কোষ প্রাচীর কাকে বলে? কোষ প্রাচীরের রাসায়নিক গঠন ও কাজ

কোষ প্রাচীর কাকে বলে: মৃত বা জড়বস্তু দিয়ে তৈরি যে শক্ত আবরণ দিয়ে উদ্ভিদ কোষ আবৃত থাকে তাকে কোষ প্রাচীর বলে। এই কোষ প্রাচীর উদ্ভিদ কোষের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। প্রাণী কোষে কোষ প্রাচীর থাকে না। ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকেও কোষ প্রাচীর আছ।

এই কোষপ্রাচীর শুধুমাত্র উদ্ভিদ কোষের মধ্যে দেখা যায় এবং প্রাণী কোষের মধ্যে কোষ প্রাচীরের কোন অস্তিত্ব নেই।

তাই বলা যায় যে কোস প্রাচীর হচ্ছে একটি বৈশাদৃশ্য যার দ্বারা প্রাণী এবং উদ্ভিদের মধ্যে ভেদাভেদ করা সম্ভব হয়েছে।

কোষ প্রাচীর কাকে বলে
কোষ প্রাচীর কাকে বলে?

আমরা কোষ প্রাচীরের সংজ্ঞা থেকে এটি বুঝতে পারলাম যে উদ্ভিদে যে কোষ প্রাচীর থাকে তা মৃত ও জড় অবস্থায় থাকে। শুধু এতটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং মৃত এবং জড় উপাদান দ্বারা সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও এটি অনেক বেশি শক্ত হয় এবং আবরণ হিসেবে কাজ করে।

যেহেতু কোষপ্রাচীর শুধুমাত্র উদ্ভিদ কোষের মধ্যে পাওয়া যায় সুতরাং এটি অবশ্যই উদ্ভিদ কোষের একটি বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত।

এই কোষ প্রাচীরের কিছু গঠন রয়েছে যে গঠনের উপর ভিত্তি করে কোষপ্রাচীর উদ্ভিদের মধ্যে অবস্থান করে এবং আবরণ প্রদান করে।

কোষ প্রাচীরের ভৌত গঠন

কোষ প্রাচীর প্রধানত তিনটি স্তরে বিভক্ত। এর প্রথম স্তরটির  নাম হলো মধ্যপদা বা Middle lamella. কোষ প্রাচীর এর ভিতরে যেই স্তরটি দুটি পাশাপাশি কোষের মধ্যবর্তী পর্দা হিসেবে অবস্থান করে তার নাম মধ্যপর্দা।

মধ্যপর্দার সূচনা ঘটে মাইটোসিস কোষ বিভাজনের শেষপর্যায়ে অর্থাৎ টেলোফেজ পর্যায়।

সাইটোপ্লাজম থেকে আসা ফ্ল্যাগ্মোপ্লাস্ট Phragmoplast ও গোলজি বডির পেকটিন জাতীয় ভেসিকল Vesicles of droplets একত্রিত হয় এই মধ্যপর্দার সৃষ্টি করে।

কোষ প্রাচীরের দ্বিতীয় স্তরটি হলো প্রাথমিক প্রাচীর primary wall .মধ্যপর্দার উপর পৃষ্ঠে গ্লাইকোপ্রোটিন, হেমিসেলুলোজ ও সেলুলোজ জমা হয় একটি পাতলা স্তর (প্রায় ১থেকে ৩ মাইক্রোমিটার পুরু) তৈরি করে থাকে। এই প্রাচীরটির নাম হলো প্রাথমিক প্রাচীর। আর এই প্রাথমিক প্রাচীর তৈরি হয় মধ্য পর্দার অন্তঃস্থলে।

ট্রাকেট ফাইবার কোষে প্রাথমিক প্রাচীরের ওপরে আরেকটি স্তর তৈরি হতে দেখা যায়। কোষের বৃদ্ধি পূর্ণাঙ্গ হবার পরে এটি ঘটে থাকে।

এই স্তরটি (প্রায়  5 থেকে 10 মাইক্রোমিটার) অধিকতর পুরু। এই স্তরে লিগনিন ও সেলুলোজ জমা হয়।

এটি হলো তৃতীয় স্তর যার নাম সেকেন্ডারি প্রাচীন (secondary wall). ভাজক কোষ এবং বিপাকীয় অন্যান্য কোষে এই সেকেন্ডারি প্রাচীর তৈরি হয় না। এই সেকেন্ডারি প্রাচীর আবার তিন স্তর বিশিষ্ট হয়ে থাকে।বিরল ক্ষেত্রে  সেকেন্ডারি প্রাচীরের মধ্যে আবার টারশিয়ারি প্রাচীরও (tertiary wall)  দেখা যায়।

কোষ প্রাচীরের কূপ এলাকা (Pit  fields)

মধ্য পর্দার উপরের স্তরে মাঝে মাঝে প্রাথমিক প্রাচীর সৃষ্টি না হওয়ার কারণে  যে সরু নলাকার গর্তের তৈরি হয় তার নাম হলো কূপ।এই কূপ হলো প্রাচীরের সবচেয়ে পাতলা এলাকা। দুইটি কূপের মাঝখানে শুধু মাত্র মধ্যপর্দা  থাকে।

এখানে অবস্থিত মধ্যপর্দাকে পিট মেমব্রেন বলে। আর দুটি কূপ যদি মুখোমুখি অবস্থায় থাকে তবে তাদেরকে পিট পেয়ার বলে।

কূপ অঞ্চলে কখনো প্রাথমিক প্রাচীর গঠিত হতে পারে না।

তবে সেখানে সেকেন্ডারি প্রাচীর তৈরি হতে পারে। এই সেকেন্ডারি প্রাচীর যদি তৈরি হয় তাহলে কূপটি হবে পাড় যুক্ত।

আর যদি সেকেন্ডারি প্রাচীর না তৈরি হয় তবে কূপটি হবে পাড়হীন। যদি দুটি পাশাপাশি কোষের প্রাচীরের মধ্যে অবস্থিত সূক্ষ ছিদ্রপথে নলাকার সাইটোপ্লাজমিক সংযোগ স্থাপিত হয় তবে তাদেরকে প্লাজমোডেসমাটা বলে। একে একবচনে প্লাসমোডেসমা বলা হয়।

কোষ প্রাচীরের রাসায়নিক গঠন

কোষ প্রাচীরের মধ্য পর্দা থাকে অধিক পরিমাণে পেকটিক অ্যাসিড। আর কিছু পরিমাণ থাকে অদ্রবণীয় ক্যালসিয়াম পেকটেটএবং ম্যাগনেসিয়াম পেকটেট এর লবণ যাদেরকে বলা হয় পেকটিন। তাছাড়া এই মধ্য পর্দায় থাকে অল্প পরিমাণ প্রোটোপেকটিন।

রাসায়নিক গঠনের দ্বিতীয় স্তরের প্রাথমিক প্রাচীরে থাকে প্রধানত সেলুলোজ  গ্লাইকোপ্রোটিন এবং হেমিসেলুলোজ।

হেমিসেলুলোজে আছে Xylans,Arabans,Galactans, ধরনের পলিস্যাকারাইড সমূহ।

আর গ্লাইকোপ্রোটিনে থাকে কার্বোহাইড্রেট, অন্যান্য পদার্থ এবং প্রোটিন। অনেক সময় সেকেন্ডারি প্রাচীরের লিগনিন দেখা যায়।

আবার কোন কোন প্রাচীরের সুবেরিন  ওয়াক্স দেখা যায়।  ছত্রাকের কোষ প্রাচীর কাইটিন দিয়ে তৈরি। ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর প্রোটিন ও লিপিড এর পলিমার  দিয়ে তৈরি। কোষ প্রাচীরে ৪০% সেলুলোজ থাকে,৩০% পেকটিন থাকে, ২০% হেমিসেলুলার থাকে, আর ১০%  গ্লাইকোপ্রোটিন থাকে। 

কোষ প্রাচীরের কাজ

কোষ প্রাচীর কাকে বলে এবং কোষ প্রাচীরের আরো অন্যান্য বিশেষ তথ্য আমরা উপরে ইতিমধ্যে জেনে আসলাম।

তবে কোষ প্রাচীরের কাজ কি এবং উদ্ভিদে এটি কিভাবে কাজ করে উদ্ভিদকে সহায়তা প্রদান করে তা এখন জানবো এখানে।

নিচে কোষ প্রাচীরের কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ উল্লেখ করা হলো:

১.) কোষ প্রাচীর কোষকে সুনির্দিষ্ট আকৃতি প্রদান করে।

২.) বাহিরের আঘাত হতে কোষর সজীব অংশ  রক্ষা করে।

৩.) এক কোষকে অন্য কোষ হতে পৃথক করে রাখে।

৪.) কোষকে দৃঢ়তা  প্রদান করে।

৫.) পানি এবং খনিজ লবণের শোষণে এবং পরিবহনের সহায়তা করে।

৬.) বহিঃ এবং অন্তঃ উদ্দীপনার পরিবাহক রূপে প্লাসমোডেসমাটা কাজ করে।

এগুলো ছিল কোষ প্রাচীরের কিছু কাজ এবং এই কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য কোষ প্রাচীর উদ্ভিদে অবস্থান করে।

আর এভাবে সহায়তা প্রদান করে কাজ করার মাধ্যমে উদ্ভিদ কোষকে কোষ প্রাচীর এবং অবশ্যই এই কোষ প্রাচীর মৃত অবস্থায় বিরাজমান করে।

আরও পড়ুন: জাইগোট কি?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top