কুরআন শব্দের অর্থ কি: কুরআন আরবি শব্দ, যার বাংলা অর্থ হচ্ছে পাঠ করা বা পড়া। ক্বরউন মূলধাতু থেকে কুরআন শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। কুরআনের মূলধাতু হচ্ছে ক্বরউন, যার বাংলা অর্থ হলো পড়া বা পাঠ করা।
ক্বরউন শব্দের দ্বিতীয় অর্থ হলো একত্রিত করা বা একত্রিত করে রাখা।
মূলধাতু অনুযায়ী কুরআন শব্দের প্রথম অর্থ হলো তেলাওয়াত করা বা পাঠ করা এবং দ্বিতীয় অর্থ হলো একত্রিত করা অর্থাৎ সকল হেদায়েতি বাণী সমূহ একত্রিত করা।
কুরআন যেহেতু আরবি শব্দ, তাই অবশ্যই এর শব্দের অর্থ আমাদের জানা প্রয়োজন ছিল এবং আশা করি আপনারা অর্থ জানতে পেরেছেন।
কুরআনের সংজ্ঞা
কুরআনের সংজ্ঞা বা কুরআন কাকে বলেঃ ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, মানবজাতির হেদায়েতের লক্ষ্যে আল্লাহ তা’আলা হযরত জিবরাঈল (আ.) এর মাধ্যমে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী করীম (স.) এর উপর যে কিতাব নাজিল করেছিলেন তাকে আল কুরআন বলে।
অন্যভাবে বলতে গেলে, ইসলামে শরীয়তের সকল বিধি-বিধানের মূল উৎস, ভিত্তি, অকাট্য ও প্রামাণ্য দলিলকে কুরআন বলা হয়।
কুরআন হচ্ছে আমাদের জন্য দলিল স্বরূপ এবং এখানে জীবন পরিচালনা করার জন্য সমস্ত বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে যথাযথভাবে।
আবার হেদায়েতের হিসেবে কুরআনুল কারীমের সকল প্রকার তথ্য প্রদান করা হয়েছে যার দ্বারা মানুষ তার জীবন পরিচালনা করতে পারে।
আবার পার্থক জীবনের সকল সমস্যার সমাধান করার উপায় সম্পর্কেও কোরআনে উল্লেখ রয়েছে যা অবশ্যই আমাদের জন্য খুশির সংবাদ।
যে কেউ চাইলে আল্লাহর নিকট সমস্যা ব্যক্ত করে সমাধান নিতে পারে তবে এর জন্য আমল রয়েছে যা কুরআনে উল্লেখ হয়েছে।
কুরআনের অবতরণ
আল কুরআন হলো মহান রাব্বুল আলামীনের পবিত্র কালাম ও বাণী।
সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব আল কুরআনকে আল্লাহ তা’আলা কদরের রাতে একত্রে লাওহে মাহফুজ থেকে “বাইতুল ইযযাহ” নামক একটি বিশেষ স্থানে নাযিল করেছিলেন।
বাইতুল ইযযাহ নামক এই স্থানটি হল আসমানের একটি বিশেষ জায়গা বা স্থানের নাম।
মহানবী (স.) হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকা অবস্থায় মহান রব্বুল আলামীনের নির্দেশে জিব্রাইল (আ.) সূরা আলাক এর প্রথম পাঁচটি আয়াত নিয়ে মহানবী (স.) এর নিকট অবতরণ করেন।
আর এটাই ছিল পৃথিবীর বুকে আল কুরআনের প্রথম অবতরণ বা নাযিল এর ঘটনা।
কোরআন বা আল কুরআনের সংরক্ষণ
আল কুরআন নাযিল হওয়ার পর আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) প্রত্যেকটির সাহাবীকে নাযিলকৃত প্রত্যেকটি আয়াত মুখস্ত করার আদেশ দেন।
প্রিয় নবীর আদেশক্রমে সাহাবীগণ তার মুখস্ত করতেন, দিনরাত তেলাওয়াত করতেন, নামাজের পাঠ করতেন এবং পরিবার পরিজন ও স্ত্রীর সন্তানদেরকে মুখস্ত করার আহ্বান দিতেন। গভীর রাতে প্রত্যেকটি সাহাবীদের ঘর থেকে কুরআন তিলাওয়াতের গুনগুন মধুর আওয়াজ শোনা যেত এবং অনেক সময় রাসুলুল্লাহ (সঃ) স্বয়ং তাদের গৃহপার্শ্বে গিয়ে তেলাওয়াত শ্রবণ করতেন।
আর এভাবেই কুরআন মুখস্ত করার মাধ্যমে সর্বপ্রথম আল কুরআন কে সংরক্ষণ করা হয় এবং এখানে উল্লেখ্য যে সেসময় বা তৎকালীন সময়ে আরববাসীদের স্মৃতিশক্তি ছিল খুবই ভালো এবং তীক্ষ্ণ।
আল কুরআন এর সংকলন
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর সময় আল কুরআন লেখনির মাধ্যমে পুরো সংরক্ষণ করা হয়।
কিন্তু সে সময় তা একত্রে গ্রন্থাবদ্ধ করা হয়নি বা গ্রন্থে রূপান্তর করা হয়নি।
বরং এই লেখনি গুলো বা লিপিবদ্ধগুলো বা লিপিবদ্ধের টুকরো গুলো নানাজনের নিকট সংরক্ষিত ছিল তবে একত্রে ছিল না। পরবর্তীতে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) সর্বপ্রথম কুরআন সংকলনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর শাসনামলে নবুয়তের মিথ্যা দাবিদার ও ভন্ড নবীর আবির্ভাব ঘটেছিল এবং হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) তাদের বিরুদ্ধে ইয়ামামার যুদ্ধ করেছিলেন।
এই সকল ভন্ড নবীদের জন্য কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের মধ্যে মানুষের মাঝে ভুলভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
এই যুদ্ধে অনেক কুরআন মুখস্থ করা হাফেজ শাহাদাত বরণ করেন এবং এর কারণে কুরআন সংকলন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
কুরআন সংকলন করার সময় মোট চারটি পর্দা অবলম্বন করা হয়েছিল, কুরআন সংকলনের ক্ষেত্রে বিশেষ চারটি পন্থা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- হাফেজ সাহাবিদের মাধ্যমে প্রতিটি আয়াতের নির্ভুলতা, বিশুদ্ধতা ও সত্যতা যাচাই করা হয়েছিল।
- হযরত ওমর (রাঃ) এর হিফজের সাথে মিলিয়ে আয়াতের বিশুদ্ধতা পুনরায় যাচাই করা হয়েছিল।
- রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর উপস্থিতিতে লিখিত হওয়ার ব্যাপারে দুইজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল।
- চূড়ান্তভাবে কুরআনের প্রতিটি আয়াত লিখিত হওয়ার পর অন্যান্য সাহাবীর সংরক্ষিত পান্ডুলিপের সাথে তুলনা ও যাচাই করা হয়েছিল।
আল কুরআনের সংকলন সম্পর্কে এই তথ্যগুলো সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় পাঠ্য বই এবং বিভিন্ন প্রকার অন্যান্য বই।
আমি বিভিন্ন বই হতে তথ্যগুলো সংগ্রহ করে এখানে উল্লেখ করেছি যেন আপনি অল্প একটু পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।
কুরআন শব্দের অর্থ কি এবং কুরআনের সংজ্ঞা নিয়ে আজকের এই পোস্টটি সাজানো এবং আশা করে তথ্য দিতে পেরেছি অনেক।
আল কুরআন হচ্ছে মানবজাতির হেদায়েতের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব এবং পৃথিবীর বুকে এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিতাব কখনো আসবেনা।
তাই অবশ্যই আপনাকে আমাকে এই কিতাবকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং সেই সাথে মর্যাদার সহিত আমল করতে হবে।
আরও পড়ুন: আসমানি কিতাব কাকে বলে?