কম্পিউটার কি? কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য, সংজ্ঞা, কাজ ও ব্যবহার

কম্পিউটার কি: প্রোগ্রামিং দ্বারা চালিত মানুষের ছোট বড় যেকোন হিসাব দ্রুত বের করে দিতে সক্ষম এবং সেই সঙ্গে অসম্ভব কাজকে সম্ভব করার মত দক্ষতা অর্জনকারী প্রযুক্তি হচ্ছে কম্পিউটার। কম্পিউটার শব্দের অর্থ হলো গণনাকারী যন্ত্র বা গণক যন্ত্র। 

এই কম্পিউটার হলো একটি গ্রিক শব্দ যা কম্পিউট থেকে আগত, এবং এর বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে গণক। আর এ কম্পিউট শব্দ থেকে কম্পিউটার শব্দটি এসেছে বা নামকরণ করা হয়েছে।

কম্পিউটার বলতে কি বোঝায়: কম্পিউটার হচ্ছে একটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস যেটি তৈরি করা হয়েছিল মানুষের হিসাব-নিকাশের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য।

কম্পিউটার কি
কম্পিউটার কি?

তবে পরবর্তীতে এই যন্ত্রটি আরো বেশি উন্নতি লাভ করার ফলে এটি মানুষের কমেন্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং মানুষের যাবতীয় কাজ দ্রুত করে দিতে সক্ষম হওয়ার মাধ্যমে বর্তমানে এটি আধুনিক কম্পিউটার এর রূপ লাভ করেছে।

আধুনিক যুগের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে কম্পিউটার এবং কাজ হয়েছে অনেক সহজ। বর্তমানে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত করা হয়েছে দেশের নানা প্রকার হিসাব-নিকাশের গড়-মিলের সমাধান। বর্তমানে কম্পিউটারের ব্যবহার ছাড়া কোন ক্ষেত্রে উন্নতির কথা চিন্তা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা।

কেননা প্রতিটি ক্ষেত্রে কম্পিউটার এমন ভাবে জড়িয়ে গেছে যে অফিসিয়াল কাজ প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।

কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য কি কি?

কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং এই ইলেকট্রনিক ডিভাইসের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যে বৈশিষ্ট্যগুলো দ্বারা আমরা কম্পিউটার সম্পর্কে আরো বেশি করে তথ্য উপলব্ধি করতে পারব এই গণনাকারী যন্ত্রটি সম্পর্কে যা প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রক হয়ে থাকে।

যদিও বা প্রথম দিকে কম্পিউটারকে আমরা গণনাকারী যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করেছিলাম কিন্তু বর্তমানে এটি অনেক বেশি উন্নত প্রোগ্রাম দ্বারা গঠিত।

আর উন্নত প্রোগ্রাম দ্বারা গঠিত হওয়ার কারণে আমরা বর্তমানে এই কম্পিউটার ব্যবহার করে একাধিক বৈশিষ্ট্য পাই।

নিচে কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য কি কি তা আপনাদের মাঝে সহজ ভাবে উপস্থাপন করা হলো:

  • দ্রুতগতি সম্পন্ন ডিভাইস বা যন্ত্র।
  • নির্ভুলতা এবং বিশ্বাসযোগ্য একটি যন্ত্র।
  • শক্তিশালী স্স্মৃতিশক্তি।
  • যুক্তিসহ মতবাদ দিতে সক্ষম।
  • বহুমুখীতা বা একাধিক কাজ করতে সক্ষম।
  • স্বয়ংক্রিয়তা বা স্বয়ংক্রিয় সম্পন্ন।
  • ক্লান্তিহীনতা বা অলসতাহীন।
  • তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে সক্ষম।
  • সুক্ষতা ও সুক্ষভাবে হিসাব করতে সক্ষম ভুল শনাক্তকারী ও সংশোধনকারী যন্ত্র।
  • ভুল শনাক্তকারী ও সংশোধনকারী যন্ত্র।

বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে কম্পিউটারের যাবতীয় কাজ নিয়ন্ত্রণের অবকাঠামো সম্পর্কে জানা যায়। কম্পিউটার হচ্ছে একটি প্রযুক্তি যার মাধ্যমে কঠিন কাজকে সহজ করে তোলা হয় বিশেষ করে হিসাব-নিকাশ।

বর্তমানে কম্পিউটারের ব্যবহার এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে তার মূল কারণ হলো এর বৈশিষ্ট্যের দিন দিন উন্নতি।

প্রতিনিয়ত কম্পিউটারের উন্নতি এবং অসম্ভব কাজ সম্ভব করার মত কর্মদক্ষতা উন্নয়নের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।

কম্পিউটার ডিভাইসের বৈশিষ্ট্যের ব্যাখ্যা সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো:

১.) দ্রুতগতি সম্পন্ন ডিভাইস বা যন্ত্র: কম্পিউটার অন্যতম এবং প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি দ্রুতগতি সম্পন্ন একটি যন্ত্র বা ডিভাইস।

এর দ্রুতগতির একমাত্র কারণ হচ্ছে যে এটি বৈদ্যুতিক সংকেত দ্বারা চালিত, যার গতি আলোর গতির চেয়ে কিছুটা কম।

কম্পিউটারের কাজ করার সময়কে বা দ্রুতগতির সময়টিকে ন্যানো সেকেন্ড, মিলি সেকেন্ড এবং মাইক্রো সেকেন্ড ইত্যাদি ক্ষুদ্র এককে নির্ণয় করা হয়।

একটি প্রচন্ড শক্তি সম্পন্ন কম্পিউটার একসঙ্গে ৩০ লক্ষ থেকে 40 লক্ষ এবং তার চেয়েও বেশি গাণিতিক হিসাব করতে সক্ষম।

২.) নির্ভুলতা এবং বিশ্বাসযোগ্য একটি যন্ত্র: কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণ অংশ হচ্ছে অতি সূক্ষ্ম বৈদ্যুতিক বর্তনী দ্বারা গঠিত।

এজন্য কম্পিউটারকে যদি নির্ভুল যে কোন উপাত্ত ও প্রোগ্রাম দেওয়া হয়,  তাহলে সে তা নির্ভুলভাবে সমাধান করতে সক্ষম হবে। 

এক্ষেত্রে কম্পিউটার কে যদি ভুল ইনফরমেশন বা ভুল ইনস্ট্রাকশন বা ভুল প্রোগ্রাম বা ভুল উপাত্ত দেওয়া হয় তাহলে কম্পিউটার তার উত্তর ভুল দিবে, আর এই প্রক্রিয়াকে গারবেজ ইন গারবেক আউট বলা হয়। তবে আধুনিক কম্পিউটার এটি প্রমাণ করে দেখিয়েছে যে মানুষ ভুল করতে পারে কিন্তু কম্পিউটার ভুল করে না। 

৩.) কম্পিউটারের শক্তিশালী স্স্মৃতিশক্তি:

কম্পিউটারের রয়েছে বিশাল মেমোরি, যাকে আমরা হার্ডডিক্স বলে ডাকি। প্রায় কোটি কোটি বা বলা যেতে পারে অসংখ্য ধরনের তথ্য আমরা এখানে সংরক্ষণ করে রাখতে পারি।

আর এটি হলো কম্পিউটার কি এর একটি সবচেয়ে বড় উদাহারণ।

৪.) যুক্তিসহ মতবাদ দিতে সক্ষম: কম্পিউটার বিভিন্ন প্রকার গাণিতিক সমস্যা সমাধান করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের লজিক্যাল প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে।

এ নিজের কোন বিচার বিবেচনার দক্ষতা নেই, কিন্তু প্রোগ্রাম অনুযায়ী এটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। 

৫.) বহুমুখীতা: কোন একটি মানুষ শুধুমাত্র একটি কাজ করে অভ্যস্ত হওয়ার মাধ্যমে তার উপর পারদর্শী হয়।

আবার প্রত্যেকটি যন্ত্রকেই তাদের নিজস্ব কাজের সক্ষম করার মতো তৈরি করা হয়েছে। 

কিন্তু কম্পিউটার হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র যার মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই তথ্য আদান-প্রদান, হিসাব নিকাশ, বিনোদন, বিভিন্ন প্রকার তথ্য সংগ্রহসহ স্ব-প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারি। 

৬.) স্বয়ংক্রিয়তা: কম্পিউটার হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র যাকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও নির্দেশনা প্রদান করার মাধ্যমে সে তা সঠিকভাবে সমাধান করতে পারে, এর জন্য একে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র বলা হয়। 

৭.) ক্লান্তিহীনতা: কম্পিউটার হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র যাকে তুমি যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ পর্যন্ত পরিচালনা করতে পারো এবং একটি কম্পিউটার কখনোই কাজ করতে করতে ক্লান্তি বোধ করে না।

একে যতগুলো ডাটা দেওয়া যায় সে তার প্রত্যেকটি সমাধান করতেই থাকে। 

৮.) কম্পিউটারের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ:

কম্পিউটার হচ্ছে এমন একটি ডিভাইস যাকে ইনপুট হিসেবে কোন তথ্য দিলে সেটা আউটপুট হিসেবে বা  প্রক্রিয়াকরণ হিসেবে ফলাফল প্রদান করতে পারে।

তাই কম্পিউটারে অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে এটি তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে সক্ষম।  

৯.) সুক্ষতা: একজন মানুষ কখনো সব সময় সূক্ষ্মভাবে যে কোন হিসাব করতে পারে না।

তবে কম্পিউটার হচ্ছে এমন একটি ডিভাইস যে প্রত্যেকটি হিসাব করতে পারে এবং এ কাজে সে কখনো ক্লান্তি বোধ করে না। 

১০.) ভুল শনাক্তকারী ও সংশোধনকারী: কম্পিউটার হচ্ছে একটি ভুল শনাক্তকারে ও সংশোধনকারী যন্ত্র কেননা আমরা টাইপিং করার সময় যদি কোন ভুল শব্দ লিখি তাহলে সে তার দ্রুত চিহ্নিত করতে পারে। এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সে তার সংশোধন করতে পারে খুব সহজেই।

কম্পিউটারের কাজ ও ব্যবহার

কম্পিউটার কি এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে গেলে কম্পিউটারে কাজসমূহ ব্যবহার এ বিষয়টি সম্পর্কে একটি প্রশ্ন আমাদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়।

কম্পিউটার অর্থ দ্বারা আমরা বুঝতে পারি এটি গণনাকারী যন্ত্র তাই বলে এটি দিয়ে শুধুমাত্র গণনা করা যায় এমন নয়।

আর আপনার মাঝে যেমন এমন দ্বিধা না থাকে যে কম্পিউটার দ্বারা শুধুমাত্র একটি কাজ অর্থাৎ গণনা করা সম্ভব। সেজন্য আমরা এই পোস্টটিতে বেশ কয়েকটি ব্যবহার উল্লেখ করবো যে কাজগুলো করার জন্য আমরা কম্পিউটার বা গণক যন্ত্র ব্যবহার করি।

নিচে কম্পিউটারের কাজ ব্যবহার আপনাদের মাঝে উল্লেখ করা হলো:

  • ওয়ার্ড প্রসেসিং বা বিভিন্ন ধরনের লেখালেখি করার ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
  • অফিসের বিভিন্ন ধরনের কার্য বলে দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য কম্পিউটারের ব্যবহার করা হয়।
  • চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্ণয় ক্ষেত্রে কম্পিউটার কাজ করে থাকে।
  • একই স্থান থেকে অন্য স্থানে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় তথ্য আদান প্রদান করার জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
  • বিভিন্ন ধরনের বিনোদন উপভোগ করার জন্য আমরা কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি।
  • যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি প্রতিনিয়তই সাধনের জন্য কম্পিউটার কাজ করে থাকে।
  • মুদ্রণ শিল্পে মুদ্রা তৈরিতে কম্পিউটার কাজ করে থাকে।
  • আধুনিক সামরিক বাহিনীতে নিরাপত্তাকারী হিসেবে কম্পিউটার কাজ করে।
  • ব্যাংকিং এর বিভিন্ন ধরনের জটিল হিসাব-নিকাশ এর সমস্যা দ্রুত সমাধান করার ক্ষেত্রে কম্পিউটার কাজ করে।
  • প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে তথ্যের নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে কম্পিউটার কাজ করে।
  • বিভিন্ন ধরনের সংবাদপত্র প্রকাশনার ক্ষেত্রে কম্পিউটার কাজ করে।
  • শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার উন্নতি লাভের জন্য কম্পিউটার কাজ করে।
  • মহাকাশ ও সমুদ্রের জটিল গবেষণার কাজ দ্রুত গতিতে সম্পন্ন করার জন্য কম্পিউটার কাজ করে।

কাজ এবং ব্যবহারের উপর নির্ভর করে কম্পিউটারের যাবতীয় সাফল্য নির্ধারিত হয়েছে। কম্পিউটারের এত বেশি অগ্রগতি এবং উন্নয়নের পেছনে ব্যবহৃত হয়েছে তার কাজ।

কম্পিউটারের কাজ এবং ব্যবহার সাফল্যের দিকে ধাবিত হওয়ার কারণে ইহার দ্বারা উন্নয়নমূলক কাজ করা সম্ভব। আর উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্যই মূলত কম্পিউটারকে প্রতিনিয়ত আপডেট ও নতুন করে কর্মদক্ষতা প্রদান করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আরও জানুন: সঠিক নিউজ হোমপেজ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top