কম্পিউটার ভাইরাস কি: কম্পিউটার ভাইরাস হলো একটি ক্ষতিকর প্রোগ্রাম যা বাইরের উৎস হতে গোপনে কম্পিউটারের মেমোরিতে প্রবেশ করে এবং মেমোরিতে গোপনে বিস্তার লাভের মাধ্যমে মূল্যবান তথ্য নষ্ট করে দেয় এবং কম্পিউটারকে বিকল করে দেয়।
প্রাণী থেকে শুরু করে উদ্ভিদ পর্যন্ত প্রত্যেকটি জীব কোন না কোন ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে।
আপাতন দৃষ্টিতে দেখা যায় যে ভাইরাস সাধারণত জীবিত বস্তুকে আক্রমণ করে থাকে। কিন্তু বর্তমানে এই আধুনিক পৃথিবীতে কম্পিউটার কিংবা আমাদের হাতে ব্যবহৃত স্মার্টফোন ভাইরাস দ্বারা আক্রমণ হতে পারে এবং এটি অবশ্যই একটি আশ্চর্যের ব্যাপার।
কম্পিউটার ভাইরাস হলো এমন একটি প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারকে বিকল করে দেওয়ার জন্য নিজে নিজে কপি হয়ে প্রতিরূপ সৃষ্টির মাধ্যমে কম্পিউটার প্রোগ্রাম ধ্বংস করে ফেলে। এক কথায় বলতে গেলে, কম্পিউটার ভাইরাস হলো এক ধরনের ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম যা মানুষ এর দ্বারাই নির্মিত।
আবার, কম্পিউটার ভাইরাস হলো এমন একটি ক্ষতিকারক বা অনিষ্ঠাকারী প্রোগ্রাম যা নিজেকে অন্য সফটওয়্যার বা প্রোগ্রামে কপি করতে পারে এবং ওই প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যারকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে। যে প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যারগুলো কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রমণিত হয় সেই সফটওয়্যার গুলো আবার কম্পিউটার ভাইরাসের হয়ে কাজ করে কম্পিউটারের অন্যান্য প্রোগ্রামে আক্রমণ করে।
কম্পিউটার এর পরিভাষায় ভাইরাস এই শব্দটির পূর্ণরূপ হলো: Vital Information Resources Under Seize.
কম্পিউটার ভাইরাসের নামকরণ কে করেন?
Computer Virus বা কম্পিউটার ভাইরাস কি এ বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে আলোকপাত করতে গিয়ে কম্পিউটার ভাইরাসের নামকরণ কে করেন এ বিষয়টি আমাদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়।
কম্পিউটার ভাইরাস এর নামকরণ কে করেন: প্রখ্যাত গবেষক ফ্রেডে কহেন কম্পিউটারের এই ভাইরাস নামকরণটি করেন। প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামের মধ্যে যে ভাইরাসটি পাওয়া গিয়েছিল সেই ভাইরাসটির নাম হল ক্লিপার। ELK Cloner হলো প্রথম এমন একটি ভাইরাস যা পার্সোনাল কম্পিউটারে আঘাত আনতে সক্ষম ছিল।
কম্পিউটার ভাইরাসের আবিষ্কারক কে এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা আমাদের মাঝে থাকলেও আরও একটি বিষয় নিশ্চিত।
আর সেই বিষয়টি হচ্ছে ভাইরাসকে অন্যের ক্ষতির জন্যই প্রোগ্রাম করা হয়েছিল এবং সেই অনুযায়ী কোড লিখে কর্মদক্ষতা প্রদান করা হয়েছিল।
এই কম্পিউটার ভাইরাস অবশ্যই একটি ক্ষতিকর প্রোগ্রাম আমাদের কম্পিউটার, ডেক্সটপ, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল ফোনের জন্য। প্রধানত প্রত্যেকটি ডাটা কমিউনিকেশনযোগ্য ডিভাইসের আক্রমণের জন্য কম্পিউটার ভাইরাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং এটি অবশ্যই ক্ষতিকর।
কম্পিউটার ভাইরাস আক্রমণের কারণ সমূহ
ভাইরাস অযথা কোন কম্পিউটারে আক্রমণ করতে পারে না এবং আক্রমণ করার ক্ষমতা অর্জন করে না এর জন্য কিছু কারণ থাকে। তাই আমরা এখানে কিছু কারণ উল্লেখ করব যে কারণগুলোর জন্য আমাদের কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা ক্ষতি হতে পারে।
উল্লেখযোগ্য কিছু কম্পিউটার ভাইরাস আক্রমণের কারণ সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- বাহিরের হার্ডডিক্স, ফ্লপিডিক্স, সিডি, ডিভিডি, পেনড্রাইভ ইত্যাদি বহিরাগত ডিক্সের মাধ্যমে এবং কম্পিউটারের ডাটা আদান-প্রদানের মাধ্যমেও কম্পিউটারে ভাইরাস ছড়ায়।
- সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট, ইন্টারনেট ও ইমেইল হতে ফাইল ডাউনলোড করার সময় কম্পিউটার ভাইরাস আক্রমণ করতে পারে।
- নেটওয়ার্ক ঢুকতো এক কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটার অথবা সার্ভারের প্রোগ্রাম অথবা ডাটা আদান-প্রদানের মাধ্যমে কম্পিউটার ভাইরাস ছড়াতে পারে।
- পাইরেটেড বা নকল সফটওয়্যার বা বন্ধ করে দেওয়া সফটওয়্যার ব্যবহার করার মাধ্যমে কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রমণ হতে পারে।
- কম্পিউটার এর মাধ্যমে এক সার্ভার হতে অন্য সার্ভারে প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে কম্পিউটার দ্রুত ভাইরাস দ্বারা আক্রমণ হতে পারে।
আমাদের কম্পিউটার কি কি কারণে ভাইরাস দ্বারা আক্রমণ হতে পারে সে বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উপরে উল্লেখ করার চেষ্টা করেছে। আমি আশা করি যে আপনারা এ কয়েকটি কারণ থেকে মুক্তি পেতে পারলে আপনার কম্পিউটার ভাইরাস মুক্ত থাকতে পারবে সর্বদা।
কম্পিউটার ভাইরাসের প্রকারভেদ
কম্পিউটারে যে সকল ভাইরাস আক্রমণ করে সেই সকল ভাইরাসের আবার কিছু প্রকারভেদ রয়েছে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের। অর্থাৎ এদের কাজ এবং বৈশিষ্ট্য উভয় ভিন্ন হওয়ার মাধ্যমে আমরা কম্পিউটার ভাইরাস গুলোকে বিভিন্নভাবে ভাগ করেছি।
আর যেহেতু আমরা কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে জানতে আসছে তাই আমাদেরকে কম্পিউটার ভাইরাসের প্রকার দেখে নিতে হবে। আর প্রকারভেদ অনুযায়ী এদের কাজ ও কম্পিউটারে আক্রমণ করার পদ্ধতি ভিন্ন হয়ে, আমরা কম্পিউটার ভাইরাসের ব্যাখ্যা দেব।
কম্পিউটারে আক্রমণ করার মত অসংখ্য ভাইরাস রয়েছে এবং ভাইরাসগুলো বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা:
- বুট ভাইরাস (Budh virus)।
- সফটওয়্যার বা ফাইল বা প্রোগ্রাম ভাইরাস (file or program virus)।
- ফ্যাট ভাইরাস (faad virus)।
- রেসিডেন্ট ভাইরাস (Resident virus)।
- ম্যাক্রো ভাইরাস (macro virus)।
১.) বুট ভাইরাস: যে সকল কম্পিউটার ভাইরাস ফ্লপি বা হার্ডডিক্সের বুট সেক্টরে আক্রমণ করে তাদেরকে বুট ভাইরাস বলে। এই ভাইরাসটি বুট সেক্টরের মধ্যস্থ মাস্টার প্রোগ্রামটি ধ্বংস করে ফেলে।
উদাহরণ: Friday 13, Stone Virus, Disk killer.
প্রথম বুট ভাইরাসের নাম হলো: Brain
২.) ফাইল বা প্রোগ্রাম ভাইরাস: যে ভাইরাস গুলো কম্পিউটার প্রোগ্রাম ও সফটওয়্যার এর ক্ষতিসাধন করে থাকে সেগুলোকে ফাইলবা প্রোগ্রাম ভাইরাস বলে। এই ভাইরাসটি .exe, .com, .sys এই প্রোগ্রামগুলো ধ্বংস করে ফেলে।
উদাহরণ: Cascade, Sunday, Acid Rain and Trojon ইত্যাদি।
৩.) ফ্যাট ভাইরাস: যে ভাইরাসগুলি ডিক্সের মধ্যস্থ FAT কে আক্রমণ করে ডিরেক্টর এর ভেতরে অবস্থিত কোন ফাইল বা তথ্য বা প্রোগ্রামকে ধ্বংস করে ফেলে তাকে ফ্যাট ভাইরাস বলে।
উদাহরণ: Link virus ( এটি বিভিন্ন লিংকে ক্লিক এর দ্বারা আক্রমণ করে)
৪.) রেসিডেন্ট ভাইরাস: যে ভাইরাসগুলো প্রথমে কম্পিউটারের প্রধান মেমরিকে আক্রমণ করে এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে তাকে রেসিডেন্ট ভাইরাস বলে। এই ভাইরাসটি ফাইলের Currupt করে দেয় এবং এর ফলে সিস্টেমের কাজের বাধা প্রাপ্ত হয়।
উদাহরণ: CMJ, Randex ইত্যাদি।
৫.) ম্যাক্রো ভাইরাস: যে ভাইরাসগুলো কোন অ্যাপ্লিকেশন বা প্রোগ্রামের ভিতরে অবস্থিত ম্যাক্রো সিস্টেমকে আক্রমণ করে তাকে ম্যাক্রো ভাইরাস বলে।
উদাহরণ: Y2K, Relax, W97M, DVM ইত্যাদি।
কম্পিউটার ভাইরাসের লক্ষণ সমূহ
কম্পিউটার ভাইরাস কি এ বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জনের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই কম্পিউটার ভাইরাসের লক্ষণ সময় সম্পর্কে অবগত হতে হবে। আমাদের কম্পিউটার যখন কোন কারণে ক্ষতিকারক ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তখন আমাদের কম্পিউটারে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়।
আর এই সকল লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্র আমাদেরকে পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে কম্পিউটার ভাইরাস দূর করতে হবে।
তবে প্রথমে আমাদেরকে লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে কিনা তা জানার জন্য কম্পিউটার ভাইরাসের প্রয়োগ লক্ষণ দেখে নিতে হবে।
নিচে কম্পিউটার কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ ও বিশেষ লক্ষণ আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করা হলো:
- কিছু সময় পর পর উইন্ডোজ পপ-আপ লক্ষ্য করা।
- মাঝে মাঝেই কম্পিউটারে মেইন পেজ এর পরিবর্তন লক্ষ্য করা।
- কম্পিউটারের কাজ করার গতি কমে যাওয়া।
- নিজের কমান্ড ছাড়া যে কোন প্রোগ্রাম চালু হয়ে যাওয়া।
- খুব তাড়াতাড়ি কম্পিউটারে লেগিং দেখা বা ক্রাশ করা।
- কম্পিউটারে কাজ করার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা সম্মুখীন হওয়া।
- ইমেইল বা যেকোন তথ্য অন্যের কাছে নিজে নিজেই আদান-প্রদান হওয়া।
- কম্পিউটারে কাজ করার সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়া কম্পিউটারে দেওয়া কমান্ড সঠিক মত কাজ না করা ইত্যাদি।
উপরে কিছু লক্ষণ উল্লেখ করেছি, যেগুলো দ্বারা আমরা চিহ্নিত করতে পারব যে আমাদের কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে কিনা।
আর অবশ্যই আপনাকে আমাকে এই সকল বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হবে যদি আপনি আমি কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি।
কেননা উপযুক্ত লক্ষণ কম্পিউটারে পরিলক্ষিত হওয়ার পর তা চিহ্নিত করতে না পারলে, আমাদের কম্পিউটার দিন দিন ভাইরাস দ্বারা গুরুতরভাবে সংক্রমিত হতে পারে। তাই আপনি যদি আপনার কম্পিউটার থাকা ভাইরাস দূর করতে চান তাহলে অবশ্যই প্রথমে ভাইরাসকে চিহ্নিত করতে হবে আছে কিনা।
কম্পিউটার ভাইরাসের প্রতিরোধ ও প্রতিকার
আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস আছে কিনা তা লক্ষণ দ্বারা প্রকাশ পেলে অবশ্যই আপনাকে এর প্রতিকার সম্পর্কে জানতে হবে।
কেননা আপনি যখন প্রতিকার জানতে পারবেন তখন খুব সহজে আপনার কম্পিউটার ভাইরাস মুক্ত রাখতে পারবেন গতিশীলভাবে।
আর গতিশীল কম্পিউটারের কাজ করতে আলাদা রকম সুবিধা পাওয়া যায় এবং এজন্য আমাদেরকে প্রতিকার জানতে হবে কম্পিউটার ভাইরাসের। কম্পিউটার ভাইরাস দূর করার মাধ্যমে আমাদের কম্পিউটার দ্রুতগতিসম্পন্ন হবে এবং কম্পিউটার সুরক্ষিত হবে ক্ষতির থেকে।
উল্লেখযোগ্য কিছু কম্পিউটার ভাইরাসের প্রতিকার বা প্রতিরোধ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- অযথা কারো পেনড্রাইভ বা বহিরাগতা পেনড্রাইভ কম্পিউটারে ইনপুট না করা।
- কম্পিউটারে এন্টিভাইরাস দিয়ে রাখা।
- কন্ট্রোল প্যানেল এ গিয়ে উইন্ডোজ আপডেট ও উইন্ডোজ ফেয়ারওয়েল বন্ধ করা।
- পুরনো কোন হার্ডডিক্স বা ফ্লপিডিক্স বা র্সিডি বা ডিভিডি কম্পিউটারে ইন্সটল না করা।
- যেকোনো ফাইল ডাউনলোডের সময় তা JIP ফাইল দেখে ডাউনলোড করা।
- তথ্য আদান প্রদান করার সময় বহিরাগত কোন লিংকে ক্লিক না দেওয়া।
- এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য আদান প্রদান করার সময় সচেতন থাকা।
- সার্ভারে কাজ করতে গিয়ে কম্পিউটারকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পন্থা অবলম্বন করা।
- কম্পিউটারে আশা যেকোনো আপডেট অযথা না বিবেচনা করে ইনস্টল না করা।
- হার্ডডিক্স প্রতিনিয়তই ম্যানেজ অপশনে গিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া ইত্যাদি।
উপরে আমরা কিছু প্রতিকার উল্লেখ করেছি যেগুলোর মাধ্যমে আপনি খুব সহজে আপনার কম্পিউটারকে ভাইরাসমুক্ত রাখতে পারবেন বা করতে পারবেন।
শুধুমাত্র এই কয়েকটি পদ্ধতি বা উপায় অবলম্বন করার মাধ্যমে আপনি আপনার কম্পিউটারকে ভাইরাসমুক্ত সর্বদা রাখতে পারবেন খুব সহজে।
কম্পিউটার ভাইরাস হচ্ছে সম্পূর্ণরূপে একটি ক্ষতিকর প্রোগ্রাম আমাদের কম্পিউটারের জন্য এবং অবশ্যই এটি আমাদেরকে দূর করতে হবে আমাদের কম্পিউটার থেকে। আপনি যদি উইন্ডোজ ব্যবহার করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি উইন্ডোজ আপডেট ও ফেয়ারওয়েল বন্ধ করে নিন এটি অনেক বেশি দরকার।
আরও পড়ুন: কম্পিউটারের জনক কে?