কুফর শব্দের অর্থ কি: কুফার আরবি শব্দ, এর আভিধানিক অর্থ হলো অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা, ঢেকে রাখা, গোপন করা, অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, মৌলিক বিষয় সমূহের প্রতি বিশ্বাস না করা, এবং বিশেষ করে আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাস করা ইত্যাদি।
সংজ্ঞা কুফরের: ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ তাআলার মনোনীত দ্বীন ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে কোন একটির প্রতি অবিশ্বাস এবং অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাকে কুফর বলা হয়। আর অবশ্যই কুফর হবে আপনার আমার জীবনের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর দিক।
কুফর কি: কুফর হচ্ছে ঈমানের সম্পূর্ণ বিপরীত একটি ধাপ, যেখানে ঈমান শব্দের অর্থ হচ্ছে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং অন্যদিকে কুফর শব্দের অর্থ হচ্ছে অবিশ্বাস করা। ইসলামের মৌলিক বিষয় সমূহের প্রতি বিশ্বাসকে বলা হয় ঈমান এবং অন্যদিকে ইসলামের মৌলিক বিষয় সমূহের প্রতি অবিশ্বাসকে বলা হয় কুফর।
ঈমানের সম্পূর্ণ বিপরীত একটি অংশের নাম হচ্ছে কুফর এবং এর পাপ অনেক বেশি হয়ে থাকে যার মাধ্যমে জাহান্নাম সহজ হয়। আমাদের মাঝে অধিকাংশ ব্যক্তি রয়েছে যারা জাহান্নামকে পছন্দ করেন না এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে চান আর এর জন্য অবশ্যই আপনাকে কুফার থেকে বিরত থাকতে হবে।
কুফরের পরিণতি ও কুফল
আমরা তো বুঝলাম যে কুফর একটি অবশ্যই অনৈতিক আচরণ এবং এটি আমাদের অনেক খারাপ পরিণতি প্রদান করে। কুফারের পরিণতি ও কুফল সম্পর্কে জানার মাধ্যমে আমরা অনেক বেশি নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবো কুফর থেকে মুক্তি পেতে।
আর আপনি যেন যেকোনো ধরনের কুফর থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন সে জন্য আমরা এখানে কুফরের পরিণতি ও কুফল দিব।
যে সকল তথ্য গ্রহণ করার মাধ্যমে গুফর আপনি কুফর থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবেন এবং পরিণতি জানতে পারবেন।
কুফরের কতিপয় কুফল ও পরিণতি নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
- অবাধ্য ও অকৃতজ্ঞতার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া।
- দিন দিন পাপাচার বৃদ্ধি পাওয়া।
- মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হওয়া।
- প্রতিনিয়ত অনৈতিকতার প্রসার ঘটা।
- আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি অর্জন করা।
- অনন্তকালের জীবনে শুধুমাত্র শাস্তি আর শাস্তি ভোগ করা।
১.) অবাধ্য ও অকৃতজ্ঞতা: কুফর মানুষের মধ্যে অবাধ্য ও অকৃতজ্ঞতা সৃষ্টি করে এবং ইহার মাধ্যমে ওই ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করে।
এছাড়াও ওই ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার বিধি নিষেধ অমান্য করে এবং ইহার মাধ্যমে সে সমাজে অবাধ্য অকৃতজ্ঞ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
২.) পাপাচার বৃদ্ধি: যারা কুফর করে তাদেরকে কাফের বলা হয় এবং কাফের ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা, পরকাল, হাশর, মিজান, জান্নাত এবং জাহান্নাম ইত্যাদিকে অস্বীকার করে।
এ সকল কিছু অস্বীকার করার মাধ্যমে তার মনে কোন ভয় থাকে না এবং এর মাধ্যমে সে পাপাচার শুরু করে।
আর এভাবে কুফরের মাধ্যমে পাপাচার বৃদ্ধি পায় বা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৩.) হতাশার সৃষ্টি হওয়া: স্বভাবগত দিক দিয়ে মানুষ অন্যের উপর ভরসা করতে বেশি পছন্দ করে।
আশা কিংবা ভরসা না করলে একজন মানুষ কখনো সুন্দর ভাবে জীবন পরিচালনা করতে পারবে না।
কাফির ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও তাকবীরের প্রতি অবিশ্বাসী হওয়ায় তার মনে কোন আশা ভরসা থাকে না।
আর এর ফলে কাফির ব্যক্তি হতাশার সৃষ্টি হয় এবং হতাশা সম্মুখীন হয়ে পড়ে।
৪.) অনৈতিকতার প্রসার:
কুফর এর মাধ্যমে দিন দিন অনৈতিকতার প্রসার বৃদ্ধি পায় কেননা ইহার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তায়ালার অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
আল্লাহ তাআলার প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মাধ্যমে সে চরম দুর্দশা ও হতাশায় পড়ার মাধ্যমে অনৈতিক আচরণ করতে থাকে।
আর এই সকল অনৈতিক আচরণ করার মাধ্যমে অনৈতিকতার প্রসার দিন দিন বৃদ্ধি পায়।
৫.) আল্লাহ তা’আলার অসন্তুষ্টি: কুফর করার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তায়ালার প্রতি অবিশ্বাস অকৃতজ্ঞতা এবং অবাধ্যতা করতেই থাকে।
ফলস্বরূপ আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি এবং আজব গজব সে বান্দার ওপর নাযিল হয় এবং অচিরেই সেই ব্যক্তি ধ্বংস হয়ে যায়।
অবশ্যই কুফর একটি অনৈতিক দিক যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি লাভ করা যায়, যা আমরা মোটেই কামনা করি না।
৬.) অনন্তকালের শাস্তি: কুফর করার মাধ্যমে বান্দা কাফির এর দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, আর ইসলামে এসেছে একজন কাফের ব্যক্তি কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
ফলস্বরূপ তাকে অনন্তকালের জীবন যেখানে শুধু শাস্তি আর শাস্তি সেখানে অবস্থান করতে হবে, আর সে অনন্তকালের শাস্তির স্থানটি হচ্ছে জাহান্নাম।
শেষ কথা:
কুফরের সংজ্ঞা, কুফর কি এবং কুফর শব্দের অর্থ কি এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আজকের এই পোস্টটি সাজানো হয়েছে। আর কুফর সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা সহজ ভাষায় প্রদান করার চেষ্টা করা হয়েছে আপনার জন্য। এই কুফল সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা লাভের পর আমি আশা করি যে আপনি এর পরিনাতের দিকে অনেক বেশি নজর রাখবেন।
আপনি যদি এর পরিণতি থেকে বাঁচতে চান তাহলে আপনাকে কুফর থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ঈমানের দিকে ধাবিত হতে হবে।
ঈমান গ্রহণ করা সহজ হলেও ধরে রাখা বেশ মুশকিল হয় এবং এর ফলাফল হয় অনেক বেশি উন্নত এবং সন্তুষ্ট জনক।
যদি আল্লাহ তায়ালার প্রিয় পাত্র হতে চান ও সন্তুষ্টির কারণ হতে চান তাহলে আপনাকে কুফর থেকে বিরত থাকতে হবে প্রথমে। কুফর হচ্ছে ঈমানের সম্পূর্ণ বিপরীত একটি ধাপ, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং শয়তানের নৈকট্য লাভ হয়।
যারা কুফর বা কুফরি করে তাদের কাফের বলে এবং এই সকল ব্যক্তির স্থান জাহান্নামের মধ্যে হয় যা অবশ্যই ভয়ংকর পরিণতি।
আরও পড়ুন: আসমানি কিতাব কাকে বলে?