একীভূত শিক্ষা কি? একীভূত শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, মূলনীতি ও প্রয়োজনীয়তা

একীভূত শিক্ষা কি: যে সকল শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি রাষ্ট্রে বসবাসকারী সকল ধরণের নাগরিক কোন প্রকার বৈষম্য ছাড়াই একই ধরণের শিক্ষা লাভ করতে পারে, এমন শিক্ষা ব্যবস্থাই হলো একীভূত শিক্ষা। বলা যায় এটি হচ্ছে ভেদাভেদবিহীন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা।

এককথায় একীভূত শিক্ষার লক্ষ্য, কোন প্রকার ভেদাভেদ ছাড়াই সকলকে একই শিক্ষা প্রদান করার এমন শিক্ষা পদ্ধতি হচ্ছে একীভূত শিক্ষা।

আবার বলা যায়, একীভূত শিক্ষা কি এর উত্তর হলো: এমন একটি শিক্ষার কৌশলগত প্রক্রিয়া যেখানে ভিন্নতাকে স্বীকার করে নিয়ে সকলকে বিদ্যালয় বা পাঠশালায় নিয়ে এসে সকলকে পাঠ গ্রহণ করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার একটি প্রক্রিয়া।

একীভূত শিক্ষা কি
একীভূত শিক্ষা কি?

এই একীভূত শিক্ষা হচ্ছে ওই শিক্ষা যে শিক্ষার মাধ্যমে প্রত্যেকটি মানুষ সুন্দরভাবে নিজের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারে এবং উপলব্ধি করতে পারে যাবতীয় অন্যায়। মূলত একীভূত শিক্ষার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রত্যেকটি জনগণকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলা।

আর একীভূত শিক্ষা তার লক্ষ্য পূরণ এজন্য করে যেন প্রত্যেকটি মানুষ জ্ঞান অর্জন করার মাধ্যমে নিজের আত্মপলব্ধি করতে পারে। কেননা আত্ম উপলব্ধি করার মাধ্যমে মানুষ নিজের ভালো-মন্দ বিবেচনা করে উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করে সার্থক হতে পারে।

একটি রাষ্ট্রের জন্য প্রত্যেকটি জনগণ শিক্ষিত হওয়া কতটা জরুরী শেষ সম্পর্কে ধারণা নেই এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল।

কেননা শিক্ষিত মানুষ রাষ্ট্র সুন্দরভাবে পরিচালনা করবে এবং যাবতীয় অন্যায় ফ্যাসাদ দূর হয় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং রাষ্ট্র সুখে থাকবে।

একীভূত শিক্ষার মূলনীতি

কয়েকটি মূলনীতির উপর বিবেচনা করে আমাদের এই একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থাটি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়। আর মূলনীতি অবলম্বন করা মাত্র একীভূত শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শিক্ষার্থীদেরকে একীভূত শিক্ষা প্রদান করতে পারে।

আর এই একীভূত শিক্ষার মূলনীতি সম্পর্কে আমাদেরকে জানতে হবে, যে মূলনীতি দ্বারা একীভূত শিক্ষা প্রদান করা হয়।

আর একীভূত শিক্ষা সম্পর্কে যেহেতু আজকের পোস্টটিতে জ্ঞান অর্জন করতে এসেছেন তাই আমাদেরকে একীভূত শিক্ষার মূলনীতি জানতে হবে।

নিচে একীভূত শিক্ষার মূলনীতি ও এই শিক্ষার বাস্তবায়নের নীতিমালা সমূহ উল্লেখ করা হলো:

  • শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিখন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে তা বিভিন্ন সামর্থ বিশিষ্ট শিক্ষার্থীর জন্য উপযুক্ত করা।
  • সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়কে উপযুক্ত করা।
  • শিক্ষা সকল শিশুর জন্মগত অধিকার এবং এই অধিকারটি পূরণে সক্ষম হওয়া।
  • সকল  শিশুই আলাদা তবে শিখন ক্ষেত্রে একই বলে গণ্য করা হবে।
  • বৈষম্যতাহীন পরিবেশ গঠনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান।
  • পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত প্যাচানো যোগ্যতার বিকাশ ঘটানো।
  • প্রত্যেক ক্ষেত্রেই মূল ধারার স্বাভাবিকরণ বাস্তবায়ন।
  • বয়স ও সামর্থ্য উপযোগী সামগ্রী ও পদ্ধতি ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া।
  • সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতার বাস্তবায়ন ঘটানো।
  • শিক্ষক শিক্ষার্থীর মধ্যে হাসিখুশি সম্পর্ক স্থাপন।
  • ছেলে মেয়েরা একই সাথে বৃত্তাকার বা ইউ আকৃতির হয় শিক্ষা গ্রহণ করবে।
  • পর্যায়ভিত্তিক হিসেবে প্রত্যেকটি শিশুকে সমানভাবে মূল্যায়ন করবে।

একীভূত শিক্ষার মূলনীতি হচ্ছে জ্ঞান বৃদ্ধির পরিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন প্রত্যেকটি অঞ্চলের ব্যক্তিদের মাঝে। তবে মূল নীতি কিরূপ হওয়া উচিত শেষ সম্পর্কেও জ্ঞান প্রদান করা হয় এই শিক্ষার মাধ্যমে যার দ্বারা উচ্চশিক্ষিত লোক প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

আমরা মনে করে থাকি যে একীভূত শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞান প্রদান করা হয় যার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জিত হয়। তবে এর মূল কাজ শুধু জ্ঞান অর্জন করা নয় বরং এর মূল কাজ হলো শিক্ষিত করে গড়ে তোলা এবং উন্নত জাতির প্রতিষ্ঠা করা।

শিক্ষিত মানুষ কেবলমাত্র বুঝতে পারবে কোনটি ভালো এবং কোনটা মন্দ এবং ভালো-মন্দ বিবেচনা করার মাধ্যমে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে।

একীভূত শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

প্রত্যেকটি শিক্ষার পেছনে কিছু না কিছু লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজনীয়তা থাকে ঠিক তেমনি একীভূত শিক্ষার কিছু না কিছু লক্ষ্য উদ্দেশ্য রয়েছে। যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য গুলো পূরণ করার উদ্দেশ্যে একীভূত শিক্ষা কাজ করে চলেছে ভেদাভেদ বিহীনভাবে শিক্ষা প্রদান করার জন্য।

অনেকে হয়তোবা বলতে পারে যে ভেদাভেদবিহীন শিক্ষা প্রদান করাই হচ্ছে একীভূত শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।

আসলে এমন বললে ভুল হবে না তবে শিক্ষার আরো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকতে পারে চলুন একীভূত শিক্ষার লক্ষ্য উদ্দেশ্য দেখি।

নিচে কতিপয় একীভূত শিক্ষার লক্ষ্য উদ্দেশ্য সমূহ আপনাদের মাঝে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য উপস্থাপন করা হলো:

  • সকল শিশুকে তাদের সমাজে রেখে একই বিদ্যালয়ে সমান মূল্যায়ন করে শিক্ষা প্রদান করা।
  • সকল শিশু বলতে প্রতিবন্ধী শিশু, পথশিশু, উপজাত শিশু, বস্তিবাসী শিশু, বিশেষ পেশাজীবী ও সম্প্রদায়ের শিশু, কর্মজীবী শিশু, নিঃসঙ্গ শিশু, পরিবারের শিশু, দুর্যোগ এলাকার শিশু এবং জেলখানার শিশু ইত্যাদি কে বোঝানো হয়েছে।
  • সকল শ্রেণীর শিশুকে সমানভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়।
  •  ভেদাভেদহীন এই শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি শিশুকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা যায়।
  •  শিক্ষিত শিশুর দ্বারা উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কামনা করা সম্ভব হয়।
  • সমাজের মধ্যে অনিষ্ঠ আকারী ব্যক্তিগণদের সংখ্যা কমতে থাকে।
  • অন্যতম একটি মৌলিক অধিকার শিক্ষা, এটি পূরণ করা সম্ভব হয়।
  • শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মাঝে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হয় ইত্যাদি।

একীভূত শিক্ষা যেহেতু রাস্তার পথ থেকে অঞ্চলের মানুষকে জ্ঞান প্রদান করা হয় থাকে তাই এ শিক্ষা অনেক বেশি দরকর।

বর্তমানে প্রত্যেকটি রাষ্ট্রে একীভূত শিক্ষা অনেক প্রচলিত হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রকে সক্রিয় করে গড়ে তোলার জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য।

উপরে আমরা কিছু একীভূত শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ উল্লেখ করেছে এবং আশা করি এগুলো আপনাকে সাহায্য করবে। অবশ্যই এ কথাটি মনে রাখবেন যে একীভূত শিক্ষা আমাদের রাষ্ট্রকে উন্নত করতে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করবে এবং উন্নত জাতি প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে।

একীভূত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

আমরা একীভূত শিক্ষাকে এ বিষয়ে আলোকপাত করতে গেলে এই শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জানতে হবে। কেননা একীভূত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা জানার মাধ্যমে আমরা স্পষ্ট ভাবে এই শিক্ষার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা নিজের মাথায় আনতে পারব একীভূত শিক্ষার ব্যবস্থা।

আমাদের দেশে বর্তমানে একীভূত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে অনেক বেশি, নিচে তা উল্লেখ করা হলো:

  • অশিক্ষিত এই দেশকে শিক্ষিত জাতির দ্বারা উন্নতি সাধন করা সম্ভব হয়।
  •  দেশের শিক্ষিত ব্যক্তিগণদের হার বা শতকরা হার বৃদ্ধি পায়।
  • শিক্ষিত দেশ ও জাতি গঠনের মাধ্যমে দেশ আর্থিকভাবে অনেক এগিয়ে যায়।
  • যদিও বা এতে চাকরি করার প্রতিযোগিতা বাড়ে কিন্তু একজন শিক্ষিত ব্যক্তি অবশ্যই চাকরি না করে বিভিন্ন ব্যবসা করার মাধ্যমে দেশকে এবং নিজেও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে।
  • সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটবে এবং মনুষ্যত্ব বৃদ্ধি পাবে।
  • একীভূত শিক্ষা গ্রহণ করার মাধ্যমে দেশে অনুষ্ঠাককারী জনগণের পরিমাণ কমবে।
  • অনিষ্ঠকারী জনগণ কমার মাধ্যমে দেশের উন্নতি সাধন করা সম্ভব।
  • সকল ক্ষেত্রেই শিক্ষিত মানুষদের দেখা মিলবে।
  • মানুষের মনের প্রতি দেশত্ববোধ এবং দেশ প্রেম জাগবে।

এই শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে যতটুকু জ্ঞান প্রদান করার দরকার ছিল ততটুকু আমরা উপরে উল্লেখ করেছি। আশা করি এর প্রয়োজনীয়তা গুলো অনুযায়ী আপনারা এই শিক্ষা বিষয় অনেক বেশি অনুপ্রেরিত হবেন এবং এই শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য চেষ্টা করবেন।

বাংলাদেশে একীভূত শিক্ষা পদ্ধতি কত সালে চালু হয়?

২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে একীভূত শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয় এবং ইহার মাধ্যমে বর্তমানে শিক্ষিত মানুষ ও ব্যক্তিদের পরিমাণ কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে একীভূত শিক্ষা কত সালে চালু হয় এ বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখাটা প্রয়োজন ছিল তাই প্রদান করেছি।

তবে এটি বেশি প্রাধান্য পায় না, বেশি প্রাধান্য পায় তো এই কথা যে এই শিক্ষা কতটুকু আমাদের সমাজে প্রভাব ফেলেছে।

একীভূত শিক্ষা কি এবং এর প্রভাব কতটুকু হয়েছে আমাদের সমাজে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা উপরের তথ্যগুলো থেকে পেতে পারেন।

আমি যদি সত্য কথা বলতে চাই তবে এই শিক্ষা ব্যবস্থার পরিপূর্ণ প্রথা বাংলাদেশে এখনো চালু হতে পারেনি। তবে যে সকল অঞ্চলে এই প্রথা চালু হয়েছে বা এই শিক্ষা চালু হয়েছে সেই সকল অঞ্চলের মানুষ কিছুটা হলেও আত্ম উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।

আবার এই শিক্ষার মাধ্যমে সবচেয়ে বড় প্রভাব এটি লক্ষ্য করা যায় যে প্রতিটি মানুষ শিক্ষা নিয়ে অনেক বেশি অনুপ্রেরিত হয়েছে। আবার এই শিক্ষার মাধ্যমে প্রত্যেকটি ব্যক্তি নিজের সন্তানকে শিক্ষা অর্জন করার বিষয় অনেক বেশি অনুপ্রেরিত করে বা তাগিদ করে থাকে।

আরও পড়ুন: উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কি?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top