূমপান পরিহার করুন
চা: বর্তমানে অনেকেই আমরা চা খেয়ে নেশা রূপান্তর করে ফেলেছি এবং চা না খেলে কোন কাজ করতে পারি না। আসলে চা কোন ধরনের দৈনিক পান করা পণ্য নয়। বরং যা হচ্ছে একটি ঔষধ জাতীয় গাছ থেকে সংরক্ষণ করা বা সংগ্রহ করা ঔষধ।
Tea বা চা খাওয়ার ফলে শরীরের সকল অঙ্গ পতঙ্গ এবং স্বাস্থ্য হানি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে আমরা সকলেই জানি যে, ঔষধ প্রতিনিয়ত খাওয়া উচিত হয় না বরং স্বাস্থ্য ক্ষতি হয়। যেহেতু একটি ঔষধ, তাই এটি প্রতিনিয়ত খাওয়া উচিত নয়।
চা খাওয়ার ফলে আপনার আমার প্রসাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং শারীরিক নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন: চা না খেলে শরীরের কোন ধরনের হজম ক্রিয়া সম্পন্ন হয় না, চা না খেলে কোন খাবার খেয়ে শান্তি পাওয়া যায় না এবং অন্যান্য খাবার খেয়ে পেট ভরে না ইত্যাদি।
কোল্ড ড্রিংকস: বর্তমানে আমরা সকলেই কোল্ড ড্রিংকস খেতে অনেক বেশি পছন্দ করি, তবে এই কোল্ড ড্রিংকস এর পরিমাণ অত্যাধিক হারে বেশি খাওয়ার ফলে আমাদের প্রসাবের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
Cold drinks বা কোল্ড ড্রিংকস হচ্ছে এক ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য, কেননা কোল্ড ড্রিংকস তৈরিতে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আবার এই পণ্যটি বেশি সেবন করা ফলে আমাদের মাঝে এক ধরনের নেশার তৈরি হয়।
কোল্ড ড্রিংকস বেশি করে পান করার ফলে, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া জনিত সমস্যা দেখা দেয় এবং ঘন ঘন প্রসাব এর অধিক মাত্রা পরিলক্ষিত হয়।
তাই এই বিষয়টি থেকে নিজেকে বিরত রাখুন এবং অভ্যাস গড়ে তুলুন।
নেশা বা ধূমপান করার ফলে যেভাবে ঘন প্রস্রাব হয়?
ধূমপান: ধূমপান অবশ্যই আমাদের সামাজিক রীতি-নীতি এর কারণে অনেক বেশি ব্যবহৃত দ্রব্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
তবে এই ধূমপানের রয়েছে অনেক ধরনের স্বাস্থ্যহানি এবং প্রসাব জনিত সমস্যার কারণ।
আমরা সকলেই জানে ধূমপান হচ্ছে আমাদের শরীরের জন্য এক ধরনের খারাপ পণ্য, তবুও আমরা এই ধূমপান থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারি না।
আসলে প্রস্রাব জনিত যেকোনো ধরনের সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে ধূমপান করা।
তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকুন কেননা, ইহার মাধ্যমে আমাদের প্রসাবে জ্বালা যন্ত্রণার সৃষ্টি হয় এবং যারা যন্ত্রণার কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব দেখা দেয়।
২.) শারীরিক প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় পানি পান করা
প্রস্রাব ঘন ঘন হওয়ার ক্ষেত্রে পানি এর গুরুত্ব অপরিসীম এবং ইহার কারণে প্রসব ঘন হয়ে থাকে।
আমাদের সমাজে অনেক ধরনের ব্যক্তি রয়েছেন যারা মনে করেন, অধিক পরিমাণ পানি খেলে আমাদের কিডনি সুস্থ থাকে।
আসলে এ কথাটি সম্পূর্ণরূপে ভুল কেননা, পানি পান করা এবং অত্যাধিক বেশি পানি পান করার মধ্যে অনেক বেশি পার্থক্য রয়েছে।
অত্যাধিক হারে শারীরিক প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান না করলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

এই সমস্যা গুলোর মধ্যে প্রসাব ঘন ঘন হওয়া হচ্ছে অন্যতম।
অনেক ব্যক্তি আছেন যারা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই বেশি বেশি করে পানি পান করা শুরু করেন এবং দৈনিক সর্বোচ্চ ১০ লিটার পর্যন্ত পানি পান করেন।
এটি খুব সাধারণ ব্যাপার যে আপনি বেশি পানি পান করার ফলে আপনার ঘনঘন প্রসাব হবে।
আবার আপনি যদি পানি খুব কম পরিমাণে পান করেন তাহলে, আপনার প্রসাবে জ্বালা যন্ত্রণা দেখা দিবে।
তাই সবকিছু থেকে বিরত রেখে আপনাকে সঠিক অনুপাতে সঠিক মাত্রায় পানি পান করতে হবে।
সঠিক অনুপাত এবং সঠিক পরিমাণে পানি পান করার জন্য আপনি গুগলে গিয়ে আপনার বয়স অনুযায়ী পানি পান করার তালিকা বের করে ফেলুন।
সঠিক সমাধান আপনাকে কোন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে না বরং বিশ্বস্ত সার্চ ইঞ্জিন গুগল এর মাধ্যমে তথ্য পেয়ে যাবেন।
তাই সব কিছু নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং পরিমাণমতো সবকিছু গ্রহণ করার মাধ্যমে প্রস্রাব জনিত সমস্যার সমাধান করুন।
৩.) ঘুম থেকে উঠার পর এবং ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে সাথে সাথে পানি পান না করা
আসলে ঘুম থেকে উঠার পর সাথে সাথে পানি খাওয়ার ফলে আমাদের ঘন প্রস্রাব দেখা দেয়।
কেননা ঘুম থেকে উঠার পর আমাদের পাকস্থলের সম্পূর্ণ রূপে হজম ক্রীড়া সম্পন্ন করে ফেলে এবং পাকস্থলী ফাঁকা হয়ে থাকে।
এই সময় পানি পান করার ফলে আমাদের পানে দ্রুত ফিল্টারিং হয়ে যায় এবং প্রসাব জনিত সমস্যা দেখা দেয়।
এ সময় আমাদের খুব ঘন ঘন প্রসাব হতে শুরু করে কেননা, পানি পান করার ফলে তার দ্রুত হজম হচ্ছে এবং মুত্র থলিতে এসে জমা হচ্ছে তাই।
তাই এই সকল অভ্যাস থেকে বিরত থাকুন এবং নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন।
আবার ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে পানি পান করার ফলে, আমাদের সকল পানি পরিপাক হতে শুরু করে।
পরিপাক সম্পন্ন হওয়ার পর সকল পানে মুত্র হিসেবে মূত্র তৈরিতে জমা হয় এবং আমাদের প্রস্রাবের চাপ সৃষ্টি হয়।
প্রসাবের চাপ সৃষ্টি হওয়ার ফলে আমাদের ঘনঘন প্রসাদ দেখা দেয় এবং এটা আমরা কম বেশি সকলেই করে থাকি।
তাই এই সকল বিষয়ের উপর লক্ষ্য রেখে নিজেকে ভালো মতো বিরত রাখুন এবং অভ্যাস পরিত্যাগ করুন।
আপনার অভ্যাসে পারে কেবলমাত্র আপনাকে সুস্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং সুস্থ জীবন যাপন উপভোগ করতে।
প্রস্রাব ঘন ঘন দেখা দিলে আমাদের করণীয় কি?
ঘন ঘন প্রসাব দেখা দিলে আমাদেরকে নানা ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, যেমন:
- গোসল করার সময় বেশি সময় ব্যয় করে গোসল না করা, এবং অন্যকে করতে না দেওয়া।
- মাত্রার অধিক পরিমাণ পানি পান না করা এবং সঠিক অনুপাতে পানি পান করা।
- রৌদ্রে বেশি করে বের না হওয়া এবং অযথা যেকোনো ধরনের কোল্ড ড্রিংকস পান না করা।
- ধূমপান এবং সব সময় চা খাওয়ার অভ্যাস দূর করা ও বিরত থাকা।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং শরীরের অন্যান্য অংশের মাধ্যমে ঘাম আকারে পানি নিঃসরণ করা।
- ঘুমানোর সময় ডান কাঁধে ভর রেখে ঘুমানোর অভ্যাস করা এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা।
ঘন ঘন প্রস্রাব এবং প্রস্রাবে জ্বালা যন্ত্রণা দেখা দেওয়ার কারণ কি?
নানা কারণে আমাদের ঘনঘন প্রস্রাব দেখা দেয় এবং প্রস্রাবে জ্বালা যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়, নিচে কতিপয় কারণ উল্লেখ করা হলো:
- অযথা রোদের মধ্যে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা এবং শরীর অযথা গরম করা।
- মাত্রার অধিক পানি পান করা এবং অনেক সময় সীমিত মাত্রায় পানি পান করা।
- ব্যায়ামের মাত্রা বৃদ্ধি করা এবং শরীরের কাঠামো অনুযায়ী ব্যায়াম না করা।
- ধূমপান করা এবং বেশি করে চা পান করা এবং কোল্ড ড্রিংকস সেবন করা।
- বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়াবেটিস এর কারণে ঘন ঘন প্রসাব ও জ্বালা যন্ত্রণা দেখা দিতে পারে।
ধন্যবাদ, আপনাদেরকে আমাদের এই পোস্টটির মধ্যে অবস্থান করে বিশেষ কিছু জ্ঞান অর্জন করার জন্য শুভ যাক আপনার দিন।
আরও পড়ুন: কলেরা রোগের জীবাণুর নাম কি?