উপভাষা কাকে বলে? উপভাষার বৈশিষ্ট্য

উপভাষা কাকে বলে: একই ভাষার অন্তর্ভুক্ত মৌখিক ভাষার স্থানভেদে ধ্বনিগত বা বাচনভঙ্গির বৈচিত্র্যকে উপভাষা বলে। উপভাষার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Dialect প্রাচীন ইংরেজি অনুযায়ী যার আভিধানিক অর্থ হলো কথা বলার ধরন বা ভঙ্গি।

সহজ ভাষায়, একই ভাষার ভিন্ন ভিন্ন মৌখিক ধরনকে উপভাষা বলে।

কলকাতাবাসীর উপভাষা: একজন লোকের মোট দুটি সন্তান ছিল।

ঢাকাবাসীর উপভাষা: য়েক জনের দুইডি ছাওয়াল আছিল।

কোচবিহার উপভাষা: একজনা মাইনসির দুই কোনা বেটা আছিল।

এখানে প্রত্যেকটি ভাষায় মূল ভাষা ও অর্থাৎ বাংলা ভাষার অন্তর্ভুক্ত কিন্তু স্থান ভেদে পরিবর্তন এসেছে। ভাষা এবং উপভাষার মধ্যে বিশাল সম্পর্ক রয়েছে কেননা উপভাষার মূল উপাদান হচ্ছে ভাষা।

উপভাষা কাকে বলে
উপভাষা কাকে বলে?

যেকোনো একটি মূল ভাষার সাপেক্ষে উপভাষা স্থানভেদে পরিবর্তন ঘটে এবং এই পরিবর্তনের ফলে মানুষের ভাষা বোধগম্য হওয়া কষ্টকর হয়ে ওঠে। উপভাষাকে ইংরেজিতে লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজ বলা হয় যার অর্থ হলো আঞ্চলিক ভাষা। 

উপভাষা হচ্ছে কোন একটি ভাষার আঞ্চলিক রূপ যার সাথে আদর্শ ভাষার রূপগত এবং ধ্বনিগত পার্থক্য ও ভেদাভেদ দেখা যায়। মূলত মৌখিক ভাষার বিকৃত রূপ থেকেই এই উপভাষার উৎপত্তি হয় বা জন্ম হয়। আর এ উপভাষার কারণে বলা হয়ে থাকে যে এক দেশের বুলি অন্য দেশের গালি।

উপভাষার বৈশিষ্ট্য

আমরা তো ইতিমধ্যে উপভাষা সম্পর্কে জানালাম তবে এই উপভাষার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো উপভাষায় বিদ্যমান থাকে।

অর্থাৎ উপভাষা যখন কোন অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় বা অঞ্চল থেকে পাওয়া যায় তখন সেই ভাষার কিছু নির্ধারিত বৈশিষ্ট্য থাকে।

শুধুমাত্র একটি অঞ্চলের নয় বরং প্রত্যেকটি অঞ্চলের উপভাষা ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও এই বৈশিষ্ট্যগুলো একই থাকে। অর্থাৎ একই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন উপভাষাগুলো হয়ে থাকে তবে কথাবার্তার ভাবভঙ্গি ভিন্ন হয় যদিওবা কিন্তু উপভাষার বৈশিষ্ট্য একই থাকে। 

উপভাষার বৈশিষ্ট্য সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • উপভাষা হচ্ছে ভাষার আঞ্চলিক রূপ যা ধ্বনিগত ভেদা ভেদা সৃষ্টি হয়।
  • উপভাষা হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ভাষার বা মূল ভাষার অন্তর্ভুক্ত তবে বিবৃত রূপ।
  • একটি নির্দিষ্ট ক্ষুদ্র অঞ্চল ভেদে আঞ্চলিক ভাষার সৃষ্টি ও পরিবর্তন হয়।
  • উপভাষা সর্বদা যে কোন ক্ষুদ্র অঞ্চলের মধ্যে প্রচলিত হয়ে থাকে।
  • উপভাষার কোন লিখিত রূপ নেই এবং নির্দিষ্ট ব্যাকরণের কোন নিয়ম নেই।
  • মূল ভাষার সঙ্গে উপভাষার বিশাল ভেদাভেদ সৃষ্টি হওয়ার বোধগম্য মুশকিল হয়।
  • উপভাষা কোন সামাজিক, রাষ্ট্র কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদা পায় না।

এগুলো হলো উপভাষার কিছু বৈশিষ্ট্য এবং এই বৈশিষ্ট্য গুলো আমরা প্রত্যেকটি উপভাষার মধ্যে পেয়ে যাব লক্ষ্যে।

উপভাষা বলতে আঞ্চলিক ভাষাকে বোঝানো হয় এবং আঞ্চলিক ভাষার বৈশিষ্ট্য গুলো আলাদা কিছু হবে না বরং এই বৈশিষ্ট্য গুলোই হবে।

আর মনে রাখবেন উপভাষার কোন সঠিক কথাবার্তা বিরাজমান থাকে না অর্থাৎ সময় অনুযায়ী এটি পরিবর্তন হতে পারে। আর স্থান পরিবর্তন হওয়া মাত্র প্রত্যেকটি উপভাষার পরিবর্তন হয় এবং সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে উপভাষার পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।

উপসংহার:

উপভাষা কাকে বলে এবং উপভাষার বৈশিষ্ট্য সমূহ বিশেষভাবে উল্লেখ করার মাধ্যমে আমাদের পোস্টটি সম্পন্ন করা।

আর অবশ্যই মনে রাখবেন উপভাষা কোন ভিন্ন জিনিস নয় বরং এটি হচ্ছে ভাষার অন্তর্ভুক্ত আওয়াজ যত কিছু পার্থক্য ও ভেদাভেদ।

উপভাষার মূল হচ্ছে ভাষা এবং এ ভাষা থেকে বিবৃতি রূপ লাভ করে সৃষ্টি হয়েছে আঞ্চলিক বা উপভাষার। আর উপভাষা সর্বদা পরিবর্তন হয়ে থাকে স্থান এবং সময়ের উপর বিশেষ করে সর্বদা পরিবর্তন হয়ে থাকে এবং মানুষ সে ভাষায় কথা বলে।

প্রত্যেকটি অঞ্চলের মানুষ নিজ আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে এবং নিজ অঞ্চলের সাধারণ বৈশিষ্ট্য উক্ত ভাষায় পাওয়া যায়।

আর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার কারণে নিজ অঞ্চলের মধ্যে সহজে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে এবং সংকোচ দূর হয় কথা বলায়।

বলতে গেলে, একজন উপভাষা ব্যবহারকারী ব্যক্তি মূল ভাষা কথা বলতে গেলে অনেক বেশি দ্বিধায় পড়ে যাবে কথা বলতে। আর এর জন্য উপভাষা অনেক বেশি ব্যবহৃত হয় নিজ অঞ্চলের যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে এবং ভুলবশত অন্য অঞ্চলে গিয়ে উপভাষা বের হয়।

আরও পড়ুন: ভাষা কাকে বলে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!