ঈমান কাকে বলে?

ঈমান কাকে বলে: ঈমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস, শরীয়তে যাবতীয় বিধি-বিধান অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং তদানুযায়ী আমল করাকে ঈমান বলে। ঈমান বলতে বিশ্বাস অর্জন করাকে বেশি প্রাধান্য দেয় এবং এই বিশ্বাস অর্জন করার মাধ্যমে আমরা শরীয়ত অবলম্বন করতে পারি।

ঈমান আরবি শব্দ, এ আরবি শব্দটি আমনুন মূলধাতু হতে এসেছে এবং এই মূলধাতু হতে ঈমান শব্দের ধারণা লাভ করতে পারি।

এই ঈমান শব্দের অর্থ হলো: বিশ্বাস করা, আস্থা স্থাপন করা, স্বীকার করা, স্বীকৃতি দেওয়া, নির্ভর করা এবং মেনে নেওয়া ইত্যাদি।

ঈমান হচ্ছে এমন একটি ইসলামের দিক যেটি তিনটি মূল বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত, সেগুলো হলোঃ ১.) বিশ্বাস স্থাপন করা, ২.)  মুখে স্বীকার করা এবং ৩.)  তদানুযায়ী  আমল করতে থাকা। এক কথায়, ইসলামের মূল বিষয়গুলোর প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করার মাধ্যমকে বলা হয় ঈমান বা বিশ্বাস।

ঈমান কাকে বলে
ঈমান কাকে বলে?

এই ঈমান ছাড়া মুসলমান হওয়া যায় না এবং আল্লাহর উপর বিশ্বাস অর্জন করা যায় না, তাই ইসলামের মূল হিসেবে ঈমানকে ধরা হয়। ঈমান যার যত বেশি মজবুত হয় আল্লাহ তাআলার নিকট সেই বান্দা তত বেশি প্রিয় নিকটবর্তী হয়ে থাকে।

পক্ষান্তরে ঈমান এর দুর্বলতা মানুষের যত বৃদ্ধি পায় আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে ব্যক্তির দূরত্ব তত বেশি বৃদ্ধি পেতে থাকে।

আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে দূরত্ব বৃদ্ধি পাওয়া মতে ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবনে অশান্তি বিরাজমান থাকা এটি স্পষ্ট মনে রাখবেন।

যে ব্যক্তির মনে ঈমান আছে তাকে মুমিন বলা হয় এবং একজন মুমিন আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক বেশি প্রিয় হয়ে থাকে। যে মালিকের হুকুমে চলতেছে এই পৃথিবী তিনার প্রিয় পাত্র হওয়ার মাধ্যমে জীবনে আর কোন অশান্তি থাকবে এমনটা সম্ভব নয়।

ঈমানের মৌলিক বিষয় কয়টি ও কি কি?

শরীয়তে যাবতীয় বিষয় মনে প্রানে বিশ্বাস করে মেনে চলার নামই হচ্ছে প্রকৃত ঈমান বা প্রকৃত ঈমানের মূল উদাহরণ। তবে শরীয়তের সকল বিষয়ের উপরে একজন বিশ্বাস অর্জন করতে হবে এবং এর উপর ভিত্তি করে ঈমানের কিছু মৌলিক বিষয় বিশ্বাস করার রয়েছে।

ইসলামী শরীয়তের হিসাব অনুযায়ী ঈমানের মৌলিক বিষয় হচ্ছে সাতটি এবং এগুলোর উপর প্রথম বিশ্বাস আনতে হবে।

পরবর্তীতে আমাদেরকে অন্য বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হবে তবে মূলত এই সাতটি বিষয়ের উপর বিশ্বাস আনাই হচ্ছে মূল ঈমান।

তাহলে ঈমানের মৌলিক বিষয় হচ্ছে সাতটি এবং ঈমানের এ মৌলিক বিষয়গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • মহান আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস।
  • ফেরেশতা গন্ধের প্রতি বিশ্বাস।
  • সকল আসমানী কিতাব সমূহের প্রতি বিশ্বাস।
  • প্রেরিত সকল নবী রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস।
  • আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস।
  • নিজের তকদিরের প্রতি বিশ্বাস।
  • মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস।

১.) মহান আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস: ঈমানের সর্বপ্রথম ও সর্ব প্রধান বিষয় হল আল্লাহ তায়ালার প্রতি দিরোরভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা।

এক্ষেত্রে আমাদের সকলকেই এটি বিশ্বাস করতে হবে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ বা মাবুদ নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তিনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও রিজিকদাতা। 

২.) ফেরেশতা গণদের প্রতি বিশ্বাস: ফেরেশতাগণ হলো মহান আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ সৃষ্টি এবং ফেরেশতারা হল নূরের তৈরি।

তারা সবসময় আল্লাহ তাআলার ইবাদত ও হুকুম পালনের নিয়োজিত থাকে এবং তাদের সংখ্যা অগণিত। 

তারা নারীও নন আবার পুরুষও নন এবং তারা পানাহার ও যৌগিক চাহিদা থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত।

আর এইভাবে আমাদেরকে ফেরেস্তাগণদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। 

৩.) আসমানী কিতাব সমূহের প্রতি বিশ্বাস: মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে মোট 104 খানা আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন। আর এই সকল আসমানী কিতাবসমূহের উপর আমাদেরকে বিশ্বাসী স্থাপন করতে হবে। 

৪.) নবী রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস:

আসমানি কিতাবের সঙ্গে সঙ্গে মহান রব্বুল আলামীন মানবজাতির হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে বহু নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন।  এবং আমাদেরকে এ বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস রাখতে হবে নবী রাসুলগণদের প্রত্যেকটি বাণীর ছিল সত্য।

৫.) আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস: ঈমানের পঞ্চম তম যে বিশ্বাসটি রয়েছে সেটি হচ্ছে আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস।

মৃত্যুর পরে আল্লাহ তায়ালা সকল বিষয়ের  জন্য বিচার করবেন এবং সেখানে তিনি হবেন সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক।

 এ বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস স্থাপন করাই হচ্ছে আখেরাত পরকালের প্রতি বিশ্বাস এবং এটি হলো ঈমানের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অংশ।

৬.)  তকদিরের প্রতি বিশ্বাস: তকদীর অর্থ নির্দিষ্ট পরিমাণ, আল্লাহ তা’আলা রিজিকের ব্যবস্থা জন্মের 5000 বছর আগেই তৈরি করে রেখেছেন।

এবং এটি পরিবর্তন করার একমাত্র যোগ্যতা শুধু সে মহান রব্বুল আলামীনের ওই আছে।

এ বিষয়ে আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে, কেননা এটিও হলো ঈমানের একটি অংশ। ৭.) মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাসঃ মৃত্যুর পর সকলকে পুনরায় জীবিত করা হবে তাদের কৃতকর্মের হিসাব নেওয়ার জন্য এবং এ বিষয়ে আমাদেরকে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।

শেষ কথা:

ঈমান কাকে বলে এবং ঈমানের মধ্যে যে সাতটি বিষয় রয়েছে, সেই সাথে বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আমাদের প্রয়োজন। আমি উপরে ছয়টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে এবং পরবর্তী বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেনি কেননা এটি সকলের জানা উচিত।

আপনার আমার মৃত্যু আছে এটি অবধারিত এবং মৃত্যুর পর আল্লাহ তা’আলা পুনরায় হিসাবের জন্য জীবিত করবেন এটাও অবধারিত।

এই বিষয়ের উপর বিশ্বাস করার বিষয়টি হচ্ছে সাত নম্বর ঈমানের বিষয় এবং এই সকল ঈমানের বিষয়ের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে।

ঈমানের মজবুতি তত বৃদ্ধি পায় যত বেশি আমরা ইসলামিক মজলিসের মধ্যে উপস্থিত হয় ও জ্ঞান অর্জন করি। আমরা যদি শুধুমাত্র বিখ্যাত খলিফাদের যে কোন একটির জীবনী পড়ে তবে ইনশাআল্লাহ আমাদের ঈমান অনেক বেশি দৃঢ় হয়ে যাবে।

ঈমানের দৃঢ়তা বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা অনেক বেশি জরুরি হয়ে থাকে এবং অনুপ্রেরণার জন্য ইসলামিক মজলিসে বসা গুরুত্বপূর্ণ।

ঈমান বলতে যেহেতু ইসলামের যাবতীয় বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপনকে বোঝানো হয় সুতরাং আমাদেরকে ইসলামের সকল বিষয়ের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে।

আরও পড়ুন: আকাইদ শব্দের অর্থ কি?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top